দাশগুপ্তর মনটা ভাল নেই
দাশগুপ্তর মনটা আজ একদম ভাল নেই। পুলিশের এস পি সাহেবের কাছ থেকে ফেরার পথে সে বারবার চমকে-চমকে উঠছে। সন্ধে হয়ে গেছে, এতক্ষণে সন্তু আর মিঃ রায়চৌধুরীর কী অবস্থা হয়েছে কে জানে! জারোয়ারা কি ওদের এখনও দেখতে পায়নি? জারোয়ারা কারুকে ছাড়ে না, দেখামাত্র বিষাক্ত তীর মারে। ইস, শুধু শুধু ওঁদের প্রাণ যাবে! মিঃ রায়চৌধুরী যে কোনও কথাই শুনলেন না। জোর করে নেমে গেলেন। ঐ দ্বীপে। নিজে থেকে কেউ ওখানে যায়? ভদ্রলোকের একটা পা খোঁড়া, তবু এত সাহস। আর সন্তু তো বাচ্চা ছেলে, সে-ও কাকাবাবুর সঙ্গে সঙ্গে মরবে। কাল সকালেই হয়তো দেখা যাবে, ওদের লাশ সমুদ্রের জলে ভাসছে।
আর এস পি সাহেবও যা গোঁয়ার। কিছুতেই ওঁদের উদ্ধার করতে যেতে রাজি হলেন না। দিল্লি থেকে হুকুম না পেলে তিনি যাবেন না। দিল্লি থেকে হুকুম আসতে অন্তত দু-তিন দিন লেগে যাবে, তারপর আর ওদের মৃতদেহও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
দাশগুপ্ত হাঁটতে হাঁটতে এসে টুরিস্ট হোমের খাবার ঘরের একটা চেয়ারে ধপাস করে বসে পড়ল। চেঁচিয়ে বলল, কে আছ, এক কাপ চা দেবে?
সেখানকার বেয়ারা কড়াকড়ি এসে বলল, হাঁ বাবু, চা দিচ্ছি। আর কী খবেন?
দাশগুপ্ত বলল, আর কী খাব! তোমার মাথা খাব!
কড়াকড়ি হাসতে হাসতে নিজের মাথায় হাত ঝুলিয়ে বলল, এটা খেতে পারবেন না বাবু, বড় শক্ত
দাশগুপ্ত রেগে উঠে বলল, ইয়ার্কি করতে হবে না, চা নিয়ে এসো শিগগির।
সেই বাবুরা কোথায় গেল?
কে জানে! সে বাবুরা আর ফিরবেন না।
অ্যাঁ? সে কী কথা? ওঁদের মালপত্র রয়েছে যে! সেই খোকাবাবু আর সেই বুড়োবাবু, তাঁরা আর ফিরবেন না? তাঁদের কী হয়েছে?
তাঁদের জারোয়ারা ধরে নিয়ে গেছে।
একথা শুনে কড়াকড়ি একেবারে হাউমাউ করে উঠল। মাথা চাপড়ে বলতে লাগল, কী সর্বনাশ! কী সর্বনাশ।
কড়াকড়ির কান্না শুনে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এল আরও দু-তিনজন লোক। তারা অবাক হয়ে গেছে। যখন তারাও শুনল যে, সন্তু আর কাকাবাবুকে ধরে নিয়ে গেছে জারোয়ারা, খুব দুঃখ হল তাদের। জারোয়ার হাতে পড়লে যে আর কেউ বাঁচে না, তা ওরা সবাই জানে। ওরা দাশগুপ্তকে ঘিরে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনতে লাগল।
এমন সময় আকাশে একটা শব্দ উঠল। দাশগুপ্ত চমকে উঠে বলল, কী ব্যাপার? এখন কিসের শব্দ?
কড়াকড়ি বলল, একটা এরোপ্লেন আসছে বাবু!
দাশগুপ্ত চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠে বলল, প্লেন, এই সময়? কিসের প্লেন? সন্ধের পর কখনও এখানে প্লেন আসে?
সকলেই তখন ভাবল, সত্যিই তো, পোর্ট ব্লেয়ারে তো প্লেন আসে দুপুরে। কোনওদিন তো সন্ধের পর এখানে কোনও প্লেন আসেনি। তাহলে এটা কিসের প্লেন?
প্লেনটা আকাশে বোঁ বোঁ করে ঘুরছে। তার মানে, এখানেই নামবে।
দাশগুপ্ত হাত পা ছুঁড়ে বলল, ট্যাক্সি! আমার এক্ষুনি একটা ট্যাক্সি চাই। ফোন করো ট্যাক্সির জন্য। না, না, ফোন করতে হবে না, দেরি হয়ে যাবে। আমি নিজেই যাচ্ছি।
দাশগুপ্ত টুরিস্ট হোমের বারান্দা থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে সোজা রাস্তা দিয়ে দৌড়তে লাগল। খানিকটা বাদেই রাস্তায় একটা ট্যাক্সি আসতে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ল। মাঝরাস্তায়। সেই ট্যাক্সিতে দুজন লোক ছিল। দাশগুপ্ত হাত জোড় করে বলল, আমার বিশেষ দরকার, আমাকে এক্ষুনি একবার এয়ারপোর্ট যেতে হবে। যেতেই হবে! আপনারা দয়া করে নেমে পড়বেন?
দাশগুপ্তর রকম-সকম দেখে মনে হল, সে পাগল হয়ে গেছে। লোক দুটি হতভম্ব হয়ে নেমে গেল। দাশগুপ্ত ট্যাক্সিতে উঠে বসেই বলল, জলদি চালাও, এয়ারপোর্ট। জলদি
দাশগুপ্ত যখন এয়ারপোর্টে পৌঁছল, তার আগেই প্লেনটা নেমে গেছে। এয়ারপোর্টে অনেক পুলিশ, স্বয়ং এস পি সাহেবও উপস্থিত। নিশ্চয়ই হোমরা-চোমরা কেউ এসেছে।
দাশগুপ্ত একজন পুলিশকে জিজ্ঞেস করল, কে এসেছেন? কে উনি?
পুলিশটি বলল, হোম সেক্রেটারি সাহেব এসেছেন!
দাশগুপ্ত আনন্দে একেবারে নেচে উঠল। এত বড় সৌভাগ্যের কথা ভাবাই যায় না। এস পি সাহেব এই হোম সেক্রেটারির কাছ থেকেই অনুমতি আনার কথা বলেছিলেন। সেই হোম সেক্রেটারি নিজেই দিল্লি থেকে এখানে এসে উপস্থিত! কোনও গুরুতর ব্যাপার তাহলে আছেই।
হোম সেক্রেটারি একজন বেশ লম্বা মতন লোক। মাঝারি বয়েস। মাথার চুলগুলো বড়-বড়। তিনি বড়-বড় পা ফেলে গিয়ে একটা গাড়িতে উঠলেন। দাশগুপ্ত সেদিকে ছুটে যাবার চেষ্টা করতেই কয়েকজন পুলিশ তাকে বাধা দিল।
দাশগুপ্ত তখন চেঁচিয়ে এসপি সাহেবকে লক্ষ্য করে বলল, স্যার, ওঁর সঙ্গে আমার এক্ষুনি কথা বলা দরকার। সেই ব্যাপারটা…
এস পি মিঃ সিং বললেন, দাঁড়ান, ওঁকে একটু বিশ্রাম করতে দিন। উনি অতদূর থেকে সবে এসে পৌঁছেছেন—
দাশগুপ্ত বলল, একটুও সময় নষ্ট করা যাবে না। এখন। আপনি বুঝতে পারছেন না।
কিন্তু ততক্ষণে হোম সেক্রেটারির গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে। দাশগুপ্ত চ্যাঁচাতে চ্যাঁচাতে সেদিকে ছুটে গিয়েও গাড়িটা থামাতে পারল না।
রাগে-দুঃখে দাশগুপ্তর চোখে জল এসে গেল। এবার আর সে এস পি সাহেবকে ভয় পেল না। তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে কড়া গলায় বলল, আপনাকে এর ফল ভোগ করতে হবে। দিল্লি থেকে আমার ওপর অর্ডার দেওয়া আছে, মিঃ রায়চৌধুরীর যাতে কোনও রকম বিপদ না হয়, তার ব্যবস্থা করার। কিন্তু আপনি আমাকে কোনও সাহায্য করেননি। একথা আমি হোম সেক্রেটারিকে बळद!
মিঃ সিং বললেন, অত ব্যস্ত হচ্ছেন কেন? হোম সেক্রেটারি যখন এসেই গেছেন, তখন ওঁর কাছ থেকে অনুমতি পেলেই আমি আপনাকে সাহায্য করব।
দাশগুপ্ত বলল, কিন্তু প্রতিটি মিনিট নষ্ট করা মানেই সঙ্ঘাতিক ভুল করা।
দিল্লি থেকে খুব হোমরা-চোমরা কেউ এলে ওঠেন। এখানকার সরকারি অতিথি-ভবনে। দাশগুপ্ত তা জানে। ট্যাক্সিটা রাখাই ছিল, সেটা নিয়ে সে আবার সেইদিকে ছুটিল।
অতিথি-ভবনে দাশগুপ্ত আর এস পি মিঃ সিং পৌঁছল প্ৰায় একই সময়ে। এস পি সাহেব গাঁটগট করে ঢুকে গেলেন ভেতরে। গেটের পুলিশ দাশগুপ্তকে আটকাতে যেতেই সে পকেট থেকে একটা কার্ড বার করে বলল, এটা হোম সেক্রেটারিকে দাও, তাহলেই তিনি বুঝবেন।
হোম-সেক্রেটারির নাম কৌশিক ভার্মা। তিনি তখন ইজিচেয়ারে পা ছড়িয়ে বসে এক কাপ চা খাচ্ছিলেন। আর এস পি সাহেবকে বলছিলেন, শুনুন, আমি এখানে এসেছি। একটা বিশেষ কাজে। আমি গোপন রিপোর্ট পেয়েছি, কিছু বিদেশি গুপ্তচর আন্দামানে নিয়মিত যাতায়াত করছে। তারা কলকাতা আর দিল্লি থেকে কিছু-কিছু পাসপোর্ট চুরি করে ভারতীয় সেজে প্লেনে করে চলে আসছে আন্দামানে। কী তাদের উদ্দেশ্য, সেটা আমাদের জানা দরকার। আন্দামানের মতন একটা সাধারণ জায়গায় বিদেশিদের নজর পড়ল কেন?
এস পি মিঃ সিং বললেন, না স্যার, এখানে তো কোনও বিদেশি আসেনি অনেকদিন। বিদেশি কোনও টুরিস্ট এলে আমার অনুমতি ছাড়া তো এখানে ঢুকতেই পারবে না।
মিঃ ভার্মা বললেন, তারা কি আর টুরিস্ট সেজে আসবে? তারা ভারতীয় সেজে গোপনে ঢুকবে।
মিঃ সিং বললেন, না স্যার, বিদেশি এলে আমার নজরে পড়তই।
এই সময় দাশগুপ্ত সেখানে ঢুকে পড়ে বলল, স্যার, আমি সেই বিদেশিদের কথা জানি।
এস পি অমনি ভুরু কোঁচকালেন। মিঃ ভার্মা মুখ তুলে দাশগুপ্তকে দেখে ঞ্জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কে?
দাশগুপ্ত বলল, স্যার, আমি আপনার ডিপার্টমেন্টেই কাজ করি। দু-বছর ধরে আন্দামানে আছি। আমার কাজ হল এখানকার অবস্থার ওপর লক্ষ রাখা। বিদেশি গুপ্তচরদের কথা প্ৰথমে আমিও বিশ্বাস করিনি। কিন্তু মিঃ রায়চৌধুরী আমার চোখের সামনে প্রমাণ করে দিয়েছেন-
মিঃ ভার্মা জিজ্ঞেস করলেন, রায়চৌধুরী? কোন রায়চৌধুরী?
দাশগুপ্ত বলল, সেই যে মিঃ রায়চৌধুরী, যিনি আগে ভারত সরকারের কাজ করতেন, এখন রিটায়ার্ড, নানান জায়গায় রহস্যের সন্ধান করে বেড়ান—
কৌশিক ভার্মা চমকে উঠে বললেন, ও সেই ওয়ান-লেগেড ম্যান? সেই দারুণ সাহসী মানুষটি? কোথায় তিনি? তাঁর সঙ্গে আমি দেখা করতে চাই।
দাশগুপ্ত বলল, স্যার, তাঁর সাঙ্ঘাতিক বিপদ। এতক্ষণ তিনি বেঁচে আছেন কি না সন্দেহ।
কৌশিক ভার্মা ভুরু কুঁচকে বললেন, সে কী কথা? কেন, তাঁর কী হয়েছে?
তিনি জারোয়াদের হাতে ধরা পড়েছেন।
হোয়াট? জারোয়াদের হাতে? কীভাবে ধরা পড়লেন? আপনারা কিছু করতে পারেননি?
দাশগুপ্ত হাতজোড় করে বলল, স্যার, আমি স্বীকার করছি, আমার কিছুটা দোষ আছে। আমি ওঁর সঙ্গে ছিলাম। কিন্তু উনি আমার দিকে রিভলভার তুলে ভয় দেখিয়ে মিডল আন্দামানের একটা দ্বীপে নেমে গেলেন জোর করে। তারপর আমি রেসকিউ পার্টি পাঠাবার জন্য পুলিশের এস পি সাহেবকে অনুরোধ করেছিলাম। উনি রাজি হননি।
কৌশিক ভার্মা এস পি সাহেবের দিকে তাকালেন। এস পি সাহেব তখন গোঁপে তা দিচ্ছিলেন। তাড়াতাড়ি গোপ থেকে হাত নামিয়ে বললেন, আমি ঠিক কাজই করেছি। আমি সব ঘটনা জানিয়ে দিল্লিতে টেলিগ্রাম পাঠিয়েছি। একটু আগে।
কৌশিক ভার্মা বললেন, দিল্লি থেকে হুকুম আসতে যদি দু-তিনদিন লাগে, ততদিন আপনি ওরকম একটা লোককে জারোয়াদের হাতে ছেড়ে রাখবেন?
মিঃ সিং বললেন, স্যার, তাছাড়া আমি কী করব বলুন? সেখানে পুলিশ পাঠালে জারোয়াদের সঙ্গে যুদ্ধ লেগে যেত। গুলি খেয়ে বেশ কিছু জারোয়া মরত। একজন জারোয়াকেও মারার হুকুম নেই। আমার কাছে। তাছাড়া সেই মিঃ রায়চৌধুরীকে আর বাঁচানো যাবে কি না সন্দেহ। কেউ বাঁচে না ঐ অবস্থায়।
কৌশিক ভার্মা উঠে দাঁড়িয়ে ধমক দিয়ে বললেন, তা বলে কোনও চেষ্টাও করবেন না? মিঃ রায়চৌধুরী কে জানেন? ওরকম সাহসী লোক সাহেবদের মধ্যে দেখা যায়, কিন্তু ভারতীয়দের মধ্যে কজন আছেন? ওরকম একজন মানুষ আমাদের দেশের গর্ব। সেই লোককে আমরা বাঁচাবার চেষ্টা করব না? ছিছিছি। এক্ষুনি রেসকিউ পার্টি পাঠাবার ব্যবস্থা করুন। আমি নিজে তাদের সঙ্গে যাব।
এস পি সাহেব আস্তে আস্তে বললেন, এই রাত্তিরবেলা? সে তো প্ৰায় অসম্ভব।
কেন, অসম্ভব কেন?
মোটরবোট নিয়ে অতদূর যেতে অন্তত চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লাগবে-বনের মধ্যে ঘুটফুটে অন্ধকার, সেখানে এখন যে নামবে তাকেই প্ৰাণ দিতে হবে। জারোয়ারা চব্বিশ ঘণ্টা লুকিয়ে থেকে পাহারা দেয়।
কৌশিক ভার্মা বললেন, মোটরবোটের সঙ্গে সার্চ-লাইট লাগানো যেতে পারে না? সার্চ-লাইটের আলোয় অনেক দূর দেখা যাবে।
স্যার, আপনি একটু চিন্তা করে দেখুন, সার্চলাইটের আলোয় আর কতদূর দেখা যেতে পারে। দ্বীপটা অনেক বড়। তাছাড়া জারোয়ারা যুদ্ধ না করে পিছু হটবে না। তাতে দুপক্ষের অনেক লোক মরবে। এটা আমাদের নীতি নয়।
কৌশিক ভার্মা চিবুকে হাত রেখে চিন্তা করতে লাগলেন।
দাশগুপ্ত আস্তে আস্তোবলল, স্যার, আমি একটা কথা বলতে পারি?
বলুন।
একটা উপায়ে এক্ষুনি সাহায্যের ব্যবস্থা করা যায়। বোটে না গিয়ে আমরা যদি হেলিকপটারে যাই, তাহলে খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাওয়া যায়। হেলিকপটারের ওপর থেকে আলো ফেলে খুঁজে দেখা যায় সারা জঙ্গলটা। তাতে যুদ্ধও হবে না। জারোয়ারা হেলিকপটারে তীর মারতেও পারবে না। ওদের তীর বেশি উঁচুতে পৌঁছয় না।
কৌশিক ভার্মা টেবিলে এক চাপড় মেরে বললেন, ঠিক! খুব ভাল কথা। সেই ব্যবস্থাই করা যাক।
দাশগুপ্ত বলল, সেই সঙ্গে প্ৰীতম সিংকেও নিয়ে গেলে ভাল হয়।
প্রীতম সিং কে?
প্রীতম সিং আগে এখানেই পুলিশের কাজ করতেন। উনি জারোয়াদের ভাষা জানেন। হেলিকপটার থেকে উনি মাইকে জারোয়াদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। মিঃ রায়চৌধুরীকে যদি ওরা মেরে না ফেলে বন্দী করে রাখে, তাহলে প্রীতম সিং-এর কথায় হয়তো ছেড়ে দেবে। প্রীতম সিং ছাড়া আর তো কেউ জারোয়াদের সঙ্গে কথাই বলতে পারবে না।
কৌশিক ভার্মা অবাক হয়ে বললেন, সেরকম লোকও আছে? তবু আপনারা কিছু চেষ্টা করেননি।
মিঃ সিং গম্ভীরভাবে বললেন, হ্যাঁ, প্রীতম সিংকে ডেকে আমি তার মত নিয়েছিলাম। প্রীতম সিং-এর মতে এখন আর চেষ্টা করে কোনও লাভ নেই। প্রীতম সিংকে জারোয়ারা বনের ভেতরে ঢুকতে দেয় না।
প্রীতম সিং হেলিকপটার থেকে ওদের সঙ্গে কথা বলে আসল খবরটা অন্তত জেনে নিতে পারবে। হেলিকপটার কোথায় আছে? চলুন!
আমাদের হেলিকপটার নেই। দাশগুপ্ত আবার বলল, এখানে নেভির হেলিকপটার আছে, স্যার। আমরা বললে দেবে না। কিন্তু আপনি অর্ডার দিলে ঠিকই দেবে।
আমি এক্ষুনি অর্ডার লিখে দিচ্ছি।
কৌশিক ভার্ম তাঁর সেক্রেটারিকে ডেকে তক্ষুনি অর্ডার লিখিয়ে দিলেন। তারপর এস পি-কে বললেন, একজন লোক দিয়ে এই চিঠি এক্ষুনি পাঠিয়ে দিন। তাকে জেনে আসতে বলুন আধঘণ্টার মধ্যে হেলিকপটার পাওয়া যাবে কি না!
একজন লোক চিঠি নিয়ে তক্ষুনি ছুটে গেল। কিন্তু একটু বাদেই সে ফিরে এল খারাপ খবর নিয়ে।
নেভির দুটি মাত্র হেলিকপটার। একটা চলে গেছে নিকোবর, সেটা তিন-চারদিনের মধ্যে ফিরিবে না। আর-একটা খারাপ হয়ে পড়ে আছে। সেটা সারাবার চেষ্টা চলছে।
কৌশিক ভার্মা চেঁচিয়ে উঠলেন, সেটা সারিয়ে তুলতেই হবে.যত তাড়াতাড়ি সম্ভব-আধা ঘণ্টা, অন্তত এক ঘণ্টার মধ্যে-
দাশগুপ্তর মুখটা শুকিয়ে গেছে। এত চেষ্টা করেও শেষরক্ষা করা গেল না? হেলিকপটারটাও এই সময় খারাপ!
কৌশিক ভার্মা দরজার দিকে পা বাড়িয়ে বললেন, চলুন, আমি নিজে সেই হেলিকপটারটা দেখে আসতে চাই…