Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অভিশপ্ত ভ্রমণ || Satyajit Chowdhury

অভিশপ্ত ভ্রমণ || Satyajit Chowdhury

অভিশপ্ত ভ্রমণ

এবারে ডিসেম্বরের শুরু থেকেই শীত বেশ জমে পড়েছে। তাই আমাদের সকালের জলপানের আড্ডা সোনালীরোদ গায়ে মেখে বাগানের লনে বসেই সারতে হয়। আমার সংসার বলতে আমি, দীপা এবং আমার একমাত্র ভাইঝি লীনা।

সকাল ৭ঃ২৫। রেডিওতে খবর শুরু হল। জিম্বাবয়েতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফর। মহাকাশ নির্সেরকরণে মার্কিন সোভিয়েত চুক্তি – ইরান ইরাক যুদ্ধবসানে নতুন পদক্ষেপ…। তারপরেই এলো সেই ভয়ংকর খবরটা – দার্জিলিং এর জিপ এক্সিডেন্টে ড্রাইভার সহ দুইজনের মৃত্যু। সঙ্গে সঙ্গে আমার মাথায় যেন আঁধার নেমে আসলো। পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে যেতে লাগলো। মনে হলো যেন আবারও আমি আমার কোন আত্মীয়কে হারাতে যাচ্ছি। সবকিছু যেন কুয়াশায় পরিণত হচ্ছে।

সেবারো সময়টা ছিল ঠিক এমনই শীতেই। দাদা বৌদি ঠিক করল শীতের ছুটিতে দার্জিলিঙে যাবে। আমি বললাম, বেশ যাও না। ছোটবেলায় মা বাবা হারানো আমার কাছে দাদা বৌদিই ছিল আমার মা বাবা। তারা আমাকে খুবই ভালোবাসতো। সঙ্গে আমাকেও নিতে চাইল। কিন্তু সামনে স্কুল ফাইনাল বলে আমি রাজি হলাম না। আমার একমাত্র ভাইজি লীনার হয়েছে উভয় সংকট। সে একবার কাকুর কাছে থেকে যেতে চাইছে, আবার মাকেও ছাড়তে পারছে না। সে তো একেবারে কাকুঅন্ত প্রাণ। চকলেট ভাগ করা শুরু থেকে পুতুল বিয়ে, আড়ি-আড়ি, ভাব-ভাব,ছড়া বলা ছবি তো এই কাকুর সাথে। তখন তার আর কত বা বয়স – পাঁচ ছয় বছর হবে। অবশেষে সে বলল, সে মার সাথেই যাবে। কিন্তু ফিরে এসে আমাকে অনেক গল্প বলবে।

দু’দিন পর। আজ সকাল থেকেই অস্থির অস্থির লাগছে l বিকেলে দাদা বৌদির ফিরে আসার কথা। দু’দিনেই যেন লীনার কাছে আমার অনেক গল্প জমা হয়ে আছে। মনে হচ্ছে যেন কতদিন তাকে দেখিনি। সারা দুপুর ঘর-বাহির অস্থির পায়ে পায়চারি করছি। বিকেল যেন কিছুতেই আসতে চায় না।

অবশেষে বিকেল এলো কিন্তু এমন বিকেল আসার থেকে না আসাই হয়তো ভালো ছিল। কলিংবেল এর শব্দে হুড়মুড় করে বাইরে আসতেই স্তব্ধ হয়ে গেলাম। ডাকপিয়ন আর্জেন্ট টেলিগ্রাম হাতে দাঁড়িয়ে আছে। কোনরকম টেলিগ্রাম খুলে পড়তেই আমার হাত পা অবশ হয়ে যেতে শুরু করলো, বিরাট বাজ যেন মাথার উপর এসে পড়লো। আবছা আবছা শব্দগুলি ভীষণ কষ্টে পড়তে পারলাম। ‘এক্সিডেন্ট! ইউর ব্রাদার এন্ড হিস ফ্যামিলি সিরিয়াস কাম শুন।” তারপর যে কিভাবে দার্জিলিং এ পৌঁছেছিলাম। সে কথা এখন মনে নেই। সেখানে দাদা -বৌদির বডি শনাক্ত করা ছাড়া আর কোনকিছু করার ছিল না। কিন্তু নিয়তির কোনো অসীম ইচ্ছেয় লীনা ভীষণ রকম আহত হলেও প্রাণে বেঁচে গিয়েছে। কিন্তু জন্মের মত তার বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। গল্প বলা তার আর হয়ে ওঠেনি।

এরমধ্যে দশটা বছর কেটে গিয়েছে।আমার জীবনে দীপা এসেছে। সেও লীনাকে নিজের সন্তানের মত ভালবাসে। তাই আমরা আর সন্তান চাইনি। লীনাও বড় হয়েছে। এবার স্কুল ফাইনাল দেবে। মাস্টার মশাদদের কাছে শুনেছি সে নাকি খুব মেধাবী। তাঁরা লীনার স্ট্যান্ড করার আশা করছে। হয়তো ভগবান তার একদিক নিয়ে আরেকদিক দিতে চাইছেন।

হঠাৎ ফোপানো কান্নায় আমার সম্বিত ফিরে এলো। চেয়ে দেখি লীনা সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। হয়তো বা তারও মা-বাবার কথা মনে পড়েছে। বুকে জড়িয়ে ধরতে আরো বেশী জোরে কাঁদতে শুরু । কাঁদিস না মা, কাঁদিস না মা। সান্তনা দিতে দিতে অজান্তে অশ্রুপূর্ণ হয়ে উঠলো। ইতিমধ্যে রেডিওতে খবর শেষ হয়ে গেছে, রবীন্দ্র সংগীতের সুর বাজছে আমার সকল দুঃখের প্রদীপ…..।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *