Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সোনালী || Nimai Bhattacharya

সোনালী || Nimai Bhattacharya

খোকন থমকে দাঁড়িয়ে বলল

খোকন ওকে দেখেই থমকে দাঁড়িয়ে বলল, কী আশ্চর্য! তুই শাড়ি পরেছিস!

সোনালী ওকে প্রণাম করে সুটকেশটা হাতে নিয়ে বলল, তুমি কি ভেবেছ আমি চিরকালই ছোট থাকব?

খোকন ড্রইংরুম পার হয়ে ভিতরের দিকে যেতে যেতে বলল, না, না, তুই মস্ত বড় হয়েছিস।

সোনালী সঙ্গে সঙ্গে খোকনের মার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল, আমি বড় হইনি বড়মা?

খোকনের মা হাসতে হাসতে বললেন, হয়েছিস বৈকি!

শুনলে তো খোকনদা?

এখন আমি এসে গেছি। এখন আর বড়মা বা জ্যাঠামণিকে তেল দিয়ে লাভ নেই। এখন আমাকেই তেল দে।

সোনালী ঘরের একপাশে সুটকেশটা রেখে রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে নির্বিকার হয়ে বলল, আমি কাউকে তেল দিই না।

বাজে ফড়ফড় না করে চা দে।

সোনালী রান্নাঘরে চলে যেতেই খোকন বলল, দেখো মা, যত দিন যাচ্ছে সোনালীকে দেখতে তত সুন্দর হচ্ছে।

ওকে দেখে তো কেউ ভাবতেই পারে না ও আমাদের মেয়ে না।

খোকন হেসে বলল, তুমি ওকে যা সাজিয়ে-গুজিয়ে রাখো…।

বাজে বকিস না। ওকে দেখতেই ভালো। একটা সাধারণ শাড়ি-ব্লাউজ পরলেও ওকে দেখতে ভালো লাগে।

খোকন মাকে জড়িয়ে ধরে বলল, তুমি যাই বলল মা, তুমি ওকে আদর দিয়ে দিয়েই…

তুই বাড়িতে এসেই আমার পিছনে লাগবি না।

সোনালী চা নিয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতেই বলল, তোমার স্বভাব আর কোনোদিন বদলাবে না খোকনদা।

ঠাকুমা-দিদিমার মতন কথা বলবি তো এক থাপ্পড় খাবি।

আমাকে থাপ্পড় মারলে তুমিও বড়মার কাছে থাপ্পড় খাবে।

খোকন চায়ের কাপ হাতে নিতে নিতে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল, সত্যি, বাবা-মা তোকে আদর দিয়ে দিয়ে এমন মাথায় চড়িয়েছেন যে এরপর তোকে সামলানোই দায় হবে।

খোকনের মা জিজ্ঞাসা করলেন, হারে, তোর কলেজ খুলবে কবে?

কলেজ পনেরোই জুলাই খুলবে। তবে আমাকে দিন পনেরো পরেই ফিরে যেতে হবে। খোকন হাসতে হাসতে বলল, ছুটির মধ্যেই আমাদের টিউটোরিয়াল হবে।

খোকনের মা আর কিছু না বললেও সোনালী বলল, মাত্র পনেরো দিনের জন্য এত খরচা করে এলে কেন?

তোকে শায়েস্তা করতে।

যতদিন বড়মা জ্যাঠামণি আছেন, ততদিন আমার জন্য তোমাকে কিছুই করতে হবে না।

দ্যাখ সোনালী, আমি এ বাড়ির একমাত্র ছেলে।

আমি এ বাড়ির একমাত্র মেয়ে।

খোকনের মা হাসতে হাসতে বললেন, তুই ওর সঙ্গে পেরে উঠবি না। সোনালী এখন মাঝে মাঝে আমাকে আর তোর বাবাকেও শাসন করে।

সোনালী ঘর থেকে বেরিয়ে কয়েক মিনিট পরে এসেই বলল, নাও খোকনদা, এবার চান করতে যাও।

আগে আরেক কাপ চা দে।

আর চা খেতে হবে না।

কবিরাজি না করে যা বলছি শোনো।

বড়মার সামনে এই ধরনের কথা বলে?

খোকন হেসে বলে, আচ্ছা আর বলব না। তুই এক কাপ চা খাওয়া।

সোনালী রান্নাঘরের দিকে পা বাড়িয়েই পিছন ফিরে বলল, বড়মা, তুমি জ্যাঠামণিকে টেলিফোন করবে না? জ্যাঠামণি হয়ত ভাবছেন, খোকনদা এখনও আসেনি।

হ্যাঁ করছি।

.

খোকন বাথরুম থেকে বেরুতেই ওর মা ডাকলেন, খোকন খেতে আয়।

খোকন টেবিলে এসে বসতেই সনালী খেতে দিল।

তুমি খাবে না মা?

তুই খেয়ে নে। আমি আর সোনালী পরে বসব।

পরে বসবে কেন? এখনই বসো।

সোনালী মুখ টিপে হাসতে হাসতে বলল, তোমার মাছ বেছে দিতে দিতে বড়মার খেতে অসুবিধে হয়। তুমি নামেও খোকন কাজেও খোকন।

দ্যাখ সোনালী, আমি এ বাড়ির একমাত্র ছোট ছেলে।

তুমি কখনও এ বাড়ির একমাত্র বড় ছেলে, আবার কখনও একমাত্র ছোট ছেলে।

খোকনের মা হেসে উঠলেও খোকন ওর কথার কোনো জবাব না দিয়ে আলু-পটলের তরকারি মাখা ভাত মুখে দিয়েই বলল, তরকারিটা লাভলি হয়েছে।

খোকনের মা বললেন, সব রান্নাই সোনালীর।

ইস! কি নুন হয়েছে।

খোকনের মা হেসে উঠলেও সোনালী গম্ভীর হয়ে বলল না জেনে প্রশংসা করলে অন্যায় হয় না।

গ্রামের বুড়িদের মতন বেশ তো প্যাঁচ মেরে কথা বলতে শিখেছিস?

সোনালী হেসে বলে, যাই বলো বড়মা, খোকনদা না থাকলে বাড়িতে লোজন আছে বলেই মনে হয় না।

খোকন জিজ্ঞেস করল, তুই একলা একলা ঝগড়া করতে পারিস না?

তুমি পারো বুঝি?

আমি কি ঝগড়া করতে জানি নাকি?

খাওয়া-দাওয়ার পর কিছুক্ষণ ছেলের সঙ্গে গল্প করে খোকনের মা শুতে গেলেন। খোকন নিজের ঘরে শুয়ে শুয়ে ডাকল, সোনালী একগ্লাস জল দিয়ে যা।

সোনালী এক গেলাস জল নিয়ে ঘরে ঢুকতেই খোকন ইশারায় ওকে কাছে ডেকে বলল, দেশলাইটা আন ভো।

সোনালী এক গাল হাসি হেসে দুটো আঙুল ঠোঁটের উপর চেপে ধরে একটা টান দিয়ে বলল, ধরেছ?

বাজে বকিস না। তাড়াতাড়ি আন।

অত ধমকালে আনব না।

আচ্ছা প্লীজ আন।

সোনালী দেশলাই আনতেই খোকন সিগারেট ধরিয়ে টানতে শুরু করল।

বেশ পাকা ওস্তাদ হয়ে গেছ দেখছি।

আস্তে। মা শুনতে পাবে।

অ্যাসট্টে লাগবে না?

হ্যাঁ হ্যাঁ, প্লীজ নিয়ে আয়।

সোনালী আঁচল দিয়ে ঢেকে অ্যাসট্রে এনে জিজ্ঞেস করল, রোজ কটা খাও?

এক প্যাকেটের বেশি না।

সোনালী চোখ দুটো বড় বড় করে বলল, এক প্যাকেট!

খোকন মৌজ করে টান দিতে দিতে বলল, আমি তো তবু কম খাই।

এক প্যাকেট কম হলো?

হোস্টেলের সব ছেলেরাই দুই-তিন প্যাকেট খায়।

অত সিগারেট খেলে তো টি বি হয়ে যাবে।

ওসব বাজে কথা ছেড়ে দে।

বেশি সিগারেট খাওয়া খারাপ না?

সে রকম ধরতে গেলে তো সব নেশাই খারাপ।

তবে?

তবে আবার কি?

তাহলে জেনে-শুনে নেশা করছ কেন?

আজকালকার যুগে সবাই কিছু না কিছু নেশা করে।

সবাই মোটেও করে না।

সবাই মানে অধিকাংশ লোকই…

জানো খোকনদা, সিগারেটের গন্ধটা আমার দারুণ লাগে!

ভালো লাগে?

খুউব।

খোকন হাসে।

সোনালী একটু থেমে বলে, তবে যে যাই বলুক, কলেজের ছেলেরা একটু-আধটু সিগারেট খেলে বড্ড ক্যাবলা ক্যাবলা লাগে।

খোকন ওর কথা শুনে একটু জোরেই হাসে।

হাসছ কেন।

তোর কথা শুনে।

আমি কি এমন হাসির কথা বললাম?

খোকন ওর কথার জবাব না দিয়ে পর পর দু-তিনটে টান দিয়ে সিগারেটটা অ্যাসট্রেতে ফেলে দেয়।

আচ্ছা খোকনদা, আমি কি সত্যিই বেশ বড় হয়ে গেছি? নিজের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে সোনালী প্রশ্ন করে।

খোকন ওর দিকে একবার ভালো করে দেখে বলল, তা একটু হয়েছিস। তুমি বড়দিনের ছুটিতে যা দেখেছিলে আমি তার থেকে বড় হয়েছি?

নিশ্চয়ই হয়েছিস।

দেখে বুঝা যায়?

শাড়ি পরে তোকে একটু বড় লাগছে।

তুমিও যেন হঠাৎ বড় হয়ে গেছ।

তাই নাকি?

সত্যি বলছি।

খোকন হাসে।

সোনালী হেসে বলে, সামনের বার হয়তো দেখব তুমি দাড়ি কামাতে শুরু করেছ।

খোকন একবার নিজের মুখে হাত বুলিয়ে বললে, সামনের বার না হলেও বছর খানেকের মধ্যে শুরু করতেই হবে।

ভালো কথা খোকনদা, মীরাদির বিয়ে হয়ে গেল।

প্রদীপ আমাকেও একটা কার্ড পাঠিয়েছিল। তোরা গিয়েছিলি?

জ্যাঠামণির অফিসে মিটিং ছিল বলে যেতে পারেননি। আমি আর বড়মা গিয়েছিলাম।

জামাইবাবু কেমন হলো রে?

খুব সুন্দর।

আজকালের মধ্যেই একবার প্রদীপদের বাড়ি যেতে হবে।

প্রদীপদা বোধহয় আজ বিকেলে আসবে।

ও এসেছিল নাকি?

দু-তিন দিন আগে এসেছিলেন।

ও জানে আমি আজ আসছি?

প্রদীপদা বসে থাকতে থাকতেই তোমার চিঠিটা এলো।

তাই নাকি?

হ্যাঁ।

আর কেউ আমার খোঁজ নিতে এসেছিল?

একদিন মানসদা এসেছিলেন।

মানস? খোকন একটু বিস্মিত হয়েই জিজ্ঞাসা করল।

মানসদা এসেছিল শুনে তুমি চমকে উঠলে কেন?

ও হতভাগা লিখেছিল বিলেত যাচ্ছে।

এবার সোনালী চমকে ওঠে, তাই নাকি?

স্টেশনে নেমেই মাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমার কোনো বন্ধু-বান্ধব এসেছিল কিনা, মা বলল না কেউ তো আসেনি।

বড়মা অত খেয়াল করেননি।

তোর মতন একটা প্রাইভেট সেক্রেটারি না থাকলে আমি যে কী মুশকিলেই পড়তাম।

সোনালী হেসে বলল, জ্যাঠামণিও ঠিক একই কথা বলেন।

মা রেগে যায় না?

না। বড়মা বলেন, আমি তোমার প্রাইভেট সেক্রেটারি হবো কোন্ দুঃখে?

সত্যি, মা যদি এম-এস সি পাস করে রিসার্চ বা প্রফেসারী করতেন, তাহলে অনেক উন্নতি করতেন।

বড়মা আমাকে পড়াতে পড়াতে কি বলেন জানো?

কি?

বলেন তোর জ্যাঠামণিকে বলে আয় আমার মতন মাস্টার রাখতে হলে মাসে মাসে আড়াই শ টাকা লাগবে।

বাবা কি বলেন?

জ্যাঠামণি গম্ভীর হয়ে বলেন, বিয়ের সময় লাখ টাকা নগদ না দিলে স্বামীর ঘরে এসে এসব খেসারত দিতে হয়।

খোকন আবার একটা সিগারেট ধরাতেই সোনালী বলল, তুমি আবার সিগারেট খাচ্ছ?

দেখতে পাচ্ছিস না?

এই তো, একটু আগে খেলে।

একটু আগে মানে ঘণ্টা খানেকের উপর হয়ে গেছে।

হলেই বা!

গল্প-গুজব করতে গেলেই একটু বেশি সিগারেট খাওয়া হয়। কলেজ ছুটির দিনে তো হোস্টেলের ঘরে ঘরে দার্জিলিং-এর মতন মেঘ জমে যায়।

হোস্টেলে খুব মজা হয়, তাই না খোকনদা?

অতগুলো রাজার বাঁদর এক জায়গায় থাকলে মজা তো হবেই।

হোস্টেলে তোমাদের দেখাশুনার জন্য কোন প্রফেসর থাকেন না?

থাকেন।

খোকন সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে বলল, মাঝে মাঝে তাকে আমরা এমন টাইট দিই যে তিনি আর এক সপ্তাহ আমাদের ধারে কাছে আসেন না!

প্রফেসরকে তোমরা কী টাইট দেবে?

কত রকম টাইট দিই, তার কি ঠিক-ঠিকানা আছে।

যেমন?

খোকন মুখ টিপে টিপে হাসতে হাসতে সিগারেট খায় কিন্তু কোন কথা বলে না।

সোনালী অধৈর্য হয়ে ওঠে। বলে, বলো না খোকনদা, প্লীজ। হোস্টেলের গল্প শুনতে আমার খুব ইচ্ছে করে।

না তোকে বলব না।

কেন?

তুই কখন যে মাকে বলে দিবি, তার কি ঠিক আছে!

না, না, বলব না।

ঠিক বলছিস?

সত্যি বলছি, কাউকে বলব না।

তুই জ্যাঠামণি আর বড়মার যা ভক্ত, তোকে হোস্টেলের কথা বলতে সত্যি ভয় হয়।

মা কালীর নামে বলছি কাউকে কিছু বলব না।

খোকন সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে বলল, রোজ সকাল-সন্ধেয় হোস্টেল সুপারিন্টেন্ডেন্ট একবার আমাদের দেখতে আসেন।

কি দেখতে আসেন?

সব ছেলেরা ঘরে আছে কিনা বা পড়তে বসেছে কিনা। তাছাড়া বাইরের কোন ছেলে আছে। কিনা তাও চেক করেন।

হোস্টেলে বাইরের ছেলে থাকতে পারে?

বাইরের মানে কলেজেরই বন্ধু-বান্ধব। অনেক সময় নাইট শোতে সিনেমা দেখে বাড়িতে না ফিরে হোস্টেলেই কারুর কাছে থেকে যায়।

বুঝেছি।

হতভাগা বোজ ভোর ছটায় এসে আমাদের উৎপাত করে। একদিন সবাই মিলে ঠিক হল আমরা সবাই দরজা খুলে ন্যাংটো হয়ে শুয়ে থাকব।

শুনেই সোনালী দাঁত দিয়ে জিভ কাটল। লজ্জা আর বিস্ময়মাখা দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বলল, এ রাম!

অত রাম রাম করলে শুনতে হবে না।

আচ্ছা, আচ্ছা, বলল।

মৌজ করে সিগারেটে টান দিয়ে খোকন বলল, পরের দিন ভোরবেলায় হোস্টেলের দেড়শ ছেলেকে তৈলঙ্গস্বামী হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে…

তোমাদের লজ্জা করল না?

হোস্টেলে থাকলে লজ্জা ঘেন্না ভয় বলে কিছু থাকে না।

একটু চুপ করে থাকার পর সোনালী জিজ্ঞাসা করল, পরে উনি কিছু বললেন না?

আমরা কি কচি বাচ্চা?

তবুও এই রকম একটা কাণ্ডর পর কিছুই বললেন না?

শুনেছিলাম সবাইকে ফাইন করা হবে কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভয়ে আর কিছু করেননি।

তাহলে হোস্টেলে বেশ ভালোই আছ।

এমনি বেশ মজায় থাকি তবে খাওয়া-দাওয়ার বড় কষ্ট।

কেন?

কি বিচ্ছিরি রান্না, তুই ভাবতে পারবি না।

তাই নাকি?

হ্যাঁরে। গলা দিয়ে নামতে চায় না।

এক গাদা টাকা নিচ্ছে অথচ…

শালারা চুরি করে।

তাহলে তোমরা কি করে খাও?

কি আর করব বল? বাধ্য হয়ে খিদের জ্বালায় সবাই খেয়ে নেয়।

বড়মা তাহলে ঠিকই বলেন।

মা কি বলে?

কালও বাজার করতে গিয়ে তোমার খাওয়া-দাওয়ার কষ্টের কথা বলছিলেন।

আজ আমি যা খেলাম, হোস্টেলে এর সিকি ভাগও খাই না।

আজকের রান্নাগুলো তোমার ভালো লেগেছে?

আমি ভাবতেই পারিনি তুই এত ভালো রান্না শিখেছিস।

আজকাল বড়মাকে আমি বিশেষ রান্নাঘরে ঢুকতে দিই না।

সব তুই করিস?

বড়মা বেশিক্ষণ রান্নাঘরে থাকলেই শরীর খারাপ হয়। হঠাৎ এক একদিন এমন মাথা ধরে যে বিছানা থেকে উঠতে পারেন না।

মা যে কিছুতেই ঠিক মতন ওষুধ খাবে না।

তুমিও ঠিক জ্যাঠামণির মতন কথা বলছ।

খোকন আর শুয়ে থাকে না উঠে পড়ে। বলে, যাই, এবার একটু মার কাছে শুই।

সোনালী হেসে বলল, তুমি কলেজে পড়লেও এখনো সত্যিকার খোনই থেকে গেছ।

খোকন ঘর থেকে বেরুতে বেরুতে বলল, আমি কি বুড়ো হয়ে গেছি যে মার কাছে শুতে পারি না?

আমি কি তাই বলেছি? কিন্তু…

সোনালীকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই খোকন একটু চাপা গলায় বলল, মার পাশে শোবার দিন তো ফুরিয়ে আসছে।

কেন?

কেন আবার? এর পর বউয়ের পাশে…

এ রাম! কি অসভ্য!

খোকন সোনালীর একটা হাত চেপে ধরে বলে, এতে অসভ্যতার কি আছে? আমি যেমন বউয়ের পাশে পোবো তুইও তেমন স্বামীর…

সোনালী অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বলল, আঃ খোকনদা, কী অসভ্যতা হচ্ছে।

খোকন সোনালীর হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলল, বিয়ে করা কি অন্যায়?

অন্যায় হবে কেন?

তবে বিয়ে করার কথা বলতেই তুই আমাকে অসভ্য বললি কেন?

যখন বিয়ে করবে তখন এসব কথা বোলো। সোনালী একটু হেসে বলল, এখন বিয়ে করতে চাইলেও তোমাকে বিয়ে দেওয়া হবে না।

তুই কি আমার বিয়ে দেবার মালিক?

মালিক না হলেও আমার মতামতেরও অনেক দাম আছে।

তাই নাকি?

নিশ্চয়ই।

খোকন আর দাঁড়ায় না। সোনালীও উঠলো। বলল, আমি কিন্তু একটু পরেই চা করব।

.

খোকন মাকে জড়িয়ে শুতেই উনি বললেন, তুই এলি আর আমার দুপুরবেলার বিশ্রামের বারোটা বাজল।

তুমি ঘুমোও না।

এমন করে জড়িয়ে থাকলে কেউ ঘুমোত পারে?

অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছ। আর ঘুমোতে হবে না।

কেন, কটা বাজে?

চারটে।

এর মধ্যেই চারটে বেজে গেল?

সময় কি তোমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে?

এই তোর বকবকানি শুরু হলো।

সত্যি মা, তোমার কাছে এলেই বকবক করতে ইচ্ছে করে।

মাকে জ্বালাতন না করে কি তোর শান্তি আছে?

মার কথা শুনে খোকন হাসে।

এতক্ষণ তুই কি করছিলি?

সোনালীকে হোস্টেলের গল্প বলছিলাম।

ছুটির মধ্যে তোদের কি সত্যি টিউটোরিয়াল হবে?

আরে দূর। কে ছুটির মধ্যে টিউটোরিয়াল করবে?

তবে যে বলছিলি দিন পনেরো পরেই যেতেই হবে?

ও সোনালীকে ক্ষ্যাপাবার জন্য বলছিলাম।

তুই আসবি বলে ও আজ কটায় উঠেছে জানিস?

কটায়?

পাঁচটারও আগে।

খোকন শুনে হাসে।

ওর মা বললেন, সকাল আটটা থেকে ও আমাকে স্টেশনে যাবার জন্য তাড়া দিতে শুরু করল।

আচ্ছা মা, সোনালীদের বাড়ির কি খবর?

বিহারীর দোকানটা মোটামুটি ভালোই চলছে আর সন্তোষকে তো তোর বাবা ওঁদেরই অফিসে ঢুকিয়ে দিয়েছেন।

তাই নাকি?

হ্যাঁ। তুই জানিস না?

না।

সোনালী ওদের বাড়ি যায়?

প্রত্যেক মাসেই যায় তবে রাত্তিরে থাকে না।

কেন?

ও আর আজকাল আমাদের ছেড়ে থাকতে পারে না।

খোকন আবার হাসে।

ওর মা বলেন, তাছাড়া ও না থাকলে আমাদেরও খুব খারাপ লাগে।

তা তো লাগবেই।

বিশেষ করে তোর বাবার তো এক মিনিট ওকে না হলে চলবে না।

তাই নাকি?

ওর মা হেসে বললেন, সোনালী যেদিন ওর বাবা-মার কাছে যায় সেদিন তোর বাবাকে দেখতে হয়।

কেন? কি করেন?

অফিস থেকে বাড়ি ফিরে মিনিটে মিনিটে আমাকে শোনাবেন, হতভাগী মেয়েটা না থাকলে বাড়িটা এত ফাঁকা ফাঁকা লাগে যে।

খোকন হেসে বলে, আচ্ছা।

তারপর আটটা বাজতে না বাজতেই নিজে গাড়ি নিয়ে ছুটবেন।…

খোকন একটু জোরেই হাসে।

এখনই হাসছিল? আসলে উনি সোনালীকেই আনতে যান কিন্তু ওখানে গিয়ে বলবেন, কাল ভোরবেলায় চলে আসিস।

সোনালী থাকে?

ও হতভাগীও জানে, জ্যাঠামণি ওকে আনতেই গেছে। ও জ্যাঠামণির গাড়ি চেপে চলে আসে।

সোনালী ট্রেতে করে তিন কাপ চা নিয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে, জানো খোকনদা, বাড়িতে এসে দেখি বড়মা আমার জন্য রান্না করছেন।

খোকনের মা নিজের দুর্বলতা ঢাকার জন্য কোনমতে গম্ভীর হয়ে বললেন, আমি যখন জানি তুই আসবিই তখন তোর জন্য রান্না করব না?

খোকন চায়ের কাপে চুমুক দিয়েই মাকে বলে, যেমন বাবা তেমন তুমি! দুজনেই মেয়েটার মাথা খাছ।

ওর মা একটু রাগের ভান করে বলেন, তুই চুপ কর।

সোনালী খুশির হাসি হেসে বলল, ঠিক হয়েছে।

খোকন কটমট করে সোনালীর দিকে তাকিয়ে বলল, আমি তোর জ্যাঠামণি বা বড়মা না। ঠিক একটা থাপ্পড় খাবি।

খোকনের মা এবার সত্যি রেগে বললেন, কথায় কথায় থাপ্পড় মারা কি ধরনের কথা?

বেশ তো শাড়ি-টাড়ি পরছে। এবার কোন একটা হাবা-কানা ধরে বিয়ে দিয়ে দাও না।

সোনালী বলল, তোমার কি এমন পাকা ধানে মই দিয়েছি যে তুমি আমাকে তাড়াতে চাও?

খোকনের মা সোনালীর দিকে তাকিয়ে বললেন, দু-এক বছর পরে সত্যি তোর বিয়ের কথা ভাবতে হবে।

খোকন মুহূর্তের জন্য সোনালীকে একবার ভালো করে দেখেই বলল, দু-এক বছর দেরি করারই বা দরকার কী?

সোনালী গম্ভীর হয়ে বলল, আমার ব্যাপারে তোমাকে মাথা ঘামাতে হবে না।

খোকনের মা বললেন, খোকন যাই বলুক না কেন, এবার সত্যিই তোর বিয়ের কথা ভাবতে হবে।

সোনালী কোনো কথা না বলে লজ্জায় ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

Pages: 1 2 3 4 5
Pages ( 1 of 5 ): 1 23 ... 5পরবর্তী »

1 thought on “সোনালী || Nimai Bhattacharya”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *