পর্ব – ১
টুটুল ঠিকই করলো আজ সে মিতাকে ছাড়বে না। রোজ রোজ মজা নেওয়া ! টুটুল আর মিতা একই অফিসে চাকরি করে , একই পাড়ায় থাকে , একই স্টপেজ থেকে দু’জনে সকাল ন’টার বাসে ওঠে। মহিলা বলে টুটুল ভদ্রতা করে আগে উঠতে দেয় । বাসটায় পুরুষ মহিলা বলে আলাদা সিট নেই। কি আশ্চর্য ঐ ন’টার বাসটায় ভীড় থাকলেও রোজ একটাই সিট ফাঁকা থাকে। মিতা আগে ওঠে বলে বসতে পায়। পরবর্তী দেড় ঘন্টা ……. থাক টুটুলের সে দুঃখের কাহিনী। এক পাড়ায় থাকলেও টুটুল মিতাকে চিনেছে অফিসে এসে। অফিসে দু’জনের বিভাগও আলাদা। তাই সম্পর্কটা হাই – হ্যালোতেই সীমাবদ্ধ। মিতা কালো হলেও মুখশ্রী খুব সুন্দর। বিশেষ করে যখন হাসে। মিতা হাসলে গালে এত সুন্দর টোল পরে যে টুটুল মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে থাকে। অফিস যাওয়ার সময় সেই মিতা আজ পর্যন্ত একদিনও টুটুলকে সিট অফার করেনি বরং সিটে বসে একটা মুচকি হাসি দিয়েছে। আজ তাই টুটুল দৃঢ় প্রতিজ্ঞ । বাস আসতেই একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে মিতাকে সরিয়ে টুটুল বাসে উঠে দেখে সব সিট ভর্তি। মিতা রোজ যে সিটটায় বসে সেখানে এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক বসে আছেন , তাকে তো আর তোলা যায় না। চোখে মুখে হতাশা নিয়ে টুটুল দাঁড়াতে বাধ্য হলো। পেছন পেছন মিতাও এসেছে , সেও সব দেখে একটু হতাশ কিন্ত টুটুলের অবস্থা দেখে ফিক করে হেসে বলল – ” ঠিক হয়েছে “। মিতা যে অফিসের পরে এক পয়সাওয়ালা ব্যবসাদার ছেলের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায় তাও টুটুল জানে। তাই ভালোলাগার রেশটুকুই আছে , মিতাকে কাছে পাওয়ার ইচ্ছেটা নেই। টুটুলের পছন্দের চরিত্র রীতা। ওর আন্ডারে কাজ করে । এক কথায় ডানা কাটা পরী। ব্যবহারও তেমন সুন্দর। সব মিলিয়ে ব্যক্তিত্বময়ী। যদিও টুটুল প্রায় ছ’ফুটের কাছাকাছি আর দারুণ হ্যান্ডসাম। অফিসের কাজে দুজনকেই সবসময়ই কথা বলতে হয়। মাঝে মাঝে ফষ্টিনষ্টি , হালকা রসিকতা সবই হয়। কাজের সময় টুটুল যদি একটু প্রগলভ হয় , রীতা আঙুল নেড়ে বলে আগে কাজ পরে আড্ডা। টুটুল আকারে ইঙ্গিতে রীতাকে বলেছে তার মনের কথা , রীতাও আকারে প্রকারে বুঝিয়েছে সে তার বাবা মায়ের পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করবে তা’তে যদি তার ভবিষ্যত সুখের না’ও হয় । টুটুল হতোদ্যম হয়ে যায়।
টুটুল আর ওর বৃদ্ধা মা , এই হচ্ছে সংসার। পৈতৃক বাড়ি, শ্রী আছে তবে বড়লোকি ছাপ নেই। টুটুলের মায়ের আবার ঘর সাজানোর ব্যারাম। সব ঘরগুলোই সুন্দর করে সাজানো। টুটুলের পাড়াতে তেমন বন্ধু নেই। অফিস থেকে ফিরে চা আর হালকা জলখাবার খেয়ে ফেসবুক করতে বসে বা খবরের কাগজে চোখ বোলায়। টিভি তো মায়ের হেফাজতে। সিরিয়াল দেখে কখনও হাসেন , কখনও কাঁদেন , কখনও গালাগাল দেন। মা ব্যাটার চুক্তি শুধু রাত এগারোটার খবরটা ডিনার করতে করতে টুটুল শুনবে। ঐ আধঘন্টাই টুটুলের জন্য টিভি বরাদ্দ। একদিন ডিনার করে নিজের ঘরে বসে সিগারেট ধরিয়ে আয়েশ করে টানতে টানতে ফেসবুক খোলে টুটুল । দেখে People you may know- তে রীতার ছবি। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। রীতা অ্যাকসেপ্ট করে। টুটুল লক্ষ্য করে রীতা অনলাইন। চ্যাটবক্সে ‘হাই’ লিখে পাঠায়। উত্তরও আসে কিছু পরে।
শুরু হয় টুটুলের জীবনের নতুন অধ্যায়। টুটুল আর রীতা অফিসে রিজার্ভ থাকলেও রাতে চ্যাটবক্সে কথার ফুলঝুরি ছোটে। অনেক কথাই জানতে পারে টুটুল । যেমন রীতার ডাকনাম ‘পম’, ওর বাবা রিটায়ার্ড সেনা অফিসার । টুটুলদের কোম্পানির মালিক দত্ত সাহেবের শালীর একমাত্র মেয়ে। দত্ত সাহেবের ছেলে মেয়ে নেই আর রীতার বাবার বদলির চাকরি তাই ও দত্ত পরিবারে বড় হয়েছে ,এইসব। একদিন যেমন রীতা টুটুলকে জানায় তার আসল কাজ কিন্তু অফিসে গোয়েন্দাগিরি করা। অফিসে কেউ যদি কোম্পানি বিরোধী কাজ করে বা কেউ অন্যের সম্বন্ধে বিরূপ মন্তব্য করে রীতা সব খবর দত্ত সাহেবকে পৌঁছে দেয়। শুনেই টুটুলের আত্মারাম খাঁচা ছাড়া। ঘামতে শুরু করে সে। সে’ও তো রীতাকে আকারে ইঙ্গিতে প্রেম , বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো যে। মাফ চায় টুটুল রীতার কাছে। রীতা আশ্বস্ত করে এই বলে যে ,সে বুঝেছিল টুটুলের কোন খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না। আর তার পক্ষে যে কাজ করা সম্ভব নয় তাও সে টুটুলকে জানিয়েছিল। টুটুল তার পর থেকে আর জ্বালায় নি তো। আরও বড় কথা রীতা অ্যাডাল্ট , তারও একটা ব্যক্তি স্বাধীনতা আছে , গোপনীয়তা আছে , সবকথা ড্যাডিকে ( রীতা নিজের বাবাকে বাপী আর দত্ত সাহেবকে ড্যাডি বলে) জানাতে বাধ্য নয়। সে বলেনি , টুটুল নিশ্চিন্তে থাকতে পারে। রীতা যতই আশ্বাস দি’ক না কেন টুটুলের ধুকপুকানি আর যায় না। তারপর থেকে টুটুল অফিসে খুব সিরিয়াস হয়ে গেল। কিন্ত যেই রাত আসে , কথার ঝর্ণাধারায় স্নান করে চ্যাটবক্স। রীতাও টুটুলের পরিবারের সব কথাই জেনেছে। সবই হচ্ছে , সম্পর্কটা কিন্তু ঐ বন্ধুত্বের লক্ষ্মণরেখাতেই সীমাবদ্ধ। একদিন রীতা বলল – ওর বিয়ে হয়ে গেলেও চাকরি ছাড়বে না আর ফেসবুক করাও বন্ধ করবে না। তার জন্য যদি ডিভোর্সও হয় ও পরোয়া করে না। রীতার চ্যাটবক্সের
” সবুজ আলো ” কখনোই নিভবে না। আরও বলে সে ফেসবুক করে শুধু টুটুলের সঙ্গে আড্ডা দেবে বলে।