Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রক্ষক না ভক্ষক || Arindam Deb

রক্ষক না ভক্ষক || Arindam Deb

রক্ষক না ভক্ষক

বিলুর ছোটবেলা থেকেই ভয় যে তার খাটের নিচে বোধহয় কেউ লুকিয়ে আছে।

এই ভয়, বাড়তে বাড়তে শেষে মারাত্মক আকার নিলো তার পঞ্চাশ বছর বয়েসে ।

অবস্থার উত্তরোত্তর অবনতিতে, বাড়ির ও পাড়ার লোকের প্ররোচনাতে সে এক মনোবিদের কাছে যেতে বাধ্য হলো ।
ডাক্তারকে সে বললো –
“আমার একটা সমস্যা আছে। যখনই শুতে যাই, আমার মনে হয় কেউ যেন আমার খাটের তলায় লুকিয়ে রয়েছে। ভয়ে ঘুম হয় না। মনে হয় আমি পাগল হয়ে যাব।”

মনোবিদ বললেন “চিন্তার কোনও কারণ নেই, সব ঠিক হয়ে যাবে। শুধু একটু সময় লাগবে।”

“কত সময় লাগবে”?

“তা ধরুন বছর খানেক। আপনি সপ্তাহে তিনদিন করে আমাদের কাছে আসবেন, আমরা শুধু কথা বলব।
আমি ও আমার স্ত্রী একসাথে সাইকিয়াট্রি ও সাইকোঅ্যানালিসিসের দ্বারা ধীরে ধীরে আপনাকে কাউন্সেলিং তথা চিকিৎসার এক চমৎকার কম্বো প্যাকেজে, এমন সুস্থ করে দেবো, দেখবেন আপনার ভয় হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে।”

“আপনার ফি কত?”

“২০০০/- টাকা প্রতি সেশন আমার এবং আমার স্ত্রীর মাত্র ১০০০/- ।”

মাথা চুলকে টুলকে বিলু বললে – ” ডাক্তারবাবু, একটু কমে হয়না? “

” দেখুন, এটা একটা ইনস্টিটিউট! আলু পটলের বাজার নয়! “

খ্যাঁক করে জবাব দিলেন সেই প্রথিতযশা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক!

” তবে হ্যাঁ! আপনাকে একটা কথা বলে রাখি, এটা আপনার মনের মারাত্মক এক বিকারাত্মক ভ্রম, এর সঠিক চিকিৎসা না করালে ফল মারাত্মক হবে – তখন আপনার চাকরি বাকরি, আপনার বিবাহিত জীবন,আত্মীয় পরিজন ও শ্বশুরবাড়িতল আপনার মানহানি হবে এবং তাতে আপনার সরল কোমল মন, মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তখন উন্মাদনায় বিভ্রান্ত হলে, পৃথিবীর কোথাও কিন্তু এ রোগের উপশম আদৌ হবেনা এটা বলে রেখে এক তিরিশ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ডাক্তার হিসেবে জানিয়ে রাখা আমার কর্তব্য! “

বিলু ভয়ে, ঘেমে নেয়ে,নমস্কার জানিয়ে, রিসেপশনে,পরের সপ্তাহের স্পেশাল বুকিং নিয়ে বাড়ি ফিরে এলো।

কিন্তু তারপরে ওই ক্লিনিক ইনস্টিটিউটের পথের ছায়াও মাড়ালোনা, আর অ্যাপয়েন্টমেন্ট ক্যানসেলও করলোনা, ডাক্তার ও ডাক্তারগিন্নির একদিনের স্লট একেবারে নষ্ট করে দিলো।

এর ছয় মাস পরে একদিন রাস্তায় বিলুর সঙ্গে সেই মনোরোগবিশেষজ্ঞর হঠাৎ দেখা।

“কি ব্যাপার, আপনি আর এলেন না কেন?আচ্ছা মানুষ তো আপনি! অামার স্লট নষ্ট করালেন আপনি! আর কখনো কিন্তু আমাদের সহযোগিতা আশা করবেননা, সরি! “

বিলু বলল ” না না, তার সত্যিই আর প্রয়োজন পড়বেনা ডাক্তারবাবু!
অাসলে প্রতি দর্শনে ৩০০০/- টাকাটা অনেক বেশী মনে হলো। আর বছরের শেষে সেটা লাখ টাকায় দাঁড়িয়ে যেত। আমার এক বন্ধু, মাত্র একটা Egg Roll পারিশ্রমিক নিয়ে আমার ভয় সারিয়ে দিয়েছে, জানেন? ।”

সেই সুখ্যাত সাইকায়াট্রিস্ট একটু ক্ষুন্ন তথা ব্যঙ্গের সাথেই শ্লেষ সহ বললেন, “আচ্ছা ? তা কিভাবে সারালেন তিনি আপনার রোগ, তিনি কতবড় বোদ্ধা ডাক্তার সেটা একটু বুঝে নিই! ?”

” সহজ রাস্তা। পুরো Egg Roll টা শেষ করে ও আমাকে বলল – দূর গাধা, এটা ওদের ব্যবসা, আগে লোককে ভয় দেখায় যাতে তুই আরো মানসিক সাম্য হারাস!তারপরে ওষুধ দিয়ে এমন করে, যে সারাজীবন ওর চেম্বার ও বাড়ির আশেপাশেই হাঁটাপেটা করতে হবে! ওদের চক্করে পড়িসনা, ভালো কথা বলছি শোন!
তুই এক কাজ কর, তোর খাটটা বেচে দিয়ে মেঝেতে তোষক পেতে শুয়ে পড়, তারপরে দেখ! “

” তা ডাক্তারবাবু , আপনাকে আমার সব মিলিয়ে প্রায় লাখের ওপরে দিতে হতো, সেখানে উল্টে,আমার দামী বার্মা টীক কাঠের পুরোনো।খাট বেচে, পঞ্চাশ হাজার টাকা পেয়ে আমার ছোট্ট ব্যাবসাটা বেশ ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুললাম। দারুণ আছি, ওই বিটকেল বুজুই কিন্তু আমাকে এ বুদ্ধিটা বাতলেছিলো, ওকে আমার কোম্পানির চিফ্ অ্যাডভাইসর করে দিয়েছি! “

নীতিশিক্ষা:

নিকুচি করেছে ব্যবসাদার ডাক্তারদের!

আগে বন্ধুর সঙ্গে কথা বলুন ।
বন্ধুদের কাছে সব সমস্যারই সহজ সমাধান আছে। দেখা হওয়া, কথা কওয়া জরুরী।আর হ্যাঁ, অসৎ ডাক্তারের কাছে যাবার আগে বুজু মাস্টারের বুদ্ধি নিতে ভুলবেন না কিন্তু! তার ফি? বড়জোট তিরিশ টাকার ওই একটা এগ রোল!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *