মাদুরে সে শুয়ে, হাত তার পায় মাটির আদর,
আড়মোড়া ভেঙে দ্যাখে-
তাকে ঘিরে জাগে চারা গাছ কিছু ফুল ঝুঁকে আছে
ওষ্ঠ ও গালে, স্তনের ওপর,
যেন চুমো খেতে চায়।
স্বপ্নে সে নয় বিভোর এখন; একটু আগেই
নিদ্রার হাত গুটিয়ে নিয়েছে জাল।
কী করে যে এই খেলার ঘরের মাটি ফুড়ে জাগে
পুষ্পল এক চকিত বাহার, ভাবে বিস্মিত-
এ কোন তেলেসমাত?
চোখ কচলিয়ে শাড়ি সামলায়; ঘর দুয়োরের
আনাচেকানাচে সূর্য বিলায় মুঠো থেকে তার
সোনালি অনুগ্রহ।
ছুটি বাজাচ্ছে বাঁশি আশেপাশে, বাঁশির আওয়াজ
খুপরিটা ছেড়ে, মহল্লা ছেড়ে
ছড়িয়ে পড়েছে তামাম শহরে আজ।
ছুটি, আজ ওর মরদের ছুটি। পাশ ফিরে দ্যাখে
কেমন অঘোরে ঘুমায় লোকটা,
স্বপ্নের মায়া লেগেছে শরীরে,
নিথর ঘুমায় গাছের গুঁড়ির মতো।
আজ মে দিবস। দুনিয়ার যত মজদুর আজ
পোহায় ছুটির ছায়া।
এদিনের মানে জানে না সে, তবে
আবছা কাহিনী মরদের কাছে শোনা।
মানে যাই হোক, এটুকু সে জানে
ঘরের মানুষ আজকে যাবে না কঠোর কারখানায়।
কিন্তু ঘরের মানুষের মন, আছে তার জানা
সহজে টেকে না ঘরে।
বেলা না চড়তে মিশে যায় সেও দোস্তের ভিড়ে,
মদে চুর হয়ে টলতে টলতে ফেরে রাত্তিরে
আপন বিবরে, নামে অবশ্য গালিগালাজের ঢল।
এক ঝটকায় ঘরনীকে তার দ্যায় সে সরিয়ে
কখনো-বা ফের কোমর জড়িয়ে টেনে নেয়,
ভুরভুরে মুখ চেপে ধরে মুখে,
যেমন ভালুক মৌচাকে দেয় হানা
নারী সত্তায় লাগে আচমকা
জব্বর এক নেশার মদির দাগ।
ওর গায়ে নেই কাঁচা-সোনা রঙ, শ্যামলাই বলে
পাড়া-পড়শিরা, নাকও নয় বাঁশি,
কিন্তু ঘরের মানুষ বলে-
‘কসম খোদার তোর চোখ জোড়া বড় গজবের,
নশিলা, জংলা বড়।’
ঘরের ভেতরে জোয়ান মরদ অঘোরে ঘুমায়,
হাত তার যেন কোণে পড়ে থাকা
মহররমের নিশান কোনো।
এই হাত তার সকাল-সন্ধ্যা মেশিন চালায়,
এই হাত তার মিছিলে মিছিলে আকশচুম্বী,
এই হাত তার বউয়ের পাছায় আদর ঝরায়,
কড়া এ হাতের সাহসী আঙুল
ভবিষ্যতের জাবদা খাতায় টিপসই দ্যায়,
দূরাগত কোনো রহস্যময় সুনীল পক্ষী
এই হাতে তার চঞ্চু ঘষে।
ঘরের ভেতরে জোয়ান মরদ অঘোরে ঘুমায়।
মজুরের বউ চুলে গুঁজে নেয়
অখ্যাত ফুল, জানা আছে আর
শত তালিমার চাদরের মতো গরিবের সংসার।
তবু সে আড়ালে সাদামাটাভাবে
করে সাজগোজ, আলতা লাগায় পায়ে।
ভাঙা আয়নার নিজস্ব মুখ? এ কোন সুদূর
হাবেলির বিবি এসছে গরিব-মরবার ঘরে।
কোথায় বেদাগ চকমকে টিপ?
কোথায় কাজললতা?
চাঁদের চমক, হাওয়ার ঝলক পাওয়ার জন্যে
বেরিয়ে সে আসে কৃপণ উঠোনে,
ভাসে জ্যোৎস্নার বানে।
মজুরের বউ করে অনুভব নিজের ভেতরে
জরায়ুর লতাগুল্মে কী যেন নড়ছে প্রাণের মতো।
মে দিন এখন জাগর জ্যোৎস্না,
মে দিন এখন তন্বী শরীর, সে নিজের হয়
আগামী কোন প্রসূত-বিভোর মে দিনের গীতিকবিতা।