Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » শজারুর কাঁটা – ব্যোমকেশ বক্সী || Sharadindu Bandyopadhyay » Page 6

শজারুর কাঁটা – ব্যোমকেশ বক্সী || Sharadindu Bandyopadhyay

পরদিন সন্ধ্যেবেলা দেবাশিসের বাড়িতে অতিথিরা একে একে এসে উপস্থিত হল। এমন কি খড়্গ বাহাদুরও ঠিক সময়ে এল‌, বলল–’খেলা হল না‌, ওয়াকওভার পেয়ে গেলাম।’

নীচের তলার বসবার ঘরে আড়া জমল। সকলে উপস্থিত হলে দেবাশিস এক ফাঁকে রান্নাঘরে গিয়ে দেখল‌, দীপা খাবারের প্লেট সাজাচ্ছে আর নকুল দুটো বড় বড় টি-পটে চা তৈরি করছে। দেবাশিস দীপাকে বলল-‘ওরা সবাই এসে গেছে। দশ মিনিট পরে চা জলখাবার নিয়ে তুমি আর নকুল যেও।’

‘আচ্ছা।’ দীপা জানত না। কারা নিমন্ত্রিত হয়েছে‌, তার মনে কোনো ঔৎসুক্য ছিল না। অস্পষ্টভাবে ভেবেছিল‌, হয়তো ফ্যাক্টরির সহকর্মী বন্ধু।

বসবার ঘরে আলোচনা শুরু হয়েছে‌, আজকের কাগজে নতুন শজারুর কাঁটা হত্যার খবর বেরিয়েছে তাই নিয়ে। এবার শিকার হয়েছে এক দোকানদার‌, গুণময় দাস। এবারও অকুস্থল দক্ষিণ কলকাতা।

আলোচনায় নতুনত্র বিশেষ নেই। হত্যাকারী হয় পাগল‌, নয়। পাকিস্তানী‌, নয়। চীনেম্যান। সুজন বলল–’একটা জিনিস লক্ষ্য করেছ? প্রথমে ভিখিরি‌, তারপর মজুর‌, তারপর দোকানদার। হত্যাকারী স্তরে স্তরে উঁচু দিকে উঠছে। এর পরের বারে কে শিকার হবে ভাবতে পার?’

প্রবাল গলার মধ্যে অবজ্ঞাসূচক শব্দ করল। কপিল বলল—’সম্ভবত নামজাদা ফুটবল খেলোয়াড়।’

খড়্গ বাহাদুর বলল—’কিংবা নামজাদা সিনেমা অ্যাক্টর।’

সুজন বলল–’কিংবা নাম-করা গাইয়ে।’

প্রবাল বলল-নাম-করা লোককেই মারবে এমন কী কথা আছে? পয়সাওয়ালা লোককেও মারতে পারে। যেমন নৃপতিদা কিংবা কপিল কিংবা-’

এই সময় দীপা খাবারের টুে হাতে দোরের সামনে এসে দাঁড়াল। প্রবালের কথা শেষ হল না‌, সবাই হাসিমুখে উঠে। দীপকে মহিলার সম্মান দেখাল। দীপা একবার ত্রাস-বিস্ফারিত চোখ সকলের দিকে ফেরাল‌, তার মুখ সাদা হয়ে গেল। প্রবল চেষ্টায় সে নিজের দেহটাকে সামনে চালিত করে টেবিলের ওপর খাবারের ট্রে রাখল।

কপিল মৃদু ঠাট্টার সুরে বলল—’নমস্কার‌, মিসেস ভট্ট।’

দীপা বোধ হয় শুনতে পেল না‌, সে ট্রে রেখেই পিছু ফিরল। তার পিছনে চায়ের সরঞ্জাম নিয়ে নকুল ছিল‌, তাকে পাশ কাটিয়ে দীপা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

দেবাশিস অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। সে আশা করেছিল‌, দীপা সকলকে চা ঢেলে দেবে‌, সকলেই বিয়ের আগে থেকে পরিচিত‌, তাদের সঙ্গে বসে কথাবার্তা বলবে‌, তাদের খাওয়ার তদারক করবে। কিন্তু দীপা কিছুই করল না। দেবাশিস নিজেই সকলকে চা ঢেলে দিল। ট্রের ওপর থেকে খাবারের প্লেট নামিয়ে তাদের সামনে রাখল। দীপা আজ নকুলের সাহায্যে অনেক রকম খাবার তৈরি করেছিল; চিংড়ি মাছের কাটলেট‌, হিঙের কচুরি‌, ডালের ঝালবড়া‌, রাঙালুর পুলি‌, জমাট ক্ষীরের বিরফি ইত্যাদি। অতিথিরা খেতে খেতে আবার তর্কবিতর্কে মশগুল হয়ে উঠল। দীপার ব্যবহারে সামান্য অস্বাভাবিকতা কেউ লক্ষ্যও করল। কিনা বলা যায় না।

আলোচনা যখন বেশ জমে উঠেছে তখন দেবাশিস অতিথিদের দৃষ্টি এড়িয়ে রান্নাঘরে গেল। দেখল‌, দীপা টেবিলের ওপর কনুই রেখে আঙুল দিয়ে দুই রাগ টিপে বসে আছে। দেবাশিস তার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই সে হতাশ চোখ তুলে বলল-বিড় মাথা ধরেছে।’

দেবাশিসের মন মুহুর্তমধ্যে হাল্কা হয়ে গেল। সে সহানুভূতির সুরে বলল–’ও—আগুনের তাতে মাথা ধরেছে। তুমি আর এখানে থেকে না‌, নিজের ঘরে চলে যাও‌, মাথায় অডিকলোন দিয়ে শুয়ে থাকো গিয়ে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে মাথা ধরা সেরে যাবে।’

দীপা উঠে দাঁড়িয়ে ক্ষীণস্বরে বলল—’আচ্ছা।’

দেবাশিস বসবার ঘরে ফিরে গিয়ে বলল–’দীপার খুব মাথা ধরেছে। আমি তাকে মাথায় অডিকেলন দিয়ে শুয়ে থাকতে বলেছি। আজ সারা দুপুর উনুনের সামনে বসে খাবার তৈরি করেছে।’

সকলেই সহানুভুতিসূচক শব্দ উচ্চারণ করল। বিজয় উঠে দাঁড়িয়ে বলল–’আমি যাই‌, দীপাকে একবার দেখে আসি।’

দেবাশিস বলল—’যাও-না‌, সোজা ওপরে চলে যাও।’

বিজয় দোতলায় গিয়ে এদিক-ওদিক তাকিয়ে দীপার শোবার ঘরের দোরের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। দীপা চোখ বুজে শুয়ে ছিল‌, সাড়া পেয়ে ঘাড় তুলে বিজয়কে দেখল‌, তারপর আবার বালিশে মাথা রেখে চোখ বুজল।

বিজয় খাটের পাশে এসে দাঁড়াল‌, কটমট করে দীপার পানে চেয়ে থেকে চাপা তর্জনে বলল–’আমার সঙ্গে চালাকি করিসনে‌, তোর মাথাধরার কারণ আমি বুঝেছি।’

দীপা উত্তর দিল না‌, চোখ বুজে পড়ে রইল। বিজয় তর্জনী তুলে বলল—’আজ যারা এসেছে তাদের মধ্যে একজনের সঙ্গে তোর ইয়ে—।’

দীপার কাছ থেকে সাড়াশব্দ নেই।

‘তার নাম কি‌, বল।’

দীপার মুখে কথা নেই‌, সে যেন কালা হয়ে গেছে।

‘বলবি না?’

এইবার দীপা ঝাঁকানি দিয়ে উঠে বসল‌, তীব্র দৃষ্টিতে বিজয়ের পানে চেয়ে বলল—’না‌, বলব না।’ এই বলে সে বিজয়ের দিকে পিছন ফিরে আবার শুয়ে পড়ল।

দাঁতে দাঁত চেপে বিজয় বলল-‘বলবিনে! আচ্ছা‌, আমিও দেখে নেব। যেদিন ধরব তাকে‌, চৌ-রাস্তার ওপর টেনে এনে জুতো পেটা করব।’

বিজয় নীচে নেমে গেল। ভাই-বোনের ঝগড়ার মূলে যথেষ্ট গুরুত্ব ছিল। কিন্তু ব্যাপারটা কেমন যেন হাস্যকর হয়ে দাঁড়াল–

তারপর আবার দিন কাটছে।

প্রত্যেক মানুষের দুটো চরিত্র থাকে; একটা তার দিনের বেলার চরিত্র‌, অন্যটা রাত্রির। বেরালের চোখের মত; দিনে একরকম‌, রাত্রে অন্যরকম।

এই কাহিনীতে যে ক’টি চরিত্র আছে তাদের মধ্যে পাঁচজনের নৈশ জীবন সম্বন্ধে অনুসন্ধান করা যেতে পারে। হয়তো অপ্রত্যাশিত নতুন তথ্য জানা যাবে।

একটি রাত্রির কথা :

সাড়ে দশটা বেজে গেছে। নৃপতি নৈশাহার শেষ করে নিজের শোবার ঘরে বিছানায় শুয়ে বই পড়ছিল। জোড়া-খাটের ওপর চওড়া বিছানা; তার বিবাহিত জীবনের খাট-বিছানা। এখন সে একাই শোয়। শুয়ে বই পড়ে‌, বই পড়তে পড়তে ঘুম এলে বই বন্ধ করে আলো নিবিয়ে দেয়।

আজ কিন্তু বই পড়তে পড়তে তার মন ছটফট করছে‌, পড়ায় মন বসছে না। প্ৰায় আধা ঘণ্টা বইয়ে মন বসাবার বৃথা চেষ্টা করে সে উঠে পড়ল‌, আলো নিবিয়ে জানলার নীচে আরাম-চেয়ারে এসে বসল। আকাশে চাঁদ আছে‌, বাইরে জ্যোৎস্নার প্লাবন। সে সিগারেট ধরাল।

আজ কোন তিথি? পূর্ণিমা নাকি? হগুপ্ত দুই আগে নৃপতি যখন গভীর রাত্রে বেরিয়েছিল তখন কৃষ্ণপক্ষ ছিল‌, বোধ হয় অমাবস্যা। মানুষের মনের সঙ্গে তিথির কি কোনো সম্পর্ক আছে? একাদশী অমাবস্যা পূর্ণিমাতে বাতের ব্যথা বাড়ে‌, একথা আধুনিক ডাক্তারেরাও স্বীকার করেন। নৃপতি গলার মধ্যে মৃদু হাসল। বাতের ব্যথাই বটে।

‘বাবু!’

নৃপতির খাস চাকর দীননাথ তার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। নৃপতি পাশের দিকে ঘাড় ফেরাল। দিনু বলল–’আপনার ঘুম আসছে না‌, এক কাপ ওভালটিন তৈরি করে দেব?

নৃপতি একটু ভেবে বলল-না‌, থাক। আমি বেরুবা‌, তুই শেষ রাত্রে দোর খুলে রাখিস।’

‘আচ্ছা‌, বাবু।’

দিনু প্রভুভক্ত চাকর; সে জানে নৃপতি মাঝে মাঝে নিশাভিসারে বেরোয়‌, কিন্তু কাউকে বলে না। বাড়ির অন্য চাকর-বাকর ঘৃণাক্ষরেও জানতে পারে না।

দিনু চলে যাবার পর নৃপতি উঠে আলো জ্বালল‌, ওয়ার্ডরোব থেকে এক সেট ধূসর রঙের বিলিতি পোশাক বের করে পরল‌, পায়ে রবার-সোল জুতো পরল; স্টিলের কাবার্ড থেকে একটা চশমার খাপের মত লম্বাটে পার্স নিয়ে বুকপকেটের ভিতর দিকে রাখল। তারপর ছফুট লম্বা আয়নায় নিজের চেহারা একবার দেখে নিয়ে আলো নিবিয়ে দিল। বাড়ির পিছন দিকে চাকরদের যাতায়াতের জন্যে ঘোরানো লোহার সিড়ি‌, সেই সিঁড়ি দিয়ে নিঃশব্দে নীচে নেমে গেল।

নৃপতি কোথায় যায়? সে বিপত্নীক‌, তার কি কোনো গুপ্ত প্রণয়িনী আছে?

আর একটি রাত্রির কথা :

গোল পার্ক থেকে যে কটা সরু রাস্তা বেরিয়েছে তারই একটা দিয়ে কিছুদূর গেলে একটা পুরনো দোতলা বাড়ি চোখে পড়ে; এই বাড়ির একতলায় গোটা তিনেক ঘর নিয়ে প্রবাল গুপ্ত থাকে। পুরনো বাড়ির পুরনো ভাড়াটে; ভাড়া কম দিতে হয়।

বাসাটি মন্দ নয়। কিন্তু প্রবালের প্রকৃতি একটু অগোছালো‌, তাই তার স্ত্রী মারা যাবার পর বাসাটি শ্ৰীহীন হয়ে পড়েছে। সদরের বসবার ঘরে মেঝের ওপর শতরঞ্জি পাতা। দেয়াল ঘেঁষে এক জোড়া বাঁয়োতবলা‌, হারমোনিয়াম এবং তাল রাখার একটা ছোট যন্ত্র। প্রবাল যে সঙ্গীতশিল্পী্‌্‌, বাসায় এ ছাড়া তার অন্য কোনো নিদর্শন নেই।

রাত্রি সাড়ে আটটার সময় প্রবাল সদর দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে হারমোনিয়াম নিয়ে বসেছিল। আজ সে নৃপতির আড্ডায় যায়নি। একটা গানে সুর লাগিয়ে তৈরি করছিল‌, আসছে হাপ্তায় দমদমে গিয়ে সেটা রেকর্ড করতে হবে। সে নিজেই গানে সুর দেয়; আজ গানটাকে ঠিক রেকর্ডের মাপে তৈরি করছিল। তিন মিনিট কুড়ি সেকেণ্ডের মধ্যে গান গেয়ে শেষ করতে হবে।

তালের যন্ত্রটাতে দম দিয়ে সে চালু করে দিল‌, যন্ত্রটা ঘড়ির দোলকের মত কটকটু শব্দ করে দুলতে লাগল। প্রবাল পকেট থেকে স্টপ-ওয়াচ বের করে হারমোনিয়ামের ওপর রাখল‌, তারপর স্টপ-ওয়াচের মাথা টিপে চালিয়ে দিয়ে মৃদুকণ্ঠে গাইতে আরম্ভ করল‌, তার আঙুল খুব লঘু স্পর্শে হরমোনিয়ামের চাবির ওপর খেলে বেড়াতে লাগল।

গান শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে সে স্টপ-ওয়াচ বন্ধ করল‌, দেখল তিন মিনিট একত্রিশ সেকেন্ড হয়েছে। সে তখন তালের যন্ত্রটাকে চাবি ঘুরিয়ে একটু দ্রুত করে দিয়ে আবার স্টপ-ওয়াচ ধরে গাইতে শুরু করল।

এইভাবে প্ৰায় আধা ঘণ্টা চলল। নিঃসঙ্গ গায়ক আপন মনে গেয়ে চলেছে।

দোরে খট্‌খট্‌ করে টোকা পড়ল। প্রবাল উঠে গিয়ে দোর খুলে দিল; একটা চাকর এক থালা অন্ন-ব্যঞ্জন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রবালের বাসায় রান্নাবান্নার কোনো ব্যবস্থা নেই; কাছেই একটা হোটেল আছে‌, সেখান থেকে দু’ বেলা তার খাবার দিয়ে যায়।

চাকরটি শতরঞ্জির এক কোণে থালা রেখে চলে গেল। প্রবাল দোর বন্ধ করে সেখানেই খেতে বসল। এমনিভাবে সে যেন দিনগত পাপক্ষয় করে চলেছে। হয়তো দূর ভবিষ্যতের ওপর দৃষ্টি রেখে সে চলেছে‌, তাই বর্তমান সম্বন্ধে তার মন সম্পূর্ণ উদাসীন।

নৈশাহার শেষ করে প্রবাল বাসায় তালা লাগিয়ে বেরুল। মোড়ের মাথায় একটা পানের দোকান আছে‌, সেখানে গিয়ে পান। কিনে মুখে দিল‌, একটা গোল্ড ফ্লেন্ক সিগারেট ধরাল। প্রবাল নিজের কাছে সিগারেট রাখে না‌, পাছে বেশি খাওয়া হয়ে যায়; প্রত্যহ রাত্রে দোকান থেকে একটি সিগারেট কিনে খায়। যারা পেশাদার গাইয়ে‌, গলা সম্বন্ধে তাদের সতর্কতার অন্ত নেই। বেশি। ধূমপান করলে নাকি গলা খারাপ হয়ে যায়।

পানের দোকানো একটি ছোট্ট ট্রানজিস্টার গুনগুন করে গান গেয়ে চলেছে। প্রবাল শুনল‌, তারই গাওয়া একটি গানের রেকর্ড বাজছে। সে ভুরু কুঁচকে কিছুক্ষণ নিজের গাওয়া গান শুনল‌, তারপর সিগারেট টানতে টানতে এগিয়ে চলল।

সাদার্ন অ্যাভেনু তখন জনবিরল হয়ে এসেছে। প্রবাল রবীন্দ্র সরোবরের রেলিং-এর ধার দিয়ে দক্ষিণ দিকে চলল। তার মগজের মধ্যে কখনও গানের কলি গুঞ্জন তুলছে..প্রেমের সাগর দুলে দুলে ওঠে সখি…। কখনও একটা ক্রুদ্ধ ভোমরা ঝঙ্কার দিয়ে উঠছে.দুনিয়ায় যার টাকা নেই সে কিসের লোভে বেঁচে থাকে?…

রবীন্দ্র সরোবরের রেলিং অনেক দূর এসে যেখানে পুব দিকে মোড় ঘুরেছে তার কাছাকাছি একটা খিড়কির ফটক আছে। প্রবাল সেই ফটক দিয়ে লেকের বেষ্টনীর মধ্যে প্রবেশ করল।

ঝিলিমিলি আবছা আলোয় কিছুদূর যাবার পর একটা গাছের তলায় শূন্য বেঞ্চি চোখে পড়ল। প্রবাল বেঞ্চিতে গিয়ে বসল‌, তারপর লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল। তার গলার মধ্যে অবরুদ্ধ হাসির মত শব্দ হল। …

সেরাত্রে প্রবাল যখন বাসায় ফিরল। তখন বারোটা বাজতে বেশি দেরি নেই। কলকাতা শহরের চোখ তন্দ্ৰায় ঢুলু ঢুলু।

আর একটি রাত্রির কথা :

খড়্গ বাহাদুর আজ আড্ডায় যায়নি; তার কারণ তার বাড়িতেই আজ আড্ডা বসবে। অবশ্য অন্যরকম আড্ডা; অতিথিরাও অন্য। এইরকম আডা মাসে দু’ তিন বার বসে।

খড়্গ বাহাদুর একটি ছোট ফ্ল্যাটে থাকে। ছোট হলেও ফ্ল্যাটটি তার পক্ষে যথেষ্ট। সে একলা থাকে‌, সঙ্গী একমাত্র স্বদেশী সেবক রতন সিং। রতন সিং একাধারে তাঁর ভৃত্য এবং পাচক‌, ভাল শিককাবাব তৈরি করতে পারে।

সামনের ঘরটি পরিপাটিভাবে সাজানো‌, দেখলেই বোঝা যায় অবস্থাপন্ন লোকের বাড়ি। মাঝখানে একটি তাঁস খেলার টেবিল ঘিরে গোটা চারেক গদি-মোড়া চেয়ার‌, মাথার ওপর একশো ওয়াটের দুটো বালব জ্বলছে। এই টেবিলের সামনে একলা বসে খড়্গ বাহাদুর এক প্যাক তাস নিয়ে ভাঁজিছিল। আরো দুটো নতুন তাসের সীল-করা প্যাক পাশে রাখা রয়েছে। খড়্গ বাহাদুর অলসভাবে তাস ভাঁজছিল‌, কিন্তু তার মুখের ভাব কড়া এবং রুক্ষ। নৃপতির আড্ডায় তার যেমন হাসিখুশি মিশুক ভাব দেখা যায়‌, বাড়িতে ঠিক তেমন নয়। বাড়িতে সে প্রভু। মধ্যযুগীয় প্রভু।

পৌঁনে আটটা বাজলে খড়্গ বাহাদুর ডাকল—’রতন সিং!’

রতন সিং রান্নাঘরে ছিল‌, বেরিয়ে এসে প্রভুর সামনে দাঁড়াল। বেঁটেখাটো মানুষ‌, খাঁটি নেপালী চেহারা; ভাবলেশহীন। তির্যক চোখে চেয়ে বলল—’জি।’

খড়্গ বাহাদুর বলল—’আটটার পরেই অতিথিরা আসবে। শিককাবাব কত দূর?

রতন সিং বলল–’জি‌, আধা তৈরি হয়েছে‌, আধা তৈরি হচ্ছে।’

খড়্গ বলল–’তিনজন অতিথি আসবে। তারা সকলে এলে প্রথম দফা শিককাবাব দিয়ে যাবে‌, এক ঘণ্টা পরে দ্বিতীয় দফা দেবে। যাও।’

রতন সিং-এর মুখ দেখে নিঃসংশয়ে কিছু বোঝা যায় না; তবু সন্দেহ হয়‌, মালিকের অতিথিদের সে পছন্দ করে না। সে রান্নাঘরে ফিরে গিয়ে আবার শিককাবাব রচনায় মন দিল। মালিক যা করেন। তাই অভ্রান্ত বলে মেনে নিতে হয়‌, কিন্তু জুয়া খেলে টাকা ওড়ানো ভাল কাজ নয়। দেশ থেকে প্রতিমাসে এক হাজার টাকা আসে‌, অথচ মাসের শেষে এক পয়সাও বাঁচে না।

বাইরের ঘরে তাস ভাঁজতে ভাঁজতে খড়্গ বাহাদুর ভাবছিল—আজ যদি হেরে যাই, রক্তদর্শন করব।

গত কয়েকবার সে ক্রমাগত হেরে আসছে।

আটটার সময় একে একে তিনটি অতিথি এল। তিনজনেই যুবক‌, সাজপোশাক দেখে বোঝা যায়‌, তিনজনেই বড়মানুষের ছেলে। একজন সিন্ধী‌, দ্বিতীয়টি পাঞ্জাবী‌, তৃতীয়টি পার্সী।

সংক্ষিপ্ত সম্ভাষণের পর সকলে টেবিল ঘিরে বসল। রতন সিং চারটি প্লেটে প্রায় সেরখানেক শিককাবাব এনে রাখল; সঙ্গে রাই-বাটা এবং ছুরি-কাঁটা।

কথাবার্তা বেশি হল না‌, চারজন প্লেট টেনে নিয়ে ছুরি-কাঁটার সাহায্যে খেতে আরম্ভ করল। রতন সিং-এর শিককাবাব অতি উপাদেয়। অল্পক্ষণের মধ্যেই চারটি প্লেট শূন্য হয়ে গেল। সকলে রুমালে মুখ মুছে সিগারেট ধরাল। পাসী যুবকও সিগারেট খায়‌, আধুনিক যুবকেরা ধর্মের নিষেধ মানে না।

তারপর সাড়ে আটটার সময় তাসের নতুন প্যাক খুলে খেলা আরম্ভ হল। তিন তাসের খেলা‌, জোকার নেই। নিম্নতম বাজি পাঁচ টাকা‌, ঊর্ধ্বতম বাজি কুড়ি টাকা।

চারজনই পাকা খেলোয়াড়। কিন্তু রানিং ফ্লাশ খেলায় ক্রীড়ানৈপুণ্যের বিশেষ অবকাশ নেই‌, ভাগ্যই বলবান। কদাচিৎ ব্লাফ দিয়ে দু’এক দান জেতা যায়। আসলে হাতের জোরের ওপরেই খেলার হার-জিত।

সাড়ে দশটার সময় আর এক দফা শিককাবাব এল। এবার মাত্ৰা কিছু কম। সঙ্গে কফি। পনেরো মিনিটের মধ্যে খাওয়া শেষ করে আবার নতুন তাসের প্যাক খুলে খেলা আরম্ভ হল।

খেলা শেষ হল রাত্রি সাড়ে বারোটার সময়। হিসেবনিকেশ করে দেখা গেল‌, অতিথিরা তিনজনেই জিতেছে‌, খড়্গ বাহাদুর হেরেছে প্রায় সাত শো টাকা!

অতিথিরা হাসিমুখে সহানুভূতি জানিয়ে চলে গেল! খড়্গ বাহাদুর অন্ধকার মুখে অনেকক্ষণ একলা টেবিলের সামনে বসে রইল‌, তারপর হঠাৎ উঠে শোবার ঘরে গেল। বেশ পরিবর্তন করে মাথায় একটা কাউ-বয় টুপি পরে বেরিয়ে এল। রতন সিংকে বলল—’আমি বেরুচ্ছি। যতক্ষণ না ফিরি‌, তুমি দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে জেগে থাকবে।’

রতন সিং বলল–’জি।’

খড়্গ বাহাদুর বেরিয়ে গেল। রতন সিং-এর মঙ্গোলীয় মুখ নির্বিকার রইল বটে‌, কিন্তু তার ছোট ছোট চোখ দু’টি উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল। মালিক আজও হেরেছেন। তাঁস খেলায় হেরে মালিক কোথায় যান? ফিরে আসেন। সেই শেষ রাত্রে। কখনও আটটার আগেই বেরিয়ে যান‌, ফিরতে রাত হয়। কোথায় থাকেন? রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান? কিংবা—

আর একটি রাত্রির কথা :

কপিলের বাড়িতে নৈশ আহার শেষ হয়েছিল। কর্তা নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়েছিলেন‌, কপিলের ছোট দুই ভাইবোনও নিজের নিজের ঘরে চলে গিয়েছিল। ড্রয়িংরুমে এসে বসেছিল কপিল‌, তার দাদা আর বউদিদি এবং তার দিদি ও জামাইবাবু। কর্তা বিপত্নীক‌, পুত্রবধূই বাড়ির গিন্নি। মেয়ে-জামাই দাৰ্জিলিঙে থাকে‌, জামাইয়ের চায়ের বাগান আছে; আজ সকালে কয়েক দিনের জন্যে তারা কলকাতায় এসেছে।

কপিলদের বাড়িটা তিনতলা। নীচের তলায় একটা বড় ব্যাঙ্কের শাখা‌, উপরের দু’টি তলায় কপিলেরা থাকে। সবার উপরে প্রশস্ত খোলা ছাদ।

ড্রয়িং রুমে যাঁরা সমবেত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে কপিলের দাদা গৌতমদেব বয়সে বড়। পৈতৃক সলিসিটার অফিসের তিনি এখন কতা। অত্যন্ত নির্লিপ্ত প্রকৃতির লোক; বাড়িতে কারুর সাতে-পাঁচে থাকেন না। তাঁর স্ত্রী রমলার প্রকৃতি কিন্তু অন্যরকম। তার বয়স ত্ৰিশের বেশি নয়‌, কিন্তু সে বুদ্ধিমতী‌, গৃহকর্মে নিপুণা‌, সংসারের কোনো ব্যাপারেই নির্লিপ্ত নয়। উপরন্তু তার বুদ্ধিতে একটু অন্নারস মেশানো আছে‌, যার ফলে সকলেই তার কাছে একটু সতর্ক হয়ে থাকে।

কপিলের দিদি অশোকার বয়সও আন্দাজ ত্রিশ। তার সাত বছরের একটিমাত্র ছেলে স্কুলের বোর্ডি-এ থাকে। অশোকার চরিত্র সম্বন্ধে এইটুকু বললেই যথেষ্ট হবে যে‌, সে বড়মানুষের মেয়ে‌, বড়মানুষের বউ। পৃথিবীর অধিকাংশ জীবকেই সে করুণার চক্ষে দেখে‌, কারুর সঙ্গে বেশি কথাবার্তা বলে না। তার স্বামী শৈলেনবাবু কিন্তু মজলিসী লোক; আসার জমিয়ে গল্প করতে ভালবাসেন‌, তর্ক করার দিকে ঝোঁক আছে এবং সুযোগ পেলে অযাচিত উপদেশও দিয়ে থাকেন।

তিনি প্রকাণ্ড জিজ্ঞাসা-চিহ্নের মত একটি পাইপের মুণ্ড মুঠিতে ধরে ধূমপান করছেন। গৌতমদেব একটি মোটা সিগারেট ধরিয়েছেন। কপিলের নাকে তামাকের সুগন্ধ ধোঁয়া আসছে; কিন্তু সে গুরুজনদের সামনে ধূমপান করে না‌, তাই নীরবে বসে উসখুসি করছে। বাড়ির নিয়ম‌, নৈশাহারের পর সকলে অন্তত পনেরো মিনিটের জন্যে একত্র হবে। আগে কিতাও এসে বসতেন; এখন তাঁর বয়স বেড়েছে‌, খাওয়ার পরই শুয়ে পড়েন। বাড়ির অন্য সকলের জন্য কিন্তু নিয়ম জারি আছে।

জামাই শৈলেনবাবু পাইপের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে ধোঁয়ার ভিতর দিয়ে কপিলকে নিরীক্ষণ করছিলেন‌, গম্ভীর মুখে প্রশ্ন করলেন–‘কপিল‌, তুমি কি নাম-মাহান্ত্র্যে সাধু সন্নিসি হয়ে যাবার মতলব করেছ?’

কপিল সমান গাম্ভীর্যের সঙ্গে উত্তর দিলে–’আপাতত সে রকম কোনো মতলব নেই।’

শৈলেনবাবু্‌, বললেন—’তবে বিয়ে করছ না কেন? সংসার-ধর্ম করতে গেলে বিয়ে করা দরকার। তোমার বিয়ে করার উপযোগী বুদ্ধি না থাকতে পারে। কিন্তু বয়স তো হয়েছে।’

কপিল ভ্রূ একটু তুলে বলল–’বিয়ে করার জন্যে কি খুব বেশি বুদ্ধি দরকার?’

রমলা হেসে উঠল। কপিল ও শৈলেনবাবুর মধ্যে গভীর্য ঢাকা গৃঢ় পরিহাসের সঙ্গে বাড়ির সকলেই পরিচিত। রমলা বলল–’বিয়ে করার জন্যে যদি বেশি বুদ্ধির দরকার হত তাহলে বাংলাদেশে কারুর বিয়ে হত না। আসলে ঠিক উলটো। ঠাকুরপোর বড় বেশি বুদ্ধি‌, তাই বিয়ে হচ্ছে না।’

‘তাই নাকি!’ শৈলেনবাবু অবিশ্বাস-ভরা চক্ষু বিস্ফারিত করে কপিলের পানে চাইলেন—’এত বুদ্ধি কপিলের! কিন্তু আর একটু পরিষ্কার করে না বললে কথাটা হৃদয়ঙ্গম হচ্ছে না।’

রমলা বলল–’ওকেই জিজ্ঞেস করুন না। আমাদের চেষ্টার ত্রুটি নেই‌, তবুও বিয়ে করে না। কেন?’

শৈলেনবাবু প্রতিধ্বনি করলেন–’কেন?’

কপিল পকেটে হাত দিল‌, সিগারেটের কেস হাতে ঠেকাল‌, কেসটা অজ্ঞাতসারে বার করে আবার সে পকেটে রেখে দিল।

গৌতমদেব উঠে পড়লেন—’আমি উঠলাম‌, কাল ভোরেই আবার আমাকে–’ কথা অসমাপ্ত রেখে তিনি প্রস্থান করলেন। নিজের উপস্থিতি দ্বারা কারুর অসুবিধা ঘটাতে তিনি চান না।

কপিল জামাইবাবুকে লক্ষ্য করে বলল–’বিয়ে করা একটা সিরিয়াস কাজ এ কথা। আপনি মানেন?’

শৈলেনবাবু নিজের গৃহিণীর প্রতি অপোঙ্গ দৃষ্টিপাত করে বললেন—’মানি বইকি। খুব সিরিয়াস কাজ।’

অশোকা সূক্ষ্ম হাস্যরস বোঝে না‌, কিন্তু খোঁচা দিয়ে কথা বললে যত সূক্ষ্ম খোঁচাই হোক ঠিক বুঝতে পারে। সে স্বামীর দিকে বিরক্তিসূচক কটাক্ষ হেনে বলল–’আমি শুতে চললুম। বাজে কথার কাচকচি শুনতে ভাল লাগে না।’

অশোকা চলে যাবার পর কপিল পকেট থেকে সিগারেট বার করে রমলাকে বলল–’বিউদি‌, সিগারেট খেতে পারি।’

রমলা বলল–’আহা‌, ন্যাকামি দেখে বাঁচি না। আমার সামনে যেন সিগারেট খাও না!’

কপিল বলল—’খাই‌, কিন্তু অনুমতি নিয়ে খাই।’

রমলা বলল–’আচ্ছা‌, অনুমতি দিলুম‌, খাও।’

কপিল সিগারেট ধরাল। তারপর শালা-ভগিনীপতির তর্ক আবার আরম্ভ হয়ে গেল। রমলা ঠোঁটের কোণে কৌতুক-হাসি নিয়ে শুনতে লাগল।

কপিল বলল–’বিয়ে করা যখন সিরিয়াস ব্যাপার তখন খুব বিবেচনা করে বিয়ে করা উচিত।’

শৈলেনবাবু বললেন—’অবশ্য‌, অবশ্য। কিন্তু কী বিবেচনা করবে?’

‘বিবেচনা করতে হবে‌, আমি কি চাই।’

‘কী চাও তুমি? রূপ? গুণ? বিদ্যা? বুদ্ধি?’

‘রূপ গুণ বিদ্যা বুদ্ধি থাকে ভাল‌, না থাকলেও আপত্তি নেই। আসলে চাই-মিনের মিল।’

‘হুঁ, মনের মিল। কিন্তু বিয়ে না হলে বুঝবে কি করে মনের মিল হবে কিনা।’

‘ওইখানেই তো সমস্যা। তবে আজকাল স্ত্রী-স্বাধীনতার যুগে মেয়েদের মন বুঝতে বেশি দেরি হয় না।’

রমলা বলল—’তুমি তাহলে মেয়েদের মন বুঝে নিয়েছ?’

কপিল বলল—’তা বুঝে নিয়েছি। কিন্তু বুঝলেই যে পছন্দ হবে তার কোনো মানে নেই।’

রমলা বলল–’তা তো দেখতেই পাচ্ছি।’

শৈলেনবাবু বললেন–তাহলে যতদিন মনের মত মন না পাওয়া যাচ্ছে ততদিন অনুসন্ধান চলবে?’

কপিল মুচকি হাসল‌, উত্তর দিল না।

শৈলেনবাবু সন্দিগ্ধস্বরে বললেন—’আসল কথাটা কি? ডুবে ডুবে জল খোচ্ছ না তো?’

‘তার মানে?’

‘মানে কোনো সধবা কিংবা বিধবা যুবতীর প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়নি তো?’

কপিল চকিত চোখে চাইল‌, তারপর উচ্চকণ্ঠে হেসে উঠল‌, বলল–’বউদি‌, জামাইবাবুর মাথা গরম হয়েছে। ঠাণ্ডা দেশ থেকে গরম দেশে এসেছেন‌, হবারই কথা। তুমি ওঁর জন্যে আইস-ব্যাগের ব্যবস্থা কর‌, আমি শুতে চললাম।’

হাসি-মস্করার মধ্যে রাত্রির মত সভা ভঙ্গ হল। কপিল নিজের ঘরে গিয়ে দোর বন্ধ করল।

কপিলের ঘরটি বেশ বড়‌, লম্বাটে ধরনের। এক পাশে খাট-বিছানা‌, অন্য পাশে টেবিল-চেয়ার। কাচে ঢাকা টেবিলের ওপর কাচের নীচে আকাশের একটি মানচিত্র; নীল জমির ওপর সাদা নক্ষত্রপুঞ্জ ফুটে আছে। কপিল রাত্রিবাস পরল‌, টিলা পা-জামা আর হাত-কটা ফতুয়া। তারপর একটা বই নিয়ে টেবিলের সামনে পড়তে বসল।

ইংরেজি গণিত জ্যোতিষের বই‌, লেখকের নাম ফ্রেড় হয়েল। পড়তে পড়তে কপিল ঘড়ি দেখছে‌, আবার পড়ছে। বিশ্ব-রহস্য উদঘাটক জ্যোতিষগ্রন্থের প্রতি তার গভীর অনুরাগ; কিন্তু আজ তার মন ঠিক বইয়ের মধ্যে নেই‌, যেন সে সময় কাটাবার জন্যেই বই পড়ছে।

কন্ডিজর ঘড়িতে সাড়ে এগারোটা বাজল। কপিল বই বন্ধ করে উঠল‌, দেয়ালের একটা আলমারির কপাট খুলে একটি দূরবীন যন্ত্র বার করল। যন্ত্রটি আকারে দীর্ঘ নয়‌, কিন্তু তিন পায়ার ওপর ক্যামেরার মত দাঁড় করানো যায়‌, আবার ইচ্ছামত পায়া গুটিয়ে নেওয়া যায়। কপিল দূরবীনটি বগলে নিয়ে ঘরের আলো নেবালো‌, তারপর সন্তৰ্পণে বাইরে এল।

ঘর থেকে বেরিয়ে কয়েক পা গেলেই ছাদে ওঠবার সিঁড়ি। কপিল পা টিপে টিপে সিঁড়ির গোড়া পর্যন্ত গিয়েছে এমন সময় সামনের একটা দরজা খুলে রমলা বেরিয়ে এল। তার মুখে খরশান ব্যঙ্গের হাসি। কপিল তাকে দেখে থতমত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। রমলা বলল–’কী ঠাকুরপো‌, এত রাত্রে দূরবীন নিয়ে কোথায় চলেছ?’

কপিল চাপা গলায় বলল—’আস্তে বউদি‌, বাবার ঘুম ভেঙে যাবে।’

রমলা গলা নীচু করল–’তোমার মতলব ভাল ঠেকছে না ঠাকুরপো।’

কপিল বলল–’কি মুশকিল। আমি তো প্রায়ই আকাশের তারা দেখবার জন্যে ছাদে উঠি। তুমি জান না?’

রমলা বলল—’জানি। কিন্তু সে তো সন্ধ্যের পর। আজ রাত দুপুরে কোন তারা দেখবে বলে ছাদে উঠিছ?’

কপিল বলল–’আজ রাত্রি পৌঁনে বারোটার সময় মঙ্গলগ্রহ ঠিক মাথার ওপর উঠবে। মঙ্গলগ্রহ এখন পৃথিবীর খুব কাছে এসেছে‌, তাই তাকে ভাল করে দেখবার জন্যে ছাদে যাচ্ছি।’

রমলা মুখ গভীর করে বলল—’হঁ‌, মঙ্গলগ্রহ। কোন গ্রহ-তারা তোমার ঘাড়ে চেপেছে তুমিই জান। কিন্তু একটা কথা বলে দিচ্ছি‌, আমাদের বাড়ির চার পাশে যাদের বাড়ি তারা গরমের সময় জানলা খুলে শুয়েছে‌, তুমি যেন তাদের জানলা দিয়ে গ্রহ-তারা দেখতে যেও না।’

কপিল মুখের ওপর হাত চাপা দিয়ে হাসল‌, বলল–’বউদি‌, তোমার মনটা ভারি সন্দিগ্ধ। কিন্তু একটা কথা জিজ্ঞেস করি‌, তুমি এত রাত্রি পর্যন্ত ঘুমোওনি কেন?’

রমলা বলল–’তোমার দাদা বিছানায় শুয়ে আইনের বই পড়ছেন‌, হঠাৎ তাঁর কফি খাবার শখ হল। তাই কফি তৈরি করতে চলেছি। তুমি খাবে?

‘আমার সময় নেই।’ কপিল চুপি চুপি সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে গেল।

হয়তো মঙ্গলগ্রহই দেখবে।

আর একটি রাত্রির কথা :

সিনেমার শিল্পক্ষেত্রে যারা কাজ করে তারা সাধারণত দল বেঁধে থাকে‌, নিজেদের শিল্পীগোষ্ঠী নিয়ে একটা সমাজ তৈরি করে নিয়েছে‌, বাইরের লোকের সঙ্গে বড় একটা সম্পর্ক রাখে না। সুজন মিত্র কিন্তু দলে থেকেও ঠিক দলের পাখি নয়। যতক্ষণ সে স্টুডিওর সীমানার মধ্যে থাকে ততক্ষণ সকল শ্রেণীর সহকর্মী ও সহকর্মিণীর সঙ্গে অবাধে মেলামেশা করে। তরুণী অভিনেত্রীদের মধ্যে অনেকেই এই সুদৰ্শন নবেদিত অভিনেতাটির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল‌, কিন্তু সুজন কারুর কাছে ধরা দেয়নি। পাঁকাল মাছের মত হাত পিছলে বেরিয়ে যাবার কৌশল তার জানা ছিল।

সিনেমার গণ্ডীর বাইরে তার প্রধান বন্ধুগোষ্ঠী ছিল নৃপতির আড়ার ছেলেরা; এখানে এসে সে যেন সমভূমিতে পদার্পণ করত। তার বংশপরিচয় কেউ জানে না‌, তার জ্ঞাতিগোষ্ঠী কেউ আছে কিনা সে পরিচয়ও কেউ কোনো দিন পায়নি‌, কিন্তু তার বন্ধু-নিবাঁচন থেকে অনুমান করা যায় যে তার বংশপরিচয় যেমনই হোক‌, সে নিজে উচ্চ-মধ্যম ত্ৰৈণীর শিক্ষিত মার্জিত চরিত্রের মানুষ।

একদিন স্টুডিওতে তার শুটিং ছিল‌, কাজ শেষ হতে সন্ধ্যে পেরিয়ে গেল। তারপর নিজের ঘরে গিয়ে মুখের রঙ পরিষ্কার করে বেরুতে আরো ঘণ্টাখানেক কাটল। সুজনের একটি ছোট মোটর আছে‌, তাইতে চড়ে সে যখন স্টুডিও থেকে বেরুল তখন রাত্রি হয়ে গেছে।

মাইল দেড়েক চলাবার পর মোটর একটি হোটেলের সামনে এসে থামল। সুজন হোটেলেই। খায়। তার বাসায় রান্নার আয়োজন নেই। কিন্তু রোজ একই হোটেলে খায় না। যখন যা খাবার ইচ্ছে হয় তখন সেই রকম হোটেলে যায়‌, কখনো বা মিষ্টান্নের দোকানে গিয়ে দই-সন্দেশ খেয়ে পেট ভরায়। যেদিন শুটিং থাকে সেদিন দুপুরে স্টুডিওর ক্যান্টিনে খায়।

হোটেলের পাশে গাড়ি পার্ক করে সে যখন হোটেলে ঢুকাল তখন তার নাকের নীচে একজোড়া শৌখিন গোঁফ শোভা পাচ্ছে। গোঁফ জোড়া অকৃত্রিম নয়‌, সুজন কোনো প্রকাশ্য স্থানে গেলেই মুখে গোঁফ লাগিয়ে ছদ্মবেশ পরিধান করে। তার মুখখানা সিনেমার প্রসাদে জনসাধারণের খুবই পরিচিত‌, তাকে সশরীরে দেখলে সিনেমা-পাগল লোকেরা বিরক্ত করবে। এই আশঙ্কাতেই হয়তো সে গোঁফের আড়ালে স্বরূপ লুকিয়ে রাখে।

হোটেলে আহার শেষ করে সুজন মোটর চালিয়ে নিজের বাসার দিকে চলল। বাসাটি পাড়ার এক প্রান্তে একটি সরু রাস্তার ওপর; ছোট বাড়ি কিন্তু গাড়ি রাখার আস্তাবল আছে।

গ্যারেজে গাড়ি রেখে সুজন চাবি দিয়ে দরজা খুলে বাড়িতে ঢুকল, ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে শোবার ঘরে গিয়ে আলো জ্বালল। একসঙ্গে গোটা তিনেক দ্যুতিমান বালব জ্বলে উঠল।

চৌকশ ঘরটি বেশ বড়। তাতে খাট-বিছানা আছে‌, টেবিল-চেয়ার আলমারি আছে‌, এমন কি স্টেভি‌, চায়ের সরঞ্জাম প্রভৃতিও আছে। মনে হয়‌, সুজন এই একটি ঘরের মধ্যে তার একক জীবনযাত্রার সমস্ত উপকরণ সঞ্চয় করে রেখেছে।

একটি লম্বা আরাম-কেদারায় অঙ্গ ছড়িয়ে দিয়ে সে পকেট থেকে সিগারেট বার করল‌, সিগারেট ধরিয়ে পিছনে মাথা হেলিয়ে দিয়ে উজ্জ্বল একটা বালবের দিকে দৃষ্টি রেখে মৃদ-মন্দ টান দিতে লাগল। এখন আর তার মুখে গোঁফ নেই‌, নগ্ন মুখখান ছুরির মত ধরাল।

সিগারেট শেষ করে সুজন কব্জির ঘড়ি দেখল-নাটা বেজে কুড়ি মিনিট। সে উঠে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়াল; সাড়ে ছফুট উঁচু আয়নায় তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। সে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে নিজের দেহ মুখ পরীক্ষা করল; একবার হাসল‌, একবার ভ্রূকুটি করল‌, তারপর আড়মোড়া ভেঙে আলমারির কাছে গেল।

আলমারি থেকে সে দু’টি জিনিস বার করল; একটি হুইস্কির বোতল এবং বড় চৌকো। আকারের একটি পুরু। লাল কাগজের খাম। প্রথমে সে গেলাসে ছোট পেগ মাপের হুইস্কি ঢেলে তাতে জল মেশালো‌, তারপর গেলাস আর খাম নিয়ে আবার চেয়ারে এসে বসল। গেলাসে ছোট একটি চুমুক দিয়ে চেয়ারের হাতার ওপর রেখে আগফার খাম থেকে একটি ফটো বার করল।

ক্যাবিনেট আয়তনের ফটো‌, একটি যুবতীর আ-কটি প্রতিকৃতি‌, যুবতী হাসি-হাসি মুখে দর্শকের পানে চেয়ে আছে। মনে হয়‌, সে সিনেমার অভিনেত্রী নয়‌, মুখে বা দেহভঙ্গীতে কৃত্রিমতা নেই। কিন্তু সে কুমারী কি বিবাহিতা‌, ফটো থেকে বোঝা যায় না।

সুজন থেকে থেকে গেলাসে চুমুক দিতে দিতে ছবিটি দেখতে লাগল। চোখে তার প্রগাঢ় তন্ময়ত‌, পলকের তরেও ছবি থেকে চোখ সরাতে পারছে না। এক ঘণ্টা কেটে গেল‌, গোলাসের পানীয় নিঃশেষ হল; কিন্তু সুজনের চিত্রদর্শন-পিপাসা মিটাল না। সে ছবির দিকে তাকিয়ে থেকে আবার সিগারেট ধরল। তার ঠোঁট নড়তে লাগল‌, যেন চুপি চুপি ছবির সঙ্গে কথা কইছে। তারপর ছবিটি নিজের গালের ওপর চেপে ধরে অনেকক্ষণ চুপ করে বসে রইল।

পৌঁনে এগারোটার সময় সে ছবিটি আবার খামে পুরে আলমারিতে তুলে রাখল‌, আয়নার সামনে কিছুক্ষণ শূন্য দৃষ্টিতে চেয়ে দাঁড়িয়ে রইল‌, তারপর আলো নিবিয়ে আবার বাড়ি থেকে বেরুল। মোটর নিয়ে প্রায় আধা ঘণ্টা দক্ষিণ কলকাতার নগরগুঞ্জনক্ষান্ত পথে পথে ঘুরে বেড়িয়ে শেষে রবীন্দ্র সরোবরের ঘেরার মধ্যে রাস্তার পাশে ঘাসের ওপর গাড়ি দাঁড় করল। গাড়ি থেকে যখন নামল‌, দেখা গেল নকল গোঁফ তার নাকের নীচে ফিরে এসেছে। গাড়ি লক করে সে লেক থেকে বেরুল‌, বড় রাস্তা পার হয়ে একটা সরু রাস্তা দিয়ে চলতে লাগল।

রাস্তার দু’ পাশে বাড়ির আলো নিবে গেছে। সুজন একটি ল্যাম্প-পোস্টের নীচে এসে দাঁড়াল। রাস্তার ওপারে একটা বাড়ি‌, তার দোতলার একটা জানলা দিয়ে নৈশদীপের অস্ফুট আলো আসছে। সুজন সেই দিকে একদৃষ্টি তাকিয়ে ল্যাম্প-পেস্টের তলায় দাঁড়িয়ে রইল। ল্যাম্প-পোস্টের নীচে দাঁড়ালে মাথার ওপর আলো পড়ে‌, মানুষটাকে দেখা যায় বটে‌, কিন্তু মুখ চেনা যায় না।

কিন্তু অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরও জানলায় কাউকে দেখা গেল না। সুজন যাকে চোখের দেখা দেখতে চায় সে হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে কিংবা অন্য একজনের বাহুবন্ধনের মধ্যে শুয়ে জেগে আছে।

স্ক্রিয়াশ্চরিত্রম। সুজন আগুনের হালকার মত তপ্ত নিশ্বাস ফেলল‌, তারপর ফিরে চলল।

আর একটি রাত্রির কথা :

দেবাশিস আর দীপা একসঙ্গে টেবিলে বসে রাত্রির আহার সম্পন্ন করল। নকুলকে শুনিয়ে দীপা বাগানের কথা বলল; মালী পদ্মলোচন বুগেনভিলিয়া লতাকে বাইগনবিল্লি বলে শুনে দেবাশিস খানিকটা হাসল‌, তারপর ফ্যাক্টরির একটা মজার ঘটনা বলল। বাইরের ঠাট বজায় রইল। খাওয়া শেষ হলে দু’জনে ওপরে গিয়ে নিজের নিজের ঘরে ঢুকল। তৃতীয় ব্যক্তির সামনে স্বামী-স্ত্রীর অভিনয় করতে তারা বেশ অভ্যস্ত হয়েছে; কিন্তু যখন তৃতীয় ব্যক্তি কেউ থাকে না‌, যখন অভিনয় করার দরকার নেই‌, তখনই বিপদ।

দীপা ঘরে গিয়ে নৈশদীপ জ্বেলে খানিকক্ষণ খোলা জানলার সামনে দাঁড়িয়ে রইল। আজ বাইরে হাওয়া নেই‌, গ্ৰীষ্মের রাত্ৰি যেন নিশ্বাস রোধ করে আছে। দীপা পাখা চালিয়ে দিয়ে ব্লাউজ খুলে শুয়ে পড়ল। ঘুম কখন আসবে তার ঠিক নেই। কিন্তু যথাসময়ে বিছানায় আশ্রয় নেওয়া ছাড়া আর তো কোনো কাজও নেই। শুয়ে শুয়ে সে মাথার মধ্যে দেবাশিসের একটা কথা প্রতিধ্বনির মত শুনতে লাগল-দীপা‌, তুমি আমাকে ভালবাস না‌, কিন্তু আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি।

দেবাশিস নিজের ঘরে খাটের পাশে পড়ার আলো জ্বেলে একখানা ইংরেজি বিজ্ঞানের বই নিয়ে শুয়েছিল। তার গায়ে জামা নেই‌, পাখাটা ছাদ থেকে বনবান করে ঘুরছে। দেবাশিস বইয়ে মন বসাতে পারছিল না‌, মনটা যেন তপ্ত বাস্প হয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছিল। মাথায় ঠাণ্ডা জল থাবড়ে দিয়েও অবস্থার বিশেষ উন্নতি হল না। আধা ঘণ্টা পরে সে বই রেখে আলো নিবিয়ে দিল। উজ্জ্বল আলোটাই যেন ঘরের বাতাসকে আরো গরম করে তুলেছে।

অন্ধকার ঘরে দেবাশিস চোখ বুজে বিছানায় শুয়ে আছে। পাখার হাওয়া সত্ত্বেও বিছানাটা যেন রুটি-সেঁকা তাওয়ার মত তপ্ত। এ-পাশ ও-পাশ করেও নিষ্কৃতি নেই‌, বালিশের ওপর মাথাটা গরম হয়ে উঠছে।

সঙ্গে সঙ্গে মনও গরম হচ্ছে‌, কিন্তু সেটা অগোচরে। শেষে হঠাৎ গভীর রাত্রে এই মানসিক উত্মা মাটি ফুড়ে আগ্নেয়গিরির মত উৎসারিত হল। দেবাশিস ধড়মড় করে বিছানায় উঠে বসে চাপা গর্জনে বলল–‘Goddamn it‌, she is my wife!’

অন্ধকারে দেবাশিস কিছুক্ষণ স্নায়ুপেশী শক্ত করে বসে রইল‌, তারপর বিছানা থেকে নেমে ঘর থেকে বেরুল। বসবার ঘরের আলো জ্বালতেই সুইচে কটাস করে শব্দ হল‌, মনে হল ঘরটা যেন চমকে উঠল। দেবাশিসও একটু চমকালো‌, হঠাৎ জ্বলে-ওঠা আলোর দীপ্তি চোখে আঘাত করল। সে একটু থমকে দাঁড়িয়ে দীপার বন্ধ দোরের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।

দরজায় খিল দেওয়া কি শুধুই ভেজানো‌, বাইরে থেকে বোঝা যায় না। হয়তো একটু ঠেললেই খুলে যাবে। দীপা নিশ্চয় ঘুমিয়ে পড়েছে। দেবাশিস কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দরজায় টোকা দেবার জন্যে হাত তুলল‌, ঘুমন্ত দীপার ঘরে অনাহূত দোর ঠেলে প্রবেশ করতে পারল না। তারপর টোকা দিতেও পারল না‌, তার উদ্যত হাত নেমে পড়ল। ‘কাপুরুষ!’ মনের গভীরে নিজেকে কঠোর ধিক্কার দিয়ে সে নিজের ঘরে ফিরে গেল।

দীপা তখনো ঘুমোয়নি‌, জেগেই ছিল। কিন্তু সে কিছু জানতে পারল না।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress