Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বৈষ্ণবীয় প্রেমের স্বরূপ || Moksuda Halim

বৈষ্ণবীয় প্রেমের স্বরূপ || Moksuda Halim

বৈষ্ণবীয় প্রেমের স্বরূপ

রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, যাকে আমরা ভালবাসি কেবল তার মধ্যেই আমরা অনন্তের পরিচয় পাই। এমনকি জীবের মধ্যেও অনন্তকে অনুভব করার নামই ভালবাসা। প্রকৃতির মধ্যে অনুভব করার নাম সৌন্দর্যসম্ভোগ। সমগ্র বৈষ্ণব ধর্মের মধ্যে এ গভীর তত্ত্বটি নিহিত। বৈষ্ণবধর্ম সমগ্র প্রেম সম্পর্কের মধ্যে ঈশ্বরকে অনুভব করতে চেষ্টা করে। বৈষ্ণব মতানুসারে মানুষ ও ভগবানের সম্পর্কটা এই—আদিতে পরম পুরুষ স্বরূপ বিধাতা একা ছিলেন। তিনি নিঃসঙ্গ বোধ করলেন। তাই নিজ অংশ হতে নারী-পুরুষকে সৃষ্টি করে যুগল হলেন। এখানেই পুরুষের প্রকৃতি-মায়া ব্রহ্মা ও বিষ্ণুশ্রী তত্ত্বের উদ্ভব। নারীই নাকি শক্তিস্বরূপা। নারীসংস্পর্শেই পুরুষ হয় শক্তিমান। মিথুনতত্ত্বেরও উদ্ভব হয় এভাবেই। পুরুষ প্রকৃতির তথা নারীপুরুষের মিলনেই সৃষ্টির উদ্ভব। তাঁদের সম্পর্কও প্রেমের। কাজেই সৃষ্টি প্রেমজ।তিনি চাইলেন একোত্মম বহু শ্যাম। প্রেমের সম্পর্ক হচ্ছে প্রেমিক ও প্রেমাস্পদ পরস্পর পরস্পরকে আত্মস্থ করতে আকুল হবে। পরস্পরের মধ্যে আত্মবিলোপে কৃতার্থ হবে। এ প্রেম হচ্ছে জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার প্রেম। জীবাত্মা হচ্ছে পরমাত্মার খণ্ডাংশ। বিন্দু বিন্দু জল নিয়ে সমুদ্র। কিন্তু বিন্দু বিন্দু এক শক্তি নিতান্তই তুচ্ছ। তাই তার অস্তিত্ব রক্ষার গরজেই সমুদ্রের জন্য তার আকুলতা। বিন্দু স্বরূপ জীবাত্মা তাই পরমাত্মার জন্য ব্যাকুল।এই ব্যাকুলতার জন্যই জীবাত্মা প্রেমিক-তাই সে রাধা। পরমাত্মারও অবশ্য ব্যাকুলতা আছে, কেননা জীবাত্মাকে বাদ দিয়ে পরমাত্মার লীলাভোগ হয় না। কিন্তু কোন বিশেষ জীবাত্মার জন্য তার আকুলতা নেই। এজন্য একক জীবাত্মা সদা উদ্বিগ্ন, পাছে সে বাদ পড়ে। যেমন; কৃষ্ণের ষোলশত গোপিনী আছে কিন্তু রাধার কৃষ্ণ ছাড়া কেউই নেই। তাই রাধার সদা সাধন,
“এই ভয় ওঠে মনে, এই ভয় ওঠে,
না জানি কানুর প্রেম, তিলে জানি টুটে।“ প্রেমের পরিধি একাত্মতায়।সংসার বন্ধনে প্রেমের স্বাতন্ত্র্য তেমন পরিস্ফুট হয়ে ওঠে না।নিয়মবদ্ধ জীবন-যন্ত্রবদ্ধ জীবের ন্যায়। সেখানে প্রেমের ঔজ্জ্বল্য তেমন অনুভূত হয় না। খানিকটা বৈচিত্রের অভাবে অনেকটা নিতান্ত ধরাবাধা নিয়মানুবর্তী বলে। কুলবালা কুলের বধু রাধা।শাশুড়ি ননদীর শ্যানদৃষ্টি, অশেষ লাঞ্ছনা দিয়ে চায় সামাজিক বিধিনিয়মের কঠিন নিগড়ে তার নারী প্রাণকে বেঁধে রাখতে। বিহঙ্গম সমতুল্য কোমল সে প্রাণ প্রেমাতুর মুক্তি বুভুক্ষু। অন্যপক্ষে লোককথার মতে রাধার পতি জড়তাচ্ছন্ন এক ক্লীব। প্রানোচ্ছল কৃষ্ণের দীপ্ত পৌরুষ রাধার নারীত্বকে আকর্ষণ করে এক অদম্য শক্তিতে। তারপর সেই অনন্য পরায়ণ প্রেমের সাধনা সমাজের অভিঘাত তীব্রতা রক্তাক্ত যন্ত্রণার আকারে ব্যথাতুর করে তোলে তার অসহায় নারী প্রাণকে।
প্রেমে দুঃখ আছে বলেই প্রেম ত্যাগ করার নয়। প্রেমের যা কিছু সুখ সমস্ত দুঃখের যন্ত্রে নিংড়িয়ে বের করতে হয়। দুঃখের পাষাণে ঘর্ষণ করে প্রেমের সৌরভ বের করতে হয়। যতই ঘর্ষিত হবে ততই সৌরভ বের হবে। প্রেম কঠোর সাধনা, কঠোর দুঃখের তপস্যায় প্রেমের স্বর্গীয় ভাব প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে। ‘রাধার কি হৈল- অন্তরে ব্যথা!’
পরিশেষে বলা চলে যে মানুষ সংসারে এসে সাংসারিক লাভক্ষতি, লোভ-লালসা এবং ভোগবিলাসে এমন আবিষ্ট হয়ে পড়ে যে সংসারের দাসত্ব করতেই তার জীবন ব্যয়িত হয়ে যায়। অমৃতলোকের রসাস্বাদনের আকর্ষণে মানবাত্মার মুক্তির চেতনা সাধারণত মনে স্থান পায় না। আর মানবচেতনার অন্তর্নিহিত অচ্ছেদ্য কামবাসনাকে পুড়িয়ে পূজারতির প্রেমধুপে পরিনত করাই বৈষ্ণবধর্মের একমাত্র আরাধ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress