ভালোবাসার প্রাপ্তি
সবচেয়ে প্রিয় টেডিবিয়ারটা আঁকরে ধরে চিলের ছাদে বসে আছে রুপু । স্হির দৃষ্টি । চোখ থেকে অবহেলায় গড়িয়ে পড়ছে ফোটা ফোঁটা জল । অগোছালো চুল , শুকনো মুখে ঠায় বসে আছে সে । মা অনেকবার ডেকেছে । কিন্তু সে ডাক তাকে নাড়া দিতে পারেনি ।সপ্তা দুয়েক হলো খুব জ্বর । কিছুতেই কমছে না । ডাক্তার বদলানো হল ।কিন্তু কিছুতেই কিছু না ।নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে । রুপুর মা মৃন্ময়ী দেবী তো মেয়েকে নিয়ে চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন । রুপুর বাবাও কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন । তাকে খবর দেওয়া হয়েছে । এই সময় কাজের প্রচুর চাপ থাকে । ছুটির বন্দোবস্ত করাও খুব মুসকিল । রুপু বরাবরই বাপ সোহাগী ।
বাবার কাছেই ময়ের যত আবদার । এমনকি সমস্ত গোপন কথা বাবাকেই বলা চাই । তাই রুপুর বাবা এলে মৃন্ময়ী দেবী অনেক স্বস্তি পেতেন ।সেই বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেল মেয়ে এখনোতো নামলো না । আবার ডাক দিলেন তিনি । কিন্তু এবারেও কোনো সাড়া না পেয়ে উপরে উঠে গেলেন ।গিয়ে দেখেন মেয়ে টেডিবিয়ারের ওপর মুখ থুবরে পড়ে আছে । গায়ে ধূম জ্বর । মৃন্ময়ী দেবী কোনো রকমে ধরাধরি করে মেয়েকে তার ঘরে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিলেন । জ্বরের ওষুধটাও খাওয়ালেন কোনরকমে ।তারপর জলপট্টিও দিলেন কিছুক্ষণ । তাপ একটু কমলে মেয়ের গায়ে হালকা চাদর দিয়ে বেরিয়ে আসেন ।খানিকক্ষণ ঘুমোলে যদি একটু শান্তি পায় মেয়েটা ।
রূপাঞ্জনা মল্লিক । সেকেন্ড ইয়ার ফিজিক্স অনার্স। দ্বীপ মানে দ্বৈপায়ন বসু ওর বন্ধু । ক্লাস ইলেভেন থেকে ওদের বন্ধুত্ব । ধীরে ধীরে ভালোলাগা তার পরেই ভালোবাসা । প্রপোস ডে তে একটা কিউট টেডিবিয়ার দিয়ে রুপুকে সে প্রপোস করেছিল ।দুজন দুজনকে ছাড়া এক মূহুর্ত থাকতে পারে না । ফেসবুক , ম্যাসেঞ্জার , হোয়াট্স অ্যাপ সর্বত্রই দুজনের অবাধ বিচরণ । দুজনের কেমিষ্ট্রি
ভালোই চলছিল । এমন সময় মালবিকা বসু নামের একটি মেয়েকে দ্বীপের ঘনিষ্ঠ হতে দেখা যায় । রুপুকে ignore করতে শুরু করে দ্বীপ । online থাকলেও রুপুর ম্যাসেজ এর কোনো reply দেয় না । ম্যাসেজ সিন পর্যন্ত করে না ।রুপু লক্ষ্য করে দ্বীপ
Whatsapp তেও online থাকে অনেক রাত পর্যন্ত । খালি রুপুর জন্য ওর সময় নেই । এমনকি ফোন করলেও রিসিভ করে না । ফোন কেটে দেয় । দ্বীপের সাথে কাটানো সোনালী মূহুর্তগুলো রুপুর চোখে জল আনে ।চোখ বন্ধ করলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে দ্বীপের হাসি মুখটা , দুজনের ছেলেমানুষিগুলো । রাতের পর রাত ঘুম আসে না রুপুর । পড়ায় concentrate করতে পারে না । কলেজ যাওয়া বন্ধ করে দেয় । দ্বীপের পাশে অন্য কাউকে রুপু just tolerate করতে পারে না । দ্বীপের এই অবহেলা নিতে পারে না রুপু ।অসুস্থ হয়ে পড়ে সে । রাতের বেলা পাশবালিশটা জড়িয়ে ধরে হাউ -হাউ করে কাঁদে সে । আর পাশবালিশকেই তার সব অভিমানের কথা বলে দ্বীপ মনে করে । তুই কেন এমন করলি দ্বীপ । তোকে ছাড়া আমি বড্ড অসহায় ।তুই বুঝিস না? সেইদিন কোচিং ফিরত ঝড় বৃষ্টির রাতে দুজনে হাপুসুটি ভিজে ঐ পোড়ো মন্দিরে তুই আমায় অবশ করে দিয়েছিলি । তোর স্পর্শ গলিয়ে দিয়েছিলো আমায় । তোর মাতাল চাহনি আর উদ্দাম পৌরুষ আমায় গোগ্রাসে গিলে খেয়েছিল ।
তবুও…….আরো কিছু কি অদেয় ছিলো আমার ?
কেন ছেড়ে গেলি আমায় সোনাই ? আমি যে আর পারছি না ।
দ্বীপ খবর পায় রুপু অসুস্থ । কিন্তু খোঁজ নেবার প্রয়োজন বোধ করে না । শুধু Whatsapp e একটা ম্যেসেজ ঢোকে ” Get well soon .” রুপু সঙ্গে সঙ্গে reply দেয় ।ফিরে আয় । দ্বীপের reply তা আর সম্ভব নয় , মালবিকার বাবা আমায় কথা দিয়েছেন আমায় বিলেত পাঠাবেন ডাক্তারি পড়তে ।আমার স্বপ্ন সফল হবে ।রুপু বলে ওঠে আর আমার স্বপ্ন? একটা ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন মনে করে দ্বীপকে ভুলে যাস । ভালো থাকিস । রুপু — ভালো থাকবো তোকে ছাড়া ?? খানিকক্ষণ বাদে রুপু টের পায় She has been blocked from everywhere . সেদিন রাতে মায়ের ঘুমের ওষুধের শিশি খালি করে সারা জীবনের মতো নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ে রুপু । চিরশান্তির উদ্দ্যেশ্যে আনন্দলোকে ।।