Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মানুষের মৃত্যু হলে || Jibanananda Das

মানুষের মৃত্যু হলে || Jibanananda Das

মানুষের মৃত্যু হলে তবুও মানব
থেকে যায়; অতীতের থেকে উঠে আজকের মানুষের কাছে
প্রথমত চেতনার পরিমাপ নিতে আসে।

আজকের আগে যেই জীবনের ভিড় জমেছিল
তারা মরে গেছে;
অন্ধকারে হারায়েছে;
তবু তারা আজকের আলর ভেতরে
সঞ্চারিত হয়ে উঠে আজকের মানুষের সুরে
যখন প্রেমের কথা বলে
অথবা জ্ঞানের কথা—
অনন্ত যাত্রার কথা মনে হয় সে-সময়
দীপংকর শ্ৰীজ্ঞানের;
চলেছে—চলেছে—

একদিন বুদ্ধকে সে চেয়েছিল বলে ভেবেছিল।
একদিন ধূসর পাতায় যেই জ্ঞান থাকে–তাকে।
একদিন নগরীর ঘুরোনো সিঁড়ির পথ বেয়ে
বিজ্ঞানে প্রবীণ হয়ে—তবু—কেন অম্বাপালীকে
চেয়েছিল প্ৰণয়ে নিবিড় হয়ে উঠে।

চেয়েছিল—
পেয়েছিল শ্ৰীমতীকে কম্প্র প্রাসাদে :
সেই সিঁড়ি ঘুরে প্রায় নীলিমার গায়ে গিয়ে লাগে;
সিঁড়ি উদ্ভাসিত করে রোদ;
সিঁড়ি ধরে ওপরে ওঠার পথে আরেকরকম
বাতাস ও আলোকের আসাযাওয়া স্থির ক’রে কী অসাধারণ
প্রেমের প্রয়াণ? তবু–এই শেষ অনিমেষ পথে
দেখেছে সে কোনো-এক মহীয়সী আর তার শিশু;
দু-জনেই মৃত।
অথবা কেউ কি নেই।

ওইখানে কেউ নেই।
মৃত্যু আজ নারীনর্দমার ক্বাথে;
অন্তহীন শিশুফুটপাতে;
আর সেই শিশুদের জনিতার কিউক্লীবতায়।

সকল রৌদ্রের মতো ব্যাপ্ত আশা যদি
গোলকধাঁধায় ঘুরে আবার প্রথম স্থানে ফিরে আসে
শ্ৰীজ্ঞান কী তবে চেয়েছিল?

সূর্য যদি কেবলই দিনের জন্ম দিয়ে যায়,
রাত্রি যদি শুধু নক্ষত্রের,
মানুষ কেবলই যদি সমাজের জন্ম দেয়,
সমাজ অস্পষ্ট বিপ্লবের,
বিপ্লব নির্মম আবেশের,
তা হলে শ্ৰীজ্ঞান কিছু চেয়েছিল?

নগরীর সিঁড়ি প্রায় নীলিমার গায়ে লেগে আছে;
অথচ নগরী মৃত।
সে সিঁড়ির আশ্চর্য নির্জন
দিগন্তরে এক মহীয়সী,
আর তার শিশু;
তবু কেউ নেই।

ঢের ভারতীয় কাল–পৃথিবীর আয়ু—শেষ ক’রে
জীবনের বঙ্গাব্দ পর্বের প্রান্তে ঠেকে,
পুনরুদ্‌যাপনের মতন আরেকবার এই
তেরোশো পঞ্চাশ সাল থেকে শুরু ক’রে ঢের দিন
আমারও হৃদয় এই সব কথা ভেবে
সৃষ্টির উৎস আর উৎসারিত মানুষকে তবু
ধন্যবাদ দিয়ে যায়।
কেননা সৃষ্টির নিহিত ছলনা ছেলে-ভুলোবার মতো তবু নয়;
মানুষও ঘুমের আগে কথা ভেবে সব সমাধান
ক’রে নিতে চায়;
কথা ভেবে হৃদয় শুকায় জেনে কাজ করে।

সময় এখনো শাদা জলের বদলে বোনভায়ের
নিয়ত বিপন্ন রক্ত রোজ
মানুষকে দিয়ে যায়;
ফসলের পরিবর্তে মানুষের শরীরে মানুষ
গোলাবাড়ি উঁচু ক’রে রেখে নিয়তির
অন্ধকারে অমানব;
তবুও গ্লানির মতো মানুষের মনের ভিতরে
এইসব জেগে থাকে ব’লে
শতকের আয়ু—আধো আয়ু—আজ ফুরিয়ে গেলেও এই শতাব্দীকে তারা
কঠিন নিস্পৃহভাবে আলোচনা ক’রে
আশায় উজ্জ্বল রাখে; না হলে এ ছাড়া
কোথাও অন্য কোন প্রীতি নেই।
মানুষের মৃত্যু হলে তবুও মানব
থেকে যায়; অতীতের থেকে উঠে আজকের মানুষের কাছে
আরো ভালো—আরো স্থির দিকনির্ণয়ের মতো চেতনার
পরিমাপে নিয়ন্ত্রিত কাজ
কতদূর অগ্রসর হয়ে গেল জেনে নিতে আসে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *