Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বেঁচে থাক মানবিক মুখ || Rana Chatterjee

বেঁচে থাক মানবিক মুখ || Rana Chatterjee

বেঁচে থাক মানবিক মুখ

“দাদা কাল গাড়ি পাঠাবো  তো, যাচ্ছেন তো মেদিনীপুর??”
অমিত কে আবার সন্ধ্যায় ফোন গাড়ির মালিকের। পাড়ার মুখ পরিচিত ছেলেটা সেদিনই বলছিল “দাদা লক ডাউনে মার্কেট এত খারাপ কি বলবো গাড়িটা ভাড়া হচ্ছে না, ড্রাইভারের বেতন সব নিয়ে ল্যাজে গোবরে অবস্থা। “

হম ভাই যাবার তো পরিকল্পনা আছে কিন্তু বুঝতেই পারছো আমার বাচ্চা যাবে ঠিক মতো স্যানিটাইজ করছো তো প্রশ্ন রাখতেই ফোনের  ও প্রান্ত থেকে গলার আওয়াজ বাড়িয়ে কনফিডেন্ট উত্তর এলো। “আরে দাদা পুরো গাড়ি, সিট কভার, হাতল একদম ডেটল ওয়াশ করা হয় আর ড্রাইভারও এসবে খুব সচেতন। “আচ্ছা তবে কাল গাড়ি ভোরেই পাঠিও আমি ওদের নামিয়ে ব্যাক করবো কেমন বলে থামলো অমিত।

মাঝে ঘন্টা খানেক শ্বশুর বাড়িতে বেশ জামাই আদরে  কেটে গেল। বহুদিন পর জামাই, মেয়ে- নাতিকে ছাড়তে আসছে তাও এই আবহে যতখানি সম্ভব আয়োজনের কোনো ত্রুটি রাখেনি শ্বশুর মশাই। লাঞ্চ সেরে চারটে নাগাদ বেরিয়ে পড়লো অমিত ড্রাইভার  নিয়ে। ঝড় জলের দিন কখন কি হয় নাহলে গাড়ির মালিক রতন বলেই ছিল, “দাদা সে আপনি রাত করে ফিরুন আমার কোনো ব্যাপার নেই ওই একই টাকা পড়বে। যাইহোক নতুন গাড়িতে জার্নিটা বেশ ভালোই হচ্ছে এই ভাবতে ভাবতে কোলাঘাট পেরিয়ে বেশ লম্বা জ্যামে পড়লো ওরা। ট্রাকের পর ভারী ট্রাক মধ্যিখানে থমকে থমকে ওদের কার। আকাশ কালো করে উঠেছে এই বুঝি জল ঢালবে।

কি একটা জনপদ এলো মাঝখানে, দূর থেকে অমিত লক্ষ্য করলো এক বয়স্ক দাদু, নাতনির হাত ধরে ছোট গাড়ি দেখলেই হাত দেখাচ্ছে আর করজোড়ে অনুরোধ একটু নিয়ে যাবার জন্য। এমনিতেই রাস্তা ঘাটে ছোট খাটো কোনো ঘটনাই চোখ এড়ায় না মানবিক অমিতের। গাড়িটা সামনে যখন দেখলো হতাশ হয়ে ওই ভদ্রলোক পিছু ফিরে খানিক রাস্তা থেকে তফাতে সরে গেছেন। এই একটু সাইড করো তো কথা বলি বলতেই “দাদা জ্যাম কাটছে আবার নাহলে ফেঁসে যাবো “সতর্কতা ড্রাইভারের গলায়। অমিত ততক্ষণে কাঁচ নামিয়ে “ও মেসোমশাই, হ্যাঁ আপনাকে বলছি, কোথায় যাবেন “বলতেই ধুতির খুঁটে চোখ মুছে উনি নাতনির হাত ধরে এগিয়ে এলেন যেন কিছু একটা ব্যবস্থা হবে ভাবনায় নমনীয় মুখ।” আগে উঠুন গাড়িতে শুনছি” বলে অমিত নেমে পিছনের দরজা খুলে যেন ওনাদের বাঁচালো। খুব বয়স্ক ভদ্রলোক প্রাণ পেয়ে বলল “বাবা, ছেলে খুব অসুস্থ ওকে দেখতে এসেছিলাম, এ আমার নাতনি, আমার কাছেই মানুষ- প্রায় চল্লিশ মিনিট দাঁড়িয়ে কি যে চিন্তা হচ্ছিল, তুমি আমায় বাঁচলে, আকাশ কালো করে মেঘ ওতখানি পথ যাবো। “যাক, আপনারা কামারপুকুর যাবেন ভালোই হলো আমি তো আরামবাগ ফিরবো আপনাদের নামিয়ে দেব পথে” বলে চুপ করলো অমিত। ড্রাইভার ছেলেটি যে খুব একটা খুশি হয়নি ওর মুখের হাবেভাবে বেশ বুঝছে অমিত । মনে মনে ভাবলো এ টুকু উপকার যদি না করলাম কিসের মানবিকতা!

বাড়ি ফিরে খুব খাঁ খাঁ শূন্য লাগছে ঘরটা, এতক্ষন মেয়েটা থাকলে ঘর খুব গম গম করে। সেই কবে পরীক্ষা শেষ হয়েছে ঠায় ঘরে বসে যাক কটা দিন ঘুরে আসুক মামারবাড়ি এই উদ্দেশ্যেই আজ যাওয়া। কাজের মাসির বানানো চায়ে মুখ দিয়ে ডেটল জলে ভালো করে স্নান করলো অমিত। পরিবারের মধ্যে থাকা মানুষ গুলোকে মাঝেমধ্যে একা থাকা, স্বনির্ভর হওয়া খুব দরকার এটা খুব সমর্থন করে সে নিজে। আজ খুব কাহিল লাগছে নিজেকে বলে টিভি চালিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। তখন মাঝরাত ধড়ফড় করে উঠে বসলো অমিত-বাপরে এমন জ্বর কেন এলো, পেটেও হালকা ব্যথা অনুভব করছে। ক্যালপল নিয়ে একবার বাথরুমে ঘুরে এলো-গোটা ঘরটা যেন গিলতে আসছে, সব কিছু আছে শুধু যেন প্রাণ নেই। এমন করেই দুদিন পার হলো জ্বর তো কমছে আবার আসছে সঙ্গে আরো কিছু সিম্পটমস যা কপালে ভাঁজ ফেললো অমিতের। বাড়িতে বয়স্ক বাবা একটু সাবধানে থাকতেই হবে বলে ডাক্তারের কাছে গেলে উনি তো সব দেখে শুনে গতিক ভালো বুঝলেন না, টেস্ট করাতে হসপিটালে পাঠালেন তার পেসেন্টকে। ভীষণ ভাবে ভেঙে পড়েছে অমিত তার শুধু পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে তাই নয়, ড্রাইভার ছেলেটিও করোনায় আক্রান্ত হয়ে অমিতের মতো কোয়ারেন্টাইনে। এত রোগীর চাপ এদিকে প্রপার চিকিৎসাও নেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অমিত বেশ বুঝছে ওই অচেনা ভদ্রলোককে গাড়িতে তোলা একদম তার ঠিক হয় নি। এখন তো মনে হচ্ছে ওনার যে অসুস্থ ছেলেকে ওনারা দেখে ফিরছিলেন সেও আক্রান্ত। এই যেন তার কদিনের ক ঘন্টার আয়ু সব শেষ হবে তার স্বপ্ন। মেয়েকে মানুষ করার, একটা ভালো বাড়ি বানানোর ইচ্ছা অধরা থেকেই যাবে!চোখের কোণে জল নিয়ে সহধর্মিনী-কন্যার মুখটা খুব ভাসছে অমিতের।

সকাল থেকে মুখ ভার করে আকাশ যেন গ্যাদ গ্যাদ করে জল ঢেলেই চলেছে। টিভির নিউজে দেখালো গতকাল বাংলায় সর্বাধিক ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত। আজ অষ্টমদিনে পড়েছে অমিতের চিকিৎসা। গতকাল সব আশা শেষ করে খুব বাড়াবাড়ি হয়েছিল তার শারীরিক অবস্থা। মেদিনীপুরে থেকে ছটফট করছে অদিতি মাঝে মধ্যে তার খুব রাগ হচ্ছে এত বেশি মানবিক হওয়ার জন্য স্বামীর ওপর। এর আগেও বহুবার যেচে উপকার করতে গিয়ে ভুগেছে তার প্রিয় মানুষটি। আশঙ্কার কালো মেঘ সমানে ভ্রূকুটি করছে পরিবারটির ভাগ্যাকাশে। ভীষণ ভাবে প্রার্থনা করি সুস্থ হয়ে উঠুক অমিতের মতো মানুষেরা, স্বার্থপর নিজের আখের গোছানো সমাজ সংসারে যেন হারিয়ে না যায় মানবিক মুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress