Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » শরৎচন্দ্রের “স্বামী” গল্পের প্রসঙ্গে || Purabi Dutta

শরৎচন্দ্রের “স্বামী” গল্পের প্রসঙ্গে || Purabi Dutta

শরৎচন্দ্রের “স্বামী” গল্পের প্রসঙ্গে

কথাশিল্পী শরৎচন্দ্রের  একটি অতুলনীয় বড়ো গল্প “স্বামী” । নারীবাদী  শরৎচন্দ্র  এখানে  অসাধারণ উদার পরাকাষ্ঠার  নজিরে এক পুরুষচরিত্র সৃষ্টি করে গেছেন। হয়ত অপাঙ্গে পুরুষদের প্রতি এক বার্তা দিতেও চেয়েছেন । ঘনশ্যাম”, ঐ চরিত্রের সেই কল্পিত আদর্শ এক ভদ্রলোক। এই কাহিনী , টলিউড্,  বলিউড্  সর্বত্রই সফলভাবে  চলচিত্রায়িত্ত   হবার সুবাদে সুদক্ষ অভিনেতারা ( পাহাড়ি সান্যাল, গিরীশ কারনাড্) ঘনশ্যামের জীবন্ত স্বাক্ষর রেখেছেন । আমি এই “স্বামী ” গল্পের  “ঘনশ্যাম” চরিত্রটি সংক্ষেপে একটু পর্যালোচনা এখানে করব, অবশ্যই নিজস্ব  উপলব্ধির বিশ্লেষণে।

গল্প উন্মোচনে,  ঘনশ্যাম এক বয়স্ক  ভদ্রলোক, অত্যন্ত শান্ত ,ভদ্র, মার্জিত , বৈষ্ণবভাবাপন্ন ও নিরামিষাশী । লেখাপড়া বেশিদূর করতে পারেন নি, পিতার মৃত্যুর  পর বিমাতা ও ভাই বোনদের সংসারে দেখভাল করতে করতে,সময়মতো বিবাহ করবার সময় করে উঠতেও পারেন নি। যদিও সে বিষয়ে সংসারে আর কারোর মাথাব্যথা ছিল না। ঘনশ্যাম তিল , তিসি, ইত্যাদি শস্যের ব্যবসা করতেন, এবং সংসারে একমাত্র রোজগেরে মানুষ ছিলেন।

বিয়ের বয়স অতিক্রান্ত  হবার প্রাক্কালে হঠাৎই  ঘনশ্যামের বিবাহ হয়, এক প্রগতিবাদী, শিক্ষিতা ও বয়স্কা যুবতী “সৌদামিনী”র সাথে। পিতৃহীনা সৌদামিনী, মামার আদরে ও শিক্ষা গ্রহণে  ক্রমশঃ যুক্তিবাদী ও থিওসফিক্যাল ধারায়  সাধারণ বাঙ্গালী যুবতীদের অপেক্ষা অন্যরকম ছিলেন। আর সেই সুবাদে তার প্রণয় হয় সমকক্ষ যুবক নরেন্দ্রর সাথে। কিন্ত— ঘটনাচক্রে মামার মৃত্যুর  পর বিধবা  মাতা তড়িঘড়ি করে তাঁর বিবাহ দেন বয়স্ক অথচ আর সব দিকে উচ্চমাণের কারণে ,ঘনশ্যামের সাথে। বিবাহিতা সৌদামিনী  কোনমতেই বিমাতা শাশুড়ির সংসার,ও স্বামী ঘনশ্যামকে মেনে নিতে পারেন নি। তার মনে নরেন্দ্র  বিরাজমান। স্বামীর সাথে একঘরে রাতে থাকলেও, বয়কট করেন, বিশাল খাটের আরামদায়ক দুগ্ধফেনভিত বালিশ বিছানা, পরিবর্তে ভিন্নত্র‌‌–শুধু মাদুর পেতে মেঝেতে শয়ন। ঘনশ্যাম স্নেহভরে, হাসিমুখে সমস্ত মেনে নিতেন, কোনদিন  তাঁকে স্পর্শ পর্যন্ত  করেন নি।

আর সৌদামিনী স্বামী ঘনশ্যামকে  ভাল না বাসলেও, সংসারে তার প্রতি অবমাননার তীব্র প্রতিবাদ  কিন্তু করতেন, আর করতেন সুরাহার বন্দোবস্ত। বিশেষ সৌদামিনী সংসারে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, ঘনশ্যামের আয়েই সংসার চলে।

নানা ঘটনার পর, গল্পের গতি পিরামিড শীর্ষে পৌঁছায়, সৌদামিনী ঘর সংসার ত্যাগ করে নরেন্দ্র সাথে, মায়ের কাছে যাবার বাসনায়।

কিন্ত  নরেন্দ্র  তাকে এনে তোলে এক পৃথক বাড়িতে । অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে সৌদামিনী বুঝতে পারে, সে ইতিমধ্যে  ভালবেসেছে তার স্বামী ঘনশ্যামকেই এবং তার কাছেই সে ফিরে যেতে চায়, ক্ষমাভিক্ষার জন্য।

নরেন্দ্রও বুঝতে পারে সৌদামিনীর মন আর তাকে বোন হিসাবে সে স্বীকৃতি  দেয়।

বাড়ির মুক্ত দাসীর কাছে সব খবর পেয়ে ঘনশ্যাম ছুটে আসে সৌদামিনীর কাছে, তাকে সসম্মানে সংসারে ফিরিয়ে নেবার জন্য। সংক্ষেপে এই গল্প।

জয় জয়াকার ঘনশ্যামের এত উদার চরিত্রের জন্য,  এই না হলে — স্বামী !!! সত্যিই  স্ত্রীর ব্যভিচারিতা এমন সহজভাবে মেনে নেওয়া? তিনি নিজে এবং সংসারের সকলেই,মায় দাস দাসীরাও জানত, কেমন সম্পর্ক, ঘনশ্যামের সাথে সৌদামিনীর, তার পরেও? হ্যাঁ, ঠিক, ঘনশ্যামের মতো এতো সহিষ্ণু এতো  ক্ষমাসুন্দর, এতো উদার মহান চরিত্র  কি বাস্তবসম্মত? আপাতদৃষ্টিতে তাই মনে হওয়া স্বাভাবিক। কথায় দৃষ্টিকোণ  ঘুরে যাবে এক আদর্শ পুরুষের প্রতি। আর সৌদামিনী ঘুরে দাঁড়ালেন একশ আশি ডিগ্রী কোণ এ । এ  হলো স্বামী- স্ত্রীর  চির জন্মের বন্ধন। এ গল্প  পাঠকের মনে একদম গেঁথে যাবে, সন্দেহ নেই। হয়েছেও তাই।

শরৎচন্দ্র  যতটা না লেখক, তার অনেক বেশি Sociologist ছিলেন, সেই সাথে ছিল সামাজিক মানুষের মনোস্তত্ত্ব সম্বন্ধে অন্তর্দৃষ্টি। তিনি জানতেন, কোথায় কোথায় গল্পের লাগাম ধরে রাখতে হয়।

১)
ঘনশ্যাম অতি উদার, ক্ষমাশীল , উচ্চ হৃদয়ের মানুষ, এই অবধি ঠিক,  কিন্ত  পর পুরুষের সাথে বেড়িয়ে যাওয়া স্ত্রীকে , সব মান সম্মান  বিসর্জন  দিয়ে নিজে গিয়ে সেধে নিয়ে আসা  !!! যদি সৌদামিনী ফিরে আসতে না চাইতেন, যেটা আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিক  ছিল? তাহলে কি ঘনশ্যামের মুখ পুড়লে সমাজ সৌদামিনীর  প্রতি ছিছিক্কারে বইটি বিসর্জন দিতো না?
২)
যদি নরেন্দ্র ও সৌদামিনী সহবাস করে থাকত, এবং পরে ঘনশ্যামের কাছে ফিরে আসতে চাইলে ঘনশ্যাম অনুমতি দিলে  গল্পের সুঘ্রাণ কি অটুট থাকত? না, সমাজ সে গল্প  গ্রহণ করতো? না, ঘনশ্যাম তখন আখ্যা পেতো এক মেরুদণ্ডহীন পুরুষরূপে।

তাহলে দেখা যাক, গল্পের সুকৌশল গাথুনী কোথায়? আসলে। পালিয়ে যাবার পর, সৌদামিনী উপলব্ধি করে, নিজের  মন, কবে কোনদিন থেকে সে ঘনশ্যামকে স্বামী হিসেবে ভালবেসেছে, সে নিজেও জানে না। নরেন্দ্রকে সব খুলে বলে সে ফিরে যেতে চায়। নরেন্দ্র  তাকে বোনের মতো দেখে ও সম্মান রাখে , একদিনের তরেও সহবাস করে নি। পাঠকের মন সৌদামিনী ও নরেন্দ্রর প্রতি সহানুভূতিশীল  হয়। আর ঘনশ্যাম? তার চরিত্র এক ধ্রুবনক্ষত্রে স্থির, অলক্ষ্মে লেখক এক কায়দায়, জানিয়েছেন, যোগাযোগ মাধ্যমে দাসী যার নামটি “মুক্ত”ই—-সৌদামিনীর  মনোভাব ও ইত্যাদির  সব খবর সে বড়োবাবুকে জানায়। চলে আসেন ঘনশ্যাম  সৌদামিনিকে ফিরিয়ে নিতে।

সত্যিই  যদি সৌদামিনী ও নরেন্দ্রর সহবাস হতো, তাহলে কি ঘনশ্যাম পারতেন স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে? নাকি গল্পটি কৌলিনত্ব পেতো? আর ঘনশ্যাম কি উদারতার মাপকাঠি  বজায় রাখতে পারতেন? সন্দেহ কিন্ত  থেকেই যায়।

আসলে, শরৎচন্দ্র জানতেন সমাজ, জানতেন পাঠকের মনোস্তত্ত্ব,  কথার শিল্পচিত্র তাই হয়ে উঠত এমন প্রাঞ্জল ও বাস্তব।

[বাংলা ছবিতে পাহাড়ি সান্যাল ও সুমিত্রা দেবী আর হিন্দী ছবিতে গিরীশ  কারনাড্ ও শাবানা আজমির অপূর্ব  অভিনয় , “স্বামী” চলচিত্রে ভুলবার নয়।]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress