Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বাড়ীবদল || Soumendra Dutta Bhowmick

বাড়ীবদল || Soumendra Dutta Bhowmick

বাড়ীবদল

আধামফঃসল শহর কুন্তিপুরের একপ্রান্তে ওদের বাসা।ওরা মানে সুজান, ইতু আর সোন।সুজান আর ইতু যখন এই বাড়ীতে ভাড়ায় এসেছিল, তখন সোন তাদের জীবনে আসে নি। এখানে তিনবছর কাটানোর পর সোন পৃথিবীর আলো দেখেছিল।এই ভাড়া বাড়ীতে দশ-দশটি বছর অতিক্রান্ত। অর্থ্যাৎ সোনের বয়েস এখন সাত।সোনের ভালো নাম সোনাই গাঙ্গুলী।প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে সে কিংসটন সেকেণ্ডারী স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে।সোনকে ঘরে দেখতে না পেয়ে ইতুর চিৎকার, সোন গেলি কোথায়?
-এই তো মা বাইরে বসে আছি।
-বাইরে কেন?সন্ধের মুখে এখন অল্প অল্প ঠাণ্ডায় হিম পড়ছে।তোর ঠাণ্ডার ধাত আছে।বাইরে বসে থাকা ঠিক নয়।ঘরে ফিরে আয়।
খক্ খক্ কাশীতে সোনের গলা খুব ব্যস্ত।
রাগান্বিত ইতু আবার বলে, দেখছিস তো কেমন ঠাণ্ডা লেগেছে!
শশব্যস্ত সোন কাশতে কাশতে ঘরে ঢুকে শুধোয়, মা, বাপী কবে ফিরবে?
-কেন বাপীর জন্য মন কেমন কেমন করছে?
মাথা নীচু করে রাখে ছেলেটা। সুজান আসলে কোম্পানীর অডিটের কাজে মাসে প্রায়ই ১৫-২০ দিন বাইরে থাকে।আবার বাড়ীতে থাকলেও অফিসের ফাইলপত্র নিয়ে বসে।
ইতু জানায়, ঠিক সাতদিন বাদে সুজান ফিরবে। তখন বাপীকে কাছে পাবি।
আবার সোনের খকখকানিতে ঘরটা সরগরম হয়ে ওঠে।সাথে নাক দিয়ে কাচা জল পড়ছে।ছেলেটার এত ভোগান্তি ইতুর দুই চক্ষের বিষ।আর হবেই না কেন এমন রোগ?স্যাঁতসেতে ঘরের পরিবেশে বাড়ীর দেয়ালগুলো এখন সবসময়ই ভেজা-ভেজা থাকে।এখন আবার উইয়েরও বাড়বাড়ন্ত হয়েছে।জোড়া ফলায় ইতু নাজেহাল।ছেলের দিকে তাকিয়ে এবার বাড়ী পাল্টানোর প্রয়োজন।সুজান ফিরলে কথাটা আবার পাড়বে।
সোন বই নিয়ে বসে।মা-ই ওর প্রধান শিক্ষিকা।সোনের সব বিষয়গুলো ইতু সুচারুভাবে তকে বুঝিয়ে দেয়।এইভাবে মা ও ছেলের দিনগুলো কাটতে কাটতে সুজান একদিন ফিরে আসে।
মুখ হাত-পা ধুয়ে ঘরে এসে বসলে ইতু চায়ের কাপ এগিয়ে দেয়।তারপরই সরাসরি শুধোয়, এই বাড়ীটা কবে ছাড়বে বলো তো?
-কেন কি হল? বছর দশেক কেমন তরতরিয়ে কেটে গেল।
-তরতর করে?ছেলেটার কথা একবার ভাবো।রোজ-রোজ কেমন কাশী-সর্দিতে ভোগে সোন?
-সেটা ঠিক বলেছ।কিন্তু সোনের জন্মস্থান এই বাড়ীটাই।তা ভুললে চলবে না।তাছাড়া দোতলায় থাকা আমাদের বাড়ীওয়ালা, তার স্ত্রী এবং ছেলেটাও খুউব সজ্জন।
-আমি শুধু সোনের কথা ভাবতে বলছি বারংবার।
-দেখছি কি করা যায়? তবে এখানকার মতন জমজমাট এলাকা তুমি আর নাও পেতে পারো।
-কথাটা ঠিক।সামনেই ওষুধের দোকান থাকায় সোনের জন্য ওষুধ খুব সহজেই পাওয়া যায়।তবে প্রায় সব রকম জিনিষের বিপণি এই চত্বরে।
আবার ইতু জানায়, ল্যাণ্ডফোনে কদিন আগেই একটা কণ্ঠস্বর ভেসে আসে।ওপার থেকে খসখসে গলায় কে যেন বলে, ম্যাডাম, বাড়ী ভাড়া চাই।
-তুমি নামটা জিজ্ঞেস করলে না!
-ঐ কটা কথা বলেই লাইনটা কেটে দিল!
মাথা চুলকে সুজান বলে, তোমার পদম সিংয়ের কথা মনে আছে। নামকরা দালাল।এক ডাকেই লোক চেনে।
-হ্যাঁ। ঐ তো দশ বছর আগে এই বাড়ীটা ঠিক করে দিয়েছিল।
সোন মা-বাপীর আলোচনা হাঁ করে শুনছিল। পড়া মাথায় উঠেছে।
-আমি ওর অফিসটা চিনি। আগামীকালই ওর অফিসে যাব অন্য বাড়ীর খোঁজে।
যথারীতি পরদিন সময় করে পদম সিংয়ের অফিসে আসে।কাছে এসে সে হতবাক।ভাগ্য মন্দ।তাই অফিস বন্ধ।সুজান এখন বেশ কিছুদিন এখানে থাকবে। তাই পরপর আরো দুদিন সেখানে গিয়ে দেখল, অবস্থা তথৈবচ।
এবার বাড়ীতে ফিরে ইতুকে বলে, ওর মোবাইল নাম্বার আমাদের ফোন-বুকে আছে না।
-মনে হয় আছে।ফোনের নোটবুকটা তন্নতন্ন খুঁজে অবশেষে পদম সিংয়ের মোবাইল নাম্বার পেল।
তৎক্ষণাৎ ফোন করে তিনবারের প্রয়াসে তাকে পেল সুজান।
-হ্যালো, কে বলছেন?
-আমি সুজান গাঙ্গুলী।
-কি ব্যাপারে?
-আমরা এই বাড়ীটা বদল করে অন্য ভাড়া বাড়ীতে যেতে চাই।
-আচ্ছা, আমি ঠিক সন্ধে ৭-টার সময় আপনার কাছে আসছি।
সন্ধে ঠিক ৭-টায় তারস্বরে কলিং বেল বেজে ওঠে।
দরজা খুলে সুজান দেখে মাক্স-পরিহিত আষ্টেপৃষ্টে আলোয়ান জড়িয়ে একটা লোক সামনে দাঁড়িয়ে।
-নমস্তে,হামি পদম সিং।
-পদম, ঘরে এসো না।
-নাহ, ঘরে ঢুকব না। আপনাকে কালকেই বাড়ী দেখাব।পসন্দ না হলে আরেকটা।
তারপরে আরেকটা…।আপনি বিকেল তিনটের সময় ঐ তেমাথা মোড়ের শ্যাওড়া গাছের নীচে আমাকে পাবেন।
পরদিন বিকেল তিনটের সময় সেখানে গিয়ে ঐরকমভাবেই পদম সিংকে পেল সুজান।
চুপচাপ তাকে অনুসরণ করে সুজান এগিয়ে চলে। একটা বাড়ীর সামনে এসে তর্জনী তোলে পদম।কিন্তু সেই বাড়ীটা পছন্দ হল না সুজানের।একইরকম স্যাঁতসেতে, ঠাণ্ডা-ঠাণ্ডা ভাব।এবার আরেকটি জঙ্গলাকীর্ণ বাড়ীর কাছে এসে ওরা থমকে দাঁড়ায়।পদম বাড়ীর দিকনির্দেশ করে সুজানকে দেখে আসতে বলে। ভীষণ গা-ছমছম পরিবেশ। তার মনে হয়, রাতে এইসব স্থান বিপজ্জনক।সাপ-খোপও থাকতে পারে।তাই সেটাও নাকচ হয়ে গেল।
এবার পদম তৃতীয় বাড়ীটির দিকে নিয়ে গেল। বাড়ীতে সুজান কলিং বেল টিপলে বাড়ীর কর্তা নেমে এলেন দোতলা থেকে।
জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার?
-আমি বাড়ীটা দেখতে চাই।
ভালো করে দেখেশুনে বাড়ীটা পছন্দ হল তার।একটা ঘরে পূব ও দক্ষিণে জানলা আছে। আরেকটা ঘর, বাথরুম সব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। তাই একমাসের অগ্রিম ঐ কর্তাকে দিয়ে বলে, আমরা সামনের সপ্তাহেই আসছি।
এবার পদমের কাছে ফিরে এসে তাকে কমিশন বাবদ ১৫০০/-টাকা দিল।হাত পেতে নিয়ে সে হনহন হেঁটে চোখের নিমেষে মিলিয়ে গেল। ভারী অদ্ভূত লাগল দালালটাকে।
ইতুকে ইতি-বৃত্তান্ত খুলে বলে সুজান জানায়, সামনের সপ্তাহেই তারা বাড়ী বদল করবে।এবার তো শান্তি! সোনকে আর ভোগান্তি সহ্য করতে হবে না।
বাক্স-প্যাঁটরা সব বাঁধা-ছাদা করে একটা ছোট ভাড়া গাড়ীতে তারা এখান থেকে দূ কিলোমিটার দূরত্বে ভাড়া-বাড়ীতে এল।ঘুরেফিরে ইতুর খুব পছন্দ হয়েছে।বলেই ফেলে, তপনকিরণ পূবদিকে এবং দক্ষিণে দক্ষিণা বায়ু। দুজনে মিলে দুটো ঘরই গুছিয়ে ফেলল।সোনও খুব উচ্ছ্বসিত।
খুব স্বাস্থ্যকর বাড়ী বলেই মনে হল ইতু আর সুজানের।তবে রহস্য অপেক্ষা করে আছে। রাতে অবশ্য কদিন কোনো উপদ্রব হল না। কিন্তু শুক্কুরবার রাতে অস্বাভাবিক গন্ধ পেল দুজনায়।রাত প্রায় ১-টায় দুজনার ঘুম ভেঙে গেল ঘুঙুরের আওয়াজে।পাশের ঘরে কারা যেন ঘুঙুর পায়ে ধিন-তা-ধিন করছে। শিরদাঁড়া বেয়ে হিমেল স্রোত যেন নেমে গেল।সুজানের মনে হল, এটা কি হচ্ছে?গভীর রাতে এত ঘুঙুরের কলতান!বাইরে যেতে ভয়-ভয় করছে।তাই শুয়ে শুয়ে রহস্যের কথা ভাবতে ভাবতেই ভোর হয়ে গেল।সেই নিক্বণও অনেক আগেই আপনা-আপনি থেমে গেছে।
ইতু শুধোয়, তুমি কাল রাতে শুনেছো?
-হ্যাঁ শুনেছি। তবে ব্যাপারটা কিছু বুঝলাম না।
-স্যাঁতসেতে বাড়ী ছেড়ে শেষমেশ ভূতের খপ্পরে।
এবার থেকে প্রতি শুক্রবার গহন রাতেই সেই ঘুঙুরের চরম লীলা। সুজান আর ইতু বিষয়টা নিয়ে খুউব মনোযোগী। সোন দারুণ ঘুমে আচ্ছন্ন থাকায় ঐ বিষয়ে কিচ্ছুটি জানে না।
এবার মাসখানেক বাদে এক শুক্রবারে বাড়াবাড়িটা একটু বেশীই হল।তাদের বন্ধ ঘরের দরজার ঘুঙুরের আওয়াজ থমকে দাঁড়ায়।এরপর ছিটকিনি লাগানো দরজাটা দড়াম করে খুললে শীতল হাওয়া ঘরে ঢুকল।
সুজান চেঁচায়, কে? কে? কে?
তৎক্ষণাৎ চার-ব্যাটারীর টর্চ জ্বালিয়ে দেখল, আবছা এক ছায়ামূর্তি দেখা দিয়ে চোখের নিমেষে পাশের ঘরে চলে গেল।সাহস ভরে সুজান ঘরের বাইরে পা রেখে কিছু বোঝার চেষ্টা করে। টর্চ জ্বালিয়েও অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়ে না। আবার দরজা বন্ধ করে নিজ-শয্যায় ফিরে আসে।
পরদিন দুজনেই ভাবে, এবার আবার বাড়ী-পরিবর্তনের দরকার।আর যাই হোক, অশরীরী আত্মা নিয়ে থাকা যায় না। কিন্তু এক্ষণে পদম সিংকে বারবার ফোন করলেও ওপাশে নিরুত্তর।
এ জায়গাটা খুব নিরিবিলি। তবে কাছেই একটা পান-বিড়ির দোকান আছে।মরীয়া হয়ে সুজান দোকানের মালিককে অদূরে ঐ ঐ বাড়ীটাকে দেখিয়ে বলে, আমরা ঐ বাড়ীতেই ভাড়া এসেছি।
-ওখানে থাকতে পারছেন?ঐ বাড়ীতে আগেও কোনো ভাড়াটে টেঁকে নি।
-কেন? কেন? কেন?
-ওখানে এক নর্তকী দিদিমণির স্কুল ছিল।কিন্তু বাড়ীতে প্রায়ই অশান্তি হত।তাই সেই দিদিমণি আত্মহত্যা করে।তেনারই অতৃপ্ত আত্মা নাকি ঘুরে বেড়ায়।
-ঠিক বলেছেন। তবে প্রতি শুক্রবার কেন?
-কারণ কোনো এক শুক্রবারেই গলায় ওড়নার ফাঁস লাগিয়ে সিলিং থেকে ঝুলেছিল দিদিমণি।
-আমরাও আর থাকতে পারব না।শুক্রবার এলেই আমার ভয়-কাঁপুনি শুরু হয়।এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা আমাদের আচ্ছন্ন করে ফেলে।
-আপনি এক কিলোমিটারের মধ্যে “সুহান এপার্টমেন্ট”-এ ফ্ল্যাট কিনতে পারেন।
বিষয়টা সুজানের ভালো লাগে। কিন্তু আরো বিষ্ময় তার জন্য অপেক্ষায় ছিল।
দোকানের মালক শুধোয়, আপনাকে ঐ বাড়ীটার সন্ধান কে দিয়েছিল?
-পদম সিং।
-কি নাম বললেন?
-কেন পদম সিং?
-সে কি?তার ছানাবড়া চক্ষু দেখে সুজানও হতচকিত।
আমতা-আমতা করে সে শুধোয়, তাহলে কারণটা কি?
-পদম বছরখানেক আগেই করোনায় মারা গেছে।
এবার সব জলবৎ তরলম সুজানের কাছে।পদমের অস্বাভাবিক আচরণ তাকে সন্দেহের চরম সীমায় পৌঁছে দিয়েছিল।
বাড়ী ফিরে ইতুকে বলে, দেখেছ, ভূত একটা ভূতের বাড়ীর খোঁজ দিয়েছে।
-তার মানে?
-পদম না ফেরার দেশে চলে গেছে। আর এখনকার বাড়ীটা তো বুঝতে পারছো।
-তালে এখন কি করবে?
-ভাবছি ফ্ল্যাট কিনব। সেখানেই উঠে যাব।
অর্থ্যাৎ আবার বাড়ীবদল দুজনার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সেসব শুনে সোন হাততালি দিয়ে বলে, কি মজা! কি মজা! আমাদের নতুন বাড়ী হবে।

1 thought on “বাড়ীবদল || Soumendra Dutta Bhowmick”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *