Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ভাঙনের সেলাই || Pallav Sanyal

ভাঙনের সেলাই || Pallav Sanyal

দাদুর ছোট্ট কাঠের আলমারির এক কোণে বহুদিন ধরে পড়ে আছে এই চায়ের কাপ। একসময় দুধ-সাদা গ্লেজের উপর গোলাপ ফুলের কারুকাজ ছিল উজ্জ্বল, কিন্তু এখন বিবর্ণ। তবে যা সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে, তা হলো কাপ, পিরিচ, এমনকি চামচেও মোটা মোটা তারের সেলাই! যেন কেউ শত কষ্টের পরও জিনিসগুলোকে ধরে রেখেছে, ফেলে দেয়নি।

আমি অবাক হয়ে কাপটা হাতে নিলাম। এত সুন্দর এক জিনিস এমনভাবে কেন সেলাই করা? কার এত মায়া ছিল?

দাদু আমার বিস্ময় লক্ষ্য করলেন। মৃদু হেসে বললেন, “এটা তোমার ঠাকুমার কাপ ছিল, খুব প্রিয় ছিল ওঁর। প্রতিদিন বিকেলে এই কাপে চা খেতে বসতেন, পাশে আমি থাকতাম।”

আমি কৌতূহলী হলাম, “তাহলে ভাঙল কীভাবে?”

দাদুর চোখে স্মৃতির ছায়া। “একদিন আমাদের মধ্যে খুব ঝগড়া হলো। আমি রেগে গিয়ে টেবিলের ওপর চাপ দিয়ে হাত রাখতেই কাপটা নিচে পড়ে চুরমার হয়ে গেল। ঠাকুমা কিছু বললেন না, শুধু চেয়ে দেখলেন। আমি বুঝতে পারছিলাম, কেবল কাপ নয়, কিছুটা সম্পর্কও হয়তো চূর্ণ হলো সেদিন।”

আমি কাপের পুরু তারের সেলাইতে হাত বোলালাম। দাদু বললেন, “আমি পরে দুঃখিত হয়েছিলাম। কিন্তু সময় ফিরে আসে না, তাই তো? ওঁর অসুস্থতার খবর এলো তার কিছুদিন পর। বিছানায় পড়ে গেলেন, আর কখনো রান্নাঘরের জানালার ধারে বসে চা খেতে পারলেন না।”

আমি শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।

দাদু দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, “আমি এক পুরনো কাঁচামাটির কারিগরের কাছে গিয়ে বললাম, ‘এই কাপটা আবার জোড়া লাগাতে হবে।’ তিনি বললেন, ‘ভাঙার দাগ কখনো পুরোপুরি মুছবে না, তবে আমি এমনভাবে লাগাবো, যেন স্মৃতিগুলো থেকে যায়।’ তারপর এইভাবে পেতলের তার দিয়ে সেলাই করলেন, যেন কাপটা তার নিজের কষ্টের গল্প বলে।”

আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। দাদু বললেন, “যখন কাপটা আমি নিয়ে এসে ঠাকুমার হাতে দিলাম, তিনি হেসে বললেন—’আমাদের সম্পর্কের মতো, কিছুটা ভাঙা, কিছুটা জোড়া লাগানো!’ আমি জানতাম, ওঁর ক্ষমার মধ্যে ভালোবাসা লুকিয়ে আছে।”

আমি কাপটা হাতে তুলে নিলাম, মনে হলো দাদু-ঠাকুমার কাহিনি আমার হাতের মধ্যেই রয়ে গেছে। সম্পর্ক ভাঙতে পারে, কিন্তু যত্ন নিলে, ভালোবাসা দিয়ে জোড়া লাগানো যায়। কিছু দাগ থেকেই যায়, কিন্তু সেগুলোই হয়তো ভালোবাসার চিহ্ন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *