বেতলার ফরেস্ট বাংলো
বেতলার ফরেস্ট বাংলোটি ভারী চমৎকার। সামনে অনেকটা খোলা জায়গা, পেছনেই জঙ্গল। এখানে আবার গাছের ওপরেও থাকার ব্যবস্থা আছে। ট্রি-টপ হাউজ। অরণ্যদেবের কমিসে যেরকম আছে। সন্তু আর জোজোর ওই ট্রি-টপে থাকার ইচ্ছে হয়েছিল, কিন্তু দুখানা ঘরেই লোক এসে আছে আগে থেকে।
বাংলোর সামনে কয়েকটা পোষা হরিণ ঘুরে বেড়ায়। দূরে শোনা যায় হাতির ডাক।
গরম পড়ে গেলেও হাওয়া আছে বেশ। চতুর্দিকে অজস্র ফুল ফুটেছে আর বড় বড় গাছগুলো থেকে ডাকাডাকি করছে কতরকম পাখি।
বারান্দায় বসে ব্রেকফাস্ট খেতে-খেতে কাকাবাবু একটা ফাইল পড়ছেন। সাইমন বুবুম্বা সম্পর্কে সমস্ত খোঁজখবর এর মধ্যে দিয়ে দিয়েছেন নরেন্দ্র ভার্মা, এমনকী ওর জীবনী পর্যন্ত। আর বিভিন্ন পোজের তিনখানা ছবি।
সন্তু একটা ছবি তুলে নিয়ে বলল, জোজো, বল তো বুবুম্বাকে কীরকম দেখতে?
জোজো মন দিয়ে ডাল ডিমের ওমলেট খাচ্ছিল। মুখ তুলে বলল, প্রায় ছ ফুট লম্বা, কোঁচকানো চুল, পুরু ঠোঁট, চওড়া বুক, দেখলেই বোঝা যায় গায়ে খুব জোর। চোখে সোনালি ফ্রেমের চশমা। বয়েস হবে চৌতিরিশ-পঁয়তিরিশ।
সন্তু জিজ্ঞেস করল, গায়ের রং?
একজন আফ্রিকানের গায়ের রং যে জিজ্ঞেস করে, সে একটা মহা বোকা, এইরকম একটা ভাব করে সন্তুর দিকে তাকিয়ে জোজো উত্তর দিল, ছাতার কাপড়ের মতন কুচকুচে কালো! নিগ্রোদের যেরকম হয়।
কাকাবাবু পড়া থামিয়ে কৌতূহলী চোখে ওদের দিকে তাকালেন। তারপর বললেন, তুমি যে বর্ণনা দিলে জোজো, তা অধিকাংশ আফ্রিকান সম্পর্কে খাটে। কিন্তু সাইমন বুবুম্বার সঙ্গে মেলেনি। ওর গায়ের রং কুচকুচে কালো নয়। ও হচ্ছে মুলাটো। কাকে মুলাটো বলে জানো?
জোজো তাকাল সন্তুর দিকে।
সন্তু বলল, যার বাবা-মায়ের মধ্যে একজন কালো জাতের আর-একজন ফরসা জাতের, তাকে বলে মুলাটো, মুলাটোরা পুরোপুরি ফরসা বা কালো হয় না।
কাকাবাবু বললেন, সাইমন বুবুম্বার বাবা ব্ল্যাক আফ্রিকান আর মা জার্মান। সাইমনের গায়ের রং মাজা-মাজা, অনেকটা ভারতীয়দের মতন। চুলও বেশি কোঁচকানো নয়। হঠাৎ তাকে দেখলে আফ্রিকান বলে মনেই হয় না।
জোজো কথা ঘোরাবার জন্য বলে উঠল, ওটা কী উড়ে গেল? ময়ূর না? সামনের গাছটায় বসেছে!
সন্তু ভুরু কুঁচকে জোজোর দিকে তাকিয়ে রইল। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, জোজো সাইমন বুবুষাকে চোখেই দেখেনি। তা হলে গায়ের রং নিয়ে, চুল নিয়ে এত ভুল করত না। কিন্তু সোনালি ফ্রেমের চশমার কথা বলল কী করে? সত্যিই সাইমন বুবুম্বার চোখে সোনালি ফ্রেমের চশমা। রঙিন ছবিতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
একটু দূরের গাছটায় ময়ূরটা ক্যাঁ-ক্যাঁ করে ডাকছে।
কাকাবাবু বললেন, সন্তু, তুই আর জোজো এখানে থাক। ইচ্ছে করলে জঙ্গলের মধ্যে বেড়িয়ে আসতে পারিস। আমি একবার মেজর ঠাকুর সিংয়ের বাড়িটা দেখে আসি।
সন্তু সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আমিও যাব ওখানে। জোজো, তুই থাকবি?
জোজো বলল, আমাকে তো যেতেই হবে। সাইমন বুবুম্বাকে যদি ওখানে পাওয়া যায়, আমিই তাকে আইডেন্টিফাই করব।
কলকাতা থেকে যে-গাড়িটায় আসা হয়েছে, সেই গাড়ির ড্রাইভারের নাম মহিম। সে এর মধ্যেই গাড়িটা ধুয়ে-মুছে ঝকঝকে করে ফেলেছে। সে বেশ চটপটে যুবক। মাঝে-মাঝে আপন মনে গুনগুন করে গান গায়।
কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, মহিম, রেডি?
সে বলল, হ্যাঁ সার। বেরোবেন তো চলুন।
ফরেস্ট বাংলোর ম্যানেজারের নাম নুরুল। তিনি সামনের বাগানে একটি লোকের সঙ্গে কথা বলছেন। তাঁর একটা ফুটফুটে মেয়ে দৌড়োদৌড়ি করছে বাগানের মধ্যে। মেয়েটির বয়েস বছরপাঁচেক হবে, ওর নাম আমিনা। ওকে দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে।
কাকাবাবু নুরুল সাহেবের কাছ থেকে জানতে চাইলেন ঠাকুর সিংয়ের বাড়িটা কোন দিকে।
নুরুল সাহেব বললেন, রূপ মঞ্জিল, জঙ্গলের মধ্য দিয়েই রাস্তা পাবেন। পাঁচ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু সেখানে গিয়ে কী করবেন? টুরিস্টদের সে বাড়িতে ঢুকতে দেয় না!
কাকাবাবু বললেন, ঢুকতে না দেয়, বাইরে থেকে দেখে আসব। শুনেছি দারুণ জমকালো বাড়ি।
নুরুল সাহেব বললেন, তা বটে। তবে সাবধান, ও বাড়িতে দুটো সাঙ্ঘাতিক কুকুর আছে।
সবাই মিলে গাড়িতে ওঠা হল। একটুখানি যাওয়ার পরেই চেক পোস্ট। জঙ্গলের মধ্যে ঢুকতে গেলে গাড়ির নাম্বার লিখে রাখে এখানে।
একটু দূরে যাওয়ার পরই চোখে পড়ল দুটো খয়েরি রঙের খরগোশ দৌড়ে রাস্তা পার হয়ে যাচ্ছে।
সন্তু আর জোজো দুজনেই উত্তেজিত খরগোশ দেখে। জঙ্গলে এসে সবাই জন্তু-জানোয়ার দেখতে চায়। সন্তু বলল, তা হলে পোষা হরিণগুলো ছাড়া একটা ময়ূর আর দুটো খরগোেশ দেখা হল এ পর্যন্ত।
মহিম বলল, যদি ভাগ্যে থাকে, হাতিও দেখা যেতে পারে। বাংলোর একজন লোক বলছিল, কাছাকাছি একটা হাতির পাল বেরিয়েছে।
জোজো বলল, না, না, হাতি-টাতি দরকার নেই। অত বড় জন্তু আমার ভাল লাগে না।
সবাই হেসে উঠল।
কাকাবাবু বললেন, জোজো, তোমাকে আগে জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেছি। তোমার সেই পিসেমশাই কেমন আছেন, যিনি কোনও জন্তু-জানোয়ার, পোকা-মাকড় সহ্য করতে পারেন না? আমার ওপর যাঁর খুব রাগ?
জোজো বলল, তিনি বারুইপুরের বাড়িটা বিক্রি করে দিয়ে কোথায় যেন চলে গেছেন। আর কোনও খবর জানি না!
সন্তু জিজ্ঞেস করল, কাকাবাবু, এই জঙ্গলে বাঘ আছে?
কাকাবাবু বললেন, আছে কয়েকটা। তারা সহজে দেখা দেয় না। তবে, এখানকার সবচেয়ে হিংস্র প্রাণী কী জানিস? এক ধরনের কুকুর। তাদের বলে ওয়াইন্ড ডগস। দেখতে এমন কিছু সাঙ্ঘাতিক নয়, ছোট-ছোট নেড়িকুত্তার মতন, একসঙ্গে দশ-পনেরোটা থাকে। তারা দল বেঁধে তীরের মতন ছোটে, সামনে কোনও জন্তু পড়লে তার আর নিস্তার নেই। সবাই মিলে একসঙ্গে আক্রমণ করে কয়েক মিনিটের মধ্যে মেরে, খেয়ে শেষ করে দেবে। হরিণ, বুনো শুয়োর, মানুষ সব খায় ওরা। আমি অনেকদিন আগে এখানে একবার এসে ওয়াইল্ড ডগস দেখেছিলাম। ওইটুকু-ওইটুকু কুকুর, একটা বাইসনকে মেরে সব মাংস খেয়ে ফেলল পাঁচ মিনিটের মধ্যে।
ওরা কি বাঘকেও মারতে পারে?
তা বোধ হয় পারে না। এখানে তো সিংহ নেই, বাঘই বনের রাজা। বাঘের ডাক শুনলেই অন্য সব জানোয়ার ভয় পায়।
অনেকক্ষণ আর কোনও জন্তু দেখা গেল না। শুধু একপাল বানর ছাড়া। যদিও এরা বনেই থাকে, তবু বানরকে ঠিক যেন বন্যপ্রাণী মনে হয় না।
আসল রাস্তাটা ছেড়ে বাঁ দিকে বেঁকতে হল এক জায়গায়। ক্রমশ জঙ্গল ফাঁকা হয়ে আসছে। এক সময় হঠাৎ চোখে পড়ল একটা দুর্গের মতন বাড়ি।
বাড়িটা জঙ্গলের মধ্যে নয়, জঙ্গলের ধারেই। একটা টিলার ওপর অনেকখানি পাঁচিল ঘেরা, তার মধ্যে দোতলা বাড়ি। সেই পাঁচিল ও বাড়ি, সবই পাথরের তৈরি। পাঁচিলের এক জায়গায় বিশাল লোহার গেট, তার দু পাশে দুটো গম্বুজ। গেটের কাছে নাম লেখা, রূপ মঞ্জিল।
মহিম গাড়িটাকে নিয়ে এল গেটের কাছে।
খাকি পোশাক আর মাথায় পাগড়ি পরা একজন দরোয়ান রয়েছে সেখানে, হাতে বন্দুক। সে হাত তুলে গাড়িটাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করল, কেয়া মাংতা?
কাকাবাবু গাড়ি থেকে নেমে মিষ্টি করে বললেন, নমস্তে। মেজর ঠাকুর সিংয়ের সঙ্গে একবার দেখা করতে চাই।
দরোয়ান মাথা নেড়ে বলল, নেহি হোগা। চলা যাও!
কাকাবাবু বললেন, ঠাকুর সিংয়ের সঙ্গে আমার চেনা আছে।
সে আবার বলল, নেহি হোগা!
কাকাবাবু আরও নরম গলা করে বললেন, আপনি একবার গিয়ে বলুন না, কলকাতা থেকে রাজা রায়চৌধুরী এসেছে। ঠাকুর সিং ঠিক চিনবেন।
লোকটি এবার বেশ রুক্ষভাবে বলল, নেহি হোগা! চলা যাও!
সন্তু আর জোজোও নেমে এসেছে। কাকাবাবু বললেন, কী করব রে? এই লোকটা যে খালি নেহি হোগা, নেহি হোগা বলে!
জোজো বলল, কী উঁচু আর শক্ত দেওয়াল!
সন্তু জিজ্ঞেস করল, তুই কি লাফিয়ে পাঁচিল ডিঙোবার কথা ভাবছিস নাকি?
জোজো বলল, একখানা বাঁশ পেলে পোল ভল্ট দিয়ে ওপারে যাওয়া যায়। আমি তো স্পোর্টসে চ্যাম্পিয়ান হয়েছি দুবার!
ভেতরে ঘাউ-ঘাউ করে বিকট কুকুরের ডাক শোনা গেল। সন্তু বলল, শুনতে পাচ্ছিস?
জোজো ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল, ডাক শুনেই বোঝা যাচ্ছে খুব বড় কুকুর। আমি বেশ লোমওয়ালা ছোট কুকুর ভালবাসি, বড় কুকুর আমার বিশ্রী লাগে!
কাকাবাবু বললেন, মহা মুশকিল। এ-লোকটা যে কিছুতেই গেট খুলবে না। ঠাকুর সিংকে খবরও দেওয়া যাবে না?
মহিম বলল, ও দরোয়ানজি, একবার ভেতরে যেতে দাও না। ইনি কলকাতার খুব নামজাদা লোক।
দরোয়ান আবার সেই একই কথা বলল, নেহি হোগা। যাও, চলা যাও!
হঠাৎ দূরে কপ কপ শব্দ হতেই সবাই পেছনে ফিরে তাকাল। জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এল একটি ঘোড়া, তার আরোহীটি যেন ইতিহাসের পৃষ্ঠা থেকে উঠে এসেছে। কিংবা সিনেমায় এরকম দেখা যায়। লম্বা-চওড়া একজন মানুষ, মাথায় পালক বসানো উষ্ণীষ। হলুদ রঙের মখমলের কুতা-শেরওয়ানি পরা,
এক হাতে একটা রাইফেল, বুকে পৈতের মতন জড়ানো বুলেটের বেল্ট।
টগবগিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে লোকটি গেটের কাছে পৌঁছে গেল।
কাকাবাবুদের দিকে ভ্রূক্ষেপও না করে সে কড়া গলায় দরোয়ানটিকে হিন্দিতে বলল, এরা সব কারা? ভাগিয়ে দিসনি কেন?
দরোয়ানটি এবার বন্দুক বাগিয়ে বলল, যাও!
কাকাবাবু ক্রাচ বগলে নিয়ে এগিয়ে গিয়ে বললেন, নমস্তে ঠাকুর সিংজি!
লোকটি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। মুখে হরতনের গোলামের মতন গোঁফ, দু দিকে বড় জুলপি, চোখ দুটো লালচে।
মুখে রাগ রাগ ভাবটা একটু-একটু করে বদলে অবাক-অবাক হয়ে গেল। প্রথমে চিনতে পারেনি, তারপর বলল, আরে রায়চৌধুরী সাব? আপনি এখানে?
কাকাবাবু বললেন, চিনতে পেরেছেন তা হলে? যাক। বাঁচা গেল। আপনার দরোয়ান তো কোনও কথাই শুনবে না, আর-একটু হলে গুলি চালিয়ে দিত বোধ হয়! আমরা এই বেতলা ফরেস্টে বেড়াতে এসেছি কয়েকদিনের জন্য। শরীরটা ভাল নেই, তাই বিশ্রাম নিচ্ছি। ভাবলাম, আপনার সঙ্গে একবার দেখা করে যাই। কলকাতায় আপনি একবার আমার বাড়ি গিয়েছিলেন, তাই একটা রিটার্ন ভিজিট দেওয়া উচিত।
ঠাকুর সিং বিগলিতভাবে হেসে বলল, আমার কী সৌভাগ্য! আপনি এসেছেন, আমার গরিবখানা ধন্য হয়ে গেছে!
কাকাবাবু বললেন, গরিবখানাই বটে! এটা যদি গরিবখানা হয়, তা হলে প্রাসাদ বলে কাকে?
ঠাকুর সিং বলল, ব্যাপার কী জানেন রায়চৌধুরী সাব, এই জঙ্গলে যত টুরিস্ট আসে, তাদের তো সকালবেলা কোনও কাজ-কর্ম থাকে না, শুধু গাছপালা দেখে বিরক্ত হয়ে যায়, তখন তারা দল বেঁধে আমার বাড়ি দেখতে আসে। বহুত ঝামেলা হয়। তাই আমি কাউকে ঢুকতে দিই না। কলকাতায় লোকেদের বাড়ি কি যাকে-তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়? ভেতরে আসুন, আসুন। গাড়িটা বাইরে থাক।
এবার গেট খুলে গেল। ঠাকুর সিং ঘোড়া থেকে নামতেই একজন লোক এসে সেটাকে নিয়ে গেল।
কাকাবাবু বললেন, আলাপ করিয়ে দিই। এই আমার ভাইপো সন্তু, আর অন্যজন ওর বন্ধু জোজো। দুজনেই কলেজে পড়ে।
ঠাকুর সিং কাকাবাবুর কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে হেসে বলল, তোমরা বোলো তো, কার মোচ বড়? আংকেলজির, না আমার? সন্তু আর জোজো দুজনেই বলল, আপনার! ঠাকুর সিং বলল, রায়চৌধুরী সাব-এর মোচটাও বেশ জবরদস্তু। অজকাল তো বাঙালি লোক মোচ রাখেই না। মোচ না থাকলে কি পুরুষমানুষ হয়!
কাকাবাবু বললেন, আপনার বাড়িটা নতুন রং করা হয়েছে বুঝি?
ঠাকুর সিং বলল, হ্যাঁ, পুরানা জমানার বাড়ি। একশো বছরের বেশি বয়েস, অনেক জায়গায় ভেঙে পড়ছিল। সব সারিয়েছি, রং করেছি।
কাকাবাবু বললেন, একেবারে নতুনের মতন ঝকঝকে দেখাচ্ছে। এত বড় বাড়ি মেরামত আর রং কাতে বহু টাকা খরচ হয়েছে নিশ্চয়ই।
ঠাকুর সিং বলল, আপনাদের দয়া!
কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, সেই গুপ্তধন পেয়েছিলেন বুঝি?
ঠাকুর সিং হা-হা করে হেসে উঠল। তারপর বলল, না, সেখানে কিছু ছিল না।
গুপ্তধন না পেলেও ঠাকুর সিংয়ের যে অনেক টাকা তা চারদিক তাকালেই বোঝা যায়। ভেতরে রয়েছে দু খানা গাড়ি। দু পাশে বাগান, তার মাঝে-মাঝে শ্বেতপাথরের মূর্তি বসানো। বাড়ির সামনের দিকে অনেকখানি শ্বেতপাথরের সিঁড়ি।
দূরে কুকুরের ডাক শোনা যাচ্ছে। ঠাকুর সিং কাকে যেন উদ্দেশ করে বলল, এই, কুকুর বেঁধে রাখ।
তারপর কাকাবাবুকে বললেন, আসুন, ওপরে আসুন।
শ্বেতপাথরের সিঁড়িগুলো এমন মসৃণ যে, কাকাবাবুর ক্রাচ পিছলে যাচ্ছে। তবু তিনি কষ্ট করে উঠলেন।
প্রথমে একটা খোলা বারান্দা, তারপর একটা বসবার ঘর। সে ঘরখানা রাজা-মহারাজাদের ঘরের মতন সাজানো। খুব দামি-দামি সোফা-কৌচ, দু দিকের দেওয়ালে ঝুলছে একখানা করে ঢাল আর দু খানা করে তলোয়ার আর কয়েকখানা বড়বড় গোঁফওয়ালা লোকদের আঁকা ছবি।
সবাই বসবার পর ঠাকুর সিং জিজ্ঞেস করল, কী খাবেন বলুন? দুটো হাঁস মেরে রোস্ট করে দেব? হাঁসের রোস্ট খুব বড়িয়া!
কাকাবাবু বললেন, না, না, এই সকালে আমরা মাংস খাব না।
ঠাকুর সিং বলল, তা হলে রাবড়ি খান। খুব ভাল রাবড়ি-মালাই আছে।
কাকাবাবু বললেন, ওরে বাবা, অত মিষ্টি আমি খাই না। ওরা দুজন ছেলেমানুষ, ওরা খেতে পারে।
সন্তু আর জোজো দুজনে জানাল যে, তারাও এখন মিষ্টি খাবে না।
ঠাকুর সিং বলল, তা হলে আলুর পরোটা বানাতে বলি। তার সঙ্গে কলিজার সুরুয়া।
কাকাবাবু বললেন, আমরা খেয়ে এসেছি, সিংজি। অত কিছু খেতে পারব। এক কাপ করে চা খেতে পারি।
ঠাকুর সিং বলল, হ্যাঁ, হ্যাঁ, চা তো খাবেনই। তার আগে একটু কিছু তো খেতে হবে। গরিবের বাড়িতে এসেছেন।
ঠাকুর সিং ভেতরে গিয়ে কী সব নির্দেশ দিল। একটু বাদেই দুজন উর্দিপরা বেয়ারা প্লেটে করে দু-তিনরকম সন্দেশ, কাজু বাদাম আর বিস্কুট নিয়ে এল। সঙ্গে তিনটে লম্বা গেলাস ভর্তি শরবত। সন্তুর মনে হল, প্লেটগুলো রুপোর।
সে জোজোর দিকে তাকিয়ে বলল, আমি কোনওদিন রুপোর থালায় খাবার খাইনি।
জোজো সঙ্গে-সঙ্গে বলল, আবিসিনিয়ার সম্রাট একবার আমাকে আর বাবাকে সোনার প্লেটে করে ফল খেতে দিয়েছিল।
কাকাবাবু বললেন, এত খাবার!
ঠাকুর সিং বলল, খেয়ে নিন, খেয়ে নিন। এ তো অতি সামান্য। আমি রোজ সকালে দু কিলো ভইসের দুধ আর একটা আস্ত হাঁসের রোস্ট খাই!
খেতে-খেতে নানারকম গল্প হতে লাগল। আসল কথার দিকে কাকাবাবু যেতেই পারছেন না।
সন্তু উঠে দেওয়ালের ছবিগুলো দেখছে কাছ থেকে। ঠাকুর সিং বলল, খোকাবাবু, এই কোণের ছবিটা ভাল করে দ্যাখো। ম্যাজিক আছে, ম্যাজিক। দ্যাখো, ছবির মুখ ডাহিন দিকে, পায়ের জুতোও ডাহিন দিকে বেঁকে আছে। এবার এপাশে চলে এসো। ছবির মুখ বাম দিকে ঘুরে যাবে, জুতোও এদিকে ঘুরবে।
সন্তু সরে এসে দেখল, সত্যিই তাই। কিন্তু খুব অবাক হল না। রাজস্থানের একটা দুর্গে সে আগেই এরকম ছবি দেখেছে।
ঠাকুর সিংয়ের ধারণা, শুধু তার কাছেই এরকম ছবি আছে। সে মহা উৎসাহের সঙ্গে বলল, আউর একটা তসবির দেখো।
এই সময় অন্য একটি লোক ঘরে এসে ঠাকুর সিংয়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে ফিসফিস করে কী যেন বলল।
শুনতে-শুনতে ঠাকুর সিংয়ের ভুরু কুঁচকে যেতে লাগল। এক সময় সেই লোকটিকে বলল, ঠিক হ্যায়, যাও। আমি আসছি।
তারপর সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কাকাবাবুর দিকে।
কাকাবাবু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কী হল?
এতক্ষণ ঠাকুর সিং দারুণ ভদ্র আর নম্র গলায় কথা বলছিল। সন্তুর মনে হচ্ছিল, লোকটির চেহারা দশাসই হলেও আসলে সে সরল ও ভালমানুষ ধরনের। এখন ঠাকুর সিংয়ের মুখের চেহারা সম্পূর্ণ বদলে গেছে। কর্কশ গলায় বলল, রায়চৌধুরী, তুমি আমার সঙ্গে চালাকি করতে এসেছ, তাই না? তোমার ড্রাইভার গোপনে আমার বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়েছিল। লুকিয়ে ছবি তুলছিল। ধরা পড়ে গেছে। মারের চোটে স্বীকার করেছে যে, সে পুলিশের লোক। তুমি পুলিশ নিয়ে আমার বাড়িতে কী মতলবে ঢুকেছ?
কাকাবাবু নিরীহ মুখ করে বললেন, তাই নাকি, মহিম পুলিশের স্পাই? তা আমি জানব কী করে? কলকাতা থেকে গাড়ি ভাড়া করে এসেছি, সঙ্গে ড্রাইভার এসেছে।
ঠাকুর সিং বজ্রকণ্ঠে বলল, ফের বাজে কথা? পুলিশ থেকেই এ গাড়ি তোমাকে দিয়েছে। এসো, নিজের কানে শুনবে এসো!
দুমদাম করে পা ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে সে আবার বলল, এসো। আমার সঙ্গে!
ভেতরে একটা চৌকো উঠোন, তার একপাশ দিয়ে একটা লম্বা সরু বারান্দা চলে গেছে অনেক দূর। তার পাশে-পাশে ছোট-ছোট ঘর। শেষের দিকের একটা ঘরে কাকাবাবুরা চলে এলেন ঠাকুর সিংয়ের সঙ্গে।
এই ঘরটা তেমন ছোট নয়, হলঘরের মতন লম্বা, সব জানলা বন্ধ, কয়েকটি বেশি পাওয়ারের আলো জ্বলছে। ঘরের ভেতরের দৃশ্য দেখে সন্তু আর জোজো আঁতকে উঠল।
সিলিংয়ের যেখানে পাখা থাকে, সেখান থেকে দড়ি বাঁধা অবস্থায় ঝুলছে মহিম। মাথাটা নীচের দিকে। দুটো ষণ্ডামাকা লোক দাঁড়িয়ে আছে দু পাশে। তার মধ্যে একজনের দু হাতে দস্তানা পরা, সে ধরে আছে একটা লোহার রড, তার ডগার দিকটা গনগনে লাল।
অন্য লোকটি ঠাকুর সিংয়ের দিকে একটা ভাঁজ করা কার্ড এগিয়ে দিল।
ঠাকুর সিং কাকাবাবুকে বলল, পুলিশের আইডেন্টিটি কার্ড!
তারপর অন্য লোকটির দিকে ইঙ্গিত করতেই সে গরম লোহার রডটা এগিয়ে দিল মহিমের একটা চোখের একেবারে সামনে।
মহিম ভয়ে চিৎকার করে উঠল।
ঠাকুর সিং দাঁতে দাঁত চিবিয়ে জিজ্ঞেস করল, তুই ক বছর পুলিশে কাজ করছিস? বল, না হলে তোর চোখ গেলে দেব।
মহিম বলল, সাত বছর!
আমার বাড়িতে ঢুকেছিলি কেন? তোকে বাইরে থাকতে বলেছিলাম।
ভেতরটা দেখতে ইচ্ছে হয়েছিল!
ছবি তুলছিলি কেন?
আমার ছবি তোলার শখ। কোনও খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না, বিশ্বাস করুন!
চোখটা দেব নষ্ট করে? আমার বাড়িতে ঢোকার জন্যই তুই কলকাতা থেকে রায়চৌধুরীকে নিয়ে এসেছিস, তাই না?
হ্যাঁ। আমায় পাঠিয়েছে।
কাকাবাবু বললেন, সিংজি, এবার ওর বাঁধন খুলে নামিয়ে দিন। ওর যথেষ্ট শাস্তি হয়েছে।
ঠাকুর সিং হুংকার দিয়ে বলল, নাঃ! ওকে আমি কুত্তা দিয়ে খাওয়াব!
তারপর দেওয়ালে আড়াআড়িভাবে ঝোলানো দুখানা তলোয়ারের মধ্যে একখানা ফস করে টেনে নিয়ে কাকাবাবুর গলার সামনে ঠেকিয়ে বলল, রায়চৌধুরী, তুমি সিংহের গুহায় মাথা গলিয়েছ! তুমি যদি শুধু মেহমান হয়ে আসতে, অতিথি হয়ে আসতে, তোমাকে আমি মাথায় করে রাখতাম। কিন্তু তুমি পুলিশ নিয়ে আমার সঙ্গে শত্রুতা করতে এসেছ। তোমাকে আর ওই বাচ্চা দুটোকে আমি টুকরো-টুকরো করে কেটে মাটিতে পুঁতে ফেলব, আর এখান থেকে জান নিয়ে ফিরতে পারবে না।
কাকাবাবু তলোয়ারটা গ্রাহ্য করলেন না। বাঁ হাত দিয়ে ধরে সেটা সরিয়ে দিয়ে শান্ত গলায় বললেন, ঠাকুর সিং, আমার একটা পা খোঁড়া, তাই লোকে ভাবে আমি দুর্বল। হ্যাঁ, আমি দুর্বল, আমি দৌড়তে পারি না। কিন্তু আমার এই হাত দুটোতে অন্য অনেকের চেয়ে বেশি জোর আছে। আমি চোখ দিয়ে . অন্যদের চেয়ে বেশি দেখতে পাই। আর আমার মাথাটাও বেশি কাজ করে। এর আগে আমি অনেকবার অনেক বিপদের মধ্যে পড়েছি। কেউ আমাকে মারতে পারেনি। তুমি এমনি-এমনি এত সহজে আমাকে মেরে ফেলবে, অত আশা কোরো না।
ঠাকুর সিং বলল, তুমি আগে আমার মতন মানুষের পাল্লায় পড়োনি। আমার শত্রুদের মারতে আমার হাত কাঁপে না।
কাকাবাবু এ-কথার কোনও উত্তর না দিয়ে দেওয়ালের দিকে চলে গেলেন। ক্রাচ দুটো বগল থেকে সরিয়ে রাখলেন দেওয়ালে ঠেস দিয়ে। ফুলশার্টের ডান হাতের হাতা গুটিয়ে ফেললেন। ৪০০
তারপর দেওয়াল থেকে অন্য তলোয়ারটা নিয়ে বললেন, আমার একটা প্রতিজ্ঞা আছে। কেউ যদি আমার দিকে অস্ত্র তোলে তা হলে তাকে আমি কিছু-না-কিছু শাস্তি না দিয়ে ছাড়ি না। এসো, লড়ো আমার সঙ্গে।
ঠাকুর সিং ঠিক সিনেমার দৈত্যদের মতন হি-হি-হি করে অট্টহাস্য করে উঠল। হাসতে-হাসতেই বলল, তুমি একটা খোঁড়া বাঙালি, তুমি আমার সঙ্গে তলোয়ার লড়বে? আজ পর্যন্ত কেউ আমার সামনে দু মিনিটের বেশি দাঁড়াতে পারেনি।
কাকাবাবু বললেন, দেখাই যাক না। যদি মরদ হও, একা লড়া। তোমার লোকদের সরে যেতে বলল। কাপুরুষের মতন সবাই যেন একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে না পড়ে।
ঠাকুর সিং তার লোক দুটির দিকে চেয়ে বলল, এই, তোরা হঠে যা তো।
আমি এক কোপে এর মুণ্ডুটা নামিয়ে দিই।
ওরা চলে গেল এক কোণে, সন্তু আর জোজো সরে গেল আর এক কোণে।
ঠাকুর সিং আর কাকাবাবুর তলোয়ার-যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। ঠাকুর সিং জোরে-জোরে কোপ চালাচ্ছে, কাকাবাবু এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে আটকাচ্ছেন।
সন্তু জানে যে, কাকাবাবু এক সময় দুর্দান্ত ফেন্সিং লড়তে পারতেন। তার ছবিও দেখেছে। কিন্তু সে কাকাবাবুর খোঁড়া হওয়ার আগেকার কথা। এখন সে বুঝতে পারল, এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে কাকাবাবু ঠিক হাতের জোর পাচ্ছেন না। ঠাকুর সিং ভাল লড়তে জানে, কাকাবাবু ওর মারগুলো আটকাচ্ছেন কোনওরকমে।
দুই তলোয়ারে ঠকঠক শব্দ হচ্ছে, ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছেন কাকাবাবু।
জোজোর চোখ দুটো গোল-গোল হয়ে গেছে। সে মিনমিন করে বলল, কী হবে রে?
সন্তু বলল, দ্যাখ না কী হয়!
জোজো বলল, কাকাবাবু হেরে গেলে তো আমরাও…
সন্তু বলল, চুপ।
কাকাবাবু দেওয়ালের গায়ে সেঁটে গিয়ে হাঁফাচ্ছেন, তাঁর তলোয়ারের ওপরে ঠাকুর সিংয়ের তলোয়ার কোনাকুনি আটকে আছে। এখন ঠাকুর সিং সম্পূর্ণ শরীরের চাপ দিলেই কাকাবাবু সম্পূর্ণ হেরে যাবেন।
ঠাকুর সিং আর-এক দফা হাসি দিয়ে বলল, এবার? আমার সঙ্গে লড়ার শখ?
কাকাবাবু দেওয়ালে ঠেস দিয়ে ব্যালেন্স করে নিলেন। তারপর বিদ্যুৎ গতিতে নিজের তলোয়ার ছাড়িয়ে নিয়ে তলার দিক থেকে এত জোরে আঘাত করলেন যে, ঠাকুর সিং সামলাবার সময় পেল না। তার তলোয়ার হাত থেকে ছিটকে প্রথমে ঘরের সিলিংয়ে লাগল, তারপর ঝনঝন করে পড়ল মাটিতে।
এত দ্রুত ব্যাপারটা ঘটে গেল তা ঠাকুর সিং ঠিক যেন বুঝতেই পারল না।
কাকাবাবু নিজের তলোয়ার ঠাকুর সিংয়ের বুকে ঠেকিয়ে বললেন, বলেছিলাম না, আমার চোখ আর মাথা অন্যদের চেয়ে বেশি কাজ করে। এত বড় শরীরের তুলনায় তোমার মাথাটা এখনও তেমন ব্যবহার করতে পারো না, ঠাকুর সিং! নাও, এবার তোমার লোকদের বলল আমার ড্রাইভারকে নামিয়ে দিতে। বেচারার মাথায় রক্ত উঠে যাচ্ছে।
ঠাকুর সিং ফ্যালফ্যাল করে একবার কাকাবাবুর দিকে, আর-একবার নিজের লোক দুটোর দিকে তাকাল।
সেই লোক দুটো একটা উঁচু টুল এনে মহিমকে নামিয়ে দিল। পায়ের বাঁধন খোলার পরও মহিম সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারল না। বসে পড়ল মাটিতে।
কাকাবাবু তলোয়ারটা ঠাকুর সিংয়ের বুক থেকে সরিয়ে আবার ঝুলিয়ে দিলেন দেওয়ালে। এবার জামার তলায় হাত দিয়ে কোমর থেকে বার করলেন রিভলভার।
সেটা দেখিয়ে বললেন, আমার কাছে এটাও ছিল। এটা আমি এক পায়ে দাঁড়িয়েও ভাল চালাতে পারি। তোমাদের রাইফেলের চেয়েও অনেক তাড়াতাড়ি, আর আমার একটা গুলিও ফসকায় না। তুমি যখন তলোয়ার ঠেকালে আমার গলাতে, আমি এক গুলিতে তোমাকে শেষ করে দিতে পারতাম। মনে রেখো ঠাকুর সিং, তুমি যদি মানুষকে মারতে চাও, তা হলে অন্য কেউও যে-কোনওদিন তোমাকে মেরে ফেলতে পারে।
ঠাকুর সিং কথা বলতে পারছে না। এখনও সামলে উঠতে পারেনি। তার মতন এক বীরপুরুষ একজন খোঁড়া, মধ্যবয়স্ক বাঙালির কাছে তলোয়ার খেলায় হেরে যাবে, এটা যেন সে এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না। তার অনুচরদের কাছে তার সম্মান অনেকটা কমে গেল!
কপালটা ঘেমে গেছে, রুমাল দিয়ে মুখ মুছল ঠাকুর সিং।
তারপর আস্তে-আস্তে বলল, রায়চৌধুরীসাব, তুমি আমাকে হারিয়ে দিলেও এখান থেকে বেরোতে পারবে না। আমার দশ-বারোজন লোকের হাতে বন্দুক আছে। তারা একসঙ্গে ঘিরে ধরে তোমাদের খতম করে দিতে পারে, তোমার ওই পিস্তল দিয়ে আটকাতে পারবে না। কিন্তু আমি গুণীর ইজ্জত দিতে জানি। তুমি তলোয়ারে আমাকে হারিয়েছ, আমি তার সম্মান দেব। তোমাদের কেউ কিছু বলবে না, তোমরা ফিরে যাও!
কাকাবাবু বললেন, যাব কী, এখনও তো আসল কথাটাই বলা হয়নি। এখন তো আর লুকোচুরির কিছু নেই। এখন সোজাসুজি কথা বলা যেতে পারে। তোমার কাছে আমি বিশেষ একটা ব্যাপার, জানতে এসেছি। কিন্তু এ-ঘরে নয়। এখানকার সব জানলা বন্ধ, বিশ্রী গন্ধ বেরোচ্ছে। চলো না, তোমার বৈঠকখানাতেই আবার বসা যাক।
ঠাকুর সিং সবিস্ময়ে কাকাবাবুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
সন্তু আর জোজো মহিমের দু হাত ধরে দাঁড় করিয়ে দিল। মহিমও হাঁ করে চেয়ে আছে কাকাবাবুর দিকে। যেন, এমন মানুষ সে আগে কখনও দেখেনি।