সমর সেনের কবিতা নিয়ে আলোচনা
চল্লিশ দশকের একজন বিশিষ্ট কবি সমর সেন। তাঁর কাছে কবিতা ছিল আবেগ বর্জিত, মননজাত অভিজ্ঞতার ফসল। তারল্যের টান রয়ে গেছে বাংলা কবিতায় ঐতিহ্যে , সে টান উপেক্ষা করা সহজ ছিল না যেমন, তেমনই অন্যদিকে কল্লোলীয় রোমান্টিকতা হয়ে দাঁড়িযে ছিল মধ্যবিত্তশ্রেণীর বিলাসব্যসন। আর সে সময় যারা বুদ্ধি দিয়ে কবিতা চর্চা করতে চাইছিলেন তা’রা যেন রোমান্টিকতার বিপরীতে যাওয়ার প্রবল তাগিদেই তৈরী করে নিতে চাইছিলেন মননের একটা পৃথক ঘেরাটোপের জগৎ।
আবেগের তরলতায় নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়ায় সায় ছিল না সমর সেনের। কিন্তু, শুধু যুক্তির স্তরে স্তরেই তৈরী হবে কবিতার জগৎ, এমন ভাবনাও তাঁর কাছে ছিল অবাস্তব। ফলে তাঁর কবিতায় বারবারই ফুটে উঠেছে সংশয়, ক্ষোভ ও দুশ্চিন্তার ছবি। পরে তিনি অবশ্য স্বীকার করেছিলেন (‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার একটি সংখ্যায়) , ‘বুদ্ধি ও আবেগের সমন্বয়ই কবিতার উৎস।’
১৯৩৭ সালে প্রকাশিত তাঁর কবিতার প্রথম বই ‘কয়েকটি কবিতা’- দেখা গেছে, তাঁর অভিজ্ঞতায় উঠে আসা নাগরিক জীবনের ক্লেদ, ক্লান্তি, হতাশা আর মধ্যবিত্ত জীবনের প্রতি অবজ্ঞার প্রতিচ্ছবি, যা তিনি নিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন তাঁর সেই কবিতাগুলিতে। তাকে তিনি তুলে ধরেছিলেন নিজস্ব আঙ্গিকে অনন্য রূপে।
কলকাতার শহরের সুস্পষ্ট ছবি ধরা পড়েছে তাঁর কবিতায় –
“চোরাবাজারে দিনের পর দিন ঘুরি।
সকালে কলতলায়
ক্লান্ত গণিকারা কোলাহল করে,
খিদিরপুর ডকে রাত্রে জাহাজের শব্দ শুনি ;
…………………………………………….
আর শহরের রাস্তায় কখনো প্রাণপণে দেখি
ফিরিঙ্গি মেয়ের উদ্ধত নরম বুক।”
(একটি বেকার প্রেমিক)
তাঁর কাব্যিক চেতনায় নাগরিক জীবনের হতাশা ক্লান্তি বিষাদ ধরা পড়েছে বিভিন্নভাবে।
‘গোধূলি’ কবিতায় তিনি, গোধূলিতে নেমে আসা অন্ধকারে পশ্চিমের আকাশকে দেখছেন চাপা রক্তস্নাত,
হাওয়ায় ভেসে আসা ফুলের গন্ধ আর কিসের হাহাকার।
এই নির্জনতায় তিনি বিরহের চরণধ্বনি শুনতে পেয়েছেন –
” রজনীগন্ধার আড়ালে কী যেন কাঁপে,
কী যেন কাঁপে
পাহাড়ের স্তব্ধ গভীরতায়।
তুমি এখনো এলে না।
সন্ধ্যা নেমে এলো : পশ্চিমের করুণ আকাশ,
গন্ধে ভরা হাওয়া,
আর পাতার মর্মর-ধ্বনি। “
(বিরহ)
সেই বিরহের ছবিটাই আবার ভিন্নভাবে ধরা পড়েছে ‘নিঃশব্দতার ছন্দ’ কবিতায় –
” স্তব্ধরাত্রে কেন তুমি বাইরে যাও?
আকাশে চাঁদ নেই, আকাশ অন্ধকার,
বিশাল অন্ধকারে শুধু একটি তারা কাঁপে,
হাওয়ায় কাঁপে শুধু একটি তারা।
কেন তুমি বাইরে যাও স্তব্ধরাত্রে
আমাকে একলা ফেলে?
কেন তুমি চেয়ে থাক ভাষাহীন, নিঃশব্দ পাথরের মতো?
স্তব্ধ অর্ধরাত্রে আমাকে কেন তুমি ছেড়ে যাও
মিলনের মুহূর্ত থেকে বিরহের স্তব্ধতায়।”
আবার এই স্তব্ধ হতাশ নিঃসঙ্গতার মধ্যেও তিনি খুঁজে ফেরেন আলোর দিশা –
” তুমি কি আসবে আমাদের মধ্যবিত্ত রক্তে
দিগন্তে দুরন্ত মেঘের মতো !
কিংবা আমাদের ম্লান জীবনে তুমি কি আসবে,
হে ক্লান্ত উর্বশী,
চিত্তরঞ্জন সেবাসদনে যেমন বিষণ্ণমুখে
উর্বর মেয়েরা আসে
কত অতৃপ্ত রাত্রির ক্ষুধার ক্লান্তি,
কত দীর্ঘশ্বাস,
কত সবুজ সকাল তিক্ত রাত্রির মতো,
আর কতো দিন !”
(উর্বশী)
মধ্যবিত্ত জীবনে উর্বশী আসে না। বর্তমানে উর্বশীদের মতো মেয়েদের যেতে হয় চিত্তরঞ্জন সেবা সদনে। সেখানে অন্যদের সেবাদাসী হয়ে অবসাদ ও ক্লান্তির সঙ্গে তাদের জীবনের পরমায়ু ক্ষয় হয়ে যায়। তাদের বিষাদ-বিষন্ন মুখে আঁকা থাকে শুধু জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার করুণ রূপকথার চিত্রকলা। তাই কবির জীবনে উর্বশী আসার ভাবনা শুধু মাত্র অবাস্তব কল্পনা হয়েই রয়ে যায় শেষপর্যন্ত।
সমর সেনের প্রেমের কবিতায় যে বিরহ আছে, তাতে প্রাপ্তির প্রত্যাশা নেই, আছে ক্লান্তি, হাহাকার আর হতাশার নির্মম উপস্থিতি। কলকাতা শহরের অচ্ছেদ বন্ধনে জড়িয়ে পড়ে তিনি বলেছেন –
” যত দূরে যাই ইঁটের অরণ্য
পায়ে চলা পথের শেষে কান্নার শব্দ”
‘স্বর্গ হতে বিদায়’ কবিতায় কবি বলেছেন –
“ম্লান হয়ে এল রুমালে
ইভিনিং ইন প্যারিসের গন্ধ
হে শহর, হে ধূসর শহর !
কালীঘাটের ব্রীজের উপর কখনও কি শুনতে পাও
লম্পটের পদধ্বনি
কালের যাত্রার ধ্বনি শুনতে কি পাও
হে শহর, হে ধূসর শহর।”
(স্বর্গ হ’তে বিদায়)
বিপদ-আপদ, দুর্যোগের ঝড় বৃষ্টি যখন নেমে আসে মানুষের জীবনে, তখন কবির মনও ব্যথিত হয়ে ওঠে, কবি বলে ওঠেন-
” পাশের ঘরে
একটি মেয়ে ছেলে-ভুলানো ছড়া গাইছে,
সে ক্লান্ত সুর
ঝ’রে-যাওয়া পাতার মতো হাওয়ায় ভাসছে,
আর মাঝে মাঝে আগুন জ্বলছে
অন্ধকার আকাশের বনে।
…………………………………………….
বর্ষাকালে,
অনেক দেশে যখন অজস্র জলে ঘরবাড়ি ভাঙবে,
ভাসবে মূক পশু ও মুখর মানুষ,
শহরের রাস্তায় যখন
সদলবলে গাইবে দুর্ভিক্ষের স্বেচ্ছাসেবক,
তোমার মনে তখন মিলনের বিলাস,
ফিরে যাবে তুমি বিবাহিত প্রেমিকের কাছে।
হে ম্লান মেয়ে, প্রেমে কী আনন্দ পাও,
কী আনন্দ পাও সন্তানধারণে?”
(মেঘদূত)
সংগ্রামী গণচেতনায়, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই কবির কলমে ধরা পড়েছে দুর্ভিক্ষের নানা ছবি। পৃথিবীর নব আগন্তুকের উদ্দেশ্য কবি বলে ওঠেন –
” কে এসেছে কালরাত্রে কৃতান্তনগরে?
এখন হাটের বেলা, এখানে মজার খেলা,
সারি-সারি শবদেহ সাজানো বাজারে।
বজ্রনখ উলূক রাত্রির কালো গানে
দেশভক্ত বিভীষণ, মৎসবন্ধু বকধার্মিকের
কাঁধে হাত রেখে, দেখ, চলে,
মহম্মদী বেগ খর খড়্গ শানায়,
বাজার ভরেছে আজ হন্তারক দলে
দুঃসাহসে তুষ্ট আমি আশীর্বাদ করি,
পৃথিবীতে জন্ম যেন না হয় তোমার |”
(নচিকেতা)
সমাজের হতাশা গ্লানির অন্ধকারে বাস করে তিনি অকারণে, নতুন সূর্যোদয়ের ছবি তিনি আঁকতে পারেননি তাঁর কবিতায় , বরং ঘুণধরা সমাজের ছবি তিনি বারংবার এঁকেছেন তীক্ষ্ণ কলমের আঁচড়ে। ফলে তাঁর কবিতাকে মার্ক্সবাদ অনুরাগী কেউ কেউ ‘অন্ধকারের দিনলিপি’ বলে উপহাস করেছেন। তাদের কেউ কেউ আবার বিদ্রূপ করে তাকে ‘হতাশার কবি’ আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কবি অরুণকুমার সরকারের অভিযোগ ছিল, ‘সমর সেন কখনোই কবিতা লেখাকে তেমন seriously (গুরুত্ব সহকারে) নেননি। হেলাফেলা করে কবিতা লিখেছেন। তাই তাঁর লেখা এমন আবেগ বর্জিত নীরস। তাঁর কবিতা রুদ্ধরতির কবিতা।’
প্রেমের কবিতায়ও তিনি মোটেই রোমান্টিক নন, প্রেমের অনুভব কবির কাছে, ভুলে যাওয়া গন্ধের মতো। তাই তিনি লেখেন –
” ভুলে যাওয়া গন্ধের মতো
কখনো তোমাকে মনে পড়ে।
হাওয়ার ঝলকে কখনো আসে কৃষ্ণচূড়ার উদ্ধত আভাস।
আর মেঘের কঠিন রেখায়
আকাশের দীর্ঘশ্বাস লাগে।
হলুদ রঙের চাঁদ রক্তে ম্লান হ’লো,
তাই আজ পৃথিবীতে স্তব্ধতা এলো,
বৃষ্টির আগে শব্দহীন গাছে যে-কোমল,
সবুজ স্তব্ধতা আসে। “
(বিস্মৃতি)
‘বসন্ত’ কবিতায় তিনি বলে ওঠেন আবার –
” বসন্তের বজ্রধ্বনি অদৃশ্য পাহাড়ে।
আজ বর্ষশেষে
পিঙ্গল মরুভূমি প্রান্ত হতে
ক্লান্ত চোখে ধানের সবুজ অগ্নিরেখা দেখি
সুদূর প্রান্তরে।”
কবিতায় যেন তিনি নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে চেয়েছেন।
পঁচিশ বছর বয়সে নিজের সম্পর্কে, কবির যা উপলব্ধির তা বলেছেন –
“বছর পঁচিশ হলো পৃথিবীতে বাসা।
কেরানি সন্তান আমি চতুর মানুষ,
কৈশোরে শুনেছি নানা মজাদার কথা,
কেরামৎ! এরই মধ্যে করতল গত
কত ছলা”
পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে এসে, সেই কবির কবিতায় ধরা পড়েছে হতাশার ছবি –
“পুত্রকন্যা এখনো আঙুলে গোনা যায়
বয়স মাত্র পঁয়ত্রিশ,
তবু নিজেকে কতদিনের জীর্ণ বৃদ্ধ লাগে
জিবে স্বাদ নেই জানি না
কি পাপে সুস্থ শরীর ঘুণের আশ্রয়”
এখানে মনে মনে তিনি জরাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন মনেহয়, কিন্তু বুদ্ধদেব বসু তাকেই আবার ‘নবযৌবনের কাব্য’ বলে উল্লেখ করেছেন। যা আমাকে কিছুটা বিভ্রান্ত করেছে।
একটি কবিতায় তিনি বলেছেন,
” প্রেম আমার পরিখা, দন্ড প্রাকার,
অথবা –
প্রেম ও পলিটিক্সের বিচিত্র গতি
হৃদয় বিষাদে ভরায়,
নৈরাজ্য আর লাল ধ্বংসে শুধু।
ভোতা বর্শায় কাজ সেই আর
সম্বল মৌণ ব্রত, ঈশ্বর বেনের আশ্রয়।
নেপথ্যে অহরহ আশ্বাস বাণী :
গণতন্ত্র আসন্ন
সামনে দন্ড হাতে তারি শিষ্ট দূত,
কয়েকদিনের শান্ত তদারক গরাদের আড়ালে।”
তিনি হতাশায় আক্ষেপ করে বলেছেন –
“পথেঘাটে রৌদ্রের করাল উত্তাপ
নাসারন্ধে দুর্গন্ধ, স্তুপিকৃত জঞ্জাল
শুনেছি ধর্মঘটে কর্পোরেশন বেহাল,
কলেরা বসন্ত প্লেগের আসন্ন উৎসব।”
বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা তাঁর কবিতায় ধরা পড়েছে নিখুঁতভাবে –
“শহরে নেমে এল আদিম অন্ধকার
চাঁদনিচকে শিস দেয় এ.আর.পি সর্দার।”
অন্ধকারের মধ্যে কবি শোনেন, বুড়ো মজুর তার সঙ্গীকে বলছে,
………… হামারা হিন্দুস্থান নেহি দেঙ্গে
হিম্মৎ হায়, জানোয়ার মারনেকে লিয়ে, মরনেকো লিয়ে তৈয়ার,
ভাই জানোয়ার, হাতিয়ার চাহিয়ে, তেজ হাতিয়ার।
হিন্দুস্থানকী উজ্জৎ বাঁচ নেহি শেকতি ইয়ে কারা বুরখায়
ব্ল্যাকআউট তো বিলকুল মজুরীকা বাত হ্যায়।
আবার কবি বিষাদ বেদনায় বলে উঠেছেন –
“এ ঘোর রজনী মেঘের ঘটা,
কী করে আসবে বাটে
দূর বার্লিনে বঁধুয়া তিতিছে
বেতারে শুনে প্রাণ ফাঁটে।”
কবির আকাঙ্খা ছিল –
” আগামীকাল আসুক ঘর ফিরতি মজুরের গানে
কুমারীর আত্মদানের প্রথম বেদনায়
নবজাত শিশুর সহজ কান্নায়
শতাব্দীর যন্ত্রণার পর
নতুন দিন আসুক সভ্যতার চরম চিত্ত সুখিতে।”
সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’ কবিতার কথা মনে পড়ে। কিন্তু বাস্তবে কবির সে বাসনা পুরণ হয়নি।
বরং পরবর্তীকালে দুর্ভিক্ষের ছবি ধরা পড়েছে তাঁর কবিতায় –
“ভদ্রভাবে দিন গুজরান অসম্ভব আজ।
কোচার পাটে ময়লা জমে
টেরিও থাকে না ঠিক
ষোড়শপচার ব্যঞ্জন কমে
……….. কিছুদিন আগে
জ্বর থেকে উঠে অল্পক্লান্ত রুগী
খেয়েছে অন্ততঃ পান্তা ভাত,
পাশে যার লালচে নুন,
মনোহর কাঁচালঙ্কা রক্তিম সবুজ।
আজ তাকে দেখি বেলা দ্বিপ্রহরে
ফ্যান খুঁজে ধোঁকে গৃহস্থের দুয়ারে দুয়ারে
বিরাট নগরে।”
দুধ-ভাত নয়, পান্তা-ভাত আর কাঁচালঙ্কাও নয়,
শহরের দরজায় দরজায় ফ্যান খুঁজে বেড়ায়।
তাঁর কলমের আঁচড়ে, বিয়াল্লিশের মন্বন্তরের ছবি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
তিনি আশাহত হয়ে বলেন –
“গ্রাম ছেড়ে গ্রামান্তরে যাই
কঙ্কালে ভরেছে দেশ।
এ রোদে সোনার ধান পোড়ে
মনে নীলকান্ত মেঘ শেষ।
কড়া রোদ যেন সাদা জানোয়ার
দীর্ণ করে পৃথিবী আমার
দেবতাকে গাল দিয়ে কলকাতায় ফিরি।”
কবিতা লেখার ব্যাপারে সমর সেন প্রথম থেকেই আঙ্গিক ও প্রকাশ ভঙ্গীর উপর জোর দিয়েছিলেন। শুধু কি প্রকাশ ভঙ্গী? তাঁর কবিতার জগৎ ছিল সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় পরিপুষ্ট প্রত্যক্ষ জগৎ। তিনি মনে করতেন, অনুভবের শিহরণ ছাড়া অভিজ্ঞতা কী করে স্পন্দিত হয়ে উঠবে আর তা পূর্ণতায় পৌঁছাবে? অনুভবের শিহরণ তো ব্যক্তি হৃদয়েই ঘটে, কিন্তু সে কোন ব্যক্তি? সে তো সমাজ ইতিহাস সম্পৃক্ত মানুষ। সেই মানুষকে জানতে হলে, জানতে হবে চারপাশের পরিবেশ, সময়, সমাজ ও ইতিহাসের বিবর্তনকে। তাই সমর সেনের কবিতার প্রকাশভঙ্গী, কারও কারও কাছে খানিকটা নাটকীয় বলে মনে হয়েছে। তিনি নিজে মনে করতেন, নাটকীয়তা মানব-প্রকৃতির ভিতরেই বিদ্যমান রয়ে গেছে। তাকে উপেক্ষা করা কোন সচেতন কবির পক্ষে সম্ভব নয়।
এলিয়টের ভ্রান্তি সম্পর্কে সচেতন থাকা সত্বেও, এলিয়টের উৎসাহ তাঁর ‘সাহিত্য ভাবনা’ গড়ে তোলার ব্যাপারে খুবই সহায়তা করেছিল। এক সময় তাঁর মনে হয়েছিল, বাংলা কবিতা আধুনিকতার সন্ধানে যাত্রা করে, হারিয়ে ফেলেছে তার মূল শিকড়। তিনি বুঝেছিলেন, বিদেশী শস্যে কিংবা আবেগবিহ্বল আশাবাদ দিয়ে তা পেরিয়ে যাওয়া, কোন মতেই সম্ভব হয়ে উঠবে না। তাই তাঁর লেখা কবিতার নিজস্বতা ছিল অনন্য রকমের একক। তাঁর কবিতার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও ব্যতিক্রমী প্রকাশের নিজস্বতার বৈশিষ্টে তা ছিল উজ্জ্বল এপিক। সমর সেন তাঁর কবিতায় সংযম ও কাঠিন্যে, রোমান্টিকতা বর্জিত তীক্ষ্ণ ভাষা প্রয়োগ করেছিলেন, যা সেই সময় সাহিত্যজগতকে বেশ আলোড়িত করে তুলেছিল। পরবর্তীকালে তাকে ‘নাগরিক কবি’ বলা হয়েছিল। এমন তকমায় তিনি মোটেও খুশি ছিলেন না।
সমর সেনের কবিতা তাই, আধুনিক মনস্ক মননশীল পাঠকের অপেক্ষায় থাকবে বহুকাল।