১
ভারতের পতিহীনা নারী বুঝু অই রে!
না হলে এমন দশা নারী আর কই রে?
মলিন বসন-খানি অঙ্গে আচ্ছাদন,
আহা দেখ অঙ্গে নাই অঙ্গের ভূষণ!
রমণীর চির-সাধ চিকুর-বন্ধন,
হ্যাদে দেখ সে সাধেও বিধি-বিড়ম্বন!
আহা, কি চাঁচরকেশ পড়েছে এলায়ে!
আহা! কি রূপের ছটা গিয়েছে মিলায়ে!
কি নিতম্ব কিবা উরু, কিবা চক্ষু কিবা ভুরু,
কি যৌবন মরি মরি শোকে দগ্ধ হয় রে!
২
কুসুম চন্দনে আর নাহি অভিলাষ ;
তাম্বুল কর্পুরে আর নাহি সে বিলাস ;
বদনে সে হাসি নাই, নয়নে সে জ্যোতিঃ ;
সে আনন্দ নাই আর মরি কি দুর্গতি!
হরিষ বিষাদ এবে তুল্য চিরদিন ;
বসন্ত শরত ঋতু সকলি মলিন!
দিবানিশি একই বেশ, বারমাস সেই ক্লেশ ;
বিধবার প্রাণে হায় এতই কি সয় রে!
৩
হায় রে নিষ্ঠুর জাতি পাষাণ-হৃদয়,
দেখে শুনে এ যন্ত্রণা তবু অন্ধ হয় ;
বালিকা যুবতী ভেদ করে না বিচার,
নারী বধ করে তুষ্ট করে দেশাচার।
এই যদি এ দেশের শাস্ত্রের লিখন,
এ দেশে রমণী তবে জন্মে কি কারণ?
পুরুষ দুদিন পরে, আবার বিবাহ করে,
অবলা রমণী বলে এতই কি সয় রে?
৪
কেঁদেছি অনেক দিন কাঁদিব না আর ;
পূরাইব হৃদয়ের কামনা এবার।—
ঈশ্বর থাকেন যদি করেন বিচার
করিবেন এ দৌরাত্ম সমূলে সংহার ;
অবিলম্বে হিন্দু ধর্ম্ম ছারখার হবে
হিন্দুকুলে বাতি দিতে কেহ নাহি রবে!
দেখ রে দুর্মতি যত চিরম্লেচ্ছপদানত—
বিধবার শাপে হায় এ দুর্গতি হয় রে।
৫
হায় রে আমার যদি থাকিত সম্পদ,
মিটাতাম চিরদিন মনের যে সাধ ;
সোণার প্রতিমা গড়ে বিধবা নারীর,
রাখিতাম স্থানে স্থানে ভারত ভূমির ;
বিদেশের স্ত্রী পুরুষ এদেশে আসিত,
পতিব্রতা বলে কারে নয়নে হেরিত।
লিখিতাম নিম্নদেশে, ”কি স্বদেশে কি বিদেশে,
রমণী এমন আর ধরাতলে নাই রে!”
৬
সে ধন সম্পদ নাই দরিদ্র কাঙ্গাল,
অনাথ-বিধবা-দুঃখ রবে চিরকাল
আমার অন্তরে গাঁথা ; যখনি দেখিব
সুগন্ধ কুসুমে কীট তখনি কাঁদিব ;
রাহুগ্রাসে শশধর, নক্ষত্র পতন
যখনি দেখিব, হায়, করিব স্মরণ
বিধবা নারীর মুখ! হায় রে বিদরে বুক,
ইচ্ছা করে জন্মশোধ দেশত্যাগী হই রে।
ভারতের পতিহীনা নারী বুঝি অই রে॥