Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » শেষ টা চমৎকার || Samarpita Raha

শেষ টা চমৎকার || Samarpita Raha

শেষ টা চমৎকার

বেশ কিছুদিন ধরে দেখছি একটা আধপাগল লোক বাড়ির সামনের রাস্তায় বসে আছে। চুপচাপ বসে একটা ডায়েরিতে কি সব লেখে।
অবশ্যই বাড়ির জানলা দিয়ে লক্ষ্য করতাম।দূর থেকে মুখটা বোঝা যেত না।এক মুখ দাঁড়ি বুঝতে পারতাম।আজকাল কোলকাতাতে ফিরে অয়নের কথা বেশ মনে পড়ে।বিশ বছর কোনো খোঁজ দুজনে রাখিনি। ভালোবেসে দুই বাড়ির অমতে বিয়ে হয়েছিল।অয়ন ছিল মেডিসিনের ডাক্তার।
এমনকি অয়নের মা গাইনোও বাবা হার্টের স্পেশালিস্ট ছিলেন। আমি ছিলাম নার্স। তাইতো মিথ্যা অহঙ্কারে পরিপূর্ণ অয়নের মা আমাদের বিয়ে মেনে নেননি। আমি মামা বাড়িতে মানুষ হয়েছি।জন্মের পর বাবা -মা একসাথে গাড়ি দুর্ঘটনাতে মারা গেছিলেন তাই মামারা বড় করেছিলেন।মামারা এই বিয়েতে রাজি ছিলেন না কারণ আমি ব্রাহ্মণ সন্তান ছিলাম।অয়নরা কায়স্হ দাস ছিল।

বিয়ের পাঁচ মাসের মাথায় অয়নের মা আমাদের বিবাহিত সম্পর্ক মেনে নিয়ে বাড়িতে ডেকে নিয়েছিলেন।ছেলের সাথে কি শর্ত হয়েছিল তখন জানা ছিল না। মিষ্টি মিষ্টি ঝাল ঝাল নানান টানাপোড়েন চলতে লাগল।ওই বাড়িতে গিয়ে বুঝেছিলাম আমার সরকারি নার্সের চাকরি ছাড়তে হবে। দাম্ভিক ডাক্তার পরিবারের বৌমা যে নার্স, সেই পরিচয় আত্মীয়-স্বজনদের কাছে দিতে খুব লজ্জা লাগছিল। আশ্চর্য ব্যাপার তখন অয়নের মধ্যে ও মিথ্যা অহঙ্কার স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল।
তাই রাগারাগি করে সেই চলে গেছিলাম কোয়াটারে। তারপর মিউচুয়াল ডিভোর্স।একটা কথা তাদের ঘৃণায় বলি নি,যে তোমার সন্তান আমার গর্ভে আছে। আমার মেয়ে এখন কোলকাতা মেডিকেলে ডাক্তারী পড়ে।তাইতো দুমাস হল আসানসোল থেকে কোলকাতায় বদলি হয়ে এসেছি।
হঠাৎ পাগল লোকটাকে মনে হলো , কিছু খাবার দিয়ে আসি।ওই দিন অয়নের জন্মদিন ও ছিল তাই পায়েস রান্না করেছিলাম।থার্মোকলের বাটিতে পায়েস দিতেই সবটুকু খেয়ে নিল। আমাকে বলল ধন্যবাদ ম্যাডাম। গলাটা শুনে চমকে উঠি।অয়ন তুমি রাস্তায় ঘুরছ কেন?
তুমিতো একজন ডাক্তার। কোথায় তোমার দাম্ভিক মা!!!!
অয়ন আবার হাঁটতে শুরু করে। আমিও পিছু নিই।কেন এই অবস্থা! হাজার চিন্তা মাথায় বনবন করে ঘুরতে থাকে। হঠাৎ একটা পুলিশের গাড়ি আসে তার থেকে শ্বশুর মশায় নেমে আসতে প্রশ্ন করি অয়নের এই অবস্থা কেন???
আমি সেবা করতে চাই, আপনার ফোন নাম্বার দিন। তারপর ফোন করে ঠিকানাটা খুঁজে চলে যাই। শ্বশুর-বাড়িতে তখন আমাকে নিয়ে কি আপ্রায়ণ। আমার বিয়ের ছাড়াছাড়ির বেশ কয়েক বছর পর
ওর গাড়ি দুর্ঘটনাতে মাথায় লাগে তারপর মানসিক সমস্যা আসে। বহু চিকিৎসা করা হয়। শাশুড়ির মুখে বৌমা ডাক শুনে কেঁদে ফেলি।
যতই উনারা ডাক্তার হোক না কেন , বুঝলাম একমাত্র ছেলের জন্য নাজেহাল অবস্থা।প্রায় একমাস ধরে অয়নের দেখাশোনা করি।আমাকে ছাড়া কিছুই করবে না। শাশুড়ি
বলেন বৌমা কি মায়ার বাঁধনে বেঁধেছ!!
এখন তুমি ছাড়া অয়ন ভালো থাকবে না।
মেয়ের সঙ্গে এই পেসেন্টকে নিয়ে নানা কথা চলে। মেয়ে বলে পরের জন্য এত কষ্ট কেন মা!
বাড়ির সামনে হঠাৎ একটা মারুতি র সাথে বাইকের অ্যাক্সিডেন্ট। সেটা অয়ন বারান্দা থেকে দেখতেই অজ্ঞান হয়ে যায়। চোখে জল দিতে জ্ঞান ফিরতেই কেমন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। আমি ভাবি কোনো আশ্চর্য ঘটনা ঘটল না তো!!
উনি এক এক করে সবাইকে চিনতে পারছেন।
বাড়ির বাতাবরণ ছিল খুশির।

একদিন সুযোগ বুঝে বলি কাল রবিবারতো একজনকে নিয়ে আসব।
মেয়েকে হুবহু বাবার মতো দেখতে।দাদু, ঠাম্মা,বাবা সবাই চমকে ওঠে।
এক ঝটকায় বাবা মেয়েকে দেখে জড়িয়ে বলে ওই তুই আমার মতন দেখতে হলি কি করে!! ওদের মেয়ে ডাক্তার শুনে খুব খুশি।
বৌমা এখন শ্বশুর-বাড়িতে নয়নের মনি। শ্বশুর-শাশুড়ি আক্ষেপ করে বলেন খুব পাপ করেছিল বলে এতদিন কষ্টে ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress