মুখোশের আড়ালে
” এই বাড়িতে থাকতে হলে আমার দিদিদের কথা মেনে চলতে হবে “…. প্রশান্তর মুখে এই রকম কথা শুনে ফাল্গুনী অবাক হয়ে গেল !
প্রশান্ত কি বলছে এসব……!
সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে একটু সামলিয়ে নিয়ে ফাল্গুনী জবাব দেয়…… “অসম্ভব! “
কই বিয়ের আগে তো এই রকম কোনো কথা হয়নি! আমার পক্ষে সম্ভব নয় তোমার ঐ রকম অদ্ভুত প্রস্তাব মেনে নেওয়া।
তাই এই বাড়িতে থেকে আমি তোমাকে ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই করতে পারব না। আমি দেখব তুমি অন্যের পদলেহন করছো আর আমাকেও বাধ্য করছো ঐ একই কাজ করতে!
এটা আমার পক্ষে অসম্ভব।
সুতরাং আমি তাতানকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাব তাতানকে ঠিক একাই বড় করতে পারবো আমি। তোমার কোনো সাহায্য আমার লাগবে না। তুমি তোমার দিদিদের নিয়েই থাক।
কথা গুলো শুনে একটু থমকালো প্রশান্ত ; ও ভাবতেই পারেনি ফাল্গুনী এতটা মনের জোর নিয়ে কথা গুলো বলতে পারে।
গরীব ঘরের মেয়ে ফাল্গুনী।
ছোটবেলা থেকেই অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করে বড় হয়েছে সে।
বিয়েটা হয়েছে সম্বন্ধ করেই।
চোখে অনেক স্বপ্ন নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে এসেছিল ও।
খুব সহজ সরল মেয়ে ও, একটু চঞ্চল প্রকৃতিরও। তাই এই বাড়ির মানুষদের মুখোশের আড়ালে মুখগুলো চিনতে একটু দেরি করে ফেলেছে।
সাত মাস হয়েছে ফাল্গুনীর কোল আলো করে এসেছে তাতান।তাতানের জন্মের দু’মাস পরেই ফাল্গুনীর বাবা মারা যান। আর তারপর থেকেই একটু একটু করে এরা এদের মুখোশ খুলতে শুরু করে দেয়।
হঠাৎ করেই ফাল্গুনীর পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যেতে থাকে! ” এ আমি কি দেখছি ! কাকে ভরসা করেছি আমি এতদিন !”
মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল, স্বপ্নগুলো এক লহমায় ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।
তবু ওকে শক্ত হতে হবে, ভেঙে পড়লে চলবে না।ও বুঝে গেছে এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে ওকে একাই লড়াই করে যেতে হবে আর তাতানকে একটা সুস্থ সুন্দর জীবন দেওয়ার লড়াই করে যেতে হবে।
এ লড়াই বেঁচে থাকার লড়াই, অধিকারের লড়াই, আত্মসম্মানের লড়াই থেমে গেলে চলবে না।
সব কিছু আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। ওকে প্রমান করে দেখাতে হবে ও কারো থেকে কোনো অংশে কম নয়।