অনলাইনের চক্করে
অনলাইনে শপিং নিয়ে ঘন্টাখানেক বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিয়ে বিনীতা বেজায় খুশি। আধুনিকা সাজে নতুনভাবে আবিষ্কার করেছেন নিজেকে , কখনো তার নিজেকে প্রিয়ঙ্কা চোপড়া, কখনো অনুষ্কা শর্মা তো কখনো আলিয়া ভাট মনে হয় , আবার কখনো মনে হয় তাদের থেকে তিনি হয়তো একটু বেশি, সবটাই অনলাইন শপিং এর কৃপা।বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই, কিন্তু আধুনিকা সাজে কেমন যেন মনে মনে একটা প্রেম প্রেম ভাব!একমাত্র ছেলে থাকে দিল্লি,নির্ঝঞ্ঝাট সংসার, সেকেলে বরটাই একমাত্র দুশ্চিন্তার কারণ, আরো একটি দুশ্চিন্তা বডিওয়েট!! এইতো আগের মাসে মাত্র পাঁচ দিন অনলাইনে অর্ডার দিয়ে পিজ্জা, বার্গার ইত্যাদি একটুখানি খেয়েছেন,ওহ বলা হয় নি তার মধ্যে একদিন চিকেন স্যান্ডউইচটা কর্তা বললো নাকি পচা! শকিং, অগত্যা ফেলে দিয়ে রান্না ঘরে হাত পোড়াতে হলো! So sad! সেকথা ঘুনাক্ষরেও বন্ধুদের বলেন নি। তবু ওয়েট ২কেজি বেড়ে গেছে!
একটা নতুন ডিজাইনের ফ্রক বিনীতার খুব পছন্দ হয়েছে, কদিন অনলাইন শপিং সাইটে ফ্রকটির দিকে চোখ আটকে যাচ্ছে,ওমা কি দেখলেন বিশ্বাস করতে পারছেন না ডিসকাউন্ট দিচ্ছে ৫০%।অর্ডারটা দিয়েই দিলেন। সেদিন ফোনটা বেজে উঠলো কল রিসিভ করতেই পুরুষ কন্ঠ পার্সেল আছে ম্যাডাম কিন্তু বাড়িটা খুঁজে পাচ্ছি না। বাড়ির নাম্বার বলুন। বিনীতা বললেন এখানে বাড়ির নাম্বার হয় না, তুমি কোথায় দাঁড়িয়ে আছো বলো। ছেলেটি বলল বড়োকাঠের দোকানের সামনে যে ছোট চপের দোকান সেখানে।
বিনীতা: ঠিক আছে বাঁদিকের গলি দিয়ে এগিয়ে এসে ঠিক ডানদিকের গলিতে তিনটি বাড়ির পর হলুদ গেটের বাড়িতে লাল জবা ফুলের গাছ পাঁচটি মতো ফুল ফুটেছে, তার পাশে আম গাছ ঐ বাড়িটাতে চলে আসুন।
একটুপরে আবার ফোন, ছেলেটি বললো ম্যাডাম গোলাপী গোলাপ গাছ আছে বাড়িটাতো?
বিনীতা একটু রেগে তুমি কি কানে কম শোনো? তার পাশের বাড়িটা দেখো,এই আমি হাত নাড়ছি।
ছেলেটি উচ্ছসিত হয়ে হাত নাড়াতে নাড়াতে এগিয়ে এলো এবং ড্রেসটি দিয়ে বিদেয় হলো।
বর ঘুমাচ্ছে এই সুযোগ ড্রেসটা ট্রায়াল নিলো,একটু টাইট মনে হচ্ছে, পাল্টাবে কিনা ভাবছে, বন্ধুর ফোন, বন্ধুকে জানাতে সে বললো ধুর ওটাই তো ফ্যাশান, আমার নেক্সট উইকে জন্মদিনে ওটাই পরবি বুঝলি।
বিনীতা সন্মত হয়, মনে মনে একটা এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে, বন্ধুদের reactions কি হবে। উফ্ কবে আসবে বার্থডে পার্টি।
আজ সেই দিন, বিনীতা নতুনভাবে আবিষ্কার করবে নিজেকে, মেকআপের সব জিনিসপত্র বারবার খুঁটিয়ে দেখে নিচ্ছেন, তার মধ্যে কর্তার চায়ের ফরমাশ, বিরক্ত হলেও মেজাজ দেখালে আর পার্টিতে একসাথে যাওয়া হবে না,তাই কন্ট্রোল।চা করে দিয়ে পছন্দের ফ্রক পরে মেকআপ,বেশ কয়েকটি সেল্ফি নিয়ে নিলেন,কারণ পরে যদি ছবি ভালো না হয়। কর্তা দেখে একবার একটু ভিসম খেয়ে শুধু বললেন যুগের হাওয়া!
গাড়িতে উঠে বসতেই একটা আওয়াজ,একি ড্রেসটা ছিঁড়ে গেল! কর্তাকে প্রায় কাঁদো কাঁদো স্বরে বললেন মনে হয় ড্রেসটা ছিঁড়ে গেল কি হবে?
কর্তা হাঁসি চেপে বিনু মন খারাপ করে না, আমি বিবাহবার্ষিকীতে যে শাড়িটা দিয়েছিলাম সেটা পরলে সব থেকে সুন্দরী তোমায় লাগবে।
বিনীতা: (ছল ছল চোখে) হ্যাঁ গো ঠিক বলছো তো?
কর্তা :ঠিক ঠিক ঠিক।