Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

বালক দুই পা দিয়া ঘোড়ার পেট চাপিয়া ধরিতেই ঘোড়া লাফাইয়া সম্মুখ দিকে অগ্রসর হইল। আকিয়া বাঁকিয়া পার্বত্য হরিণের মতো পাথর হইতে পাথরের উপর ধাপে ধাপে লাফাইয়া পড়িয়া বিদ্যুদ্বেগে নীচের দিকে অদৃশ্য হইল।

দাদো বালকের উচ্চ কণ্ঠস্বর দূর হইতে শুনিতে পাইলেন, চলে এসো দাদো, দেওরামের ঘর ঝণতিলার টালের উত্তর দিকে কুলগাছের জঙ্গলের মধ্যে; যদি খুঁজে না পাও, হাঁক দিও— নুন্না এসে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে।

বৃদ্ধ পর্বত হইতে অবতরণ করিয়া বন্দরীবনের মধ্যে যখন দেওরামের কুটির অঙ্গনে পৌঁছিলেন, তখন দেখিলেন একটি বারো-তেরো বছরের মাওলী চাষার মেয়ে একটা ক্ষুদ্রকায় গাভীকে দোহনের চেষ্টা করিতেছে এবং বালক ঘোড়া ছাড়িয়া দিয়া অদূরে দাঁড়াইয়া সকৌতুকে সেই দৃশ্য দেখিতেছে। গাভীটা বোধ হয় অপরিচিত ব্যক্তি ও ঘোড়া দেখিয়া ভয় পাইয়াছে, তাই কিছুতেই স্থির হইয়া দাঁড়াইয়া দুগ্ধ দোহন করিতে দিতেছে না, চেষ্টা করিবামাত্র সরিয়া সরিয়া যাইতেছে।

মেয়েটি বিব্রত হইয়া বলিল, তুমি ওর শিং দুটো একবার ধরে না, নইলে বজাত গরু কিছুতেই দুইতে দেবে না।

বালক গরুর শিং ধরিবার কোনও চেষ্টা না করিয়া তামাসা করিয়া বলিল, তুই কেমন মাওলার মেয়ে— গাই দুইতে জনিস না? দাঁড়া, বিশুয়াকে বলে দেব, সে আর তোকে বিয়ে করবে না।

ক্ষুব্ধ লজ্জায় নুন্না এতটুকু হইয়া গিয়া বলিল, তোমার ঘোড়া দেখেই তো আজ ও অমন করছে, নইলে আমিই তো রোজ দুই।

বালক মুরুবিয়ানা দেখাইয়া বলিল, হ্যাঁ, দুই! আর বড়াই করতে হবে না। দে আমায় ঘটি, আমি দুয়ে দিচ্ছি।

নুন্না বলিল, তুমি পারবে না। আমি আর বাবা ছাড়া কেউ ওকে দুইতে পারে না। তোমাকে ও এখনি ফেলে দেবে।

বালকের আত্মাভিমানে ভীষণ আঘাত লাগিল, সে তর্জন করিয়া বলিল, কি! ফেলে দেবে! দেখি তো কেমন তোর গরু? দে ঘটি।

নুন্নার হাত হইতে জোর করিয়া ঘটি কড়িয়া লইয়া বালক দুগ্ধ দোহন করিতে বসিল। গরুটা ঘাড় বাঁকাইয়া একবার দোহনকারীকে দেখিয়া লইয়া চক্রাকারে ঘুরিতে আরম্ভ করিল। কিন্তু বালকও ছাড়িবার পাত্র নয়, ঘটি লইয়া মুখে নানাপ্রকার গ্ৰীতিসূচক শব্দ করিতে করিতে তাহার পশ্চাতে ঘুরিতে লাগিল। অবশেষে কি মনে করিয়া গাভীটিা দাঁড়াইয়া পড়িল। তখন বালক সন্তপণে তাহার দেহে হাত বুলাইয়া দিয়া গাভীর পশ্চাদিকে বসিয়া দুই জানুর মধ্যে ভাণ্ডটি ধরিয়া যেমন গাভীর উদ্ধসের দিকে হাত বাড়াইয়াছে, অমনি গাভী এক চরণ তুলিয়া তাহাকে এরূপ সবেগে পদাঘাত করিল যে বালক ভাণ্ডসমেত চিৎ হইয়া মাটিতে পড়িয়া গেল।

নুন্না কলকণ্ঠে উচ্চহাস্য করিয়া উঠিল। গাভীটা যেন কর্তব্যকর্ম সুচারুরূপে সম্পন্ন করিয়া স্থির হইয়া দাঁড়াইয়া রোমন্থন করিতে লাগিল।

বৃদ্ধ দাদো অশ্ব হইতে অবতরন করিয়া বালকের কাছে আসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, লেগেছে নাকি?

বালক অঙ্গের ধূলা ঝাড়িতে ঝাড়িতে উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলিল, গরু নয়-ঘোড়া। গরু কখনো আমন চাট ছোঁড়ে? নে নুন্না, তোর ঘটি, আমি ঘোড়ার দুধ খেতে চাই না। বাড়ি চললুম।

বালক আশ্বপৃষ্ঠে উঠিতে যায় দেখিয়া নুন্না মিনতি করিয়া বলিল, আর একটু দাঁড়াও না, বাবা এলো বলে। বড্ড ক্ষিদে পেয়েছে বলছিলে–ঘরে বাজরার রুটি আছে, এনে দেব?

বালক বলিল, না, তোর রুটি-দুধ—কিছু খেতে চাই না। আমি চললুম।

এমন সময় কুটিরের পশ্চাতের ঘন ঝোপের ভিতর হইতে দুইটি লোক বাহির হইয়া আসিল। একজন খর্বকায় বৃষস্কন্ধ মধ্যবয়স্ক লোক, অপরটি পাঁচশ-ছাব্বিশ বছর বয়সের দৃঢ়শারীর যুবা। হাতের বল্লম কুটিরের গায়ে হেলাইয়া রাখিয়া মধ্যবয়সী লোকটি দ্রুতপদে আসিয়া বালকের ঘোড়ার রাশ ধরিল। বালক তখন ঘোড়ার উপর চড়িয়া বসিয়াছে, লোকটি সানুনয় নিম্নকণ্ঠে বলিল, রাজা, ঘোড়া থেকে নামো, দুধ না খেয়ে যেতে পাবে না।

যুবকটিও এতক্ষণে সসন্ত্রম হাস্যোজ্ঞাসিত মুখে নিকটে আসিয়া দাঁড়াইয়াছিল। বালক একলম্ফে ঘোড়া হইতে নামিয়া দৌড়িয়া গিয়া নুন্নার চুলের মুঠি ধরিল, তাহাকে চুল ধরিয়া টানিতে টানিতে যুবকের সম্মুখে লইয়া গিয়া প্রায় তাহার বুকের উপর ফেলিয়া দিয়া বলিল, এই নে বিশুয়া, এটাকে তুই ঘরে নিয়ে যা, তোর সঙ্গে ওর বিয়ে দিলুম। যদি বজ্জাতি করে, খুব পিটবি। আর ওই হতভাগা গরুটাকেও তুই নিয়ে যা, ওটা হল তোর বিয়ের যৌতুক।

নুন্না বালকের হাত ছাড়াইয়া কুটিরের ভিতর পলাইয়া গেল। বিশুয়া হাসিতে হাসিতে হেঁট হইয়া বালকের পদস্পর্শ করিয়া বলিল, তুমি যখন দিলে রাজা, তখন আর আমার ভাবনা কি! এবার ঘোড়ার পিঠে তুলে ওকে ঘিরে নিয়ে যাব। কি বলো, দেওরাম?

দেওরাম গম্ভীরভাবে একটু হাসিয়া বলিল, তা যাস। রাজা যখন তোর হাতে নুন্নাকে দিয়েই দিয়েছে, তখন আর আমি কি বলব? আর, আমি নুন্নার মন জানি, সেও তোকেই বিয়ে করতে b.

এই সময় নুন্নার হাসিমুখ কুটিরের ভিতর হইতে পালকের জন্য দেখা গেল। সে কুটির-দ্বার বন্ধ করিয়া দিল।

দেওরাম ভূপতিত ঘটিটা তুলিয়া লইয়া দুগ্ধ-দোহনে প্ৰবৃত্ত হইল। গাভীটা এবার আর কোনও আপত্তি করিল না।

বৃদ্ধ দাদো এতক্ষণ অদূরে দাঁড়াইয়া ইহাদের কথাবার্তা শুনিতেছিলেন। তাহার মুখে সংশয় ও সন্দেহের ছায়া ঘনীভূত হইতেছিল। এই নির্জন বনের মধ্যে একটিমাত্র কুটির, তাহার অধিবাসী এই ভীমকায় দেওরাম। ইহারা কে এবং বালকের সহিত ইহাদের পরিচয় হইল কিরূপে?

তিনি অগ্রসর হইয়া বিশুয়াকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমরা একে চিনলে কি করে?

নিমেষের জন্য বিশুয়া ও বালকের চোখে চোখে একটা ইঙ্গিত খেলিয়া গেল। বিশুয়ার মুখ ভাবলেশহীন হইয়া গেল, সে কিছুক্ষণ নীরব থাকিয়া বলিল, দরবারে ওঁকে দেখেছি, উনি জাগীরদারের ছেলে।

বৃদ্ধ সন্দিগ্ধভাবে পুনশ্চ প্রশ্ন করিলেন, তোমরা ওঁকে রাজা বলে ডাকছ কেন?

বিশুয়া কোনও উত্তর খুঁজিয়া পাইল না, দুগ্ধদোহন করিতে করিতে দেওরাম জবাব দিল, জাগীরদারের ছেলে, উনিই একদিন মালিক হবেন, তাই রাজা বলে ডাকি।

দাদো উত্তরে সন্তুষ্ট হইলেন না, বলিলেন, ইনি জায়গীরদারের মেজো ছেলে তাও জানো না? সে যাক— বালকের দিকে ফিরিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, কিন্তু তুমি এদের চিনলে কি করে জিজ্ঞাসা করি?

বালক অত্যন্ত সরলভাবে উত্তর করিল, শিকার করতে এসে এদের সঙ্গে ভাব হয়েছে, দাদো। তুমি তো আর প্রত্যেকবার আমার সঙ্গে আসো না, তাই জানো না। কতবার শিকার করে ফেরবার মুখে দেওরামের জোয়ারী রুটি খেয়েছি— দেওরাম আমাকে ভারী যত্ন করে।

দাদো বালকের ছলনাহীন মুখের দিকে কিয়ৎকাল তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাইয়া থাকিয়া শুধু কহিলেন, আিৰ্হ। মনে মনে ভাবিলেন, — তোমার গতিবিধির উপর এখন হইতে একটু বিশেষ লক্ষ্য রাখিতে হইবে। ব্যাপার ঠিক বুঝা যাইতেছে না।

ধারোষ্ণ দুগ্ধের পাত্ৰ আনিয়া দেওরাম বালকের হাতে দিল। বালক জিজ্ঞাসা করিল, তুমি খাবে না?

দাদো কহিলেন, না, তুমি খাও। আমার এখনো আহ্নিক বাকি।

দুগ্ধপাত্র দুই হস্তে ধরিয়া বালক অদূরে একটি শিলাখণ্ডের উপর গিয়া বসিল। দেওরামও তাহার অনুবর্তী হইয়া পাশে গিয়া দাঁড়াইল। এক চুমুক দুগ্ধ পান করিয়া বালক অন্যমনস্কভাবে আকাশের দিকে তাকাইয়া নিম্নস্বরে বলিল, পরশু অমাবস্যা।

দেওরামও অলসভাবে ঊর্ধ্বে দৃষ্টি করিয়া অস্ফুটস্বরে বলিল, হ্যাঁ। লোক সব তৈরি আছে। কোথায় থাকতে হবে?

রাক্ষসমুখো গুহর মধ্যে। আমি দেড় পািহর রাত্রে আসব। পঁচিশ জনের বেশি লোক যেন না হয়।

বেশ। এবার কোন দিকে যাওয়া হবে?

উত্তর দিকে। দক্ষিণে আর নয়, সেদিকে বড় হৈ চৈ হয়েছে। দরবার পর্যন্ত খবর গেছে। দাদো তাহাদের দিকে লক্ষ্য করিতেছেন দেখিয়া দেওরাম প্ৰকাণ্ড একটা হাই তুলিয়া অপেক্ষাকৃত উচ্চকণ্ঠে বলিল, আচ্ছা। হরিণ কিন্তু এদিকে পাওয়া যায় না।

বালক বাকি দুগ্ধটুকু নিঃশেষে পান করিয়া উঠিয়া দাঁড়াইয়া সহজভাবে বলিল, আজ তাহলে চললুম, দেওরাম। নুন্নার বিয়ের দিন আমাকে খবর দিও–আমি দাদোকে নিয়ে আসব। দাদো একজন ভারী শাস্ত্ৰজ্ঞ পণ্ডিত জানো তো? উনিই নুন্নার বিয়ে দেবেন।

ঘোড়ার পিঠে একলাফে উঠিয়া বালক বলিল, আর যদি হরিণাছানা পাও, পুণায় নিয়ে যেও। আর দেরি করব না, রাত হয়ে এলো। দাদোর আবার ভারী ডাকাতের ভয়।

বিশুয়া ও দেওরাম দাঁড়াইয়া রহিল, অশ্বারোহী দুইজনে বদরীকানন পার হইয়া ঝরনার সঞ্চিত অগভীর ক্ষুদ্র জলাশয়ের পাশ দিয়া আবার পাহাড়ে উঠিতে আরম্ভ করিল। এইটি শেষ পাহাড়ইহার পরই উপত্যক। কিছুক্ষণ কোনও কথা হইল না, দুইজনেই স্ব স্ব চিন্তায় মগ্ন। এদিকে অন্ধকার গাঢ় হইয়া আসিতেছে। ঘোড়া দুটি সতর্কভাবে পর্বতগাত্র আরোহণ করিতেছে।

হঠাৎ চমক ভাঙিয়া বালক দাদোর দিকে দৃষ্টিপাত করিল, দেখিল দাদো তাঁহারই মুখের প্রতি সন্দেহাকুল চক্ষে চাহিয়া আছেন। বালক অপ্ৰতিভ হইয়া পড়িল, তারপর জোর করিয়া হাসিয়া বলিল, কি দেখছো, দিগদো? এবার আমার মার বিয়ের গল্প বলে।

বৃদ্ধ দীর্ঘশ্বাস মোচন করিয়া কিয়াৎকাল নিস্তব্ধ হইয়া রহিলেন, আপনার মনে বলিলেন, বংশের ধারা বদলানো যায় না; বাঘের বাচ্চা বাঘই হয়, শৃগাল হয় না— ঈশ্বরের এই বিধান। কে জানে, হয়তো এর মধ্যে মঙ্গলেরই বীজ নিহিত আছে।

বালক তাঁহাকে দীর্ঘকাল চিন্তা করিবার অবকাশ না দিয়া পুনশ্চ কহিল, বলো না, দাদো?

দাদো আবার একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া বলিতে আরম্ভ করিলেন, গল্প অতি সামান্যই। কিন্তু তোমার ঠাকুদা মালোজী ভোঁসলে যে কি রকম চতুর ছিলেন, এই গল্প থেকে তার পরিচয় পাওয়া যায়।

তোমার মাতুলবংশের মতো এতবড় বিখ্যাত যশস্বী বংশ দক্ষিণাত্যে খুব অল্পই আছে। আজ থেকে নয়, চারশো বছর আগে আলাউদ্দিন খিলজির আমল থেকে দেবগিরির যদুবংশের নাম দক্ষিণাত্যের পাথরে পাথরে তলোয়ার দিয়ে খোদাই হয়ে আসছে।

অতীতের কোন যুগে এই যদুবংশ রাজপুতানা থেকে এসে দেবগিরিতে রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সে কাহিনী লুপ্ত হয়ে গেছে। দেবগিরির রাজ্যও আর নেই; কিন্তু বীরত্বে, ধর্মনিষ্ঠায়, মহানুভবতায় এই বংশ আজ পর্যন্ত হিন্দুমাত্রেরই আদর্শ হয়ে আছে।

এ-হেন বংশে তোমার দাদামশায় লিখুজী যদুরাও একজন পরাক্রমশালী মহাতেজস্বী পুরুষ ছিলেন। দশ হাজার সিপাহী নিত্য তাঁর রুটি খেত। বিজাপুর-গোলকুণ্ডা তাঁকে যমের মতো ভয় করত, আমেদনগর রাজ্যের তিনি ছিলেন প্ৰধান স্তম্ভ। মালিক অম্বর যদি তাঁর সঙ্গে কপটাচারিতা না করত— কিন্তু সে অন্য কথা। এখন আসল গল্পটা বলি।

সে আজ বহুদিনের ঘটনা, তখন আমার বয়স দশ—এগারো বছরের বেশি নয়; কিন্তু সেদিনকার প্রত্যেক ঘটনাটি স্পষ্ট মনে আছে। সেদিন ছিল ফাঙ্গুনী পৌর্ণমাসী, রাজপুতদের একটা মস্ত উৎসবের দিন। দাক্ষিণাত্যে দোলপূর্ণিমার দিন আবীর খেলার প্রথা এই যদুবংশই প্রচার করেছিলেন। সেদিন দেশের সমস্ত গণ্যমান্য লোক, এমন কি বিজাপুর, গোলকুণ্ডা, আমেদনগর দরবারের বড় বড় হিন্দু আমীর-ওমরা এসে লখুজীর কেল্লার মতো বিশাল ইমারতে জমা হতেন। সমস্ত রাত্ৰিদিনব্যাপী উৎসব চলত, ফাগ, রং এবং সুরার স্রোত বয়ে যেত।

সেবার লখুজীর প্রকাণ্ড প্রাসাদের দরবার-ঘরে মজলিস বসেছে। মেঝের ওপর পাসী। গালিচা পাতা, তার ওপর অনেকে বসেছেন; দরবার লোকে লোকরণ্য। সিপাহী থেকে সদাির পর্যন্ত সকলের অবাধ যাতায়াত। সামান্য সৈনিক পাঁচহাজারী সদরের মুখে আবীর মাখিয়ে দিচ্ছে, মনসবদার সিপাহীকে মাটিতে ফেলে তার মুখে মদ ঢেলে দিচ্ছে। হাসির হররা ছুটছে। ছোট বড়, উচ্চ নীচ কোনও প্ৰভেদ নেই, এই একদিনের জন্যে সকলে সমান। সবাই আমোদে মত্ত।

সভার মাঝখানে মাস্তবড় একটা চাঁদির থালায় আবীর স্তুপীকৃত রয়েছে, সেই থালা ঘিরে প্ৰধান প্ৰধান অতিথিরা বসেছেন। পানদান, গুলাবিপাশ, আতরদান চারিদিকে ছড়ানো রয়েছে। স্বয়ং লখুজী এখানে আসীন; তোমার ঠাকুদা মালোজীও আছেন। মালোজী তখন লিখুজীর অনুগৃহীত একজন সামান্য সদার মাত্র; কিন্তু তাঁর কূটবুদ্ধি ও রণনৈপুণ্যের জন্যে লিখুজী তাঁকে ভারী স্নেহ করতেন। তাই মালোজী ও সাহস করে এই সভায় এসে বসেছেন। সকলের মুখেই আবীরের প্রলেপ, দেহের বস্ত্র এবং মিরজাই রঙে রক্তবর্ণ, চক্ষু ঢুলু ঢুলু। এখানে গানের মজলিস বসেছে; আরো অনেক লোক চারিদিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে গান শুনছে এবং মজা দেখছে।

গান গাইছেন আমেদনগরের একজন বুড়ো ওমরা— তাঁর নাম ভুলে গেছি। মস্ত ওস্তাদ বলে তাঁর খ্যাতি ছিল। গড়গড়া টানতে টানতে হঠাৎ তিনি বসন্তরাগের এক তান মারলেন— সুরের ধমকে পাকা গোঁফ থেকে একরাশ আবীর উড়ে গেল। তোমার ঠাকুদা মালোজী সারঙ্গী কোলে করে ওস্তাদের পিছনে বসে ছিলেন, তিনি সঙ্গে সঙ্গে সংগীত আরম্ভ করলেন। লখুজী নিজে মৃদঙ্গ বাজাতে লাগলেন।

গান থামলে প্রশংসাধ্বনির একটা ঝড় বয়ে গেল, লখুজী পাখোয়াজ ফেলে প্ৰায় এক তোলা অম্বুরী আন্তর পলিতকেশ গায়কের গোঁফে মাখিয়ে দিয়ে দাঁড়ি ধরে নেড়ে দিয়ে বললেন, কৎল কিয়া বিবি! আর একঠো ফর্মাও!

