Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সাহেব বিবি গোলাম || Bimal Mitra » Page 43

সাহেব বিবি গোলাম || Bimal Mitra

কলকাতার রাস্তা তখন জনহীন। শুধু একবার যেন মনে হলো সেই আলোয়ান গায়ে লোকটা দূর থেকে তার পেছনেপেছনে আসছে। তাকে অনুসরণ করছে। অদ্ভুত লোকটা। যেখানে গিয়েছে ভূতনাথ, সেখানেই তাকে অনুসরণ করে। কিন্তু হঠাৎ সোজা হয়ে থমকে দাঁড়ালো ভূতনাথ। আজ যেন তার সাহস ফিরে এল। আজ—কি জানি কেন—তার যেন বিশ্বসংসারে কাউকে আর ভয় করবার কথা নয়। আজ যেন সে যে-কোনো বিপদের সামনে মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারে।

বনমালী সরকার লেন-এর মুখে এসে দাঁড়িয়ে ভূতনাথ একেবারে সোজাসুজি লোকটার দিকে মুখোমুখি হয়ে রইল। কাছে এলেই ভূতনাথ জিজ্ঞেস করবে—কে তুমি? কী চাও? কেন আমার পেছনে ঘোর দিনরাত? কী তোমার মতলব?

কিন্তু আশ্চর্য! লোকটা তাকে থামতে দেখেই পাশের একটা গলির ভেতর আত্মগোপন করে গিয়েছে।

ভূতনাথ অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল সেখানে তেমনি ভাবে। নরহরি মহাপাত্রের দেবতাগুলো যেখানে ছিল সেখানে সেই অশ্বগ্ধ গাছটা আর নেই এখন। একদিন ঝড়ে বেদীশুদ্ধ শেকড় উপড়ে পড়ে গিয়েছিল। ভূতনাথ গলির ভেতর ঢুকে সেইখানে দাঁড়িয়ে আবার পেছন ফিরে দাঁড়ালো। লোকটা যেন গলির মুখে এসে দাঁড়ালো একবার। তারপর ভূতনাথকে দেখেই সরে পড়লো আবার। ভূতনাথ ভাবলে—দূর হোক ছাই—ও নিশ্চয়ই স্পাই।

নিবারণ বলতে টিকটিকি। তা টিকটিকিই বটে। কয়েকবারু রাস্তায় দাঁড়িয়ে শুধু নিবারণের সঙ্গে কথা বলেছে ভূতনাথ। তাতেই তার ওপর সন্দেহ। নরেন গোঁসাইকে জেলের মধ্যে গুলী করে মারার পরদিন থেকেই যেন ওদের দৌরাত্ম বেড়েছে। রাস্তায় বাড়িতে কোথাও শান্তি নেই।

নিবারণ বলেছিল—ম্যাটি কুলেশনে ব্রিটিশ-হিস্ট্রি পড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে জানেন?

ভূতনাথ জানতো না। বললে—কেন, আমাদের সময়ে তো পড়েছি?

নিবারণ বললে—বেকার সাহেব আর ফুলার সাহেব ভাবলে ওই ব্রিটিশ-হিস্ট্রি পড়েই বুঝি আমাদের মাথা বিগড়ে গিয়েছে। ম্যাগনা কার্টা, স্টুয়ার্ট রাজাদের কাণ্ড, হ্যাম্পডেন, ক্রমওয়েল, চার্লস ফাস্ট এসব কথা হিস্ট্রি পড়েই তো জেনেছি কিন্তু হলে কী হবে, বন্ধ করার পর থেকে যারা হয় তো কখনও পড়তো না তারাও পড়তে আরম্ভ করেছে।

ভূতনাথের মনে আছে অত কাণ্ড করেও তবু কিছু সুরাহা হয়নি। কালীঘাটে যেদিন কেওড়াতলাতে পোড়াতে নিয়ে এসেছিল কানাই দত্ত আর সত্যেন বোসকে, সে কী ভিড়! পঞ্চাশ হাজার লোক রাস্তায় ভিড় করে সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছে শুধু একটু দেখবে বলে। নরেন গোঁসাইকে খুন করার জন্যে ফাঁসি হয়েছিল দুজনের। অত ভিড় এক জায়গায় জীবনে কখনও দেখেনি ভূতনাথ। স্বামী বিবেকানন্দ এসেছিলেন সেই একদিন শেয়ালদ’ স্টেশনে, সে ছিল এক ভিড়, তারপর পার্শিবাগানে সেই আনন্দমোহন বোসের ‘সভার ভিড়, আর তারপর এই ভিড়। এ-ভিড় যেন সকলকে ছাপিয়ে গিয়েছিল।

পাশের কোন্ বাড়িতে ঢং-ঢং করে অনেকগুলো বেজে গেল। রাত অনেক হয়েছে। আর দাঁড়িয়ে লাভ নেই। পকেট থেকে চাবি বার করে বড়বাড়ির গেট খুলে ভেতরে ঢুকে পড়লো ভূতনাথ।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress