Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ভ্রমর কইও গিয়া || Taslima Nasrin » Page 9

ভ্রমর কইও গিয়া || Taslima Nasrin

আলতাফ বাড়িতে ঘোষণা করে দিয়েছে আমার ফোন ধরা নিষেধ। বাড়ির বাইরে। যাওয়া নিষেধ। আমার কোনও আত্মীয় স্বজন যেন বাড়িতে আসতে না পারে। আলতাফের কোনও বন্ধু বান্ধবের সামনে যাওয়া নিষেধ। ছাদে ওঠাও নিষেধ। আমি বলেছি–তোমার এই নিষেধ আমি মানব না।

–না মানলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে হবে।

–তুমি আমাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলছ!

–হ্যাঁ বলছি।

আলতাফ দিন দিন দড়ি ঘেঁড়া হিংস্র সঁড়ের মত হয়ে উঠছে। সে আমাকে ছিঁড়ে ফেলতে চায়। দাঁতে কামরাতে চায়। আমি দিতে চাই না। কিন্তু শক্তিতে পেরে উঠি না। বাবা মা দু’জন আসেন একদিন। তাঁদের খবর দিয়ে আনানো হয়। আমি বাবা মাকে কোনও রাখঢাক না করে বলি–আমি কিন্তু এখানে থাকব না।

মা চমকে ওঠেন। বলেন-পাগল হয়েছিস? ছোট আছিস নাকি এখনও? বড় হয়েছিস, বুদ্ধি হয়েছে। পাগলামি করিস না মা।

–আমি থাকব না। থাকব না।

–কেন থাকবি না?

–আলতাফ আমার গায়ে হাত তোলে।

–গায়ে হাত তোলে? বাবা মা দুজনই খানিক অপ্রস্তুত হন।

–হ্যাঁ। আমি স্পষ্ট কণ্ঠে বলি।

–বলিস কী! বাবা মা দুজনেই গম্ভীর হন।

আলতাফ আসে। বাবা মার পা ছুঁয়ে সালাম করে। বলে–শরীর ভাল তো আব্বা? আম্মা আপনার ডায়বেটিস ধরা পড়েছে শুনেছিলাম।

–হ্যাঁ বাবা। শরীরটা ভাল যাচ্ছে না।

–আমার এক বন্ধু ডায়বেটিক হাসপাতালের ডাক্তার। আমি কাল সকালে গাড়ি পাঠিয়ে দেব। আপনি কাইলি চলে আসবেন। আমি নিজে আপনাকে নিয়ে হাসপাতালে যাব।

-–আচ্ছা বাবা। মা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন।

কথা শুরু করে আলতাফই। বলে–হীরার কি হয়েছে ওকে জিজ্ঞাসা করুন। ওতো যাচ্ছেতাই সব কাজ করছে। এখন আপনারাই শুনুন সব, যা ভাল বুঝুন, করুন।

–তুমি বল। তোমার স্ত্রী সে। মা মিনমিন করে বলেন।

–আমার স্ত্রী হলে কী হবে? স্ত্রীর কোনও দায়িত্ব কী সে পালন করে? তাকে জিজ্ঞাসা করুন।

মা বলেন–কী হীরা, আলতাফ কী বলছে, শুনছিস?

–শুনব না কেন? কানে খাটো না যখন……

–দায়িত্ব পালন করিস না। কেন করিস না বল। মা বলেন।

–আমার বুড়ো মা বাবা থাকেন এই বাড়িতে। জিজ্ঞাসা করুন আপনার মেয়েকে, সে কোনও খবর রাখে কিনা তাঁদের! তাঁরা কী খায়, কখন খায়, কোন খোঁজ রাখে সে?

–আমার খোঁজও তো কেউ রাখে না। আমি দাঁতে নখ কাটতে কাটতে বলি।

–তার মানে? তুমি কি চাও আমার মা তোমার খোঁজ নেবে? আর তুমি রাজরাণীর মত পালঙ্কে পা তুলে বসে থাকবে?

–খোঁজাখুঁজির কী আছে, যার খাওয়া সে খাবে, আমি তো প্রতিদিন খবর রাখছিই তোমার মা বাবার জন্য স্পেশাল খাবার তৈরি হচ্ছে। রমজান এর দায়িত্বে আছে। কোনও অসুবিধে হচ্ছে না। তাছাড়া তাঁরা, যখন ডাকছেন আমি তো যাচ্ছিই।

–বাড়িতে আমার বউ থাকতে রমজানকে কেন এই দায়িত্ব পালন করতে হবে? আলতাফ আমার বাবা মার দিকে তাকিয়ে এই প্রশ্ন করে।

–কারণ আমার চেয়ে সে এইসব ভাল জানে। আর আরও একটা কারণ আছে। আমি আলতাফের চোখের দিকে তাকিয়েই বলি।

-কী সেই কারণ?

–কারণ আমি তোমার বাবা মার চাকর হবার জন্য তোমাকে বিয়ে করিনি।

–বিয়ে আবার তুমি আমাকে কবে করলে? বিয়ে তো করলাম আমি! আমি যা বলি, তোমাকে শুনতে হবে।

–আমি শুনব না। কী করবে তুমি?

–দেখুন আপনাদের মেয়ের অডাসিটি দেখুন।

বাবা বলেন–হীরা তুই বাড়াবাড়ি করছিস কিন্তু। আলতাফ তো একটি কথাও খারাপ বলেনি।

মাও বলেন–শ্বশুর শাশুড়ির সেবা না করলে স্বামীর মন পাওয়া যায় নাকি! আমাকে তো দেখেছিস সেই কাক ডাকা ভোরে শ্বশুরের অযুর পানি দেবার জন্য ঘুম থেকে উঠে গেছি। শাশুড়ি তিনবছর বিছানায় পড়েছিলেন। একা হাতে সব সামলেছি। তুই আমার মেয়ে হয়ে…..

–তুমি করেছ বলে আমাকে করতে হবে?

–এটাই নিয়ম। নিয়ম বদলাবি নাকি? যা হয়ে আসছে তাই তো করতে হয়।

–আমার যা করতে ভাল লাগে না তা আমি করি না।

–শোন হীরা তোমার ইচ্ছে মত এই সংসার চলবে না। আলতাফ কঠিন কণ্ঠে বলে।

–কেন চলবে না? এটা নাকি আমার সংসার। প্রায়ই বল নিজের সংসারের কাজ তুমি নিজে কর। নিজেরই যদি সংসার হয় তবে আমার ইচ্ছে মত কেন চলবে না। কাজের বেলায় আমি আর ইচ্ছের বেলায়, অর্ডারের বেলায় তুমি?

–মুখ সামলে কথা বল বেয়াদব মেয়ে। আলতাফের আসল চেহারা বেরিয়ে আসতে থাকে।

আমি কিছু বলবার আগেই বাবা মা দুজনই বললেন–তুই চুপ কর।

আমাকে চুপ করতে হবে। আমি বাঁচাল হয়ে গেছি। বাইরের ছেলে পেলেদের সঙ্গে আড্ডা মারতে চাই। আমি ঘরোয়া নই, লক্ষ্মী মেয়ে নই, সংসারি নই। গোপনে আমি এক মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখছি। আলতাফ যে আমার স্বামী তা বুঝবার উপায় নেই, কারণ স্বামীর আদেশ আমি পালন তো করিই না উল্টো তর্ক করি। বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনের সামনে সে মুখ দেখাতে পারে না। বাবা মা যাবার আগে আমাকে আলাদা ঘরে ডেকে নিয়ে যান। আমি বলি–কী বলবে, এত গোপন জায়গায় ডেকে আনছ কেন?

বাবা বলেন–জামাই যেভাবে বলে সেভাবে থাক। মুখে মুখে তর্ক করবি না। তোর দোষ কিন্তু কম না। তোর আশেপাশে দেখ বাঙালি বউঝিরা কী করে, তোর মা কী করেছে, তোর দাদী নানী কী করেছে। কারও স্বামীর সঙ্গে তো কারোর কোনও বিরোধ লাগেনি। তোর লাগে কেন, তোর যখন লাগে বুঝতে হবে তোর মধ্যে কোনও গোলমাল আছে।

–গোলমাল যা, তা ওর মধ্যে। আমার মধ্যে নেই।

–বাজে বকিস না। আলতাফ খুবই ভাল ছেলে। সবাই বলে।

–সবাই বললে তো হবে না। আমি যত জানি ওর সম্বন্ধে, তা তো আর কেউ জানে না।

–তোর তো মাথার ঠিক নেই এখন। পরে বুঝবি। আর রতন কেন আসে এই বাড়িতে?

–কেন আসে মানে? রতন আসলে অসুবিধা কী?

–আলতাফ যার আসা পছন্দ করে না তার আসার দরকার কী?

–কিন্তু কেন পছন্দ করবে না তা তো জানতে হবে। ধর তোমাদের আসাও যদি সে পছন্দ না করে তবে তোমরাও কি আর আসবে না? আর আমিও তা মেনে নেব?

–তুই বেশি কথা বলছিস হীরা। আমরা তোর চেয়ে বেশি বুঝি। দুনিয়াটা আমরা বেশি দেখেছি। যা বলছি তাই শোন। এখনও ভাল হয়ে চলার চেষ্টা কর।

–এর চেয়ে ভাল হতে আমি পারব না।

–নিজের কপাল নিজে নষ্ট করিস না। হীরা, আমার মেয়ে হয়ে তোর এই অধঃপতন, জামাই ডেকে এনে মেয়ে সম্পর্কে কমপ্লেইন করলে এর চেয়ে লজ্জার আর কী আছে! ছি ছি।

বাবা মা বিষণ্ণ মুখে চলে যান। আমি তাদের কোনও সান্ত্বনা বাক্য উপহার দিতে পারি না। আমি তাদের কথা দিতে পারি না এখন থেকে আমি ভাল হয়ে চলব। স্বামী শাশুড়ির কথা শুনব। আলতাফ বাবা মাকে কদমবুসি করে। বাবা মা আলতাফের মাথায় হাত বুলিয়ে বলনে–ভাল থেক বাবা। ওঁরা চলে যাবার পর আলতাফ বেশ গর্বিত গ্রীবা নিয়ে আমার গা ঘেঁষে চলাফেরা করে। সে তার প্রতি পদক্ষেপে বুঝিয়ে দেয় হি ইজ রাইট।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *