Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অঙ্কুর || Sabitri Das

অঙ্কুর || Sabitri Das

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহের পর আষাঢ়ের প্রথমেই বৃষ্টি নামলো, তারপর থেকেই কখনো একটানা কখনো ছেড়ে ছেড়ে বৃষ্টি হতেই থাকলো।
দুদিন ধরে সমস্ত জমিটি ভালো করে কুপিয়ে রেখেছে পরেশ। আজ বীজ ছড়াচ্ছে। সকাল থেকেই মনটা ভাল নেই তার। দু দুটো বছর ঘুরতে চললো, এখনো তো কোন সম্ভাবনাই দেখতে পাচ্ছে না। তার সঙ্গী সাথী ছিল যারা, তারা কবে বাপ হয়ে গেছে! তারও পরে যাদের বিয়ে হলো তাদের ঘরেও এখন কাঁথা কানি শুকোচ্ছে,ছোটো ছোটো জামাকাপড় তারে ঝুলছে। শুধু অণিমার কোল আজও ভরাতে পারলো না পরেশ! এতো আর শহর বাজার নয়,এ হলো গিয়ে তাদের গাঁ গেরামের কথা। এখানে বছর ঘোরার আগেই কোল ভরে যাওয়াটাই দস্তুর, তা না হলেই যত কথার জ্বালা।এখনই অণিমা আসবে খাবার নিয়ে। অণিমার কাছে মুখ দেখাতে বড়ো লজ্জা করে তার। কেমন পুরুষ মানুষ সে ! তার উপর আবার বন্ধুরাও সুযোগ পেলেই ঠেস দিয়ে পাঁচ কথা শোনাতে ছাড়ে না। আর এও জানে, অণিমাকেও ঘরে বাইরে ঠারে ঠোরে অনেক কথাই শুনতে হয় কারণে অকারণে। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো আবার মেঘ জমেছে।

খাবারের পুঁটুলিটা মাথায় চাপিয়ে এটা সেটা ভাবতে ভাবতে আসছিল অণিমা। বড়ো ভালোবাসে পরেশ তাকে! পরেশের কাছে তার সোহাগ বড়ো কম নয়। তার আদরের বহর! সে কথা ভাবলে এই ফাঁকা রাস্তাতেও মুখ লাল হয়ে ওঠে। বড়ো ভালো মানুষ পরেশ। পরেশের লজ্জাটা বুঝতে পারে সে। লজ্জা তো তারও কিছু কম নয়!

আলো কমে আসছে , আকাশের দিকে তাকায়।এখন আবার মেঘ কেন বাপু! বেশ তো ছিল, ভাঙা শিবমন্দিরটা পার হলেই মাঠের আলপথ ধরবে……

ভাবতে ভাবতেই তেড়ে বৃষ্টি নামলো। মন্দিরের ভেতর ঢুকে একপাশে দাঁড়িয়ে থাকে। বর্ষার মেঘ, কতক্ষণে বৃষ্টি থামবে কে জানে!
‘এঃ বাবা বৃষ্টি তো বেড়েই চলেছে দেখছি, থামার কোনো নাম গন্ধ নেই!’ নিজের মনেই বিড়বিড় করতে থাকে-‘লোকটা ফাঁকা মাঠে কাজ করছে!’ বিজলী চমকানো দেখে ভয়ে বুক কাঁপে তার। গাঁয়ের মেয়ে অণিমা , বিজলী যে কী সাংঘাতিক জিনিস তা সে ভালোই জানে। প্রায় প্রতি বছরই দুচারজন করে মাঠের মাঝে বাজ পড়ে প্রাণ হারায়।
দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই সেদিনের কথা বড়ো মনে পড়ছিল অণিমার।
বর্ষার শুরুর দিকের কথা। সেদিনও এমনি ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে মুষলধারায় বৃষ্টি নেমেছিল,চারদিক অন্ধকার । ভাঙা মন্দিরটার ভেতরেই সেদিন আশ্রয় নিয়েছিল অণিমা। চড় চড় চড়াম ! বাজ পড়েছিলো কাছেই কোথাও। খাবারের পুঁটুলিটা ছিটকে পড়েছিল, মন্দিরের ভেতর ছিটকে পড়েছিল অণিমাও । মূর্ছিত হওয়ার মুহূর্তে টের পেয়েছিল দুটো বলিষ্ঠ বাহুর বন্ধনে কেউ যেন টেনে নিয়েছিল বুকের মধ্যে। ভয়-বিহ্বল অণিমা থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে মুখ গুঁজে দেয় সেই বলিষ্ঠ বন্ধনের উষ্ণ আশ্রয়ে। সময়ের কথা সেদিন খেয়ালই ছিল না। বর্ষণমুখর প্রকৃতি ঋতুস্নাতা হয়ে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মেতে ওঠার অমোঘ অপেক্ষায় অপেক্ষমানা।
কেমন একটা ঘোরের মধ্যে থেকেই সে অপূর্ব এক শিহরণে বারবার শিহরিত হচ্ছিল, আশ্চর্য সুখের আগুনে পুড়ে মরার অনুভবে ভেসে যাচ্ছিল ক্রমশ। বুঝতে পারছিল শরীরের কোষে কোষে আনন্দময় এক আশ্চর্য অনুভূতি মোহময় আবেশের সঙ্গে ছড়িয়ে যাচ্ছিল। সেই প্রথমবার সে গলে যেতে যেতে নদীর মতো তরল হয়ে বয়ে গিয়েছিল মোহনার পানে।
হুঁশ ফিরতেই সারা শরীরে এক আশ্চর্য স্নিগ্ধ অনুভূতি টের পেয়েছিল সে। সব সন্তাপ জুড়িয়ে জল! চোখ মেলে দেখার ফুরসত মিললো যখন আশ্চর্য হয়ে দেখেছিল, অণিমা ছাড়া আর কেউ নেই সেখানে।
অণিমা ভাবে তার অন্তরের আকুতি বোধহয় পৌঁছে গেছিল বিধাতার কানে। স্বয়ং ঈশ্বরই বুঝি নেমে এসেছিলেন তার কাছে। সেই কথা মনে করে আজো সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে তার ।
পরেশ মাঠে অপেক্ষা করছে, খাবার পৌঁছে দিতে হবে। বৃষ্টিটাও ধরে এসেছে দেখে প্রস্তুত হয়। মন্দির থেকে বেরোবার সময় মাথাটা ঘুরে যায় তার , গাটাও কেমন যেন ঘুলিয়ে ওঠে। মুহূর্তের মধ্যে দেয়ালটা ধরে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। খানিক পরে ধাতস্থ হতেই আলপথ ধরে দ্রুতপায়ে হাঁটতে থাকে,পরেশকে খাবারটা দিতে হবে ,সঙ্গে খবরটাও!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *