অপেক্ষা
পুজো সেরে রমলাদেবী রোজকার মত যখন চায়ের কাপটা নিয়ে বসেছেন তখন ঘড়িতে সকাল এগারোটা। এই সময়টা অর্ণব রোজ ফোন করে।
দিনের এই সময়টাই রমলাদেবীর কাছে সবচেয়ে মূল্যবান। সাতসাগরের ওপার থেকে অর্ণবের স্বরটা ষাটোর্ধ রমলাদেবীর অক্সিজেন। বাকি সারাটাদিন তো একদম একা।
কিন্তু এ কী আজ তো অপেক্ষা করতে করতে ঘড়িতে দুপুর একটা বেজে গেলো। এখনো খোকার ফোন এলোনা!
অজানা আশঙ্কায় রমলাদেবী ছটফট করছেন। কাজের মেয়েটা বলল-
“মা, তুমি খাবে না?
“না, তুই খেয়ে নে। আমার ভালো লাগছে না”।
“মা,দাদা ফোন করেনি?”
“না”।
” হয়তো ব্যস্ত আছে। তুমি খেয়ে নাও, নয়তো দাদা খুব রাগ করবে।”
” বিরক্ত করিসনা বীনা,এখান থেকে যা,আমাকে একা থাকতে দে”।
সারাটা দিন গেলো, ফোন এলো না। রমলাদেবী ধরেই নিলেন কিছু একটা ঘটেছে। নয়তো কোনোদিন তো এমন হয় না।
সেই কবে খোকা বিদেশ গেছে। তারপর তো প্রতি মাসে নিয়ম করে টাকা পাঠায়। মা একা থাকে বলে, কাজের লোক, ড্রাইভার, সব ব্যবস্থা রেখেছে। রমলাদেবীর সুখে প্রতিবেশীরাও হিংসা করে। এমন ছেলে কজনের হয়?
অর্ণব যখন খুব ছোট তখন হঠাৎই একদিন ওর বাবা চলে গেল। ওই দুর্দিনে কোনো আত্মীয়স্বজনকে পাশে পান নি। না,উনিও কারো কাছে হাত পেতেন নি। শত কষ্টেও একাই ছেলেকে মানুষ করেছেন।
পুরো একটা দিন কেটে গেল অর্ণব ফোন করলো না। রাতে রমলাদেবী বীনাকে বললেন- ” আমি ঠাকুরঘরে যাচ্ছি।খোকার ফোন এলে তবেই ডাকবি।”
” মা তুমি দুপুরেও কিছু খাও নি, রাতেও খেলে না, তুমি অসুস্থ হয়ে পড়বে।”
রমলাদেবী কোনো উত্তর দিলেন না। ঠাকুরঘরের দরজা বন্ধ করে দিলেন।
সকালবেলা বীনা দরজায় ধাক্কা দিয়ে বলল ” মা দেখো কে এসেছে।” কোনো সাড়া এলো না। বীনা বসার ঘরে ছুটে এসে সব জানালো। অর্ণব ঠাকুরঘরের দরজা খুলে দেখে রমলাদেবী অচৈতন্য হয়ে পড়ে আছেন। ছুটে গেল মা’র কাছে। মুখে চোখে জলের ছিটে দিতে জ্ঞান ফিরল।
“খোকা তুই! আমি স্বপ্ন দেখছি না তো!”
“না, মা, এইতো আমি;তোমার পাশে। তোমাকে অবাক করে দেব বলেই কাল ফোন করিনি।”
বীনা বলল – “মা বাইরে চলো, আরো অবাক হবে।”
“তুই চুপ করবি? মা’কে যা বলার আমি বলছি..।”