Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হৃদ মাঝারে || Rana Chatterjee

হৃদ মাঝারে || Rana Chatterjee

হৃদ মাঝারে

“এই সৌমি ,সৌমি ,কি আশ্চর্য্য তো ,সেই যে ঘরে ঢুকলো আর বেরুবার নামগন্ধ নেই !” এক নাগাড়ে চিলেকোঠার ঘরের দিকে তাকিয়ে হাঁক পেড়ে যাচ্ছেন বছর চল্লিশের অন্নপূর্ণা । ওই আবার শুরু করলেন ,”জানিনে বাবা,আজকালকার ছেলেমেয়েদের মতিগতি ,এই হাসি খুশি তো এই মুখ গোমড়া ! শরতের মেঘ এমন হয় দেখে এসেছি ,মা বাপের সাথে যে দুটো হেসে কথা বলবে ,মোবাইল কানে গুঁজে সে ফুরসৎ টুকু নাই গো ” গত সপ্তাহ থেকে প্রতিটা মুহূর্ত ,এক আনন্দ উত্কণ্ঠায় কাটছিলো সৌমির ।পাড়ার নামি দর্জি জয়ন্তদার কাছ থেকে রীতিমতো ঝগড়া করে ,তবে সালোয়ারটা কাটাতে পেরেছে জলদি ।আরে অভি যে বাড়ি আসছে পুনে থেকে ,ওর সামনে কি পুরোনো ড্রেস পড়ে যাওয়া যায় ,না সমীচীন ! মা, বাবা যাই বলুক না কেনো ,অভীক দা মোটেই খারাপ ছেলে নয় ।বাইরের রূপটাই কি আসল হলো একটা মানুষের ।বাবা যেভাবে , মুখের ওপর বলেই দিলো সেদিন ,”অমন ক্যাবলা চাউনির সেই কালো ছেলেটাকে জামাই বলে কোনোদিন মানতে পারবোনা “।খুব বুকে বিঁধেছিলো কথাটা সেদিন সৌমির ।এই ভাবে বাইরের থেকে মানুষকে কখনো বিচার করতে নাই ,এটাই সে জানে ।আর অভীক তো সেই ছোটো থেকে এ বাড়িতে যাওয়া আসা করতো ।ভাবনা গুলো দলা পাকিয়ে ওঠে সৌমির ।বাবা,মা-ই না শিখিয়েছিল “মানুষ কে ঘৃণা করো না “!

তখন দমদমের এক এঁদো গলির এক কামড়া রূমে বেড়ে ওঠা সৌমির।চোখের সামনে বড্ড জীবন্ত সেই অভাবের দিন গুলো ।আজ কেমন যেনো পাল্টে গিয়ে বৈভবের থরো থরো আতিসজ্জায় । তাবলে মানুষের মন কি এভাবে পাল্টাতে আছে ? এই প্রশ্নেরই উত্তর তার চোখের সামনে বাড়িতেই আজ ।

সদ্য কলেজে কেমিস্ট্রিতে অনার্স নেওয়া মেধাবী ছাত্র অভীকদা একটা ভালো টিউশান খুঁজছিলো । এই খবরটা পাড়ার কোনো এক কাকুর কাছ থেকে পেয়েই বাবা আর দেরি করেন নি । এক রবিবার বিকালে হাজির করে আনে সৌমি দের এক কামড়া চালা ঘরে। ক্লাস নাইনে ওঠা সদ্য কিশোরী মেয়েটি সেদিন সোজাসুজি তাকাতেই পারেনি লজ্জায় ,কিন্তু মনে আছে চেক কাটা একটা খদ্দরের জামা আর তেলচিটে প্যান্টের শীর্ণকায় কেউ যেনো বইগুলো নাড়াচাড়া করছিলো ।

ঝম ঝমে বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ায় শশব্যস্ত মা ,পড়িমরি করে ঝাপটায় ভিজে যাওয়া ঘুঁটে গুলো বারান্দায় চাপা দিচ্ছিলো । ভিজে গেলে আগুন ধরবে না এই ভয়ে । সৌমি উপলব্ধি করেছিলো ,সেই আর্দ্র পরিবেশেও লজ্জায় তার কান গরম হয়ে গিয়েছিলো, এই প্রথম কোনো ছেলের সামনে এভাবে পড়তে বসে ।
তারপর ,দুদিন পর থেকেই সড়গড় হয়ে যায় ওরা । আজও মনে পড়ে সেই দিন গুলো খুব সৌমির।

