Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সমকামি || Pritha Chatterjee

সমকামি || Pritha Chatterjee

সমকামি – প্রথম পর্ব

গল্প শুরু করার আগে বেশ কিছু কথা মনে হলো আলোচনা বা বলার দরকার আছে। দরকার আছে কারণ আমাদের কিছু পুরনো এবং ভুল বিচার বিবেচনা বদলানোর দরকার আছে বলে। এই গল্পে যেমন একটি মেয়ে থাকবে তেমিন থাকবে দুজন পুরুষ, হ্যাঁ দুজন সমকামী পুরুষ। না এটা কোনো বিরোধিতা নয়, না সেই মেয়েটির বিরুদ্ধে না সেই দুজন পুরুষের বিরুদ্ধে যারা একে অপরে আসক্ত। ভালোবাসা তা যেমনই হোক না কেনো সেটা ভালোবাসাই হয়, তাকে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ বা তাদের চিন্তাধারা কলুষিত করতে পারে না। কিন্তু প্রশ্ন সেটা নয়, এই গল্পে সেটাই দেখানোর চেষ্টা করবো মাত্র। এই গল্পটা যেমন সমকামিতার ঠিক তেমন একটা মেয়ের যার স্বামী সমকামী এবং মেয়েটি সব জেনেও তা মেনে নিয়েছিল কারণ সে ভালোবাসাকে কোনো অন্যায় বলে মনে করেনি। কিন্তু তার এই উদার বা আধুনিক যাই বলুন না কেন সেই মানুষিকতা কোনো দাম বা মূল্য পেলো না কারণ সমাজটা আজও মেয়েদের সেই স্বাধীনতা দেয় না যা একজন পুরুষ ভোগ করে থাকে। তা সে যেমনই হোক না কেন? সে সমকামী হোক বা আমাদের কথা এবং চিন্তাধারা অনুযায়ী একজন সুস্থ মানুষ। আর ঠিক এখানেই বাঁধ সাদলো হেরে গেলো বললে হয়তো ভুল বলা হবে না অন্যন্যার চিন্তাধারা তার ভাবনা।

একজনের লেখক বা লেখিকার লেখার সার্থকতা তখনই যখন পাঠককুল তাকে গ্রহণ করে সেটা ভালো বা খারাপ যে ভাবেই হোক না কেনো। এই গল্পে কিছু প্রশ্ন সমাজের তথা সমস্ত পাঠক কূলের কাছে ও থাকলো যারা এই গল্পটি পড়বেন নিজেদের কিছু মতামত অবশ্যই জানাবেন! কারণ ভুল মানুষ মাত্রই হয় এবং আমি ও নিজেকে তার উর্ধ্বে গিয়ে মনে করি না।

গল্পটির প্রধান তিনটি চরিত্র অন্যন্যা, অন্যান্যর স্বামী অয়ন এবং তাঁর ছোটবেলার বন্ধু নিখিলেশ। নিখিলেশ এবং অয়নের বেড়ে ওঠা প্রায় একই সাথে। নিখিলেশ এর বাবা একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মী এবং অয়নের বাবা একজন নাম করা হার্ট সার্জেন। একটি বিসালবহুল কমপ্লেক্সে দুজনেই থাকেন। সেই সূত্র ধরেই অয়ন এবং নিখিলেশ এর পরিচয় বন্ধুত্ব তাদের একসাথে বেড়ে ওঠে বড়ো হওয়া সবটাই। বয়স এবং সময় যতো গড়িয়েছে অয়ন এবং নিখিলেশ দুজনেই একটা উপলব্ধি করতে পেরেছে যে তারা শুধুমাত্র বন্ধুত্বের গণ্ডিতে আটকে নেই তারা একে অপরকে শুধু পছন্দ করে না তারা একে অপরকে ভালোবাসে আর সেই ভালোবাসাটা শুধুমাত্র একজন বন্ধকে ভালোবাসার মতো নয়। দুজনেই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র একজন বাবার পথ ধরেই ডাক্তার হতে চায় এবং অপরজন চায় কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে এগোতে। এই পর্যন্ত অনেকটা তাও স্বাভাবিক কারণ তারা যেহেতু দুজনের পুরুষ তাদের একসাথে থাকা খাওয়া রুম বা বেড শেয়ার করা নিয়ে কখনোই করো মনে কোনো প্রশ্নের উদয় ঘটেনি স্বাভাবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সেটা হবার কথাও নয়। বয়সের সাথে সাথে তাদের মেলামেশার পদ্ধতিও বদলাতে থাকে তারা আর শুধুমাত্র মানসিক ভাবে নয় তারা শারীরিক ভাবেও একাধিকবার মিলিত হয়েছে। কিন্তু তাদের এই সম্পর্কের কথা তাদের দুই পরিবারের কাছেই ছিল অজানা। সময় পেরিয়েছে সময়ের মতো করে অয়ন এবং নিখিলেশ ও আজ নিজের নিজের জায়গায় পড়াশুনা শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হবার চেষ্টা করছে। আর পারিবারিক ভাবে দুজনেই যেহেতু আর্থিক এবং সামাজিক ভাবে স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান তাই সেইদিক থেকে ও কোনো সমস্যা নেই।

কিন্তু সত্যি এমন একটি বস্তু যা চিরকাল লুকিয়ে রাখা যায় না ঠিক তেমনি করে অয়ন বা নিখিলেশ ও লুকিয়ে রাখতে পারেনি তাদের সম্পর্ক। দিনটা ছিল অয়নের জন্মদিন সেই সূত্রে বাড়িতে একটি বড় পার্টি এ্যরেঞ্জ করে ভাস্কর চৌধুরী ( অয়নের বাবা নাম করা হার্ট সার্জেন)। আর এটাই হয়েছিল কাল পার্টির পরেরদিন সকালে দুই পরিবারের কাছে এটা একদম পরিষ্কার হয়ে যায় যে অয়ন এবং নিখিলেশ তারা সমকামী এবং একে অপরের সাথে শারীরিক ভাবেও আসক্ত। কিন্তু তথাকথিত সমাজে পরিবার যতই উচ্চবিত্ত বা শিক্ষিত এবং অর্থবান হোক না কেনো তারা যা দেখে বা জেনে বড়ো হয়েছে তার বাইরে বেরিয়ে আসতে চায় না বা বলা ভালো বেরিয়ে আসতে পারে না সমাজ সংসারের দেখিয়ে দেওয়া নিয়মগুলোর বাইরে। ঠিক তেমন পারেনি অয়ন এবং নিখিলেশের পরিবার ও। বাড়ির লোক সবটা জেনে যাওয়ায় তাঁরাও শিকার করে নিয়েছে তাদের সম্পর্ক এবং পরিবারকে জানিয়েছে তারা বৈবাহিক ভাবেও এক হতে চায় তাদের জীবনে কোনো মেয়ের কোনো প্রয়োজন নেই তারা সেই টান অনুভব ও করে না। কিন্তু যা হয়ে থাকে তাঁরা কেউই পরিবারকে বোঝাতে সমর্থ হয়নি। অয়নকে একপ্রকার শর্ত দেওয়া হলো হয় সে বিয়ে করুক অথবা তার বিদেশ যাওয়ার ব্যাবস্থা পাকা করে দেওয়া হয়েছে সে সেখানে চলে যাক কারণ আত্মীয় স্বজনের কাছে এই বিষয় জানাজানি হয়ে গেলে তাদের মুখ দেখানোর জাগা থাকবে না। সুতরাং তাঁকেই ঠিক করে নিতে হবে সে কি চায়? বিদেশে চলে গেলে হয়তো সে নিখিলেশকে বরাবরের মতো কাছে পেয়ে যাবে কিন্তু সেই কটাদিনের দূরত্ব অয়ন কি করে সহ্য করবে কি করে থাকবে সে নিখিলেশকে