শ্বেত পাথরের থালা (Shwet Pathorer Thala) : 19
অফিসে যেটা সবচেয়ে স্বস্তির কারণ সেটা হল বন্দনাকে সবার সঙ্গে বসতে হয় না, অমলেন্দুবাবুর ঘরের আগে একটা ছোট্ট ঘর আছে সেখানেই সে বসে, টাইপিস্ট স্যারার সঙ্গে। এই অফিসের তাবৎ কেরানিকুলের গুঞ্জন তার কানে আসে না। কারুর সঙ্গে সামাজিক মেলামেশার দায়ও তার নেই। অফিস যায়, কাজ করে, বাড়ি চলে আসে। আরেকটা জিনিস ভালো লাগে অমলেন্দুবাবু তাকে এতো সম্মান, এতো সমাদরের চোখে দেখেন, যেন সে তাঁর পি. এ. নয়, বয়সে বড় সহকর্মীর স্ত্রীই।
প্রথম দু-চার দিন কাজের পর বললেন—‘আপনার অফিসে আসতে বা বাড়ি ফিরতে খুব কষ্ট হয়, না?’
বন্দনা তখন সদ্য সদ্য অফিসে পৌঁছে রুমাল দিয়ে মুখ মুছছে, বলল—‘না, না, কষ্ট কি? সবারই তো এক অবস্থা!’
—‘না। না। সবার এক অবস্থা কোথায়? আমি তো দিব্যি গাড়ি করে বাড়ি পৌঁছে যাই। আপনার বাড়ি আমার পথে না পড়লেও খুব ঘুরও নয়, আপনাকে তুলে নেওয়া, নামিয়ে দেওয়া আমি অনায়াসেই করতে পারি। কিন্তু…’
—‘না, মোটেই ও কাজ করবেন না।’
—‘করব না। কিন্তু কারণটা আপনি জেনে রাখুন। নিয়মিত এ কাজটি করলেই আপনি অনেকের কোপে পড়বেন। আমি সেটা চাই না। আমি চেষ্টা করছি যত তাড়াতাড়ি আপনি কোম্পানি থেকেই কার-লিফট পান।’
বন্দনা বলল—‘আপনি আমার জন্য কোনও বিশেষ ব্যবস্থার মধ্যে যাবেন না মিঃ ঘোষাল। আমি একেবারে সাধারণ হয়ে থাকলেই স্বস্তি পাব।’
কিন্তু অফিস থেকে বেরিয়ে বেশির ভাগ দিনই সে ট্রাম-বাস চট করে ধরতে পারে না। বাদুড়-ঝোলা ট্রামে-বাসে ওঠবার সাহস বা দক্ষতা কোনটাই তার নেই। বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল, তবুও না।
টাইপিস্ট মেয়েটি অ্যাংলো ইন্ডিয়ান। সে ধর্মতলায় ব্লকম্যান স্ট্রিটে থাকে। বেশির ভাগ দিনই হাঁটতে হাঁটতে চলে যায়। দিনটা সুন্দর। কিছুক্ষণ ট্রামে ওঠার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে বন্দনা হাঁটতে আরম্ভ করল, পার্ক স্ট্রিটে ঢুকে পড়ল। পর পর গাড়ির সার। চলমান। ভেদ করা দুঃসাধ্য। দু দিক থেকে রেস্তোরাঁর আলো জ্বলছে। বন্দনা ভাবল কোথাও ঢুকে একটু চা-টা খেয়ে নেওয়া যাক। তারপর বাস পেলে ধরবে, নয়ত আবার হণ্টন। দু দফায় হাঁটলে বেশি কষ্ট হবে না। কলিদের সঙ্গে সাধারণত স্কাইরুমে বসে সে। পরিচিত বলে স্কাইরুমেই ঢুকে একটু উঁচুর দিকে জায়গা নিয়ে বসল। এদের ডিনারের জন্য টেবিল রেডি করা শুরু হয়ে গেছে। বন্দনার অস্বস্তি শুরু হল। ক্লান্তি এবং ঝোঁকের মাথায় আগে খেয়াল হয়নি, দলবেঁধে যেখানে আসতে ভালো লাগে সেখানে একা-একা ভালো না-ও লাগতে পারে। একটু লক্ষ করলেই বোঝা যায় কেউ এখানে নিছক একা নেই। বিশেষত মেয়েরা। এবং তারা সকলেই ভীষণ সজ্জিত। উগ্র প্রসাধনে, কেশ এবং বেশবিন্যাসে সবাই-ই প্রায় একরকম। এ-দিকে তার আলগা খোঁপা থেকে চুল ছাড়া পেয়ে কপালের ওপর ঘাড়ের ওপর লেপটে আছে। কচি কলাপাতা রঙের এই টাঙাইলটা সে কাল পাট ভেঙেছে। আজকে একবার ইস্ত্রি চালিয়ে নিয়ে পরেছে। একটা শাড়ি সাধারণত দু দিন চালাবার চেষ্টা করে সে। সকালে মুখে যা সামান্য প্রসাধন হয়েছিল, এখন তার আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। টিফিন আওয়ারে মেয়েরা মুখ মেরামত করে, টিফিন সেরে যখন আবার সিটে এসে বসে তখন একদম টিপটপ। বন্দনা এসব করে না। সন্ধেবেলায় সে যখন বাড়ি ফেরে, তাকে সারাদিনের পরিশ্রমে ক্লান্ত ছাত্রী কিংবা রিসার্চ স্কলারের মতো দেখায়। এখন কেউ হয়ত তার দিকে তাকাচ্ছে না, কিন্তু বন্দনার মনে হল ডানদিকের টেবিলে পুডল-এর মতো চুল, বড় বড় রিং পরা মেয়েটি তার সঙ্গীকে কিছু বলল, তাকেই লক্ষ্য করে। আচ্ছা, এমন কেন হবে? মানুষ কি একা হতে পারে না? মেয়েদের একা একা কোথাও যেতে ইচ্ছা হতে পারে না? এ ধরনের সংস্কার কেন থাকবে? অন্য কোনও দেশে কি আছে? ব্রিটেন অবশ্য খুব রক্ষণশীল। কিন্তু আমেরিকা? সেখানে হয়ত আবহাওয়া সম্পূর্ণ অন্য রকম। কেউ কারুর তোয়াক্কা করে না। ফর্মালিটির বালাই নেই। এই মুহূর্তে বন্দনার মনে হল তার আমেরিকার নাগরিক হওয়া উচিত ছিল। স্টুয়ার্ড এসে দাঁড়িয়েছে। মুখ তুলে বন্দনা অবাক হয়ে গেল। স্টুয়ার্ড নয়, যোগীন্দরেরই একজন অফিসার। হাতজোড় করে বললেন—‘বসতে পারি?’
—‘নিশ্চয়ই’—বন্দনা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল। সামান্যই আলাপ ভদ্রলোকের সঙ্গে, কিন্তু আজ উনি বন্দনাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন।
—‘আপনি কি কারুর অপেক্ষা করছিলেন?’
—‘উঁহু।’
—‘তা হলে?’
—‘এমনি। ক্লান্ত লাগল, ঢুকে পড়লাম।’
ভরাট গলায় একটি মেয়ে গান ধরেছে। হাঁটু ভেঙে তাল দিচ্ছে, আর গাইছে ‘হোয়েন আই ওয়াজ আ ব্যাচেলর, ব্যাচেলর, ব্যাচেলর গাই।’ অ্যাকর্ডিয়ন বাজছে সঙ্গে সঙ্গে।
ভদ্রলোক বললেন—‘আমার নাম অনুপম সোম, জানেন তো?’
—‘কি আশ্চর্য! জানব না কেন?’
—‘না জানতেও পারেন। লোকে বলে আপনি অমলেন্দু ঘোষাল আর স্যারা মার্শ্যাল ছাড়া আর কাউকে চেনেন না।’
বন্দনা হাসিমুখে চুপ করে রইল। এ সম্বন্ধে তার বক্তব্য কিছু নেই। সত্যিই! মুখ-চেনা, আর সামান্য সৌজন্য বিনিময়—এর বেশি নিকটত্ব তার কারো সঙ্গে হয়নি, হবেও না, কারণ এ ব্যাপারে তার উৎসাহ কম।
অনুপম খুব অল্পবয়স্ক নয়। কিন্তু ধরনটার মধ্যে ভারিক্কি ভাব নেই একেবারেই। সামান্য একটু বিদ্রূপের ভাব সব সময়েই যেন মিশে থাকে তার ব্যবহারে। যেন সে সবাইকার ব্যাপারেই খুব মজা পাচ্ছে।
—‘একলা একলা হঠাৎ স্কাইরুমে?’
বন্দনা বলল—‘আচ্ছা, আমার প্রশ্নটার জবাব দিন আগে— একলা নয়ই বা কেন? আপনি তো একলাই এসেছেন? আমিই বা না আসব কেন?’
অনুপম টানটান হয়ে বসে বলল—‘আমি তা হলে ঠিকই ধরেছি।’
—‘কি ঠিক ধরেছেন?’
—‘আপনি একজন রেবেল, বিদ্রোহিণী।’
বন্দনা মৃদু হেসে বলল— ‘সামান্য এই কারণে কি কেউ বিদ্রোহিণী নাম পেতে পারে?’
—‘সে যাই হোক, আমি নিজেও খুব আনকনভেনশন্যাল।’
এবার সত্যি সত্যিই স্টুয়ার্ড এসে দাঁড়িয়েছে। বন্দনা কিছু বলতে যেতেই তাঁকে থামিয়ে দিয়ে অনুপম সোম খাবারের অর্ডার দিয়ে দিল। বন্দনা জোরাজুরি করতে পারে না। বলল— ‘আপনি একটুও আনকনভেনশন্যাল নন।’
—‘না, না। এ ব্যাপারে আমি একদম কনভেনশন্যাল। অন্যান্য ব্যাপারে সৃষ্টিছাড়া। যেমন ধরুন আমি থাকি সম্পূর্ণ একা। আমার মা, ভাই, বোন সবাই থাকেন চেতলায়। আমি রাসেল স্ট্রিটে ফ্ল্যাট নিয়ে একা থাকি। কেন জানেন?’ বন্দনা মাথা নাড়ল। সে জানে না। জানতে চায়ও না খুব। কিন্তু সসামের বলার আগ্রহ খুব বেশি।
সোম বলল—‘আমি বিশ্বাস করি প্রাপ্তবয়স্ক, ম্যাচিওর যুবকের একা থাকাই উচিত। অবশ্য আমার মা মাঝে মাঝে এসে থাকেন কিন্তু টিকতে পারেন না।’
—‘কেন?’
—‘মা বলেন—আমার আট বাই দশ ঘর আর চার ফুটের বারান্দায় নাকি তাঁর দম বন্ধ হয়ে আসছে। অথচ দেখুন মায়ের চেতলার বাড়িতে গেলে, বিরাট উঠোন, বাগান, উঁচু সিলিংওয়ালা ঘর, দালানের মধ্যেই আমার কেমন স্টাফি লাগে।’
—‘আপনি কি কোনও সময়ে হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেছেন?’ বন্দনা বলল।
—‘কোনও সময়ে মানে? অল মাই লাইফ। স্কুলে, কলেজে, বরাবর। আপনি খুব ধরেছেন তো!’
বন্দনা বলল—‘হস্টেলে থাকলে ওই রকম একটু…’
—‘স্বার্থপর হয়ে যায় লোকে, না!’
—‘তা ঠিক নয়।’
—‘আরে আমার মা তো তাই বলে থাকেন, আমার বাড়ির ওপর টান নেই, আমি—মা একটা কথা ব্যবহার করেন ‘একালষেঁড়ে।’ আসলে কি জানেন আমি খুব আত্মনির্ভর। বাড়িতে গিয়ে যদি দেখি আমার ছোট ভাই মা-কে বলছে ‘এক গ্লাস জল দাও তো’, বা বোনকে বলছে— ‘আমার শার্টটা কেচে দিস।’ কিংবা সন্ধে পার হলেই দেখি মা বোনকে নিয়ে ঘরে ঘরে বিছানা করছে, মশারি খাটাচ্ছে, আমার, ভাইয়ের সবার, তখন সত্যিই আমার কেমন দমবন্ধ হয়ে আসে।’
—‘এখানে আপনি সব নিজের হাতে করেন?’
—‘এভরিথিং। একজন হেল্পিং হ্যান্ড আছে, কিন্তু সে আমার ব্যক্তিগত কাজ কিছু করে না।’
—‘বাঃ, বন্দনা খুশির সুরে বলল, তারপর বলল নিশ্চয়ই রেস্টুরেন্ট থেকেই রাতের খাওয়া সেরে যাবেন।’
—‘একজ্যাক্টলি।’
—‘এটাও আপনার সেলফ হেল্পের অঙ্গ তো?’
খুব খানিকটা হাসল অনুপম সোম।
—‘ভালো বলেছেন।’
বন্দনার কফি প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। বলল— ‘এবার আমি উঠি আপনি বসুন। ডিনার সারবেন তো?’
অনুপম সোম বলল—‘আপনারই বা সারতে আপত্তি কি?’
—‘তা হয় না, আমি সামান্য একটু রিল্যাক্স করতে এসেছিলুম। বাড়িতে ফেরার একটা সময় আছে আমার, সেটা পার হয়ে গেলে ছেলে খুব অস্থির হবে।’
—‘ছেলে? কত বড় ছেলে আপনার?’
—‘বছর পনের হবে।’
—‘আর কে আছেন বাড়িতে?’ অনুপম যেমন নিজের বৃত্তান্তও গলগল করে বলে যেতে পারে, অন্যের ব্যাপারে কৌতূহল প্রকাশেও তার কোনও দ্বিধা নেই।
—‘আর কে থাকবেন?’
—‘কিছু মনে করবেন না। আমার কৌতূহল খারাপ লাগলে না হয় না-ই উত্তর দিলেন। আপনার ছেলের পিতৃকুলের বা মাতৃকুলের কেউ, মানে আপনি কোথায় থাকেন? পিত্রালয়ে না শ্বশুরালয়ে?’
বন্দনা একটু বিরক্ত হচ্ছিল, বলল—‘আমি ছেলেকে নিয়ে একাই থাকি।’
—‘ইস্’। অনুপম সোম খুব অপরাধীর মতো উঠে দাঁড়াল। ‘চলুন আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসি।’
—‘আপনাকে পৌঁছতে হবে না। এখন বাস-ট্রামের ভিড় কমে গেছে, আমি অনায়াসেই চলে যেতে পারব।’
—‘তা হয় না, মিসেস ভট্টাচারিয়া। আমার সঙ্গে গাড়ি রয়েছে। এভাবে আপনাকে ছেড়ে দিতে আমি মোটেই রাজি নই।’
—‘আপনার তো খাওয়ার কথা ছিল।’
—‘ওটা কোনও সমস্যা নয় মিসেস ভট্টাচারিয়া। বলছিলাম না আমি খুব ইন্ডিপেন্ডেন্ট! আই ক্যান ফিক্স মাইসেলফ এ স্যান্ডউইচ। ইচ্ছে হলে খিচুড়ি আর ওমলেট বানিয়ে নিতে পারি। ওসব আমার কাছে কিছুই না। আপনি ভাববেন না। চলুন।’
বন্দনা কোনও ব্যাপারে বেশি জোরাজুরি করতে পারে না। অনুপম গাড়ির পেছনের দরজা খুলে দিলে সে উঠে বসল। হরিশ মুখার্জি রোডে বাঁক নিয়ে সোম বলল—‘আপনার পুত্রের সঙ্গে আলাপ করে আসব।’
—‘বেশ তো।’
বন্দনার মনে হল, সেটাই ভালো। ভদ্রলোক গাড়ি নিয়ে তাকে দরজার কাছে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলে সেটা কোনরকমেই ভালো দেখাবে না। গোটা পাড়ায় একমাত্র চাকুরে মেয়ে সে-ই। কারো সঙ্গে বিশেষ মেলামেশাও নেই। কি দরকার লোকের মুখে কথা জুগিয়ে।
রূপের সঙ্গে দারুণ আলাপ জমাল অনুপম। দেখা গেল সে ফটোগ্রাফি, ক্রিকেট, টেনিস এবং ছবি-আঁকা সম্পর্কেও কিছু জানে। রূপের ছবিগুলো দেখল একটার পর একটা। বলল—‘তোমার ধরনটা চাইনিজ। তুমি ইমপ্রেশনিজমের দিকে যেও না। ডেকোরেটিভ আর্ট তোমার হাতে ভীষণ ভালো আসবে। মিসেস ভট্টাচারিয়া, আপনার ছেলের ভবিষ্যৎ দারুণ উজ্জ্বল।’
রূপের মুখ জ্বলজ্বল করছে। অল্প অল্প নরম গোঁফ গজিয়েছে ছেলের। চোখে নবীন চশমা। বন্দনার মনটা হাল্কা লাগল। বলল, ‘যদিও জানি, আপনি একদম ইন্ডিপেন্ডেন্ট, তবু আজ আপনার রান্না যখন করেই ফেলেছি, ব্রত ভেঙে খেয়ে যান।’
লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল সোম। খুব অপ্রস্তুত। ‘ইস্ নটা বাজছে, খেয়াল করিনি। আমি মোটেই খেয়ে যাব না।’
বন্দনা বলল—‘আপনাকে অত কিন্তু-কিন্তু করতে হবে না, আমি টেবিলে খাবার দিয়েছি। আসুন। রূপু আয়।’
রূপ বলল—‘আসুন কাকু। আপনি বুঝি নিজে রান্না করে খান?’
তিনজনে খেতে খেতে অনুপম খুব খুশি হয়ে বলল—‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট একশবার। তবে মাঝে মাঝে এরকম হয়ে গেলে মন্দ লাগে না, কি বলো অভিরূপ?’
যেন অভিরূপের সঙ্গে তার আজন্মকাল চেনা। বাইরে থেকে দেখতে খুব কেতাদুরস্ত, উন্নাসিক মনে হলেও আসলে মানুষটি খুব ঘরোয়া এবং যতই যা-ই বলুক, এত বকবক করা দেখে মনে হয় ও একলা থাকে কি করে? রূপ অনেকদিন কারো সঙ্গে আলাপ করে এত খুশি হয়নি।