ফুটপাতে একপাশে ধার ঘেঁষে বসতাম,
টাইপ মেশিন দিয়ে টাইপটা করতাম।
দিন গেলে শ’তিনেক রোজগার নয় কম।
খদ্দের আসা যাওয়া লেগে ছিল হরদম।
দিন ভর টুকটুক খুটখুট চলতো,
কতজন এসে বসে কত কথা বলতো!
হয়তো বা কেউ এসে তাড়াতাড়ি করতো,
কাজ হলে দৌড়িয়ে গিয়ে বাস ধরতো।
দিন চলে দ্রুত তালে সময় কি থেমে রয়!
খদ্দের আসা যাওয়া নিত্য যে কম হয়।
এযাবৎ এই কাজে চলেছে যে সংসার,
ভয় হয় আর বুঝি নিতে নারি সেই ভার।
এসেছে বাজারে দেখি কত কম্পিউটার ,
ছোট বড়ো নানা মাপে ঝকঝকে প্রিন্টার।
কমে গেছে কাজ আজ খদ্দের নেই আর,
অভ্যাসে এসে বসি , বসে থাকা হয় সার।
টাইপের নেই দাম, অখণ্ড অবসর,
বসে বসে মাছি মারা উদ্যোগে তৎপর।
যুগের তাগিদে কেবা টাইপের দাম বোঝে,
ক্যাফে গুলি তকতকে নিত্য নূতন সাজে।
অভাবের কালো মেঘ সংসারে সাঁতরায়,
হাহাকারে বুক ভরে, মন আজ কাতরায়।
জীবনের গতিপথ অলিগলি হাতড়ায়,
চাহিদার গরমিল মেলানোই বড়ো দায়।
স্বজনের মতো ছিল এ টাইপরাইটার,
শেষ ছোঁয়া পেতে আজ রাখি হাত গায়ে তার।
অবুঝের মতো আজ বেদনার যত ভার,
সযতনে সামলাই বুকভরা হাহাকার ।
শেষমেশ বাধ্য যে মেনে নিতে হলো হার,
বাতিলের দলে গেল সে টাইপরাইটার।