Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সত্যান্বেষী – ব্যোমকেশ বক্সী || Sharadindu Bandyopadhyay » Page 3

সত্যান্বেষী – ব্যোমকেশ বক্সী || Sharadindu Bandyopadhyay

পুলিশের কাছে মেসের চাকর বামুন হইতে আরম্ভ করিয়া আমাদের সকলেরই এজাহার হইল। যে যাহা জানি, বলিলাম। কিন্তু কাহারও জবানবন্দীতে এমন কিছু প্রকাশ পাইল না যাহাতে অশ্বিনীবাবুর মৃত্যুর কারণ অনুমান করা যাইতে পারে। অশ্বিনীবাবু অত্যন্ত নির্বিরোধ লোক ছিলেন, মেস ও অফিস ব্যতীত অন্য কোথাও তাঁহার বন্ধুবান্ধব কেহ ছিল বলিয়াও জানা গেল না। তিনি প্রতি শনিবারে বাড়ি যাইতেন। দশ-বারো বৎসর এইরূপ চলিয়া আসিতেছে, কখনও ব্যতিক্রম হয় নাই। কিছুদিন হইতে তিনি বহুমূত্র-রোগে ভুগিতেছিলেন; এইরূপ গোটাকয়েক সাধারণ কথাই প্রকাশ পাইল।
ডাক্তার অনুকূলবাবুও এজাহার দিলেন। তিনি যাহা বলিলেন, তাহাতে অশ্বিনীবাবুর মৃতু-রহস্য পরিষ্কার না হইয়া যেন আরও জটিল হইয়া উঠিল। তাঁহার জবানবন্দী সম্পূর্ণ উদ্ধৃত করিতেছি :
“গত বারো বৎসর যাবৎ অশ্বিনীবাবু আমার বাসায় ছিলেন। তাঁর বাড়ি বর্ধমান জেলায় হরিহরপুর গ্রামে। তিনি সওদাগরী অফিসে কাজ করতেন, একশ’ কুড়ি টাকা আন্দাজ মাইনে পেতেন। এত অল্প মাহিনায় পরিবার নিয়ে কলকাতায় থাকার সুবিধা হয় না, তাই তিনি একলা মেসে থাকতেন। এ মেসের প্রায় সকলেই তাই করে থাকেন।
“অশ্বিনীবাবুকে আমি যতদূর জানি, তিনি সরল-প্রকৃতির কর্তব্যনিষ্ঠ লোক ছিলেন। কখনও কারুর পাওনা ফেলে রাখতেন না, কারুর কাছে এক পয়সা ধার ছিল না। কোন বদখেয়াল কি নেশা ছিল বলেও আমার জানা নেই; মেসের অন্য সকলেই এ বিষয়ে সাক্ষী দিতে পারবেন।
“এই বারো বছরের মধ্যে তাঁর সম্বন্ধে অস্বাভাবিক বা সন্দেহজনক কিছু লক্ষ্য করিনি। তিনি গত কয়েক মাস থেকে ডায়েবিটিসে ভুগছিলেন, আমারই চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু তাঁর মানসিক রোগের কোন লক্ষণ ইতিপূর্বে চোখে পড়েনি। কাল হঠাৎ তাঁর চাল-চলনে একটা অপ্রকিতস্থ ভাব প্রথম লক্ষ্য করলুম।
“কাল বেলা প্রায় পৌঁনে দশটার সময় আমি আমার ডাক্তারখানায় বসেছিলুম। হঠাৎ অশ্বিনীবাবু এসে বললেন–‘ডাক্তারবাবু, আপনার সঙ্গে আমার একটা গোপনীয় কথা আছে।’ একটু আশ্চর্য হয়ে তাঁর মুখের দিকে চেয়ে দেখলুম; তাঁকে অত্যন্ত বিচলিত মনে হল। জিজ্ঞাসা করলুম–‘কি কথা?’ তিনি এদিক ওদিক চেয়ে চাপা গলায় বললেন–‘এখন নয়, আর এক সময়।’ বলেই তাড়াতাড়ি অফিসে চলে গেলেন।
‘সন্ধ্যার পর আমি, অজিতবাবু আর অতুলবাবু আমার ঘরে বসে গল্প করছিলুম, হঠাৎ অজিতবাবু দেখতে পেলেন দরজার পাশে দাঁড়িয়ে অশ্বিনীবাবু আমাদের কথা শুনছেন। তাঁকে ডাকতেই তিনি কোন গতিকে একটা কৈফিয়ৎ দিয়ে তাড়াতাড়ি চলে গেলেন। আমরা সবাই অবাক্‌ হয়ে রইলুম, ভাবলুম, কি হল অশ্বিনীবাবুর?
“তারপর রাত্রি দশটার সময় তিনি চোরের মত চুপি চুপি আমার কাছে এসে উপস্থিত হলেন। মুখ দেখেই বুঝলুম, তাঁর মানসিক অবস্থা প্রতিতস্থ নয়। দরজা বন্ধ করে দিয়ে তিনি আবোল-তাবোল নানারকম বলতে লাগলেন। কখনও বলেন, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ভীষণ বিভীষিকাময় স্বপ্ন দেখেছেন, কখনও বলেন, একটা ভয়ানক গুপ্তরহস্য জানতে পেরেছেন। আমি তাকে ঠাণ্ডা করিবার চেষ্টা করলুম, কিন্তু তিনি ঝোঁকের মাথায় বলেই চললেন। শেষ আমি তাঁকে এক পুরিয়া ঘুমের ওষুধ দিয়ে বললুম–‘আজ রাত্রে শুয়ে পড়ুন গিয়ে, কাল সকালে আপনার কথা শুনব।’ তিনি ওষুধ নিয়ে উপরে উঠে গেলেন।
“সেই তাঁর সঙ্গে আমার শেষ দেখা,–তারপর আজ সকালে এই কাণ্ড! তাঁর ভাবগতিক দেখে তাঁর মানসিক প্রকৃতিস্থতা সম্বন্ধে আমার সন্দেহ হয়েছিল বটে, কিন্তু তিনি যে এই ক্ষণিক উত্তেজনার বশে আত্মঘাতী হবেন, তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি।”
অনুকূলবাবু নীরব হইলে দারোগা জিজ্ঞাসা করিলেন–“আপনি মনে করেন, এ আত্মহত্যা?”
অনুকূলবাবু বলিলেন–“তা ছাড়া আর কি হতে পারে? তবে অতুলবাবু বলছিলেন যে, এ আত্মহত্যা নয়–অন্য কিছু। এ বিষয়ে তিনি হয়তো বেশি জানেন, অতএব তিনিই বলতে পারেন।”
দারোগা অতুলের দিকে ফিরিয়া কহিলেন–“আপনিই না অতুলবাবু? এটা যে আত্মহত্যা নয়, তা মনে করবার কোনও কারণ আছে?”
“আছে। নিজের হাতে মানুষ অমন ভয়ানকভাবে নিজের গলা কাটতে পারে না। আপনি লাস দেখেছেন–ভেবে দেখুন, এ অসম্ভব।”
দারোগা কিয়ৎকাল চিন্তা করিয়া বলিলেন–“হত্যাকারী কে, আপনার কোনও সন্দেহ হয় কি?”
“না।”
“হত্যার কারণ কিছু অনুমান করতে পারেন কি?”
অতুল রাস্তার দিকের জানলাটা নির্দেশ করিয়া বলিল–“ঐ জানলাটা হত্যার কারণ।”
দারোগা সচকিত হইয়া বলিলেন–“জানলা হত্যার কারণ? আপনি বলতে যান, হত্যাকারী ঐ জানলা দিয়ে ঘরে ঢুকেছিল?”
“না। হত্যাকারী দরজা দিয়েই ঘরে ঢুকেছিল।”
দারোগা মৃদু হাসিয়া বলিলেন–“আপনার বোধহয় স্মরণ নেই যে, দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল।”
“স্মরণ আছে।”
দারোগা ঈষৎ পরিহাসের স্বরে বলিলেন–“তবে কি অশ্বিনীবাবু আহত হবার পর দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন?”
“না, হত্যাকারী অশ্বিনীবাবুকে হত্যা করবার পর বাইরে থেকেই দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল।”
“সে কি করে হতে পারে?”
অতুল মুখ টিপিয়া হাসিয়া বলিল–“খুব সহজে, একটু ভেবে দেখলেই বুঝতে পারবেন।”
অনুকূলবাবু এতক্ষণ দরজাটার দিকেই তাকাইয়া ছিলেন, তিনি বলিয়া উঠিলেন–“ঠিক তো! ঠিক তো! দরজা সহজেই বাইরে থেকে বন্ধ করা যায়, এতক্ষণ আমাদের মাথাতেই ঢোকেনি। দেখেছেন না দরজায় যে ইয়েল লক্‌ লাগানো।”
দারোগা প্রবীণ লোক, তিনি গালে হাত দিয়ে ভাবিতে ভাবিতে লাগিলেন,–“সে ঠিক। কিন্তু একটা জায়গায় খট্‌কা লাগছে। অশ্বিনীবাবু যে রাত্রে দরজা খুলে শুয়েছিলেন তার কি কোন প্রমাণ আছে?”
অতুল বলিল–“না, বরঞ্চ তার উল্টো প্রমাণই আছে। আমি জানি, তিনি দরজা বন্ধ করে শুয়েছিলেন।”
আমি বললাম–“আমিও জানি। আমি তাঁকে দরজা বন্ধ করতে শুনেছি।”
দারোগা বলিলেন–“তবে? অশ্বিনীবাবু রাত্রে উঠে হত্যাকারীকে দরজা খুলে দিয়েছিলেন, এ অনুমানও তো সম্ভব বলে মনে হয় না।”
অতুল বলিল–“না। কিন্তু আপনার বোধহয় স্মরণ নেই যে, অশ্বিনীবাবু গত কয়েকমাস থেকে একটা রোগে ভুগছিলেন।”
“রোগে ভুগছিলেন? ওঃ! ঠিক বলেছেন, ঠিক বলেছেন, অতুলবাবু! ও কথাটা আমার খেয়ালই ছিল না।” দারোগা একটু মুরুব্বীয়ানাভাবে বলিলেন–“আপনি দেখছি বেশ intelligent লোক, পুলিসে ঢুকে পড়ুন না! এ পথে আপনি উন্নতি করতে পারবেন। কিন্তু এদিকে ব্যাপার ক্রমেই ঘোরালো হয়ে উঠছে। যদি সত্যিই এটা হত্যাকাণ্ড হয়, তাহলে হত্যাকারী যে ভয়ানক হুঁশিয়ার লোক, তাতে সন্দেহ নেই। কারুর উপর আপনাদের সন্দেহ হয়?” বলিয়া উপস্থিত সকলের মুখের দিকে চাহিলেন।
সকলেই নীরবে মাথা নাড়িলেন। অনুকূলবাবু বলিলেন–“দেখুন, এ পাড়ায় প্রায়ই একটা-দুটো খুন হয়; এ খবর অবশ্য আপনার কাছে নূতন নয়। পরশু দিনই আমাদের বাসার প্রায় সামনে একটা খুন হয়ে গেছে। এই সব দেখে আমার মনে হয় যে, সবগুলো হত্যাই এক সুতোয় গাঁথা,–একটার কিনারা হলেই অন্যটার কিনারা হবে। অবশ্য যদি অশ্বিনীবাবুর মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলে মেনে নেওয়া হয়!”
দারোগা বলিলেন–“তা হতে পারে। কিন্তু অন্য খুনের কিনারা হবার আশায় বসে থাকলে বোধহয় অনন্তকাল বসেই থাকতে হবে।”
অতুল বলিল–“দারোগাবাবু, যদি এ খুনের কিনারা করতে চান, তাহলে ঐ জানালাটার কথা ভাল করে ভেবে দেখেবেন।”
দারোগা ক্লান্তভাবে কহিলেন–“সব কথাই আমাদের ভাল করে ভেবে দেখতে হবে, অতুলবাবু। এখন আপনাদের প্রত্যেকের ঘর আমি খানাতল্লাস করতে চাই।”
তারপর উপরে নীচে সব ঘরই পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে খানাতল্লাস করা হইল, কিন্তু কোথাও এমন কিছু পাওয়া গেল না যাহার দ্বারা এই মৃত্যু-রহস্যের উপর আলোকপাত হইতে পারে। অশ্বিনীবাবুর ঘরও যথারীতি অনুসন্ধান করা হইল, কিন্তু দু’একটা অতি সাধারণ পারিবারিক চিঠিপত্র ছাড়া আর কিছুই পাওয়া গেল না। ক্ষুরের শূন্য খাপটা বিছানার পাশেই পড়িয়াছিল। তিনি নিজে ক্ষৌরকার্য করিতেন এ কথা আমরা সকলেই জানিতাম, খাপটা চিনিতেও কষ্ট হইল না। অশ্বিনীবাবুর মৃতদেহ পূর্বেই স্থানান্তরিত হইয়াছিল, অতঃপর তাঁহার দরজায় তালা লাগাইয়া সীলমোহর করিয়া দারোগা বেলা দেড়টা নাগাদ প্রস্থান করিলেন।
অশ্বিনীবাবুর বাড়িতে ‘তার’ পাঠানো হইয়াছিল, বৈকালে তাঁহার পুত্ররা ও অন্যান্য নিকট-আত্মীয়বর্গ আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তাঁহাদের বিস্মিত বিমূঢ় শোকের চিত্রের উপর যবনিকা টানিয়া দিলাম। আমরা অনাত্মীয় হইলেও অশ্বিনীবাবুর এই শোচনীয় মৃত্যুতে প্রত্যেকেই গভীরভাবে আহত হইয়াছিলাম। তা ছাড়া নিজেদের প্রাণ লইয়াও কম আশঙ্কা হয় নাই। যেখানে পাশের ঘরে এরূপ ব্যাপার ঘটিতে পারে, সেখানে আমাদের জীবনেরই বা নিশ্চয়তা কি? মলিন সশঙ্ক অবসন্নতার ভিতর দিয়া এই বিপদভারাক্রান্ত দুর্দিন কাটিয়া গেল।
রাত্রিকালে শয়নের পূর্বে ডাক্তারের ঘরে গিয়া দেখিলাম, তিনি স্তব্ধগম্ভীরমুখে বসিয়া আছেন। এই এক দিনের ঘটনায় তাঁহার শান্ত নিশ্চিহ্ন মুখের উপর কালো কালো রেখা পড়িয়া গিয়াছে। আমি তাঁহার পাশে বসিয়া বলিলাম–“বাসার সকলেই তো মেস ছেড়ে চলে যাবার জোগাড় করছেন।”
ম্লান হাসিয়া অনুকূলবাবু বলিলেন–“তাঁদের তো দোষ দেওয়া যায় না, অজিতবাবু! এ রকম ব্যাপার যেখানে ঘটে, সেখানে কে থাকতে চায় বলুন!–কিন্তু একটা কথা আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না–একে খুব বলা যেতে পারে কি করে? আর যদি খুনই হয়, তাহলে মেসের বাইরের লোকের দ্বারা তো খুন বলা যেতে পারে কি করে? আর যদি খুনই হয়, তাহলে মেসের বাইরের লোকের দ্বারা তো খুব সম্ভব হতে পারে না। প্রথমত, হত্যাকারী উপরে উঠল কি করে? সিঁড়ির দরজা রাত্রিকালে বন্ধ থাকে, এ তো আপনারা সকলে জানেন। যদি ধরে নেওয়া যায় যে, লোকটা কোনও কৌশলে উপরে উঠেছিল–কিন্তু সে অশ্বিনীবাবুর ক্ষুর দিয়ে তাঁকে খুন করল কি করে? এ কি কখনও সম্ভব? সুতরাং বাইরের লোকের দ্বারা খুন হয়নি এ কথা নিশ্চিত। তা হলে বাকি থাকেন কারা?–যাঁরা মেসে থাকেন। এঁদের মধ্যে অশ্বিনীবাবুকে খুন করতে পারে, এমন কেউ আছে কি? অবশ্য অতুলবাবু অল্পদিন হল এসেছেন–তাঁর বিষয়ে আমরা কিছু জানি না–”
আমি চমকিয়া উঠিয়া বলিলাম–“অতুল–?
ডাক্তারবাবু গলা খাটো করিয়া বলিলেন–“অতুল্বাবু লোকটিকে আপনার কি রকম মনে হয়?”
আমি বলিলাম–“অতুল? না না, এ কখনও সম্ভব নয়। অতুল কি জন্য অশ্বিনীবাবুকে–”
ডাক্তার বলিলেন–“তবেই দেখুন, আপনার মুখ থেকেই প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে যে, মেসের কেউ এ কাজ করতে পারেন না। তাহলে বাকি থাকে কি?–তিনি আত্মহত্যা করেছেন, এই কথাটাই কি বাকি থেকে যাচ্ছে না?”
“কিন্তু আত্মহত্যা করবারও তো একটা কারণ থাকা চাই।”
“সে কথাও আমি ভেবে দেখেছি। আপনার মনে আছে–কিছুদিন আগে আমি বলেছিলুম যে এ পাড়ায় একটা কোকেনের গুপ্ত সম্প্রদায় আছে।–এই সম্প্রদায়ের সর্দার কে তা কেউ জানে না।”
“হ্যাঁ–মনে আছে।”
ডাক্তার ধীরে ধীরে বলিলেন–“এখন মনে করুন, অশ্বিনীবাবুই যদি এই সম্প্রদায়ের সর্দার হয়?”
আমি স্তম্ভিত হইয়া বলিলাম–“সে কি? তাও কি কখনও সম্ভব?”
ডাক্তার বলিলেন–“অজিতবাবু, পৃথিবীতে কিছুই অসম্ভব নয়। বরঞ্চ কাল রাত্রে অশ্বিনীবাবু আমাকে যে-সব কথা বলেছিলেন, তাতে এই সন্দেহই ঘনীভূত হয়–খুব সম্ভব তিনি অত্যন্ত ভয় পেয়েছিলেন। অত্যধিক ভয় পেলে মানুষ অপ্রকৃতিস্থ হয়ে পড়তে পারে। কে বলতে পারে, হয়তো এই অপ্রকৃতিস্থতার ঝোঁকেই আত্মহত্যা করেছেন!–ভেবে দেখুন, এ অনুমান কি সঙ্গত মনে হয় না?”
এই অভিনব থেয়োরি শুনিয়া আমার মাথা একেবারে গুলাইয়া গিয়াছিল, আমি বলিলাম–“কি জানি ডাক্তারবাবু, আমি তো কিছুই ধারণা করতে পারছি না। আপনি বরং আপনার সন্দেহের কথা পুলিসকে খুলে বলুন।”
ডাক্তার উঠিয়া দাঁড়াইলেন, বলিলেন–“কাল তাই বলব। এ সমস্যার একটা মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত যেন কিছুতেই শান্তি পাচ্ছি না।”

Pages: 1 2 3 4 5 6

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress