Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বিনিময়ের ফ্যাশান || Bharati Das

বিনিময়ের ফ্যাশান || Bharati Das

বিনিময়ের ফ্যাশান

আদিম যুগ থেকেই পণ্য বিনিময় প্রথা আজও বিদ্যমান… লেখাগুলো ফেসবুকের কোনো একটা পেজ এ মন দিয়ে পড়ছিল রুদ্র গোস্বামী, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির চিফ এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর। অবসর সময় পেলে সোশ্যাল মিডিয়ার নেশায় এডিক্টেড হয়ে ফেসবুক ঘাঁটতে গিয়েই আটকে গেল চোখটা।

আরে! শিবাজী না!

প্রোফাইল ঘাঁটতেই বেরিয়ে এলো হারিয়ে যাওয়া কলেজ লাইফের সেই হরিহর আত্মা। টুক করে পুরানো বন্ধুকে নতুন করে পাঠালো বন্ধুত্বের আমন্ত্রণ। দিন কয়েকের মধ্যে এলো উত্তর। শুরু হয় কথোপকথন।

ফেলে আসা ছেলেবেলার দুই সাথী আজ পার্ক স্ট্রীটের সেরা এক কফি শপে।
– কিরে শিবু, তুই তো এখন শিল্পী মানুষ। ভুলেই গিয়েছিস আমায়- তাই তো?
– আরে না না, তোকে কোনদিন ভুলিনি রে… আসলে বাবা রিটায়ার্ডমেন্টের পর জলপাইগুড়ি চলে গেলেন, আলাদা হয়ে গেল আমাদের কলেজ। তখন তো আর মুঠোফোন ছিল না, তাই… সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।

রুদ্রের হাতের রত্নশোভিত সোনার আংটির প্রাচুর্য দেখেই বোঝা যায় তার আর্থসামাজিক অবস্থান, শিবাজী তাকিয়ে থাকে। কফি জুড়িয়ে জল হয়ে গেল কাপেই, তবু শেষ হয়নি দুই বন্ধুর কথার রেশ।
রুদ্র বাড়ি নামাতে আসে বাল্যবন্ধুকে।

– ঐন্দ্রীলা, দ্যাখো কে এসেছে…

শহরতলীর ছোট্ট ভাড়া ঘর থেকে বেরিয়ে আসা বন্ধুপত্নীকে দেখে রুদ্র অবাক! এ তো তার অসমাপ্ত প্রেম! হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা!

উর্বর্শী মেনকার মতো কাম এর প্রতিমূর্তি ঐন্দ্রীলা কে আজ এতদিন পর দেখে রুদ্রের রক্তে যৌবনের জোয়ার ঢেউ তুলতে শুরু হয়। ঐন্দ্রিলার অনুরোধে এককাপ চা খেয়েই বাড়ির পথে পা বাড়ায় রুদ্র। হাজার স্মৃতির ভারে মাথা আজ তার ভারী হয়ে আসে।
কোনমতে সে বাড়ি পৌঁছই…

– বুঝলে মায়া, খুব মাথা যন্ত্রনা করছে। আজ আর কিছু খাবো না। স্নান করেই শুয়ে পড়বো- –
সদ্য পরিণীতা মায়া তাকিয়ে থাকে তার স্বপ্নের পুরুষের দিকে।

অফিসে হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও ঐন্দ্রীলার মুখটা ভুলতে পারছে না রুদ্র। ফেলে আসা সেই রাগ অনুরাগ মাখানো দিনগুলো আজ আবার মনে পড়ে। ঐন্দ্রীলার বাবা জাতপাতের বেড়াজালে বেঁধে ফেলেছিলেন তাদের ভালোবাসার সেই সম্পর্ক’টাকে। কলেজ শেষে রুদ্র যখন জার্মানি চলে গেল, মুহুর্ত সময় নষ্ট না করে ঐন্দ্রিলার বাবা সাত পাঁকে বেঁধে দিয়েছিলেন মেয়ের জীবনটা। এরপর আর কোনদিন দেখা হয়নি তাদের। সময়ের সাথে মায়া এসেছে জীবনে দ্বিতীয় প্রেম হয়ে, তবে ঐন্দ্রীলা মন থেকে মুছে যায়নি কোনদিন।

সময়ের সাথে রুদ্র শিবাজীর সাক্ষাৎ বাড়তে থাকে। একদিন খোলা মনের রুদ্রের প্রস্তাবে চমকে ওঠে শিবাজী! এ কি করে সম্ভব! এমনও হয় নাকি!! রাতে ঐন্দ্রীলাকে বুকে টেনে শিবাজী বলে-

– জানো, রুদ্র বলেছে ‘চল বৌ বদল করি। বিদেশে নাকি আকছার এসব হয়। একে ওয়াইফ সোয়াপিং বলে ‘-

শিবাজীর বুকে মাথা রেখে কামাতুর চোখে তাকাই ঐন্দ্রিলা। ‘হ্যাঁ ভারতেও ইদানিং এর প্রচলন বেড়েছে, তা তুমি কি বললে?’
– কি আর বলবো? ছিঃ আমার তো ভাবতেই গা গুলিয়ে উঠছে’-

সেদিন কলেজ একটু আগেই শেষ হয়ে গেছিল। বাড়ি ফিরে দেখে মায়া আর ঐন্দ্রীলা জমিয়ে ভ্রমণসূচী তৈরী করে ফেলেছে, তিনদিনের জন্য মন্দারমনি।

হালকা বৃষ্টি হয়েছে আজ বাংলার এই সৈকত শহরে। সন্ধ্যে পেরিয়ে রাতের আঁধারে ডুব দিয়েছে এই শহর। হোটেল বন্দী চারজন আজ ভিন্ন স্বাদের রোম্যান্টিক মেজাজে। লাল পানীয়ের মৌতাতে ‘চিয়ার্স’ ধ্বনি তুলে স্বপ্নিল সবার চোখ। এর মধ্যেই আজ আবার কথাটা তুললো রুদ্র..

– আজকের দিনটার জন্য ওয়াইফ সোয়াপিং করি শিবু, কি বলিস?
মায়া আর ঐন্দ্রিলা মুখে কিছু না বললেও হেসে ওঠে। ওদের হাসি দেখে খানিক বিব্রত বোধ করে নেশার ঝোঁকে রক্ষণশীল শিবাজী রাজি না হয়ে থাকতে পারেনি।

ভোর হতেই মায়ার নগ্ন দেহ সরিয়ে আত্মগ্লানিতে দগ্ধ শিবাজী ছুটে যায় ঐন্দ্রিলার রুমের দিকে। রুদ্র আর ঐন্দ্রিলা নগ্নদেহে একে অপরের দেহের খিদে মেটাতে তখনও তৎপর দেখে রক্ষণশীল শিবাজী বিস্ময়ের ঘোরে তাকিয়ে থাকে! ঐন্দ্রিলার এ কোন রূপ দেখছে সে আজ !!

ন্যায়বাদী সাধারণ মধ্যবিত্ত এক শিক্ষক যে সুরাপান কে ঘৃণার চোখে দেখতো, এ কি বিষম অন্যায় করে ফেললো সে! যাকে রক্ষা করার অঙ্গীকার করেছিল সাত পাঁকে ঘুরে, তাকেই পরপুরুষের কামাগ্নির যজ্ঞে নিয়োজিত করলো!!
আর ঐন্দ্রিলা !

শিবাজী হোটেল ছেড়ে ছুটে যায় স্টেশনের দিকে… তাকে ছুটতে হবে, আরও দ্রুত, আরও দ্রুত! ফ্যাশনের গতির চেয়ে তীব্র গতিতে ছুটতে হবে তাকে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *