রামায়ণ : লঙ্কাকাণ্ড – শ্রীরামের মাহাত্ম্য বর্ণন
শমন-দমন রাবণ রাজা রাবণ-দমন রাম।
শমন-ভবন না হয় গমন যে লয় রামের নাম।।
রাম নাম জপ ভাই অন্য কর্ম্ম পিছে।
সর্ব্ব ধর্ম্ম কর্ম্ম রামনাম বিনা মিছে।।
মৃত্যুকালে যদি নর রাম বলি ডাকে।
বিমানে চড়িয়া সেই যায় দেবলোকে।।
শ্রীরামের মহিমার কি দিব তুলনা।
তাহার প্রমাণ দেখ গৌতম-ললনা।।
পাপীজন মুক্ত হয় বাল্মীকির গুণে।
অশ্বমেধ ফল পায় রামায়ণ শুনে।।
রামনাম লইতে না কর ভাই হেলা।
ভবসিন্ধু তরিবারে রামনাম ভেলা।।
অনাথের নাথ রাম প্রকাশিলা লীলা।
বনের বানর বন্দী জলে ভেসে শিলা।।
রামজন্ম পূর্ব্বে ষাটি সহস্র বৎসর।
অনাগত পুরাণ রচিলা মুনিবর।।
রামনাম স্মরণে যমের দায়ে তরি।
ভবসিন্ধু তরিবারে রামপদ-তরী।।
চণ্ডালে যাঁহার দয়া বড় সকরুণ।
পাষাণে নিশান আছে শ্রীরামের গুণ।।
শ্রীরাম নামের গুণে কি দিব তুলনা।
পাষাণ মনুষ্য হয় নৌকা হয় সোনা।।
রামনাম লইতে ভাই না করিও হেলা।
সংসার তরিতে রামনামে বান্ধ ভেলা।।
শ্রীরাম স্মরণে যেবা মহারণ্যে যায়।
ধনুর্ব্বাণ লয়ে রাম পশ্চাতে গোড়ায়।।
রামনাম বল ভাই এই বার বার।
ভেবে দেখ রাম বিনা গতি নাহি আর।।
করিলেন অশ্বমেধ শ্রীরাম যতনে।
অশ্বমেধ ফল পায় রামায়ণ শুনে।।
এমন রামের গুণ কি দিব তুলনা।
পাদস্পর্শে শিলা নর, নৌকা হয় সোণা।।
পার কর রামচন্দ্র পার কর মোরে।
দীন দেখি নৌকা রাম লৈয়া গেলে দূরে।।
যার সনে কড়ি ছিল গেল পার হয়ে।
কড়ি বিনা পার করে তারে বলি নেয়ে।।
ধ্যান পূজা তন্ত্র মন্ত্র যার নাহি জ্ঞান।
তারে যদি কর পার তবে জানি রাম।।
যোগ যাগ তন্ত্র মন্ত্র যেই জন জানে।
তুমি কি তরাবে তারে তরে নিজ গুণে।।
মোর সঙ্গে কড়ি নাই পার হব কিসে।
কর বা না কর পার কূলে আছি বসে।।
নেয়ের স্বভাব আমি জানি ভালে ভালে।
কড়ি না পাইলে পার করে সন্ধ্যাকালে।।
কারে ভাঙ্গ কারে গড় এই তব কাজ।
কারো মুণ্ডে ছত্রদণ্ড, কারো মুণ্ডে বাজ।।
এক শত পুত্র কারো অক্ষয় করে দাও।
এক পুত্র দিয়া প্রভু তাও হরে লও।।
আপনি সে ভাঙ্গ প্রভু আপনি সে গড়।
সর্প হৈয়া দংশ তুমি ওঝা হয়ে ঝাড়।।
সকলি তোমার লীলা সব তুমি পার।
হাকিম হয়ে হুকুম দাও পেয়াদা হয়ে মার।।
অধম দেখিয়া যদি দয়া না করিবে।
পতিতপাবন নাম কি গুণে ধরিবে।।
সাধুজনে তরাইতে সর্ব্ব দেব পারে।
অসাধু তরান যিনি ঠাকুর বলি তাঁরে।।
অহল্যা পাষাণ হয়ে ছিল দৈবদোষে।
মুক্তিপদ পাইল তব চরণ পরশে।।
পার কর রামচন্দ্র রঘুকুলমণি।
তরিবারে দুটি পদ করেছি তরণী।।
যদি মোরে ছাড় প্রভু আমি না ছাড়িব।
বাজন নূপুর হয়ে চরণে বাজিব।।
রাম-নদী বহিয়া যায় দেখহ নয়নে।
উহায় গিয়া স্নান কর কূলে বসি কেনে।।
হেদে রে পামর লোক পার হবে যদি।
মন ভরি পান কর বয়ে যায় নদী।।
মৃত্যুকালে যেই জন রাম বলি ডাকে।
সেই স্বর্গে যায় যম দাণ্ডাইয়া দেখে।।
এমন রামের গুণ বর্ণিতে কি পারি।
হেলায় তরিয়া যাবে মুখে বল হরি।।
ধনু মুণ্ড দেখি সীতা পাইবেক ত্রাস।
স্বামী দেবরের তরে হউক নিরাশ।।
এত যদি বিদ্যুৎজিহ্ব রাজ-আজ্ঞা পায়।
রামের ধনুক মুণ্ড গঠিবারে যায়।।
বসিল সে বিদ্যুৎজিহ্ব করিয়া ধেয়ান।
গুরুর চরণ বন্দি যোড়ে ব্রহ্মজ্ঞান।।
বসিল যে বিদ্যুৎজিহ্ব ধ্যান নাহি টুটে।
ব্রহ্মজ্ঞানের তেজে ধনুক মুণ্ড উঠে।।
বিচিত্র নির্ম্মাণ সেই ধনুকের গুণে।
কুণ্ডল নির্ম্মিত রত্ন শোভয়ে শ্রবণে।।
মুকুতা জিনিয়া তার দশনের জ্যোতি।
বিম্বফল অবিকল ওষ্ঠধর দ্যুতি।।
চাঁপা নাগেশ্বর দিয়া বাঁধিলেক চূড়া।
অতি শুভ্র কাপড়ে রামের জটা বেড়া।।
শ্রীরামের মুণ্ড সে করিলেক নির্ম্মাণ।
যে দেখেছে সেই জানে রামের সমান।।
রামের সমান ধনু করিয়া নির্ম্মাণ।
রাবণের আগে নিয়া করিল যোগান।।
শ্রীরামের মুখ দেখি দশানন হাসে।
রাজার প্রসাদ দেয় যত মনে আসে।।
বিদ্যুৎজিহ্ব নিশাচরে থুইলেক দ্বারে।
প্রবেশিল আপনি অশোক বনান্তরে।।
মিথ্যা সত্য করি পাড়ে কথার পাতন।
যে প্রকারে সীতার প্রতীত হয় মন।।
মোর বাক্য নাহি শুন, বাড়াও জঞ্জাল।
তোর অপেক্ষায় রাখিয়াছি এতকাল।।
হেন মনে করি, তোরে কাটি এই দণ্ডে।
তোর রূপ দেখিয়া তখনি কোপ খণ্ডে।।
মনে মনে ভাব যে রামের কত গুণ।
আজিকার রণ কথা মন দিয়া শুন।।
বহিল পাথর গাছ যত কপিগণ।
হইলেক তাহারা নিদ্রায় অচেতন।।