বাঞ্ছারামের বাগান
আজ থেকে প্রায় তিন দশক আগের কথা।বৌ এর সাজে, গিয়ে পৌছেচি এক ছায়াসুনিবিড় শান্তি র এক গ্রামে। বিরাট স্কুলবাড়ি র মতো তিন মহলা বাড়ি ! লোকজন গম গম করছে! বিরাট উঠোনে আলপনা র মাঝে আলতা পাথরে দাঁড়িয়ে আছি! কৌতূহলে চারপাশটা দেখতে পারছি না কিন্তু ইচ্ছে ষোলআনা ॥ চোখ পড়লো উঠোনের কোনে আগুন সাজে ,লালে লাল হওয়া বিরাট পলাশ গাছটাকে॥ চোখ আর মন দুই জুড়িয়ে গেলো॥ সেই প্রথম আমার পলাশ গাছ দেখা॥ তার পর থেকে বাড়ি গেলেই ঐ গাছটার তলায় আডডা জমাতাম ,নন দ ,ভাজ রা মিলে। ঐ পলাশ ফুল দিয়ে রঙ বানিয়ে দোল খেলেছি॥গাছটার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেছলো প্রথম দেখা তেই॥ আমার দেশের বাড়ি র স্মৃতির একটা বড় অংশ জুড়ে আছে এই গাছটা!আমার বন্ধু দের দেওয়া ডাক নাম ফাগুন॥ পলাশ তো ফাগুনের ফুল!মানে আমার ফুল ॥ যখন ই বাড়ি যেতাম ঐ গাছটাই যেন স্বাগত জানাতো॥ সবাই রাগাত আমাকে,গাছটাকে ভালোবাসতাম বলে॥
বলতো, গন্ধ হীন , রূপ সর্বস্ব ফুল॥আমার কষ্ট হতো,তবুও ঝগড়া করতাম না । ওর বীজ এনে আমার শহরের বাড়ি তে লাগিয়েছি॥ কিন্তু গাছ হয় নি । মনে হতো শহরের কৃত্রিম পরিবেশ ও ভালোবাসে না , তাই হচ্ছে না ॥ দেখতে দেখতে দণ্ড পলের হিসেবে প্রায় তিন দশক কেটে গেছে॥আমার শহরের বাড়ির পাশে,মাঠের ধারে একটা পলাশ গাছ,আমি নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারি নি ॥ ঠিক দেখছি তো? খুব আনন্দ হলো ! সকলে বেড়া তে যাওয়া শুরু করলাম ওই পথে॥ গত বছর মেয়ের বিয়ে উপলক্ষ্য করে দেশের বাড়ি গেলাম!নূতন ঘরবানানো র জন্য পলাশ গাছ টা কাটা পড়েছে॥ ফাঁকা উঠোন টা দেখে বুক টা ছ্যাঁত !করে উঠলো॥ কি বিরাট শুন্যতা!ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না ॥ নিজে র অজান্তেই দুচোখের কোল উপচে পড় লো॥ বুঝলাম ওখান থেকে চলে গিয়েও নব রূপে আমার সামনে এসেছে,”বন্ধু পলাশ” ”ফুরায় যা তা ফুরায় শুধু চোখে,”