ক্লাস এইটের অঙ্ক পরীক্ষায় কিছুটা কম নম্বর পেলেও ভালো গৃহ শিক্ষকের গুনে ভীষণ ভালো রেজাল্ট করেছিলো সৌমি।প্রচুর প্রচুর হোম ওয়ার্ক নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা মুখ গুঁজে পরে থাকা আর মেধাবী অভীক দার দুর্দান্ত পড়ানোর কৌশলে মাধ্যমিকে অষ্টআশি শতাংশ নম্বর পেয়েছিলো ।এর পর থেকে আরও পড়াশোনায় সিরিয়াস হয়ে যাওয়া সৌমিকে আর পিছনে তাকাতে হয় নি ।

অভীক দা তখন ,যাকে বলে এক নির্ভরতা হয়ে উঠেছিল সেদিন সৌমিদের । বাবার সাথে ব্যাঙ্কে ,এমনকি বাজারে ,লাইটের বিল যেকোন কাজের বিশ্বস্ত মানুষ হয়ে চুপচাপ সবকিছু করে যেতো ।এই নিয়ে সৌমি,দু তিন বার প্রতিবাদ করেও মা ,বাবা কেউই কর্ণপাত করতো না ।তখন মা বরং খুশি হয়েই স্বপ্নের বীজ বুনতো সৌমি আর অভীক কে নিয়ে । তারপর হটাত্ করেই অভীকদার বাবা মারা যেতেই ওরা ভাড়া ছেড়ে উঠে যায় অন্য কোনো কলোনীতে ।পরে যোগাযোগ আর না হয়ে উঠলেও কোথায় যেনো একটা ভালোলাগা ,সৌমির মনে চিরস্থায়ী দাগ রেখে গেছিলো ।

এক আশ্চর্য্য দৈব বলের মতো হটাত্ করে ,সৌমিদের অবস্থার দারুণ উন্নতি ঘটে যায় । সৌমির এক দূর সম্পর্কের মামিমা, নিঃসন্তান ও কেউ না থাকায় তার যাবতীয় সম্পত্তি ,বাড়ি ,জমি সবকিছু সৌমির মায়ের নামে উইল করে যায় ।ব্যস ,আর ঘুরে তাকাবার প্রশ্নই ওঠে না । সেই রেশ ধরেই আজকের এই বৈভব ,মান মর্যাদা ।শহরের বুকে পেল্লাই দু-দুটো ফ্ল্যাট ,বাগান বাড়ি ।সৌমি ও ইঞ্জিয়ারিং পড়ে খুব ভালো জব করছে ।

মাস খানেক আগেই ফেসবুকে সার্চ করতে করতে “অভীক দত্ত “নাম দিতেই অনেক অভীক এর মাঝে সেই লাজুক ,মায়াবী চোখ দেখে এক মুহূর্তও চিনতে ভুল হয়নি সৌমির ,ও প্রান্ত থেকে চট জলদি রিপ্লাইও এসে গেছিলো ।এই কদিনে যেটুকু কথা বার্তা হয়েছে ,অভীক একটা ছোটো খাটো জব নিয়ে পুনে তে চলে আসতে বাধ্য হয় । যে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে তার পথ চলা শুরু তা আর্থিক টানা পোড়েনে অস্তমিত প্রায় ।সব কিছু শুনেও সৌমির আবেগ,ভালোবাসায় সত্যই কোনো কিছু যায় আসে না ।সে তার মন প্রাণ ,আবেগ সব কিছু সেদিনের সেই অভি দা কেই যে দিয়ে বসে আছে তা বেশ অনুভব করে ।অভীক কুণ্ঠাবোধ করলেও আগামী সপ্তাহে পুনে থেকে বাড়ি আসছে শুনে ,সৌমি ভীষণ ভাবে দেখা করতে চাওয়ার অনুরোধ করে রেখেছে,যা ফেরানো সেদিনের কালো ,শীর্ণকায় মেধাবী ছাত্র,আজকের অভীকদার ও নাই ।এই বিষয়টা স্পষ্ট ভাবে মা ,বাবা কে বলার পর থেকেই ঘরের পরিবেশটা কেমন যেনো গুমোট হয়ে গেছে ।
অর্থ পরিবেশ ,পরিস্থিতি ,মানুষ কে পালটে দিলেও সৌমি তার প্রিয় অভীকদার প্রতি আজও তীব্র এক টান অনুভব করে তার আসার অপেক্ষায় বাড়ির প্রতিকূলতা অগ্রাহ্য করে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress