প্রতি বছর ১২ই জানুয়ারি ভারতে জাতীয় যুব দিবস পালিত হয়। কারণ স্বামীজি যুব সম্প্রদায়ের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভর করতেন।
তিনি জানতেন দেশ গঠনের একমাত্র হাতিয়ার
দেশের যুবশক্তি।তিনি প্রতিটি ভারতবাসীকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।
তিনি বলতেন,মানুষ হবে স্বীয় শৌর্যেবীর্যে বলীয়ান।সকলপ্রকার কুসংস্কার থেকে মুক্ত,
অস্পৃশ্যতা ও জাতপাত ভেদবুদ্ধিহীন উদারচেতা
মানুষই হবে প্রকৃত মানুষ। তাঁর মধ্যেই থাকবে
স্বদেশপ্রেম,বীরত্ব ও তেজস্বীতা।
যুগের প্রয়োজনেই তার আবির্ভাব ঘটেছিল।
তাই তাঁর জন্মদিনটিকেই ১৯৮৫ সাল থেকেই যুব দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
তিনি বলতেন,
“বহুরূপে সম্মুখে তোমায় ছাড়ি কোথা খুঁজিছ
ঈশ্বর।
জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে
ঈশ্বর।”
জীবকে ভালবাসা আর মানুষকে ভালবাসাই
ভগবানের সেবা করা।আর্ত পীড়িত ক্ষুধার্ত
সকলের ভিতরেই ঈশ্বর রয়েছেন।অসহায়
মানুষকে সেবা করলেই ঈশ্বরকে পূজা করা হয়।
তাঁর কথায়,
“আত্মনো মোক্ষার্থং যোগাদ্বিতীয়।”
অর্থাৎ নিজের মুক্তি এবং জগতের মঙ্গলের জন্য
কাজ করে যাও।এক অর্থে শিবজ্ঞানে জীবসেবা।
দীন দুঃখী মানুষদের জন্য কাজ করা।এই মহান
উদ্দেশ্য সাধনের ব্রতীই ছিল স্বামীজির কর্ম।
তিনি ছিলেন একাধারে দেশপ্রেমিক এবং মহান
যুগাবতার।তিনি চেয়েছিলেন,দেশবাসীকে
ঔপনিবেশিক শৃঙ্খলমুক্ত করতে।কিন্তু আজও
একবিংশ শতাব্দী পেরিয়ে মহাসংকটের মুখে
সমগ্র দেশবাসী। বিপন্ন দেশের সমাজে মানুষ
বিসর্জন দিয়েছে তার মনুষ্যত্ব ও মূল্যবোধ।
ধর্মীয় ও স্বার্থপরতার হানাহানি রক্তস্রোতে
বিপর্যস্ত সমগ্রদেশ।যুবসমাজ দিশেহারা ও
দিকভ্রান্ত। ধর্ম, প্রাদেশিকতা,জাতপাত বিভ্রান্ত
করে চলেছে যুবসমাজকে।তাই একসময় তিনি
বলেছিলেন,– হে বীরহৃদয় যুবকগণ তোমরা
বিশ্বাস কর যে,তোমরা বড় বড় কাজ করবার
জন্য জন্মেছ।ওঠ জাগো আর ঘুমিও না।সকল
অভাব,সকল দুঃখ ঘোচাবার শক্তি তোমাদের
ভিতরেই আছে।বিশ্বাসেই সেই শক্তি জেগে উঠবে।তিনি বুঝেছিলেন চরিত্র গঠনের জন্য ধীর ও অবিচলিত হতে হবে।তবেই মানব জাতি সত্য
উপলব্ধি করে ভবিষ্যৎ জীবনের উপর তার প্রভাব বিস্তার করতে পারবে।
সুখের বিষয় বলেছিলেন,সুখ দর্শন সহজ নয়।
আমাদের জীবনের সবচেয়ে সুখকর মুহূর্ত
সেইগুলো যখন আমরা নিজেদের একেবারে
ভুলে যাই।
স্বামীজি বলেছিলেন,মানুষের প্রকৃতির পরিবর্তন
না হলে কোনমতেই দুঃখ দূর করা যাবে না।
জগতের দুঃখ সমস্যার একমাত্র সমাধান
মানবজাতিকে শুদ্ধ ও পবিত্র করা।জগতে যা কিছু দুঃখ কষ্ট অশুভ দেখতে পাই সবই অজ্ঞান
বা অবিদ্যা থেকে প্রসূত। মানুষকে জ্ঞানের আলো দাও। সকল মানুষ পবিত্র আধ্যাত্মিক
বলসম্পন্ন ও শিক্ষিত হলে জগৎ থেকে দুঃখ
নিবৃত্ত হবে।দেশের প্রত্যেকটি গৃহকে দাতব্য
আশ্রমে পরিণত করে মানুষের স্বভাব বদলাতে
পারলে দুঃখ কষ্ট থাকবে না।তাই সাহসী হয়ে
এগিয়ে যেতে হবে দেশবাসীর জন্য।তাদের
সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করলে সমগ্রজাতিকে সাথে পাওয়া যাবে।বিপদে পড়লে
নিজেকেই মুক্তির পথ খুঁজে নিতে হবে।সংযত
মন ও সুনিয়ন্ত্রিত মন আমাদের রক্ষা করে
সঠিক পথ দেখাবে।তিনি বলেছেন আমরা যেন
নাম,যশ,প্রভুত্ব, স্পৃহা বিসর্জন দিয়ে কর্মে ব্রতী
হই।আমরা যেন কাম ক্রোধ ও লোভের বন্ধন
হতে দূরে থাকি।তবেই সত্যবস্ত লাভ সম্ভব।