ছেড়ে? অগত্যা প্রচন্ড পারিবারিক চাপের মুখে পড়ে অয়ন বাধ্য হয় বিয়েতে মত দিতে কিন্তু শর্ত থাকে তাকে নিখিলেশের দেখা করতে মেলামেশা করতে কেউ বাঁধা দিতে পারবে না। অয়ন এবং নিখিলেশের পরিবার মেনে নেয় সেই শর্ত কারণ তারা ভাবে বিয়ের পর যখন কোনো মেয়ের সংস্পর্শে আসবে তখন নিজে থেকেই এসব ঠিক হয়ে যাবে। পেপারে দেওয়া হয় বিজ্ঞাপন আর সেই বিজ্ঞাপনের সূত্র ধরেই আসে অন্যন্যার বাড়ির ফোন। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে অনন্যা বাবা সরকারি কর্মী মা হাউস ওয়াইফ দুই বোন অন্যন্যা আর তিয়াসা। তিয়াসা বি এ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী কমার্স পড়াশুনায় ভালো। আর অন্যন্যা সবেমাত্র জার্নালিজম নিয়ে পাস করে বেরিয়ে একটা নিউজ চ্যানেলে জব করছে। দেখতে শুনতে অত্যন্ত সুন্দরী, যেনো সৃষ্টিকর্তা ওকে সৃষ্টির সময় কোনো ফাঁক রাখেনি। মনে মানসিকতায় ও ভীষণ ভালো একজন মানুষ অনন্যা। সব মিলিয়ে ওর তুলনা যেনো শুধু ও নিজেই।

পেপার দেখে ফোনটা অন্যন্যার বাবা করেছিলো আর ফোনটা রিসিভ করেছিলো অয়নের মা। বেশ দাপুটে মহিলা কিন্তু সবক্ষেত্রে যে সেই দাপট কাজে লাগেনি তা বলাই বাহুল্য। তবে হ্যাঁ মানুষ হিসেবে তিনি খারাপ মানুষ নন সেটুকু বলে রাখা যেতেই পারে। জীবনে ঘাত প্রতিঘাতের সম্মুখীন উনিও কম হননি তাই ছেলের এমন সম্পর্কের সবথেকে বেশি বিরোধী যদি কেউ থেকে থাকে সেটা অয়নের মা। সে যাই হোক ফোনে নানান কখোপকথনে প্রাথমিক ভাবে অন্যন্যাকে ভালোই লাগে অয়নের মার!! উনি একটা নম্বর অন্যন্যার বাবাকে দেন এবং বলেন তিনি যেনো অন্যন্যার একটা ছবি সেখানে পাঠিয়ে দেন যদি ছবি দেখে তাদের পছন্দ হয় তাহলে সামনাসামনি কবে যাবেন সেটা জানিয়ে দেবেন। আর ওনাদের ও যদি ছেলের ছবি দেখার দরকার থাকে তাহলে ওনাদের নম্বর দিলে উনি ছেলের ও ছবি ও পাঠিয়ে দিতেই পারেন। সাময়িক ভাবে নম্বর দেওয়া নেওয়া হলো এবং অন্যন্যার ছবি দেখে যে ওদের না বলার কোনো প্রশ্ন নেই সে কথা নতুন করে আর বলার কিছু নেই। সে ছবি দেখে সবাই মুগ্ধ। শুধু একমাত্র সেটা যার মনে দাগ কাটতে পারলো না সে হলো অয়ন। কারণটা আগেই পরিষ্কার করে বলা আছে। তবে অয়ন নিখিলেশের কাছে শিকার করেছিলো যে সে যদি নিখিলেশ কে ভালো না বাসতো তার প্রতি কমিটেড না থাকতো তাহলে অন্যন্যাকে স্ত্রী হিসেবে পেলে সে নিজেকে সৌভাগ্যবানই ভাবতো কিন্তু এখন সেই প্রশ্নই ওঠে না।

অয়নের মা ফোন করে জানিয়ে দিল তাদের যাবার কথা। কবে কখন তারা যাচ্ছেন সব কিছুই। ওদিকে অন্যন্যা বেশ টেনশনে সব কিছু নিয়ে। কারণ ওরা অনেকটাই সাধারণ কিন্তু অয়নের পরিবার উচ্চবিত্ত আর্থসামাজিক দিক থেকে ও অনেক বেশি প্রতিষ্ঠিত তেমন একটা পরিবারে সে মানিয়ে নিতে পারবে কিনা ওরা অন্যন্যাকে মানাতে পারবে কিনা সবকিছু নিয়েই অন্যন্যা বেশ চিন্তিত। অন্যন্যার একমাত্র কাছের মানুষ ওর পরিবার বাদে সে হলো ওর বান্ধবী তৃণা। তৃণার সাথে ওর কলেজ জীবনে পরিচয় কিন্তু পরিবারের বাইরে ও যদি কারো সাথে নিজের সবকিছু ভাগ করে নেয় সে হলো তৃণা। তৃণা ওকে বোঝায় যে ছেলেটার ছবি দেখে তো ভালোই মনে হলো একদম সুপুরুষ বাকি সামনাসামনি কথা বললে কিছু তো বোঝা যাবেই। আর শুধু ওরা পছন্দ করলেই তো হবে না অনন্যার বাড়ির ও ওদের পছন্দ হতে হবে আর অন্যন্যার বাবা নিশ্চয়ই ওকে এমন কারো হাতে তুলে দেবেন না যাতে ওর কোনো খারাপ বা ক্ষতি হয়ে যায় তাই আগে থেকে এতো কিছু ভেবে উদ্বেগ করার ও কোনো দরকার নেই। পরেরদিন অন্যন্যা একটু তাড়াতাড়ি ফিরলো বাড়িতে অয়ন আর ওর মা বাবা আসছেন অন্যন্যাকে দেখতে অয়ন অবশ্য আসতে চায়নি সে বলেছিল তাঁরা যেমন মেয়ে ঠিক করবে ওর কোনোটাতেই কোনো সমস্যা নেই কারণ বিয়েটা ও নিজের জন্য করবে না। কিন্তু অয়নের মা তাতে রাজি না তাই অয়নকে একপ্রকার বাধ্য হয়েই আসতে হচ্ছে। অন্যন্যাকে দেখে করো অপছন্দ করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না আর অয়নকে দেখে ও ওদের সবার খুব ভালো লেগেছে শিক্ষিত সুপুরুষ একটা ছেলে ভালো পরিবার কোনোটাতেই কোনো খুঁত তারও নেই। কথাবাত্রার মধ্যেই অন্যন্যার মা বলে আমাদের তো পছন্দ হয়েই গেছে এখন ওরা যদি নিজেদের মধ্যে কথা বলে নিতে চায় তাহলে ওরা একটু আলাদা কথা বলুক? কি বলেন সবাই? কিন্তু তাতে আপত্তি জানায় অয়নের মা!!! না না, তার কোনো দরকার নেই আমরা বড়োরা যা করবো ওদের ভালোর জন্যই করবো আসলে একটু তাড়া ও আছে আমার অন্য একটা কাজ করে ফিরতে হবে আমরা বরং এখন উঠবো। তারপর বহুবার তারা একে অপরের বাড়ি গেছে নানা কথা কাজ বিয়ে বলে কথা। কিন্তু অয়ন তেমন ভাবে যে খুব একটা যোগাযোগ অন্যন্যার সাথে করেছে তা নয় ওই টুকটাক।

শেষমেষ স্থির করা দিনে চার হাত এক হয় কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার এই যে, অয়নকে খুব একটা খুশি কারোরই মনে হয়নি যেনো যা কিছু করতে হচ্ছে করতে হবে তাই করছে। পরেরদিন অন্যন্যার চলে যাবার দিন সব আচার অনুষ্ঠান করে সে রওনা দেয় নতুন জীবনের পথে সে জানে না সেখানে তার জন্য কি অপেক্ষা করে আছে মনে মনে খুব অস্থির হয়ে আছে অন্যন্যা। নতুন জীবন নিয়ে সে যতটাই এক্সসাইটেড ঠিক ততোটাই চিন্তায়। নানান চিন্তা ভাবনায় কখন যে রাস্তা শেষ হয়ে গেছে অন্যন্যা তা বুঝতেই পারেনি!!! গাড়ি এসে দাঁড়ালো অয়নের বিলাস বহুল আবাসনের নীচে সেখানে তাঁকে বরণ করে ঘরে নিয়ে গেল অয়নের মা। অয়ন ঘরে ঢুকতেই দেখলো নিখিলেশ দাঁড়িয়ে আছে। অন্যন্যা যেনো খেয়াল করলো অয়নের চেহারায় এক অদ্ভুত খুশির ঝলক এতক্ষণ যা অয়নের মধ্যে দেখা যায়নি। সব নিয়ম শেষ করে সে মাকে বলে আমি আমার রুমে যাচ্ছি নিখিলেশ এর সাথে আর এখন নিশ্চয়ই আমায় দরকার পড়বে না!!! অয়নের মা বলে তুমি নিজের ওয়াইফ এর সাথে নিখিলেশ এর পরিচয় করিয়ে দিলে না? আচ্ছা সেই কাজটা আমিই করে দিচ্ছি। নিখিল ও অন্যন্যা আর অন্যন্যা ও নিখিল নিখিলেশ অয়নের ছোটবেলার বন্ধু এই অ্যাপ্লার্টমেন্টেই থাকে। এরপর সকাল পর্যন্ত অয়নকে আর দেখা যায়নি।

পরেরদিন ওদের রিস্পেশন সকাল থেকেই তার ব্যস্ততা কিন্তু অয়ন যেনো নিখিলেশের সাথেই বেশি ব্যস্ত অন্যন্যার দিকে ওর যেনো কোনো খেয়ালই নেই ব্যাপারটা খারাপ লাগে অন্যন্যার মনে মনে একটু অভিমান ও হয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো এই পুরো ঘটনা আর অন্যন্যার মনের ভাব যার চোখের আড়াল হয়নি সে হলো অয়নের মা। অন্যন্যার মনের ভাব বুঝতে পেরে সে বলে: ওরা ছোটো থেকেই এমন দুজন যখন দুজনের সাথে থাকে তখন আর অন্য কাউকে দরকার পরে না ওদের তোমাকে এটাই পেরে দেখাতে হবে অনু!! আমি তোমাকে অনু বলেই ডাকবো অন্যন্যা বড্ডো বড় নাম। রিসেপশন এর দিন পরীর মতো লাগছিল অন্যন্যাকে ওর থেকে যেনো চোখ সরানো যাচ্ছিল না কিন্তু অয়নের যেনো কোনো দিকেই কোনো খেয়াল নেই একটা মেশিনের মতো সবকিছু করে যাচ্ছে যা বলা হচ্ছে। ভীষণ অদ্ভুত লাগে অন্যন্যার। কিন্তু ও কাউকে কিছু বলে না। তৃণা এসে অন্যন্যার কানের কাছে এসে বলে: তোর বর তো রাতে তোর থেকে চোখ সরাতেই পারবে না তুই কিন্তু সাবধানে থাকিস। লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে যায় অন্যন্যা। অবশেষে সেই বহু প্রতীক্ষিত রাত যার জন্য মনে মনে সব মেয়েরাই অপেক্ষা করে থাকে অন্যন্যা ও করেছিলো । বেশ কিছুক্ষণ পর অয়ন ঘরে আসে কিন্তু অন্যন্যা খেয়াল করে ঘরে আসার পরে ও অয়ন যেনো ঠিক কমফোর্ট ফিল করছে না। কিছুটা অধৈর্য হয়ে অন্যন্যা জানতে চায়: আপনার কি আমার সাথে রুম বা বেড শেয়ার করতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে আপনি কি এই বিয়েতে রাজি ছিলেন না? না, আসলে আমি বিয়ের দিন থেকে খেয়াল করছি তাই জানতে চাইলাম। অয়নের ইচ্ছে করছিল সব সত্যিটা ও বলে দেয় অন্যন্যাকে কিন্তু ঘরে ঢোকার আগেও মা বলে দিয়েছে অন্যন্যা যেনো কিছু জানতে বা বুঝতে না পারে তাই ইচ্ছে করলেও অয়ন চুপ করে থাকে। না, না আসলে আমি খুব টায়ার্ড একটু রেস্ট দরকার আপনি ও ফ্রেশ হয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ুন আমি একটু বেলকনিতে দাঁড়াবো। অন্যন্যার ব্যাপারটা খুব খারাপও লাগলো আবার অদ্ভুত ও লাগলো। এই দিনটার স্বপ্ন একটা মেয়ে বা একটা ছেলে একই রকম ভাবে দেখে সেখানে জীবনের প্রথম রাত একটা নতুন জীবনের শুরু আর অয়নের মধ্যে যেনো কোনো হেলদোলই নেই। যেনো এই সবকিছু ও চায়নি। অনেক প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে অন্যন্যার এভাবে কখন যে ও ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও সেটা বুঝতে পারেনি। সকালে অয়নের মা মানে ওর শ্বাশুড়ির ডাকে ওর ঘুম ভাঙ্গলো ঘুম ভেঙ্গে তাড়াতাড়ি উঠে বসে অন্যন্যা।অয়নের মা ওকে বলেন: লজ্জা পাবার কোনো দরকার নেই এতো ঝক্কির পর ক্লান্ত ছিল তাই ওকে লজ্জা পেতে হবে না ও যেনো ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি নীচে চলে আসে সবাই ওর জন্য অপেক্ষা করছে।
অন্যন্যা তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নীচে আসতেই দেখলো নিখিলেশ আর অয়ন দুজন ওদের বাগানে দাঁড়িয়ে কথা বলছে অয়নকে অনেক বেশি প্রাণোচ্ছল আর খুশি লাগছিল দেখতে যেটা ওরা একসাথে থাকলে অয়নের মধ্যে দেখা যায় না। খারাপ লাগলেও অন্যন্যা কাউকে কিছু বুঝতে দেয় না। ব্রেকফাস্ট সেরে অন্যন্যা নিজের রুমে আসে কিছুক্ষন বাদে অয়ন ও রুমে আসে। অয়ন রুমে এলে অন্যন্যা জানতে চায় সকালে অয়ন ঘুম থেকে উঠে রুমের বাইরে যাবার আগে ওকে কেনো একবার ডেকে গেলো না? অয়ন তাতে বলে ও ক্লান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছিল তাই ডিস্টার্ব করেনি তাছাড়া নিজে থেকেই ঘুম থেকে ওঠা অভ্যেস করতে হবে ওকে, ওদের বাড়িতে কেউ কাউকে ঘুম থেকে ডাকে না তাই ও ডাকেনি। পরেরদিন ওদের অন্যন্যার বাড়িতে যাবার কথা অন্যন্যা অয়নকে সে কথা বললে অয়ন জানিয়ে দেয় তার পক্ষে বাড়ি ছেড়ে কোথাও গিয়ে থাকা সম্ভব না বিয়ের দিন ছিল বাধ্য হয়ে কিন্তু সেটা আর সম্ভব না তাছাড়া ও কাল থেকে হসপিটাল জয়েন করছে আজকেই যেতে চেয়েছিল মা না করলো তাই কাল থেকে ওকে যেতেই হবে তাই বাকি যা নিয়ম যা আছে সেটা অন্যন্যাকে একাই করতে হবে এই ব্যাপারে ওর কিছু আর করার নেই। অন্যন্যা খেয়াল করে বিয়ের ঠিক হবার থেকে আজ পর্যন্ত অয়ন কথা বলার সময় ভালো করে তাকায় পর্যন্ত না একটা অদ্ভুত তাচ্ছিল্য ওর ব্যাবহারে আগে সেটা গুরুত্ব না দিলেও এখন সেটা বেশ অপমানের মনে হচ্ছে অন্যন্যার। ও অয়নকে প্রশ্ন করে এই বিয়েতে অয়নের মত ছিল কিনা? অয়ন একটু অপ্রস্তুত হয়ে উত্তর দেয় অন্যন্যা কেনো এমন প্রশ্ন করছে বারবার? অন্যন্যা অয়নকে বলে ওর ব্যাবহার ওর খুব অদ্ভুত লাগছে মনে হচ্ছে যেনো ওর সাথে কথা বলতে এক ঘরে থাকতে ও যেনো পছন্দ করছে না। অয়ন উত্তর দেয় অন্যন্যা অকারণে এসব ভাবছে এমন কোনো ব্যাপার নেই ওর কাজ আছে তাই ও যেতে পারবে না ও যেনো অকারণে এসব নিয়ে কোনো সিন তৈরী না করে। কথাগুলো বলে অয়ন ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এরমধ্যেই ওর বোন ফোন করে অন্যন্যাকে। অন্যন্যা ফোন ধরে জানায় যে অন্যন্যা একাই যাচ্ছে , অয়নের কাজ আছে তাই সে যেতে পারবে না। অগত্যা অন্যন্যার বাবা এসে সবার সাথে দেখা করে মেয়েকে নিয়ে যায়। বাড়ি গিয়ে অন্যন্যা সবার সাথে হাসি মজা করলেও ওর বোন বুঝতে পারে যে অন্যন্যা কিছু একটা নিয়ে বেশ চিন্তায় আছে ও দিদির কাছে জানতে ও চায় যে অন্যন্যার কিছু হয়েছে কিনা? বা শ্বশুর বাড়িতে কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা ওখানে সবাই ওর সাথে ঠিকঠাক ব্যাবহার করছে কিনা এসব নানান প্রশ্ন, অন্যন্যা জানায় ওখানে সব কিছুই ঠিকঠাক আছে এসব নিয়ে ওরা যেনো চিন্তা না করে। এরপর অন্যন্যা তৃণা কে ফোন করে বলে ওর সাথে কিছু দরকারি কথা আছে ও যদি একবার আসতে পারে তাহলে খুব ভালো হয়। তৃণা জানায় ও বিকেলে আসবে। ওদিকে অয়নের আসা নিয়ে অন্যন্যার বাড়ির সবারই একটু মন খারাপ নতুন বিয়ের পর একসাথে আসা খুব দরকার ছিলো মনটা তাই খুব ভালো লাগছে না একবার এসে যদি নিয়মটা ও করে যেত!!!! তিয়াসা বলে আমি একবার ফোন করে ডাকবো জিজুকে একমাত্র শালির কথা ফেলতে পারবে না সে!!!! অন্যন্যার মা তাতে সায় দেয়। কিন্তু অন্যন্যা বলে না ওকে ফোন করে ডাকতে হবে না কাজের মধ্যে আছে হয়তো বিরক্ত হতে পারে অন্যন্যার কথায় কেউ আর কিছু বললো না। সবাই খুব চুপচাপ। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হলে সবাই একটু বিশ্রাম নিতে যায় যে যার ঘরে। অন্যন্যার মা ওর বাবাকে বলে: কি জানি এতো বড়লোক ঘরে মেয়ের বিয়ে দেয়া ঠিক হলো কিনা? মেয়েটা সুখী হতে পারবে কিনা, অয়নের ব্যাবহার তার বড্ড গা ছাড়া মনে হয়। অন্যন্যার বাবা ওর মাকে থামিয়ে দিয়ে বলে;তোমার সবকিছুতে একটা চিন্তা সামান্য আসা নিয়ে কত কিছু ভেবে ফেলছ সে আর পাঁচটা ছেলের মতো সাধারণ জব করে না সে একজন ডাক্তার তার কাজের গুরত্বটা আমাদের ও বুঝতে হবে আমিতো গেলাম সেখানে কি অমায়িক ব্যাবহার সবার অয়ন ও কথা বললো সুতরাং এসব বাজে চিন্তা না করে ভাবতে যে মেয়েটা যেনো ভালো থাকে। ওদিকে অন্যন্যার চোখে ঘুম নেই একটা অদ্ভুত দুশ্চিন্তা ওকে তাড়া করছে তৃণার কাছে সব না বলা পর্যন্ত ও শান্তি পাচ্ছে না।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42
Pages ( 1 of 42 ): 1 23 ... 42পরবর্তী »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress