রাশেদ রউফ (বাংলাদেশের কিশোর-কবিতা আন্দোলনের পুরোধা)
রাশেদ রউফ জন্মগ্রহণ করেন ১লা জানুয়ারী, ১৯৬৪ সালে, চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ছনহরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সে গ্রামেই বেড়ে উঠেছেন তিনি। তার বাবার নাম নুর সৈয়দ, মায়ের নাম মাবেয়া বেগম। তারা ছয় ভাই চার বোন। ভাইদের মধ্যে তিনি বড়।। এখন বয়স ষাট বছর।
রাশেদ রউফের শিক্ষাজীবন শুরু হয় পটিয়াস্থ ছনহরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর ছনহরা ষোড়শী বালা উচ্চ বিদ্যালয়, পটিয়া সরকারি কলেজ হয়ে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। ১৯৮৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত বিষয়ে স্নাতক এবং ১৯৮৭ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
শিক্ষা জীবন শেষ করেই রাশেদ রউফ পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন সাংবাদিকতাকে। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের প্রাচীনতম পত্রিকা দৈনিক আজাদীতে বার্তা বিভাগে সহ-সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। বর্তমানে এ পত্রিকার সহযোগী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখির সূত্রপাত। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াকালীন এক সহপাঠীর কাব্য চর্চায় অনুপ্রাণিত হয়ে তার কবিতা চর্চা শুরু। পরে তার প্রিয় শিক্ষক আশা কিরণ চৌধুরীর অনুপ্রেরণায় লেখালেখিতে নিরবচ্ছিন্ন যাত্রা। তবে পত্রিকার প্রথম লেখা প্রকাশ ১৯৮০ সালে, যখন তিনি পটিয়া সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র।
তিনি একজন বাংলাদেশী কবি, লেখক, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক। তাঁকে বলা হয় বাংলাদেশের কিশোর-কবিতা আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব । বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদীর সহযোগী সম্পাদক পদে কর্মরত আছেন। শিশু সাহিত্যের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন এই সাহিত্যিক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে বাংলা একাডেমী পুরস্কার গ্রহণ করছেন শিশু সাহিত্যিক রাশেদ রউফ।
[প্রকাশিত গ্রন্থ]
কিশোর কাব্যগ্রন্থ –
আকাশের সীমানায় সূর্যের ঠিকানায় (১৯৯১ সাল)
আগল ভাঙা পাগল হাওয়া (১৯৯৬ সাল)
বিকেল মানে ছুটি (১৯৯৬ সাল)
ধানের গানে প্রাণের বাঁশি (১৯৯৮ সাল)
যাওয়ার পথে হাওয়ার রেলে (১৯৯৯ সাল)
ছুটির মজা কেমন মজা (২০০০ সাল)
আয়রে খোকন ঘরে আয় (২০০২ সাল)
নির্বাচিত কিশোর কবিতা (২০০৪ সাল)
ছবির মতো দেশ (২০০৮ সাল)
আনন্দ সাম্পান (২০০৯ সাল)
পরীর নূপুর (২০১২ সাল)
তোমার জন্যে সোনার বাংলা (২০১৬ সাল)
ছুটিমাখা সকালে (২০১৯ সাল)
শ্রেষ্ঠ কিশোরকবিতা (২০১৯ সাল)
যখন আমি ছোট্ট ছিলাম (২০২০ সাল)
প্রবন্ধ-গবেষণাগ্রন্থ –
ছন্দ পরিচয় (১৯৯৬ সাল, ১৯৯৮ সাল,২০০০ সাল)
ছড়া জাদুকর সুকুমার বড়ুয়া (১৯৯৯ সাল)
ছড়াশিল্পী লুৎফর রহমান রিটন (২০০০ সাল)
বাংলাদেশের ছড়া : রূপ ও রূপকার (২০০৭ সাল)
রবীন্দ্রনাথ : ছোটোদের আপন (২০১২ সাল)
আলোয় ভুবন ভরা ( ২০১৬ সাল)
বাংলাদেশের শিশুসাহিত্য : ছন্দোময় সোনালি রেখা (২০১৬ সাল)
বাংলাদেশের কিশোরকবিতা : অগ্রগতি ও গতিপ্রকৃতি (২০১৭ সাল)
শিশুসাহিত্য ও আমাদের দায়বদ্ধতা (২০১৯ সাল)
বাংলা ছন্দের সহজ পাঠ (২০২০ সাল)
প্রথম অনলাইন বইমেলা : লেখক সারথি (২০২১ সাল)
জীবনী –
মোহাম্মদ খালেদ (২০১৬:সাল)
বিজ্ঞানী খুদরাত এ খুদা (২০১৯ সাল)
স্যার জগদীশচন্দ্র বসু (২০২০ সাল)
কাব্যগ্রন্থ –
তোমার জন্য সকাল আমার তোমার জন্য রাত (১৯৯৭ সাল)
এসো পঞ্চাশে এসো মন চাষে (২০১৩ সাল)
ছড়াগ্রন্থ –
সমকালীন ছড়া (১৯৯৭ সাল)
অন্ত্যমিলসমগ্র : ১ (২০১৬নসাল)
এটাও চাই, ওটাও চাই (২০২০ সাল)
কিশোর গল্প ও উপন্যাসগ্রন্থ –
কাকবন্ধু ও ভূতের গল্প (২০০৬ সাল)
পরীর ভুবন (২০০৯ সাল)
পরি কি সত্যি সত্যি ঘরে এসেছিল (২০১৫ সাল)
রূপ অরূপের আলো (২০১৭ সাল)
আমাদের ইশকুলে পরীক্ষা নেই (২০১৭ সাল)
মিষ্টি পাখি দুষ্ট পাখি (২০১৭™সাল)
ছুটির দিনে (২০১৭ সাল)
পাখির সাথে আনন্দমেলায় (২০১৭ সাল)
বাবারা কি মায়ের মতো হয় (২০১৯ সাল)
বাবা, আমি তোমাকে ভালোবাসি (২০১৯ সাল)
বন্ধু চিরকাল (২০২০\সাল)
আয়মান ও মাছের গল্প (২০২১ সাল)
ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুবিষয়ক গ্রন্থ –
মুক্তিযুদ্ধের ছড়া ও কবিতা (১৯৯৭ সাল)
স্বাধীনতার প্রিয় কবিতা (২০০০ সাল)
ভাষা-আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতা ও দেশের কবিতা (২০১৪ সাল),
খোলা আকাশের দিন (২০১৭ সাল),
তীর্থভূমি (২০১৭ সাল),
কী শোভা কী ছায়া গো (২০১৭ সাল),
বীরের স্বপ্ন (২০১৮ সাল)
বঙ্গবন্ধু তুমি অজর অমর (২০১৯ সাল)
বড়দের গল্পগ্রন্থ –
প্রেম-অপ্রেমের গল্প (২০১৮ সাল)
[লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা]
১৯৮৪ সাল থেকে বিভিন্ন সময় বেশ কয়েকটি লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করেন। তন্মধ্যে ছিল সাহিত্য সাময়িকী ‘প্রেরণা’, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা সংকলন ‘দাবাইয়া রাখতে পারবা না’, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সামগ্রিক সংকলন ‘বাঙালি’, ছোটদের সাময়িকী ‘শিশুমেলা’ প্রভৃতি। প্রায় বিশ বছর ধরে সম্পাদনা করেন ছোটদের পত্রিকা ‘দুরন্ত’। একসময় তাঁর সম্পাদনায় বের হতো ‘সাপ্তাহিক ছড়াসাহিত্য’ নামে ছড়ার একটি পত্রিকা। এছাড়া তিনি এখন সম্পাদনা করেন ‘শিশুসাহিত্য’ নামে একটি লিটল ম্যাগ।
সম্পাদিত গ্রন্থ –
অথৈ (১৯৯৩ সাল)
দুরন্ত (১৯৯৫ সাল)
চাঁদের কপালে চাঁদ (১৯৯৫ সাল)
মুক্তিযুদ্ধের ছড়া ও কবিতা (১৯৯৭ সাল)
বাংলাদেশের ছড়া (২০০১ সাল)
লেখক কোষ : চট্টগ্রাম (২০০২ সাল)
শিল্পী কোষ : চট্টগ্রাম (২০০৩ সাল)
এম আর আমিন স্মারক গ্রন্থ (২০০৪ সাল)
মাহবুবুল হক সম্মাননা স্মারক (২০০৮ সাল)
ও আমার কিশোরবেলা (২০১৩ সাল)
বাংলাদেশের কিশোরকবিতা : আলোর ঝলক (২০১৬ সাল)
[পুরস্কার ও সম্মাননা]
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (২০১৬ সাল)
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সেরা লেখক পুরস্কার ২০১৬
শিল্পকলা একাডেমি পদক ২০১৬
অগ্রণী ব্যাংক শিশু একাডেমী শিশুসাহিত্য পুরস্কার, (২০১২ সাল)
ছোটদের কাগজ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ১৯৯৮
পালক এ্যাওয়ার্ড ১৯৯৮
কিডস শিশুসাহিত্য পুরস্কার ১৯৯৯
অর্চি শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০০০
বাংলা সাহিত্য পদক ২০০৫
বোধন আবৃত্তি স্কুল সম্মাননা ২০০৬
বাপী শাহরিয়ার স্মৃতি পুরস্কার ২০০৬
এম নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার (দুইবার)
বাংলার মাটি বাংলার জল পদক
গ্রেটার চিটাগং রোটারি ক্লাব সম্মাননা ২০১৫
অবসর সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭
প্রতীকী ছড়া সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭
আবু হাসান শাহীন স্মৃতি পুরস্কার ২০১৮
ঝুমঝুমি শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৮
জেসমিন ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড ২০১৯
পদ্মবীণা ফাউন্ডেশন পদক ২০২১
প্রভৃতি।
[সাংগঠনিক তৎপরতা]
বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় ছড়া উৎসব (১৯৮৯ সাল), প্রথম কিশোরকবিতা সম্মেলন (১৯৮৯ সাল), প্রথম শিশুসাহিত্য উৎসব (২০০৭ সাল) ও প্রথম স্বাধীনতার বইমেলার (২০০০ সাল)-এর অন্যতম উদ্যোক্তা তিনি। সাহিত্য সংস্কৃতি ইতিহাস ঐতিহ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম একাডেমি ও বাংলাদেশ শিশুসাহিত্য একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক। ৪ বছর ধরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
রাশেদ রউফকে গ্রন্থ উৎসর্গ করেছেন যে সব বরেণ্য সাহিত্যিক বৃন্দ –
কবি আসাদ চৌধুরী, সুব্রত বড়ুয়া, বিপ্রদাশ বড়ুয়া, সুকুমার বড়ুয়া, মাহবুবুল হক, রফিকুল হক দাদু ভাই, আলী ইমাম, আখতার হুসেন, লুৎফর রহমান রিটনআমীরুল ইসলাম, সুজন বড়ুয়া, রফিকুর রশিদ, আহসান মালেক, আশরাফুল আলম পিন্টু, আলম তালুকদার, ড. আনোয়ারা আলম, মুস্তাফা মাসুদ, তহুরীন সবুর ডালিয়া, রহীম শাহ, মোস্তাফা হুসাইন, দীপু মাহমুদ, নেছার আহমদ, সীরু বাঙ্গালী, হাসনাত আমজাদ, স ম শামসুল আলম, দীপক বড়ুয়া, উৎপল কান্তি বড়ুয়া, এমরান চৌধুরী, শিবু কান্তি দাশ, মোস্তাক রায়হান, খালেদ শরফুদ্দিন, আকতার হোসাইন, আজিজ রহমান, অমিত বড়ুয়া, ফরিদা ইয়াসমিন সুমি, আবুল কালাম বেলাল, অরুণ শীল, মালেক মাহমুদ, রমজান আলী মামুন, জুবাইর জসীম, সুসেন কান্তি দাশ, ওবাইদুল সমীর, ফরিদা ইয়াসমিন সুমি, রহমান হাবীব, ইসমাইল জসীম, মিজানুর রহমান শামীম, আকাশ আহমেদ, আমানউদ্দীন আব্দুল্লাহ, আলী আসকর, শামীম খান যুবরাজ, আখতারুল ইসলাম, আব্দুল মতিন রিপন, লিটন কুমার চৌধুরী, কোহিনুর আকতার, চন্দ্র শীলা ছন্দা, গোফরান উদ্দীন টিটু, রুনা তাসমিন, সৈয়দা সেলিমা আকতার, বাসুদেব খস্তগীত, আনোয়ারুল হক নুরী, সনজিত দে, নানটু কুমার দাশ, সাইমন নজরুল, কানিজ ফাতেমা, এয়াকুব সৈয়দ, মিলন বণিক, সাইদুল আরেফিন, জাকির হোসেন কামাল, নজরুল জাহান, ডা. কল্যাণ বড়ুয়া, কাঞ্চনা চক্রবর্তী, হুমায়ুন আবিদ, কাজী মোহাম্মদ শাহজাহান, সাজিব চৌধুরী প্রমুখ।
————————————————————
[তথ্যসূত্র সংগৃহীত ও সম্পাদিত। উইকিপিডিয়া থেকে –
“বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেলেন রাশেদ রউফ”। মোহাম্মদ আব্দুল মালেক। দৈনিক আজাদী। ২৭শে জানুয়ারী ২০১৭ সালে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪শে জানুয়ারি ২০১৭ সাল।