রামায়ণ : লঙ্কাকাণ্ড – শুক সারণ কর্ত্তৃক শ্রীরামের প্রশংসা ও কটকের পরিচয় দান
হইল শুকের বাক্য যদি অবসান।
সারণ বলিছে দশানন বিদ্যমান।।
আমাদের বাক্যে যদি না হয় প্রত্যয়।
প্রাচীরে উঠিয়া দেখ, হয় কি না হয়।।
অতি উচ্চ লঙ্কার প্রাচীর স্বর্ণময়।
চর সহ উঠিল রাবণ দুরাশয়।।
চতুর্দ্দিকে জল স্থল ব্যাপিত বানর।
দেখিয়া রাবণ রাজা সভয় অন্তর।।
সহস্র বৎসর করি যুদ্ধ নিরন্তর।
তথাপি না ফুরাইবে কটক বিস্তর।।
বানর চিনিতে চাহে রাজা দশানন।
তুলিয়া দক্ষিণ হস্ত দেখায় সারণ।।
বানর সহস্র কোটি যাহার সংহতি।
ঐ দেখ নীলবর্ণ নীল সেনাপতি।।
নীল সেনাপতি সে হেলায় যদি নড়ে।
দ্বাদশ প্রহর পথ সৈন্য আড়ে যোড়ে।।
বানর সত্তর কোটি যার পাছু লাগে।
সুগ্রীব ভূপতি দেখ শ্রীরামের আগে।।
বিশ কোটি কপি সহ ওই যে গবাক্ষ।
ত্রিশ কোটি বানরেতে দেখহ ধূম্রাক্ষ।।
সম্পাতি বানর দেখ গৌরবর্ণ ধরে।
রণে গেলে বিপক্ষ পলায় যার ডরে।।
হিঙ্গুলি পর্ব্বতের হিঙ্গুল যেন অঙ্গ।
পঞ্চাশৎ কোটি কপি সঙ্গে শরভঙ্গ।।
মল পর্ব্বতের বানর বর্ণে গেরি।
সহিত সত্তর কোটি দেখহ কেশরী।।
শরভের বানর সহস্র কোটি সহ।
রণেতে পশিলে তারে নাহি পারে কেহ।।
সম্পাতি বানর ওই হেলায় যদি নড়ে।
শরীর যোজন দশ তার আড়ে যোড়ে।।
একাদশ কোটিতে বানর মহামতি।
সহস্র কোটিতে ওই কুমুদ সেনাপতি।।
শত শত উত্তরের বীর-মহাবলী।
যাদের চলনেতে গগনে উড়ে ধূলি।।
দেখ ধূম্র ধূম্রাক্ষ রাজার দুই শালা।
বানর-কটক মধ্যে যেন মেঘমালা।।
মহেন্দ্র দেবেন্দ্র দেখ সুষেণ-নন্দন।
আশী কোটি বীর দুই ভায়ের ভিড়ন।।
ভল্লুক কটকে দেখ মন্ত্রী জাম্ববান।
আশী কোটি বানরেতে দেখ হনুমান।।
দেখ গায় গবাক্ষ যে সাক্ষাৎ শমন।
পঞ্চাশৎ কোটি দুই ভায়ের ভিড়ন।।
বৈদ্যরাজ সুষেণ ঐ রাজার শ্বশুর।
তিন কোটি বৃন্দ বীর যাহার প্রচুর।।
দেখহ সুগ্রীব রাজা বানরাধিপতি।
ত্রিভুবন নাহি আঁটে যাহার সংহতি।।
বালির বিক্রম তুমি জান ভাল মত।
তারি ভাই সুগ্রীব লঙ্কাতে উপগত।।
নল বীর দেখ বিশ্বকর্ম্মার নন্দন।
যে বান্ধিল পারাবার শতেক যোজন।।
গাছ পাথরেতে যেই বান্ধিলেক সেতু।
লঙ্কাপুরী বিনাশিবে এই মাত্র হেতু।।
যুবরাজ অঙ্গদ সে বালির কুমার।
কুড়ি লক্ষ কপি তার নিজ পরিবার।।
রামের বানর সংখ্যা কি কব কাহিনী।
শত কোটি বানরেতে এক বৃন্দ গণি।।
শত কোটি বৃন্দে এক মহাবৃন্দ হয়।
শত কোটি মহাবৃন্দে অর্ব্বুদ নিশ্চয়।।
শত কোটি অর্ব্বুদেতে মহার্ব্বুদ লেখা।
শত কোটি মহার্ব্বুদে এক খর্ব্ব শিক্ষা।।
শত কোটি খর্ব্বে এক মহাখর্ব্ব হয়।
শত কোটি মহাখর্ব্বে শঙ্ক যে নিশ্চয়।।
শত কোটি শঙ্খে এক মহাশঙ্খ জানি।
শত কোটি মহাশঙ্খে এক পদ্ম গণি।।
শত কোটি পদ্মে এক মহাপদ্মদল।
শত কোটি মহাপদ্মদলেতে সাগর।।
শত কোটি সাগরে মহাসাগর জানি।
শত কোটি মহাসাগরে এক অক্ষৌহিণী।।
শত কোটি অক্ষৌহিনীতে এক অপার।
অপারের অধিক গণনা নাহি আর।।
হেথা বিভীষণ বলে শ্রীরাম গোচর।
হের রাজা দশাননে প্রাচীর উপর।।
ঝাট বাণ মারি তুমি কাটহ সত্বর।
ঘুচুক মনের দুঃখ যুড়াক অন্তর।।
ধনুর্ব্বাণ লয়ে রাম করেন সন্ধান।
তাহা দেখি সত্বরে পলায় দশানন।।
শুক সারণ বলে ছাড় জীবনের আশ।
কটকের চাপ দেখি লাগয়ে তরাস।।
জীবনের বাসনা যদ্যপি থাকে মনে।
সীতা দেহ শ্রীরামে রাবণ এইক্ষণে।।
সীতা দিয়া রামেরে না কর যদি প্রীত।
শ্রীরামের হাতের রাজা মরিবে নিশ্চিত।।
গরুড় পাইলে সর্প গিলে যতক্ষণে।
অব্যাহতি নাহি তব শ্রীরামের বাণে।।
শুক আর সারণ কহিল এইরূপ।
কোপে দুই চরে ভৎসে দশানন ভূপ।।