Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

সোফায় একগুচ্ছ ফুল

চিকা সোফায় একগুচ্ছ ফুলের মতো এলিয়ে বসে অত্যন্ত তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলল, হোয়াট বিজনেস?

ববি চিকার দিকে চেয়ে তাকেও সম্মোহিত করার একটা অক্ষম চেষ্টা করতে করতে বললেন, ওরা কে?

কারা?

যারা আমাদের সি-বিচ থেকে ফলো করেছিল?

কারা ফলো করেছিল?

দু’জন লোক।

আমি জানি না, শুধু জানি, তুমি আমাকে ডিচ করে পালিয়ে গিয়েছিলে।

মিস চিকন মেহেতা, আমি জানি তোমাকে ওরা আমাকে ডাইভার্ট করার জন্য কাজে লাগিয়েছিল মাত্র। তুমি ওদের দলের কেউ নও।

চিকা তার রোবটা একটু ভাল করে গায়ে জড়িয়ে নিয়ে বলল, আমাকে কেউ কাজে লাগায়নি। চিকা অত চিপ নয়।

টক সেন্স চিকা, আমি তোমাকে এখনই তুলে থানায় নিয়ে যেতে পারি।

পারো না, তুমি পুলিশের লোক নও।

ববি যে তর্কযুদ্ধে এঁটে উঠছেন না, এটা বুঝতে পেরে ইন্দ্রজিৎ ফিসফিস করে বলল, আপনার আইডেনটিটি কার্ডটা বের করুন না স্যার, রিভলভারটাও।

চুপ করো বন্ধু।

ইন্দ্রজিৎ চুপ করে গেল। কিন্তু সেটা ধমক খেয়ে নয়, চোখের কোনা দিয়ে সে একটা খুব শব্দহীন সঞ্চার টের পেল। দক্ষ ডিটেকটিভের মতোই চমকে না উঠে খুব ধীরে মুখ ফিরিয়ে সে দেখল, চিকার বেডরুমের দরজা খুলে গেল। অন্ধকার ঘর থেকে দুটো আবছায়া মূর্তি দরজার ফ্রেম জুড়ে দাঁড়াল।

স্যার।

আঃ ইন্দ্রজিৎ!

দয়া করে ঘাড়টা একটু ঘোরাবেন স্যার? বিপদ গভীর।

ববি তাকে আমল না-দিয়ে চিকার দিকে চেয়ে বললেন, কী করে বুঝলে যে আমি পুলিশ নই?

জবাবটা চিকা দিল না, কিন্তু জবাবটা এল ববি রায়ের পিছন থেকে। পরিষ্কার ইংরেজিতে।

আমরা জানি মিস্টার রায়।

দু’জন লোকের একজন খুব ধীর পায়ে বেরোনোর দরজার দিকে সরে গেল। অন্যজন চিকার পিছুনে গিয়ে দাঁড়াল। দু’জনেরই একটা করে হাত পকেটে।

ববি বিরক্তির চোখে পর্যায়ক্রমে দু’জনের দিকে তাকালেন। তারপর হতাশ গলায় বললেন, এবা তো তারা নয়, যারা আমাকে সি-বিচ থেকে ফলো করেছিল।

চিকার পিছনে দাঁড়ানো লোকটা মৃদু হেসে বলল, তাদের পক্ষে হসপিটালের বিছানা ছেড়ে এখানে উপস্থিত হওয়া সম্ভব ছিল না মিস্টার রায়। দু’জনেরই কম্পাউন্ড ফ্র্যাকচার। একজনের অবস্থা খুবই গুরুতর।

ববি রায় বুঝদারের মতো মাথা নাড়লেন। বিষণ্ণ গলায় বললেন, ওরা নভিস, কিন্তু মনে হচ্ছে তোমরা নও।

না, মিস্টার রায়, আমরা সম্পূর্ণ পেশাদার। উই নো আওয়ার বিজনেস।

ববি রায় পিছনে হেলান দিয়ে খুব আয়েস করে বসলেন। বললেন, দেন টক বিজনেস।

চিকা উঠল। খুব লীলায়িত ভঙ্গিতে শরীরের সমস্ত উঁচুনিচু জায়গাগুলিকে খেলিয়ে আড়ামোড়া ভাঙল। একটা মিষ্টি হাই তুলে বলল, কারও ড্রিংকস চাই?

কেউ জবাব দিল না।

শুধু ইন্দ্রজিৎ চাপা গলায় বলল, স্যার মাগনা একটু ব্র্যান্ডি মেরে নেব? শুনেছি ব্র্যান্ডি খুব বলকারক। নার্ভাসনেসও কেটে যায় ব্র্যান্ডিতে।

না ইন্দ্রজিৎ, তোমাকে খুব নরমাল থাকতে হবে।

তা হলে একটা সিগারেট ধরাই?

ওরা ধরাতে দেবে না। পকেটে হাত দিলেই গুলি চালাবে। ও বাবা! তা হলে দরকার কী? স্মোকিং আমি চিরতরেই ছেড়ে দিচ্ছি স্যার।

ববি লোকটার দিকে চেয়ে ছিল। চিকা ববির দিকে অর্থপূর্ণ একটু হাসি আর কটাক্ষ ছুড়ে দিয়ে যেন ভেসে ভেসে শোওয়ার ঘরে চলে গেল। ক্লিক শব্দে বন্ধ হয়ে গেল দরজা।

চিকার পরিত্যক্ত জায়গায় লোকটা বসল। তারপর বলল, দু’খানা হাত এমনভাবে রাখা যাতে সবসময় দেখা যায়। হঠাৎ কোনও মুভমেন্ট কোরো না। বি ভেরি কেয়ারফুল, উই আর নার্ভাস পিপল।

ববি শান্ত স্বরে বললেন, জানি, আই নো এভরিথিং অফ দিস ট্রেড। নাউ টক বিজনেস, তোমার নাম কী?

কল মি বস।

ববি হঠাৎ ইন্দ্রজিতের দিকে চেয়ে বললেন, শোনো ইন্দ্রজিৎ, যতদূর মনে হচ্ছে এরা বাংলা জানে না।

আমারও তাই মনে হচ্ছে স্যার। তাই বলে রাখছি, যা-ই ঘটুক না কেন তোমাকে কিন্তু পালাতেই হবে।

পালাব? সেই কপাল করে এসেছি স্যার? দরজায় যে লোকটা দাঁড়িয়ে আছে তার হাতে খোলা রিভলভার।

জানি ইন্দ্রজিৎ। একটা সময় আসবে যখন দু’জনকেই আমি আমার দিকে ডাইভার্ট করতে পারব। যদি পারি তা হলে তুমি খুব সামান্য সময় পাবে পালানোর, কয়েক সেকেন্ড মাত্র। পালিয়ে কোনও হোটেলে গিয়ে উঠবে। তারপর মিসেস ভট্টাচারিয়াকে ফোন করবে।

মিসেস নয় স্যার, মিস।

একই কথা। যেটা ভাইটালি ইম্পর্ট্যান্ট তা হল মেসেজটাকে কিল করা।

কিন্তু কোডটা স্যার?

আমার নাম। নামটাই কোড। আর একটা কথা। পালাতে পারলে কাল সকালের ফ্লাইটে কলকাতায় ফিরে যেয়ো। লুক আফটার মিসেস ভট্টাচারিয়া। শি ইজ ইন ডেনজার।

বস একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তার চমৎকার সাহেবি উচ্চারণের ইংরেজিতে বলল, নিজেদের মধ্যে কথা বলে লাভ নেই, সময় নষ্ট হচ্ছে।

ইন্দ্রজিৎ লোকটাকে খুব ভাল করে জরিপ করে নিয়ে মাথা নেড়ে বাংলায় বলল, আপনি পারবেন না স্যার, লোকটার চেহারা দেখেছেন? হাইট ছ’ফুট এক ইঞ্চি তো হবেই। কাঁধ দু’খানা ওয়েট-লিফটারের মতো, হাত দু’খানা বক্সারের, পেটে কোনও চর্বি নেই।

তার চেয়েও খারাপ ওর চোখ দুখানা, ইন্দ্রজিৎ। চোখের দিকে তাকাও, পাক্কা খুনির চোখ।

দু’জনেরই স্যার। দরজার কাছে যে লোকটা দাঁড়িয়ে আছে তাকেও একবার দেখুন।

দু’জনকেই দেখা হয়ে গেছে। চুপ করো।

বস ভ্রু কুঁচকে পর্যায়ক্রমে দু’জনকে দেখে নিচ্ছিল। তারপর ববির দিকে চেয়ে বলল, প্রথমে তুমি ওঠো, দেওয়ালের কাছে চলে যাও, দু’হাত উপরে তুলে দেওয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড়াও।

ববি বাধ্য ছেলের মতো উঠলেন এবং নির্দেশমতো দাঁড়ালেন।

বস তার স্যাঙাতের দিকে চেয়ে বলল, ফ্রিস্ক হিম।

দ্বিতীয় লোকটা অত্যন্ত দক্ষ ও অভ্যস্ত হাতে ববির পকেট-টকেট হাতড়ে দেখল, তেমন কিছু নেই।

তোমার লিলিপুট পিস্তলটা কোথায়?

হোটেলে ফেলে এসেছি।

বস একটু চুপ করে থেকে বলল, ঠিক আছে। বোসো। ওই দ্বিতীয় লোকটি কে?

আমার সঙ্গী।

বস এবার ইন্দ্রজিৎকেও অনুরূপ নির্দেশ দিল। তার কাছে অবশ্য একটা পকেট-নাইফ পাওয়া গেল। একটা রবার হোস-এর টুকরোও, দ্বিতীয়টা মানুষকে ছোটখাটো আঘাত করার পক্ষে চমৎকার। মাথায় মারলে যে-কেউ কিছুক্ষণের জন্য চোখে অন্ধকার দেখবে।

বস ববি রায়ের দিকে চেয়ে বলল, এবার কাজের কথা মিস্টার রায়। আমরা কোডটা চাই।

কিসের কোড?

বস হাসল, তুমি শান্তি চাও, না যুদ্ধ চাও?

স্বাধীনতা চাই। আমাদের ছেড়ে দাও।

কথায় কথা বাড়ে। তুমিও অ্যামেচার নও মিস্টার রায়। তোমার অতীত নিয়ে আমরা অনেক রিসার্চ করেছি। ইলেকট্রনিকসে তুমি বিশ্বের পয়লা দশজনের মধ্যে একজন। তুমি যে-কোনও রাডারকে ইলেকট্রনিক তন্তুজাল দিয়ে আচ্ছন্ন আর অকেজো করে দিতে পারো, তুমি যে-কোনও সুপার কমপিউটারের মাইক্রোচিপ বানাবার ক্ষমতা রাখো, তার চেয়েও বড় কথা, তুমি যে ক্রাইটন যন্ত্র বানানোর ক্ষমতা রাখো তা হাজার মাইলের মধ্যে যে-কোনও পরমাণু বোমাকে তার নিজের বেস-এই বিস্ফোরিত করতে পারে। তুমি অতিশয় বিপজ্জনক লোক মিস্টার রায়।

ববি রায় একবার ঘাড়টা ঝাঁকিয়ে বললেন, আমি একটি বেসরকারি মাল্টিন্যাশনালের সামান্য কর্মচারী মাত্র। ইলেকট্রনিকসে আমার কিছু হাতযশ আছে ঠিকই, কিন্তু তুমি যা জেনেছ তা হাস্যকর রকমের বাড়াবাড়ি। একসময়ে আমি ইলেকট্রনিকস নিয়ে অনেক খেলা খেলেছি বটে, কিন্তু এখন কেবলমাত্র চাকরি করি। চাকরির বাইরে কিছু নয়।

চাকরিটা তোমার ক্যামোফ্লেজ মিস্টার রায়। আমরা সব জানি।

তোমরা আসলে কারা?

আমরা চটে গেলে তোমার শত্রু, খুশি থাকলে তোমার বন্ধু। যুদ্ধ চাও, না শান্তি চাও?

তোমরা কি ভারতীয় মাফিয়া?

বলতে পারো।

তোমাদের বস কে?

জেনে লাভ কী? আমাদের বস অত্যন্ত সম্রান্ত ব্যক্তি। তুমি তার টিকিরও নাগাল পাবে না। তুমি কি আজেবাজে কথা বলে সময় কাটাতে চাইছ? লাভ নেই। আমরা তোমাদের দুজনকে অজ্ঞান করে এখান থেকে তুলে নিয়ে যাব। আমাদের ডেরা খুব ভাল জায়গায় নয় মিস্টার রায়। সেখানে একটা টরচারিং চেম্বারও আছে।

থাকাই স্বাভাবিক। কোডটা বললে কি আমরা মুক্তি পাব?

আমরা অত বোকা নই। কোডটা বলার পর আমরা কলকাতায় আমাদের এজেন্টকে জানাব। সে কোডটা ফিড করবে এবং কমপিউটারের মেসেজ নিয়ে ভেরিফাই করবে। এ কাজে সময় লাগে মিস্টার রায়। ততদিন তুমি আর তোমার বন্ধু আমাদের মহামান্য অতিথি।

এই ফ্ল্যাটেই কি আমরা থাকব?

না, তোমাদের জন্য অন্য ব্যবস্থা আছে।

ভাল ব্যবস্থা কি? বাথরুম পরিষ্কার? ঘরে কার্পেট এবং টিভি আছে তো? রাঁধুনি কেমন? আমার এই বন্ধু খুব পেটুক।

লোকটা হাতঘড়ি দেখে নিয়ে বলল, তুমি বড্ড বেশি সময় নিচ্ছ মিস্টার রায়। আমরা তোমাকে আর সময় দিতে পারব না।

ববি রায় চাপা স্বরে বললেন, ইন্দ্রজিৎ তৈরি হও।

বস উঠে দাঁড়াল, আর সঙ্গে সঙ্গে ববি রায় বসা অবস্থা থেকে হঠাৎ মেঝেয় গড়িয়ে পড়লেন। সোফা ও সেন্টার টেবিলের মাঝখানকার সংকীর্ণ পরিসরে।

ইন্দ্রজিৎ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছিল, কারণ জীবনে আর কখনও কোনও লোককে সে ডাঙায় সাঁতার কাটতে দেখেনি। আর কী নিখুঁত স্ট্রোক আর গতি! ববি রায় যে ডাঙায় এমন অসাধারণ সাঁতার দিতে পারেন কে জানত? কার্পেটের ওপর পড়েই তিনি চোখের পলকে মেঝের অনেকটা পেরিয়ে গিয়ে বসের গোড়ালিতে কী একটা কারুকাজ করলেন। বস চেঁচিয়ে উঠে এক পায়ে লাফাতে লাগল।

দরজার পাহারাদার নাঙ্গা পিস্তল হাতে ছুটে আসতেই উত্তেজিত ইন্দ্রজিৎ এক লাফে দরজায়।

পালাতে সে সত্যিই ওস্তাদ। দরজাটা খুলে বেরিয়ে যেতে তার কি এক ন্যানো সেকেন্ডও লেগেছে? আলোর গতিবেগকেও কি হার মানায়নি?

ববি রায় যদি ডাঙায় সাঁতার কাটতে পারেন তো ইন্দ্রজিৎও পারে সিঁড়িতে স্কি করতে। বাস্তবিকই সাততলা উঁচু থেকে অতগুলো সিঁড়ি সে একজন সুদক্ষ স্কিবাজের মতোই পেরিয়ে এল।

একতলায় নেমে সে বোকার মতো তাড়াহুড়ো করল না। এসব বাড়িতে দারোয়ানরা সারা রাত চৌকি দেয়। সুতরাং সে খুব শান্তভাবে শিস দিতে দিতে বেরিয়ে এল রাস্তায়।

সে জানে, ববি এতক্ষণে খুন হয়ে গেছেন। তবে খুন হওয়ার আগে খুনিদের বিস্তর নাকাল করেছেন নিশ্চিত। বহুত ঝামেলাবাজ লোক।

কিন্তু ডিটেকটিভ ইন্দ্রজিতের হঠাৎ মনে হল, ববি যদি কোডটা ওদের না বলে থাকেন তা হলে হয়তো এখুনি খুন হবেন না। পরে হবেন।

যাই হোক, আপাতত খুনিরা ইন্দ্রজিতের পিছু নেয়নি, দেখাই যাচ্ছে। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যেই নেবে।

ইন্দ্রজিৎ একটা ট্যাক্সি পেয়ে গেল, একটা হোটেলে পৌঁছে যেতে তার বিশেষ সময় লাগল না। তারপর আধ ঘণ্টার মধ্যেই পেয়ে গেল কলকাতার লাইন। লীনার ঘরে টেলিফোন বাজার নির্ভুল শব্দ হচ্ছে।

তিনবার বাজতেই ওপাশ থেকে মেয়েলি গলা বলে উঠল, হ্যালো!

মিস ভট্টাচার্য?

হ্যাঁ, কে বলছেন?

আমি ববি রায়ের এক বন্ধু।

বন্ধু! কী ব্যাপার বলুন তো?

ব্যাপার ভাল নয় মিস ভট্টাচার্য।

ওঁর কি কিছু হয়েছে?

উনি গভীর বিপদে পড়েছেন।

মারা গেছেন কি?

দৃশ্যটা আমি চোখে দেখে আসিনি। তবে বিশেষ বাকিও নেই। উনি আপনাকে একটা খবর দিতে বললেন। কোডটা হল ববি রায়। মেসেজটা এক্ষুনি কি করা দরকার। পারবেন?

আপনার নামটি কী বলুন তো?

আমার নাম? আসল নাম, না ছদ্মনাম জানতে চান? আসল নামটা এখন বলা যাবে না মিস ভট্টাচার্য। তবে ছদ্মনামটা হল— দাঁড়ান, একটু ভেবে বলি— আমার ছদ্মনামটা হল মহেন্দ্র সিং।

আপনারা দুজনেই কি জোকার? গলাটা চেনা লাগছে কেন বলুন তো?

টেলিফোনে তো সকলের গলাই একরকম লাগে।

মোটেই নয়। যাক গে, ববি রায়ের সঙ্গে কি আপনার আর দেখা হবে?

ভগবান জানেন।

কারা ওঁকে মারার চেষ্টা করছে?

জানি না, তবে আপনিও সাবধান থাকবেন। আপনি বড্ড বেশি জেনে ফেলেছেন মিস ভট্টাচার্য। ববি রায় অত্যন্ত খারাপ লোক, জেনেশুনে একজন মহিলাকে এরকম বিপদের মধ্যে ঠেলে দেওয়া কাপুরুষের কাজ।

দেখা হলে ববি রায়কেও কথাটা বলবেন। হি ইজ এ কাওয়ার্ড।

বলব ম্যাডাম। কিন্তু কোডটার কী হবে? মেসেজটা যে কিল করা দরকার।

ববি রায়কে এ কথাও বলবেন যে আফটার এ লং ওয়াইল্ড গুজ চেজ কোডটা আমিই ভেবে বার করি। ওই মেগালোম্যানিয়াকটা যে নিজের নামটাকেই কোড় হিসেবে ব্যবহার করতে চাইবে এটা আমার আগেই অনুমান করা উচিত ছিল।

আপনি তো সাংঘাতিক বুদ্ধিমতী!

ওকে এ কথাটাও বলে দেবেন যে মেসেজটা আজ বিকেলেই আমি কি করে দিয়েছি।

থ্যাংক ইউ। থ্যাংক ইউ ম্যাডাম। এর জন্য ববি রায় নরকে বসেও আপনাকে আশীর্বাদ করবেন।

ওর আশীর্বাদে আমার দরকার নেই। লেট হিম গো টু হেল।

হি ইজ গোয়িং ম্যাডাম। এতক্ষণে….

লীনা সশব্দে রিসিভার নামিয়ে রাখল।

আজ তার ঘুম আসেনি। চোখের পাতা সে এক করতে পারছে না বিছানায় শোওয়ার পর থেকেই।

মাঝরাতের এই ভুতুড়ে টেলিফোনে ঘুমের সামান্য রেশটাও কেটে গেল।

উঠে সে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল, ঠান্ডা বাতাসের হিলিবিলি অনুভব করল শরীরে। অনেকক্ষণ। ববি রায় কি তা হলে মারাই গেছেন? সত্যি?

কেউ মরলে তার কি দুঃখ পাওয়া উচিত নয়? যাই হোক, লোকটা তার কোনও ক্ষতি তো করেনি। একটু-আধটু অপমান করেছে মাত্র। তার জন্য কি লোকটার মৃত্যুতে নির্বিকার থাকা সম্ভব?

কম্পিউটারের রহস্যময় মেসেজটির কথা ভাবছিল লীনা, কোথায় সেই বোম্বে রোড, কোথায় কোন ধাদ্ধারা গোবিন্দপুরের নীল মঞ্জিল? কার দায় পড়েছে সেখানে যাওয়ার?

লীনা দেখছিল রাস্তায় কতগুলো গাড়ি দাঁড়িয়ে। রোজই থাকে। গ্যারাজের অভাবে কত লোক রাস্তায় গাড়ি ফেলে রাখে।

কিন্তু হঠাৎ লীনার মনে হল, একটা গাড়ির ভিতরে অন্ধকারে একটা সিগারেটের আগুন ধিইয়ে উঠল।

লীনার শরীর শিউরে উঠল হঠাৎ।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress