Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বাড়িওয়ালা || Tarapada Roy

বাড়িওয়ালা || Tarapada Roy

গল্পটা অনেক দিনের পুরনো।

তখনও পেপসি-কোকাকোলার যুগ আসেনি। সেটা ছিল লেমোনেড, সোডা ওয়াটারের যুগ। সেই সময় ঘোরতর বৃষ্টির দিনে ফুটো ছাদ দিয়ে প্রচুর জল পড়ায় বিপন্ন ভাড়াটে বাড়িওয়ালাকে অভিযোগ করেছিলেন, ‘আপনার ছাদ দিয়ে বৃষ্টির জল পড়ছে।’

এই অভিযোগ শুনে বাড়িওয়ালা রেগে গিয়ে দাঁত খিঁচিয়ে বলেছিলেন বৃষ্টি হলে জল পড়বে না তো লেমোনেড পড়বে নাকি?

গল্পটা পুরনো কিন্তু বোধ হয় সত্যি নয়, একটা উদাহরণ মাত্র, আর তা ছাড়া পুরনো মানেই সত্যি একথাও ঠিক নয়।

যাই হোক বাড়িওয়ালা ভাড়াটের সম্পর্ক অনেক ক্ষেত্রে অতি-জটিল। বাড়িওয়ালা বনাম ভাড়াটে, ভাড়াটে বনাম ভাড়াটে ইত্যাদি বিষয় সিনেমা-থিয়েটার থেকে একালের দূরদর্শন সিরিয়ালে গড়িয়েছে।

এই মুহূর্তে হিন্দি এবং বাংলা মিলিয়ে অন্তত চারটি ধারাবাহিক চলছে, যার উপজীব্য হচ্ছে ভাড়াটে বাড়িওয়ালা সম্পর্ক, কখনও কখনও ভাড়াটে অর্থে মেসবাড়ির বাসিন্দারা।

ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই বিখ্যাত ডায়ালগ ‘মাসিমা মালপুয়া খামু’— সাড়ে চুয়াত্তর নামে অবিস্মরণীয় চলচ্চিত্রের থেকে শুরু করে এই হাল আমলের ‘এক যে আছে কন্যা’এই সব কাহিনীর শিকড় রয়েছে বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে সম্পর্কে।

‘সিঁড়ি দিয়ে শুতে যাই ছাতে’,…প্রেমেন্দ্র মিত্রের সেই বিখ্যাত ‘ভাড়াটে’ কবিতা যেখানে ভাড়াটে বাড়ির দেয়াল নাগরিক জীবনকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। পাশাপাশি শোয়া-থাকা কিন্তু পরস্পরের কোনও যোগাযোগ নেই। এক হৃদয়হীন জগত।

পুরনো ফ্ল্যাট বাড়িগুলোতে এমন হত—অনেকে দশ-বিশ বছর ধরে বাস করছে কেউ-কাউকে ভাল করে জানেন না।

আজকাল অবশ্য হাউজিং এস্টেটের কল্যাণে সমবৃত্তি-সমসংস্কার এবং সমমানসিকতার কারণে একই এস্টেটের অধিকাংশ বাসিন্দাই পরস্পর পরিচিত। কেউ কেউ বিশেষ পরিচিত, ঘনিষ্ঠ।

সামাজিক আনন্দ-উৎসবের মারফতে বিভিন্ন খেলাধুলা ইত্যাদির মাধ্যমে এদের নিয়মিত যোগাযোগ। হাউজিং এস্টেটের মধ্যে কোন্দল বিবাদ ঈর্ষা রেষারেষি কিছু কম নয়। কিন্তু সে তো মানব ধর্ম।

হাউজিং থাকুক আমরা বাড়িওয়ালা ভাড়াটের দুটো পুরনো গল্প বলি।

স্বামী-স্ত্রী সাত বছরের ছেলেকে সঙ্গে করে বাড়ি ভাড়া করতে বেরিয়েছেন। বাড়িওয়ালা অবশ্য কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন—‘ঝামেলাহীন নিঃসন্তান দম্পতি ভাড়াটে চাই।’ বাড়িওয়ালা আট বছরের ছেলেটিকে দেখে বললেন—না আমি তো বিজ্ঞাপনেই বলে দিয়েছি ছোট ছেলে থাকলে বাড়ি ভাড়া দেব না।

নিরাশ হয়ে দম্পতি ফিরে আসছিলেন এমন সময় ছেলেটি ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল—‘আচ্ছা আপনি আমাকে বাড়ি ভাড়া দেবেন?’ অবাক হয়ে বাড়িওয়ালা বললেন, ‘তোমাকে?’ ছেলেটি বলল, ‘হ্যাঁ।’ বাড়িওয়ালা অবাক হয়ে তাকাতে ছেলেটি বলল, ‘আমার কোনও ছেলেপুলে নেই। আমার শুধু একটা বাৰা আছে আর একটা মা আছে।’

ভাড়াটে কাহিনীর একটি দুঃখের গল্প দিয়ে শেষ করি, এ গল্প আগেও বলেছি কিন্তু বারবার বলার মতো।

শ্রীযুক্ত চপল লাল পাল এক জন প্রগতিশীল কবি, বহু কষ্ট করেও বিশেষ কিছু উপার্জন করতে পারেন না। একটা বাড়ির একতলার ছোট ঘরে ভাড়ায় থাকেন, সে ভাড়াও ছ’মাস বাকি। বাড়িওয়ালা এসে তাগাদা দেওয়ায় চপল লাল তাঁকে বললেন, দেখুন আমি যে আপনার বাড়িতে আছি এটা সামান্য কথা নয়। ভবিষ্যতে বাড়ির সামনে পাথরে লেখা থাকবে, ‘কবি চপল পাল এখানে থাকিতেন।’ বাড়িওয়ালা শুনে বললেন, ভবিষ্যতে নয় আগামীকাল থেকেই লেখা থাকবে— ‘কবি চপল পাল এখানে থাকিতেন’— যদি আজ ভাড়া না মেটান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *