শতাব্দীর অগ্নি-লগ্নে জন্মে
আমি অবাক!
কেউ বাজালো না মঙ্গল শাঁখ
দিল না উলুধ্বনি
শুধু অসির ঝনঝনি,
নাগাসাকি, হিরোশিমায় ক্রন্দন রোল
বিশ্বজুড়ে যুদ্ধের ডাক-
আমি অবাক!
রক্তে আমার নটরাজের তাণ্ডব
স্কন্ধে লাঞ্চিতা সতীর শব
ধুঁকে মরে সর্বহারা সব
পৈশাচিক হাসি হাসে মধু- কৈটভ!
ধর্ষিতা বিবস্ত্রা বিহ্বল জননী
নীলকণ্ঠ পিতার রুদ্ধ বাক-
আমি অবাক!
আমার কৈশোরের খেলার স্থান-
পলাশীর বাগান,
সামনে মীরজাফরদের দীর্ঘ মিছিল
হিংসায় লাল
গৈরিক নিশান-
পৈশাচিক শ্লোগান –
জাহান্নামের ডাক-
আমি অবাক!
আমার যৌবনের যাত্রা হলো শুরু
রক্ত পিছল পথে-
হিমেল কুহেলি রাতে-
নিদাঘ-তপ্ত প্রাতে
অজস্র বঞ্চিতের সাথে
আমি ভেসেছি যুদ্ধের স্রোতে,
থামাতে পারেনি প্রিয়ার ডাক-
আমি অবাক!
শানিত বেয়নেটের ঝিলিক
উদ্ধত কামানের গর্জন
বারুদের গন্ধে ভারী পবন
রক্তে ধ্বংসের মাতন।
সামনে আমার ভিয়েতনাম লেবানন-
খণ্ডিত পৃথিবীর অসংখ্য রণাঙ্গন-
আরব, ইস্রায়েল, ইরান-ইরাক-
আমি অবাক!
রণক্লান্ত কত নিশীথে
যৌবনের স্বপ্নালু আঁখিতে
ভাসে মধুর স্বপন!
প্রিয়ার ব্যাকুল আহ্বান –
ঘরে ফেরার টান,
আমি পারি না ফিরিতে
বেজে উঠে যুদ্ধের ঢাক-
আমি অবাক!
এ যুদ্ধ হবে একদিন শেষ-
ইতিহাসও লিখা হবে বেশ,
স্মৃতি সৌধে পৃথিবী যাবে ভরে-
আমি হয়তো ফিরবো না আর ঘরে।
রক্ত-ঝরা বিধ্বস্ত ধরণীর বুকে
উঠবে কত মিনার-
হিসেব রবে না তার ;
স্বাধীনতার যুদ্ধে সৈনিকের ছিল অভাব-
স্বাধীন দেশে নেতার হবে না অভাব।
পরজন্মে আবার যদি কভু ফিরে এসে
না দেখি কোন সৌধে আমার নামের আঁক-
আমি হবো না অবাক!