মানুষের বিশ্বাস – তুলসী চারার মেলা
অষ্টাদশ শতকের বাকসিদ্ধ বৈষ্ণব সাধক গোকুলানন্দ বাবাজি পটাশপুর সবং ও আশেপাশের এলাকায় বৈষ্ণব আচার্য রূপে বন্দিত ছিলেন। কথিত যে পৌষ সংক্রান্তির মধ্যরাতে কেলেঘাই নদীর মাঝে নিজের যোগ মঞ্চে তিনি সজ্ঞানে দেহত্যাগ করেন। দেহত্যাগের আগেই তার প্রিয় শিষ্য বিপ্র প্রসাদ ভূঁইয়াকে তার যোগ মঞ্চে তাকে সমাহিত করার আদেশ দিয়ে যান। তিনি বলেছিলেন পৌষ সংক্রান্তির মধ্যরাতের পর যে ভক্ত নদীতে স্নান করে তার যোগ মঞ্চে তুলসী চারার গোড়ায় নদীর তিনমুঠো মাটি দেবে তার সব মনস্কামনা পূর্ণ হবে। সেই থেকেই পৌষ সংক্রান্তির দিন তার সমাধি ভূমিতে (গোকুলপুরে) তুলসী চারার মেলা বসে! অগণিত ভক্ত শীতের ভোর রাত থেকে কেলেঘাই নদীতে ডুব দিয়ে মাটি তুলে তুলসী মঞ্চে দিয়ে পুজো নিবেদন করে! মাটি জমতে জমতে জায়গাটা একটা ছোটো টিলার আকার ধারণ করেছে! স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে তখনকার দিনে সমাধিভূমি সংলগ্ন এলাকা জঙ্গলাকীর্ণ ছিল! হায়না বাঘ সাপ ভিমরুল ইত্যাদির প্রচুর উপদ্রব ছিল। জন্তু-জানোয়ারের ভয় উপেক্ষা করেই দলে দলে মানুষ পৌষ সংক্রান্তির দিন এখানে ভিড় করত। জনবসতি গড়ে ওঠার পর এখন আর সেসবের ভয় নেই।
মেলার উৎপত্তি সম্বন্ধে স্থানীয় বয়োবৃদ্ধরা বলেন যে গোকুলানন্দের শিষ্যরা সমাধিতে মাটি দেওয়ার পর নদীতীরে সংকীর্তন করতেন ও পঙক্তি ভোজনে অংশ নিতেন ।সেই থেকে এই মেলার উৎপত্তি।
বৈষ্ণব আচার্য গোকুলানন্দ জন্মস্থান কেলেঘাই এর পারে সবং এর কোলন্দা গ্রামে। গোকুলপুর তার পিতৃভূমি। তুলসী চারার মেলা দুটি খণ্ডে বসে—- পটাশপুর এ গোকুলানন্দ নামাঙ্কিত গোকুলপুরের মেলা বা তুলসী চারার যাত এবং সবং এ কোলন্দার মেলা বা ভূঁইয়ার যাত। দুটি মিলিয়েই তুলসী চারার মেলা।
এই মেলার বিশেষত্ব হলো তুলো। নানা ধরনের তুলো কেনাবেচার জন্য বিখ্যাত এই মেলা। মেলার বিশাল অংশ জুড়ে বসে তুলোর দোকান। বৈষ্ণবদের জন্য এই মেলায় খোল বা মৃদঙ্গ বিক্রি হয়। এছাড়া সবং পটাশপুর নারায়ণগড়ের মাদুর ইত্যাদি নানান পসরা সাজানো থাকে মেলা।
মানুষের বিশ্বাস এভাবেই প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত হয়। অষ্টাদশ শতকের বৈষ্ণব আচার্যের উচ্চারিত বাক্যবন্ধের প্রভাব ভক্ত মানসে আজও একই রকম রয়েছে।
পৌষ সংক্রান্তির” তুলসী চারার মেলা” বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য পূর্ণ মেলা গুলির মধ্যে স্থান করে নিয়েছে।