Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » স্বাধীনতা দিবস || Nilanjan Bhattacharya

স্বাধীনতা দিবস || Nilanjan Bhattacharya

স্বাধীনতা দিবস

ভাটপাড়ার এক চানাচুর ফ্যাক্টরির অ্যাকাউন্টেন্ট শঙ্কর দাস। তার ছোট ছেলে শিবু। দাদু ছিলেন বিখ্যাত পন্ডিত। যদিও শিবু তাকে দেখে নি। শিবুর জেঠি অধ্যাপিকা। জেঠা বালিগঞ্জ আর জাঠতুতো দাদা অস্ট্রেলিয়ার ডাক্তার। স্বভাবতই সবায়ের এক কথা। বড়ো হয়ে ওরকম হতে হবে। যদিও দাদা কানুর এ ব্যাপারে চাপ বেশি। সে পড়ে নাইনে। আর শিবুর ক্লাস ফাইভ। তবে দুজনেরই প্রতিষ্ঠান ভাটপাড়া হাই স্কুল। আজ স্বাধীনতা দিবস বলে শিবুর কৌতুহল। স্কুলে ফোর পর্যন্ত ছুটি। কিন্তু ফাইভ থেকে টেন -সকলের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক ।এ বছর প্রথম সে স্কুলের পতাকা উত্তোলন দেখবে। তাই সকাল সকাল বেরিয়েছে দাদার সঙ্গে । সেখানে শিক্ষকদের মুখে নতুন ইতিহাস শুনেছে। দেখেছে পতাকা উত্তোলন। খেয়েছে লজেন্স বিস্কুট । তারপর মায়ের টোস্ট করা পাঁউরুটি মাখন দিয়ে যখন দাদার সঙ্গে এক থালায় খাচ্ছে, তখন দাদা প্রশ্ন করল- “কেমন লাগল?” শিবু বলতে যাচ্ছিল “ভালো”, কিন্তু হঠাৎ হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ল। দাদা হকচকিয়ে বলে উঠল “বাকি চারটে আমার, তুই হেসে যা।” শিবু “আর খাবনা” বলে হাসতে হাসতে পাশের ঘরের খাটে। আসলে অবচেতন মনে শিবু নিজের স্বাধীনতার কথা ভাবছিল। সকাল হলে পড়তে বসা, তারপর স্কুল, তারপর কোচিং। ছুটির দিনে দু এক ঘণ্টা মরূদ্যানের মতো গেম খেললেও বিকাল হলেই পরের দিনের পড়া। মাঝে মাঝে পুরী বা ঘাটশিলা হয় না তা নয়, কিন্তু সেখানেও এটা খাবেনা, ওখানে যাবে না আর রাস্তায় হাত ধরো- লেগেই থাকে। কিন্তু তাহলে স্কুলে কি শুনলো! শিবু ও ঠিক বুঝল না ওর কেন হাসি পাচ্ছে? তাই পাশের ঘরে বাংলা পড়ায় মন দিল। দুজনেরই পরীক্ষা সামনে, আর পরীক্ষার পর আরো বেশি চিন্তা রেজাল্টের। মহালয়ার আগের তিনটি দিন হল বকুনির। কারণ ক্রমাগত স্কুল, কোচিং ও বাবা মার কাছে সামান্য প্রশংসা ও অনেক বকুনির পর মহালয়ার রাতে যখন জেঠি পুজোর জামা নিয়ে আসে, তখন মাকে বলে “একদম বকবি না। সন্তু কিরকম ডাকাবুকো ছিল বলতো! শুধু বলতাম- ভালো হলে তোমাকেই সবাই ভালো বলবে। আমাদের অবর্তমানে তোমার যাতে কষ্ট না হয় দেখো। সে সন্তু অস্ট্রেলিয়ায় রোগী দেখবে ভেবেছিলাম কখনো? তোর ছেলে তো ঠাণ্ডা ।” এরপর থেকে শিবুর জীবনে স্বাধীনতা দিবস শুরু হয়। আর সেটা যতদিন থাকে তার মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষার এনার্জি চলে আসে। জেঠি পঞ্চমী পর্যন্ত শিবুর বাড়ি থাকে। তাই মহালয়ার পর দিন সকলে শিবুর আব্দার হয় “এখন সেরকম ক্লাস হবেনা। বাড়িতে থাকব?” মা হেসে ফেলে আর বাবা গোমরা হয়। তখন প্ল্যান মতো দাদা বলে “আমাকে তো প্র্যাক্টিকালে যেতেই হবে। আর কি হবে? ওর বন্ধুদের থেকে ছুটির কাজ জেনে নেব।” এর পর জেঠির সাপোর্ট। কাজ হাসিল।” তৃতীয়ার দিন ঘটনাটা ঘটল! শিবু বেলার দিকে অভ্যাস মতো কম্পিউটার নিয়ে বসে ছিল। পাশের ঘর থেকে মা আর জেঠির অনির্দিষ্ট কালের জন্য জুড়ে দেওয়া কিছু গল্প কানে আসছিল। একটা আইডিয়া এল মাথায়। স্টোর রুমে দাদার রংচঙে অস্ট্রেলিয়ান পেপারের ঘুঁড়ি আর লাটাইটা আছে। এখনও পর্যন্ত শুধু লাটাই ধরেই এসেছে। ঘুঁড়ি ওড়াতে পারে নি।আজ মেঘ রোদ্দুরের খেলা। সুন্দর ওয়েদার। ছাদে জামা শুকোনোর তারের স্ট্যান্ডে একটা এক্সট্রা আংটাও আছে। লাটাই গুঁজে দিলে সেটা নিজে থেকে ঘোরে। ধরার দরকার হয় না। শিবু জানত দশ বারো মিটারের বেশি ওর দৌড় নয়। শুধু “পাড়ার লোকজনকে একটু ওস্তাদি দেখানো” এই লক্ষ্যটুকু সম্বল করে চড়াই দিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান পেপার, দমকা হাওয়া। শিবুর ভয় করতে শুরু করল। এতদিন আরামসে দাদার ঘুঁড়ি ওড়ানো দেখেছে। কিকরে ওড়ায় তাতো জিজ্ঞাসা করেনি! কি হবে এবার? ইষ্টনাম করে শিবু যেটুকু দেখেছে, সেভাবেই বেড়ে যেতে লাগল। অনবদ্য ঘুঁড়িটা এক জায়গায় থাম্বা হতেই মেঘের আড়াল থেকে একটুখানি সূর্যের আলো পড়ল তার ওপর আর শিবুর মনের একটা দরজা খুলে গেল। শিবু দেখল অনন্ত আকাশের মাঝে তার ঘুঁড়ি নিয়ে একা দাঁড়িয়ে সে। কেউ কোথ্থাও নেই। তার ঐ ঝকমকে ঘুঁড়ি বান যেন মেঘরূপি দ্রোনের পদতলে নিক্ষেপ করে সে বলছে আমি আর বৃহন্বলা নই। আমি স্বাধীন, পরিপূর্ণ। আপনার সুযোগ্য শিষ্য। ভয়ঙ্কর যোদ্ধা অর্জুন যাকে কেউ আটকে রাখতে পারেনা। মনে হচ্ছে যেন এক লাফেই মেঘটার ওপারে চলে যেতে পারে। কিন্তু অন্ধকার হয়ে এসেছে। তাই এত আনন্দ সত্ত্বেও নিজে থেকেই যখন ঘুঁড়ি নামালো, তখন মনে হল হঠাৎ করেই অনেকটা বড়ো হয়ে গেলো। লাটাই গোটানোর সময় শুনলো মায়ের চিৎকার।” তুই কি ছাদেই থাকবি না জেঠির তৈরী ডালের বড়া খাবি! একটা বাজে।” বাধ্য ছেলের মতো মায়ের আদেশ পালন করে যখন শুতে যাচ্ছে তখন জেঠি বলল “বৃষ্টি দেখেছিস, মা এবার নৌকোয় আসছে। ” শিবু বলল ” মা ফা নয় ।আমিই বৃষ্টি নামালাম। কতখানি ঘুঁড়ি বেড়েছিলাম তা তো দেখলে না।” জেঠি বলল “তোমার মত বীর পালোয়ান ছাড়া এমন কাজ আর কেই বা করবে! এখন ঘুমিয়ে উদ্ধার করো।” শিবু খাটে শুয়ে দুপুরের বৃষ্টি দেখছিল। ভাবছিল “ঘুঁড়িটা জানতো যে আলোটা ওখানে পড়বে। তাই ওখানেই স্থির হল। মেঘগুলো তাকে দেখেই এখানে বৃষ্টিপাত ঘটালো।” আজ সে প্রথমবার জীবনে স্বাধীনতার পরিপূর্ণ মাহাত্ম্য অনুভব করল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *