Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

অষ্টম পরিচ্ছেদ

মুচিরামবাবু-এখন তিনি একটা ভারি রকম বাবু, এখন তাঁহাকে শুধু মুচিরাম বলা যাইতে পারে না-মুচিরামবাবু পেস্কারি পাইয়া বড় ফাঁফরে পড়িলেন। বিদ্যাবুদ্ধিতে পেস্কারি পর্য্যন্ত কুলায় না-কাজ চলে কি প্রকারে? “ভাগ্যবানের বোঝা ভগবানে বয়”-মুচিরামবাবুর বোঝা বাহিত হইল। ভজগোবিন্দ চক্রবর্ত্তী নামে একজন তাইদনবীশ সেই কালেক্টরী আপিসে থাকে। ভজগোবিন্দ বার বৎসর তাইদনবীশ আছে। সে বুদ্ধিমান্, কর্ম্্ঠ, কালেক্টরীর সকল কর্ম্ম কাজ বার বৎসর ধরিয়া শিখিয়াছে। কিন্তু মুরুব্বি নাই-ভাগ্য নাই-এ পর্য্যন্ত কিছু হয় নাই। তাহার বাসাখরচ চলে না। মুচিরাম তাহাকে অবলম্বন করিলেন। আপনার বাসায় লইয়া গিয়া রাখিলেন। ভজগোবিন্দ মুচিরামের বাসায় থাকে, খায় পরে, গৃহকর্ম্মের সহায়তা করে, রাত্রিকালে বাবুর ঘরে বাহিরে মোসাহেবী করে, এবং আপিসের সমস্ত কাজ কর্ম্ম করিয়া দেয়। মুচিরাম তাহাকে টাকাটা সিকেটা দেওয়াইয়া দেন। ভজগোবিন্দের সাহায্যে মুচিরামের কর্ম্ম কাজ রেলগাড়ির মত গড় গড় করিয়া চলিল। হোম সাহেব অনেক প্রশংসা করিতেন। বিশেষ মুচিরাম বিশুদ্ধ প্রণালীতে সেলাম করিত, এবং “মাই লর্ড” এবং “ইওর আনর” কিছুতেই ছাড়িত না।

মুচিরামবাবুর উপার্জ্জনের আর সীমা রহিল না। হাতে অনেক টাকা জমিয়া গেল। ভজগোবিন্দ বলিল, “টাকা ফেলিয়া রাখিবার প্রয়োজন নাই-তালুক মুলুক করুন |” মুচিরাম সম্মত হইলেন, কিন্তু যে যে জেলায় কর্ম্ম করে, সে জেলায় বিষয় খরিদ করা নিষেধ। ভজগোবিন্দ বলিল যে, বেনামীতে কিনুন। কাহার বেনামীতে? ভজগোবিন্দের ইচ্ছা, ভজগোবিন্দের নামেই বিষয় খরিদ হয়, কিন্তু সাহস করিয়া বলিতে পারিল না। এ দিকে মুচিরাম কাহারও বাসায় গল্প শুনিয়া আসিলেন যে, স্ত্রীর অপেক্ষা আত্মীয় কেহ নাই। কথাটায় তাঁহার সম্পূর্ণ বিশ্বাস হইল কি না জানি না-কিন্তু মনে মনে ভাবিলেন যে, স্ত্রীর নামে বিষয় করাই বেনামীর শ্রেষ্ঠ। এই এখনকার দেবত্র। আগে লোকে বিষয় করিত ঠাকুরের নামে-এখন বিষয় করিতে হয় ঠাকুরুণের নামে। উভয় স্থলেই বিষয়কর্ত্তা “সেবাইত” মাত্র-পরম-ভক্ত-পাদপদ্মে বিক্রীত। এইরূপ রাধাকান্ত জিউর স্থানে রাধামণি, শ্যামসুন্দরের স্থানে শ্যামসুন্দরী দেবী মালিক হওয়া ভাল হইয়াছে, কি মন্দ হইয়াছে, জানি না-তবে একটা কথা বুঝা যায়। বিষয় হস্তান্তরের কিছু সুবিধা হইয়াছে। দধি ভোজনের পক্ষে নেপোর খুব সুযোগ হইয়াছে।

স্ত্রীর বেনামীতে বিষয় করা শ্রেয়ঃ, ইহা মুচিরাম বুঝিলেন, কিন্তু এই সঙ্কল্পে একটা সামান্য রকম বিঘ্ন উপস্থিত হইল-মুচিরামের স্ত্রী নাই। এ পর্য্যন্ত তাঁহার বিবাহ করা হয় নাই-অনুকল্পের অভাব ছিল না। কিন্তু এ স্থলে অনুকল্প চলিবে কি না, তদ্বিষয়ে পেস্কার মহাশয় কিছু সন্দিহান হইলেন। ভজগোবিন্দের সঙ্গে কিছু বিচার হইল–কিন্তু ভজগোবিন্দ একপ্রকার বুঝাইয়া দিল যে এ স্থলে অনুকল্প চলিবে না। অতএব মুচিরাম দারগ্রহণে কৃতসঙ্কল্প হইলেন। কোন্ কুল পবিত্র করিবেন, তাহার অন্বেষণ করিতেছিলেন, এমন সময় ভজগোবিন্দ জানাইল যে, তাহার একটি অবিবাহিতা ভগিনী আছে-ভজগোবিন্দের পিতৃকূল উজ্জ্বল করায় ক্ষতি নাই। অতএব মুচিরাম একদিন সন্ধ্যার পর শুভ লগ্নে মাথার টোপর দিয়া, হাতে সুতা বাঁধিয়া, এবং পট্টবস্ত্র পরিধান করিয়া ভদ্রকালী নাম্নী ভজগোবিন্দের সহোদরাকে সৌভাগ্যশালিনী করিলেন। তাহার পর হইতে ভদ্রকালীর নামে অনেক জমিদারী পত্তনি ছলে, বলে, কলে, কৌশলে খরিদ হইতে লাগিল। ভদ্রকালী হঠাৎ জেলার মধ্যে একজন প্রধানা ভূম্যধিকারিণী হইয়া দাঁড়াইলেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress