সূচীভেদ্য যন্ত্রণার অব্যক্ত আখরে আখরে।
মরমে আঁকা বিজয়- গাথা আমার অন্তরে।
মহাপ্রলয়ের তূর্য নিনাদ ভরা স্মরণীয় – ৭১ সাল!
বিদীর্ণ হাহাকারের সকরুণ বিলাপে আজো বেমিশাল!
আমার মরমে আঁকা চির অমর মুক্তিযুদ্ধের কথকতা।
ওপার থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধারা থাকতো এখানে যেথা!
কতোনা রোমাঞ্চকর লোমহর্ষক অভিযান কথা শুনেছি তাঁদের মুখে।
বিস্ময়ভরা আতঙ্কের শিহরণ জেগেছে আমার বুকে।
মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি কখনো -শুনেছি যুদ্ধের বর্ণনা তাঁদের কাছে।
অকুতোভয় , নির্ভীক সৈনিক ! দেখা হতো মাঝে মাঝে।
আশেপাশেই থাকতো,গভীর নিশীথে-বসতো গোপন বৈঠক।
কতোদিন গেছি অমোঘ আকর্ষণে ,ভয়ে বুক ধকধক্!
আমি শুনেছি-তাঁদের অভিযান কথা,কেঁপেছি দীর্ঘশ্বাসে।
পুড়ছে গ্রাম,জ্বলছে দেশ– পাশবিকতার নির্মম উল্লাসে!
কতো মা-বাবা বোনের সিঁথির সিঁদুর মুছে গেছে পলকে।
লাখো প্রাণের রুধিরে সিক্ত– কৃপাণ উঠেছে ঝলকে।
দেখিনি আমি, বুক চেপে শুনেছি ,মুক্তিযোদ্ধাদের কথা!
যত্রতত্র লাশের পাহাড়!পঁচা গন্ধ! বাতাসে ছড়িয়েছে তা।
শস্য- শ্যামলা সোনার দেশটি- শ্মশান করেছে যারা।
ইতিহাস তাদের করবেনা ক্ষমা- এতোই পাপিষ্ঠ তারা।
কতো নির্মম মনুষ্যত্বহীন দুরাচারী পাকশাহী জল্লাদ।
অন্তঃসত্ত্বাকেও দেয়নি রেহাই- পুরাতে বিকৃত সাধ!
আমি দেখিনি মুক্তিযুদ্ধ! তবুও শুনেছি স্বজন মুখে।
সিলেট বাসিনী পিসিমা আমার বলেছেন ব্যথার দুখে।
রাত্রির ঘন আঁধারে মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর আশ্রয়ে নিতো ঠাঁই।
খিচুড়ি রেঁধে ক্ষুধার্ত সন্তানের মুখে তুলে দিতেন তাই।
শুনেছি,কতো ধর্ষিতা হতভাগিনীর নিদারুণ যাপনকথা!
পিসিমার মুখে শুনে আমার চোখেতে আগুন ঝরা ব্যথা।
তেজস্বিনী সহৃদয় কোমল পিসিমা সেই ধর্ষিতা কিশোরী দলে।
বিবাহ দিয়ে নতুন জীবন দিলেন অসীম দক্ষতার বলে।
বিচক্ষণ পিসিমা শুধুই তাঁদের আশ্রয়দাত্রী তো নয়!
মাতৃস্নেহে বুকে টেনে শেখালেন,ভয়কে করতে জয়।
আমি দেখিনি তো পাকিস্তান,শুনেছি লোকমুখে আর, পত্র-পত্রিকায়।
পিসিমার মুখে বাকিটা শুনেই-অশ্রুজলে ভেসেছে নয়ন তায়।
শুনেছি,সেই জ্বলন্ত ইতিহাস রচিত হয়েছিল যার হাতে।শৌর্যে,কর্মে,ত্যাগে তাঁর বাস- লক্ষমানুষের হৃদয়ধামেতে।
যার নেতৃত্বে প্রতিবাদের আগুনে ঘুচলো সকল ভয়!
যার নামে জড়িয়ে ছিলো– জাতির সুগভীর প্রত্যয়!
যার দৃপ্ত কন্ঠের নির্দেশ মেনে- মৃত্যুকে অতি তুচ্ছ করে।
সাড়ে সাত কোটি প্রাণেতে বহ্নিশিখা প্রখর ঝরে।
মুক্তিযুদ্ধের বীর কান্ডারী! কিংবদন্তি মুজিবুর রহমান!
পরাধীন দেশ পেলো–“স্বাধীন বাংলাদেশ”- এর সম্মান!
লাখো স্বজনের রক্তে রাঙা লাল সবুজের বাংলাদেশ!
সেলাম জানাই শহিদ চরণে যারা ঘুচালো দৈন্য ক্লেশ।
মুক্তিযুদ্ধের কতো কথা! টের পেয়েছি রুধিরে আলোড়ন!
স্বাধীনতার যূপকাষ্ঠে বলি – শহিদ ভায়েদের করি নমন।
আপ্লুত মনে যতোই শুনেছি,মরমে এঁকেছি তাঁর কষ্টকথা।
নক্ষত্র সম উজ্জ্বল রবে-বাংলার- বিজয় দিবস গাঁথা!