হেমাঙ্গিনী ও সত্যবতী
আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রাম প্রতীক— প্রতিবাদী দুই নারীচরিত্র হেমাঙ্গিনী এবং সত্যবতী।
“হেমাঙ্গিনী”
শরৎচন্দ্রের বিখ্যাত বড়ো গল্প “মেজদিদি”র অনাথ কেষ্টর অনাত্মীয়া মেজদিদি— আর
“সত্যবতী”
শরৎচন্দ্রের উত্তরসূরী শ্রীমতী আশাপূর্ণা দেবীর বিখ্যাত উপন্যাস “প্রথম প্রতিশ্রুতি”র কেন্দ্রবিন্দু ।
সময়ের ব্যবধানে ক্রমে সমাজ গ্রাহ্য নারীমুক্তির লড়াইয়ের দুই কাহিনী।
ঘটনা বিবৃতিতে বারবারই উঠে আসে কাহিনীকালের সমাজচিত্র। সময়কাল ভিন্ন, সংগ্রাম এক, পরিস্থিতি ভিন্ন , প্রতিবাদ এক, যবনিকায় , প্রকাশভঙ্গী ভিন্ন। কেমন—- হ্যাঁ, একশ বছরের বেশ আগে নারীর প্রতিবাদী ভূমিকা শরৎচন্দ্রের বলিষ্ঠ কলমে চমৎকার ফুটে উঠে আছে, কিন্তু সমাজের কথা মাথায় রেখে , পাঠক পাঠিকার মনস্তত্ত্ব বুঝে শরৎচন্দ্র অত্যন্ত সুনিপুনভাবে গল্পের মাধুর্য বজায় রেখেছেন। স্বামী , সংসার, পুত্রকন্যাদের ছেড়ে, সমাজকে তোয়াক্কা না করে একা হেমাঙ্গিনী কেষ্টকে নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন , অবশ্যই একা থাকবার মতো সাহসী মনোবল নিয়ে। কিন্ত স্বামী বিপিনের অনেক অনুনয় ও প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে রওনা হয়েও ফিরে আসেন স্বামীর সংসারে। স্বস্তির নিঃশ্বাস তখনকার পাঠক পাঠিকার।
কিন্ত, আশাপূর্ণা দেবী এক ধাপ এগিয়ে এলেন, কারণ পরবর্তিতে সময়কাল আরও এগিয়ে এসেছে প্রগতি কারণে। তাই শেষ পরিণতিতে প্রতিবাদী সত্যবতী ভরা সংসার ত্যাগ করে চলে যান। স্বামীর শত অনুরোধ উপরোধ সব বিফলে যায়, তিনি সত্যবতীকে ফেরাতে পারেন নি, কোঁচার খুটে চোখের জল মোছা ছিল নীরব সম্মান প্রদর্শন। বলাবাহুল্য অবচেতন মনে পাঠক পাঠিকারাও সহানুভূতিশীল হন। এ সাহিত্য পুরস্কৃত হয়।