রামায়ণ : লঙ্কাকাণ্ড – দশরতের শ্রীরাম-সম্ভাষণ ও ভরতের প্রতি বরদান
বিরিঞ্চি বলেন রাম যে করিলা কাম।
তাহাতে পাইল রক্ষা দেবের সমাজ।।
তোমা লাগি আছে অযোধ্যার প্রজাগণ।
দেশে গিয়া সবাকার করহ পালন।।
তোমা লাগি ভরত শত্রুঘ্ন প্রাণ ধরে।
চারি ভাই মিলি রাজ্য করহ সংসারে।।
নানা যজ্ঞ করহ, করহ নানা দান।
বংশে রাজা করিয়া আইস নিজ স্থান।।
দশরথ মরিলেন তোমা অদর্শনে।
মৃত পিতা এসেছেন তোমা সম্ভাষণে।।
পিতা দেখ রামচন্দ্র অপূর্ব্ব দর্শন।
দুই ভাই কর পিতৃ-চরণ বন্দন।।
দেব-রথারূঢ় রাজা দেব-বেশধারী।
করিলেন প্রণাম লক্ষ্মণ রাবণারি।।
পুত্রবধূ শ্বশুরের বন্দেন চরণ।
রাজা দশরথ কিছু কহেন বচন।।
দগ্ধ হইলাম আমি কৈকেয়ী-বচনে।
প্রাণ ছাড়িলাম রাম তোমা অদর্শনে।।
পিতা উদ্ধারিল যেন অষ্টাবক্র ঋষি।
তোমার প্রসাদে রাম স্বর্গে আমি বসি।।
দেবগণ যুক্তি করে সব আমি শুনি।
দশরথ-গৃহে অবতীর্ণ চক্রপাণি।।
লক্ষ্মণের গুণ ব্যাখ্যা করে দেবগণ।
রামের যেমন সেবা করিছে লক্ষ্মণ।।
সফল হইবে অযোধ্যার পুরজন।
তুমি রাজা হয়ে সবা করিবে পালন।।
জানকীর চরিত্রে আমার চমৎকার।
শুদ্ধা হয়ে করিলেন কুলের উদ্ধার।।
ভরত কনিষ্ঠ ভাই প্রাণের সোসর।
আমা তুল্য তাহাকে পালিবে বহুতর।।
বলিল তোমারে যে কৈকেয়ী কুবচন।
মাতা পুত্রে দুইজনে করেছি বর্জ্জন।।
এতেক বলেন যদি রাজা দশরথ।
কৃতাঞ্জলি শ্রীরাম কহেন তার মত।।
মম দুঃখে ভরত যে হয়েছে দুঃখিত।
তারে তব আর বর্জ্জন না হয় উচিত।।
ভরতেরে বর দেহ দেব বিদ্যমান।
তাহাতে হেইব তৃপ্ত জুড়াইবে প্রাণ।।
রামের বচনে রাজা করেন বিধান।
ভরতের শ্রদ্ধা মম অমৃত সমান।।
ভরতেরে বরদান দেবগণ শুনে।
আলিঙ্গনে তুষিলেন আত্মজ লক্ষ্মণে।।
করিয়া রামের সেবা হইলে উদ্ধার।
ঘুষিবে তোমার যশ সকল সংসার।।
বলেন সীতার প্রতি প্রবোধ বচন।
আমার বচনে তুমি সম্বর ক্রন্দন।।
দশ মাস ছিলে মাতা রাক্ষসের ঘরে।
তেঁই সে তোমারে রাম দেশে নিতে নারে।।
হইলে গো অগ্নিশুদ্ধা দেবলোকে জানে।
শ্রীরামের সহ যাহ আপনার স্থানে।।
যে কামিনী শুনিবেক তোমার চরিত্র।
সর্ব্ব পাপ ঘুচিবেক হইবে পবিত্র।।
দেবরথে চড়ি রাজা দেববেশ ধরি।
পুত্রবধূ সান্ত্বাইয়া যান স্বর্গপুরী।।