বৃদ্ধ দন্তহীন হাসি হেসে চোখ ঠেরে আবার গান ধরলেন, চোলিমে ছিপাউঁ কৈসে যোবনা মোরি।

বিরাট হাসির একটা হিল্লা পড়ে গেল। লখুজী ওস্তাদকে কোলে তুলে নিয়ে নৃত্য শুরু করে দিলেন। — কি আনন্দের দিনই গিয়েছে; এখন সব স্বপ্ন বলে মনে হয়।

দাদো একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিলেন।

ঘোড়া দুইটি ইতিমধ্যে পর্বত পার হইয়া উপত্যকায় নামিয়া আসিয়াছে, কিন্তু পথ এখনো শিলা-সংকুল। আশেপাশে মাটি ফাটিয়া বড় বড় খাদ রচনা করিয়াছে। শুষ্ক পয়ঃপ্রণালীর মতো এই খাদগুলি অন্ধকারে বড়ই বিপজ্জনক, ঘোড়া একবার পা ফস্কাইয়া উহার মধ্যে পড়িলে কোথায় অন্তৰ্হিত হইবে তাহার স্থিরতা নাই। এদিকে দিবার দীপ্তিও সম্পূর্ণ নিবিয়া গিয়াছে, কেবল সম্মুখে বহুদূরে পুণার দীপগুলি মিটমিটু করিয়া জ্বলিতেছে।

বালক একাগ্রমনে গল্প শুনিতেছিল, দাদো থামিতেই সাগ্রহে গলা বাড়াইয়া বলিল, তারপর?

দাদো বলিলেন, আিৰ্হশিয়ার হয়ে পথ চলো, রাস্তা বড় খারাপ।৷ তারপর গল্প আরম্ভ করিলেন, দুটি ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে এই দরবার ঘরের চারিদিকে খেলা করে বেড়াচ্ছিল, দুজনেরই

বছর, আর মেয়েটির তিন।

এদের দিকে কারো দৃষ্টি ছিল না, এরা নিজের মনে ঘরময় খেলে বেড়াচ্ছিল। কখন এক সময় মেয়েটি দূর থেকে ছেলেটিকে দেখতে পেয়ে তার সামনে এসে দাঁড়াল, গভীর মুখে ছেলেটির আপাদমস্তক দেখে নিয়ে আধ-আধি ভাষায় প্রশ্ন করলে, তুমি কে?

ছেলেটিও মেয়েটির দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে বললে, আমি শাহু। আমি তীর ছুড়তে পারি। তুমি কে?

মেয়েটির দুই চক্ষু সম্ভ্রমে ভরে উঠল, সে ফুলের মতো ঠোঁট দুটি খুলে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে আস্তে আস্তে বললে, আমি দিদা। তারপর একটু ভেবে আবার বললে, আমার বাবাও তীর

অতঃপর এই বীর এবং বীরকন্যার মধ্যে ভাব হতে বেশি দেরি হল না। শাহু গিয়ে মেয়েটির গলা জড়িয়ে নিলে, মেয়েটিও শাহুর কোমর জড়িয়ে ধরলে। এইভাবে তারা অনেকক্ষণ দরবার-ঘরের চারিদিকে ঘুরে বেড়াতে লাগল। তাদের মধ্যে চুপিচুপি কি কথা হল তারাই জানে। খুব সম্ভব শাহু তার অসামান্য শৌৰ্য-বীর্যের কথা খুব ফলাও করে ব্যাখ্যা করে মেয়েটির ছোট্ট প্রাণটুকু জয় করে নিচ্ছিল। আর মেয়েটিও বোধ হয় নিঃসংশয় সহানুভূতি এবং প্রশং দ্বারা শাহুর বীর-হৃদয় সম্পূর্ণ বশীভুত করে ফেলছিল।

এদিকে গানের মজলিস তখন টিলে হয়ে এসেছে; বৃদ্ধ গায়ক তিন পাত্র গুলাবি সরবত খেয়ে কিংখাপের তাকিয়া হেলান দিয়ে বসে হাঁপাচ্ছেন, — এমন সময় এই দুটি ছেলে-মেয়ে গলা-জড়ােজড়ি করে তাদের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়াল। এতগুলো লোক চারপাশে বসে আছে, কিন্তু সেদিকে তাদের ভ্ৰক্ষেপ নেই, নিজেদের কথাতেই তারা মশগুল। বৈঠকে যাঁরা বসেছিলেন তাঁদের সকলের মুগ্ধ দৃষ্টি একসঙ্গে তাদের ওপর গিয়ে পড়ল। এ কি অপূর্ব আবিভািব! আজি দোলের দিনে সত্যিই কি বৃন্দাবন-লীলা তাঁদের চোখের সামনে অভিনীত হচ্ছে? সকলে চোখ মুছে দেখলেন– তাই তো! ছেলেটির বর্ণ নবজলধরশ্যাম, আর মেয়েটি বিদ্যুল্লতার মতো গৌরী!

মেয়েটির হঠাৎ কি খেয়াল হল, সে আতরদানে তার ছোট্ট চাঁপার কলির মতো আঙুল ড়ুবিয়ে শাহুর নাকের নীচে আঙুলটি বুলিয়ে দিলে। শাহুও আদর-আপ্যায়নে কম যাবার পাত্র নয়, সে চাঁদির থালা থেকে এক মুঠি আবীর তুলে নিয়ে সযত্নে মেয়েটির মুখে কপালে মাখিয়ে দিলে।

সকলে আনন্দে জয়ধ্বনি করে উঠলেন, রাধা-গোবিন্দজী কি জয়!

লখুজী আর মালোজী ছাড়া আর কেউ জানতেন না। এ ছেলে-মেয়ে দুটি কে। লখুজী উচ্চহাস্য করে উঠলেন, তারপর দুটিকে কাছে টেনে নিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে বললেন, রাধা-গোবিন্দজী নয়, এরা আমার মেয়ে আর মালোজীর ছেলে। বন্ধুগণ, এ দুটির বিয়ে হলে কেমন মানায় বলুন তো?

লখুজী পরিহাসচ্ছলেই কথাটা বলেছিলেন, তা ছাড়া গুলাবি সরবতের নেশাও অল্পবিস্তর ছিল। তাঁর কথা শুনে সকলে হেসে উঠলেন, কিন্তু মালোজী ভোঁসলে তৎক্ষণাৎ লাফিয়ে উঠে করজোড়ে সকলকে বললেন, মহাশয়গণ, আপনার সাক্ষী থাকুন, লিখুজী তাঁর কন্যাকে আমার পুত্রের সঙ্গে বাগদত্তা করলেন।

সকলে অবাক হয়ে রইলেন, লখুজীর নেশা ছুটে গেল। তাঁর মুখ আবীর-প্রলেপের ভিতর থেকে ক্ৰোধে কালো হয়ে উঠল। তাঁর মেয়েকে—দেবগিরির রাজবংশের মেয়েকে যে মালোজীর মতো একজন সামান্য প্রাণী নিজের পুত্ৰবধু করবার স্পধর্ণ করতে পারে, এ তাঁর কল্পনারও অতীত; কিন্তু তবু কথাটা যে তাঁর মুখ থেকেই বেরিয়ে গেছে। এ কথাও অস্বীকার করা চলে না। মালোজীর দিকে কট্রমটু করে চেয়ে লিখুজী বললেন, মালোজী, তুমি পাগলের মতো কথা বলছি। আমার মেয়ে রাজার ঘরে পড়বে।

মালোজী পূর্ববৎ জোড়করে বললেন, আমার ছেলে আপনার মেয়ের মুখে আবীর দিয়েছে, আপনার মেয়ে আমার ছেলের মুখে আতর দিয়েছে, তারপর আপনি তাদের কোলে নিয়ে যা বলেছেন তা উপস্থিত সকলেই শুনেছেন। ধর্মতঃ, আপনার মেয়ে আমার ছেলের বাগদত্তা। এখন যদি আপনি সে কথা প্ৰত্যাহার করতে চান, করুন, আমার আপত্তি নেই।

ক্রোধে লিখুজী আসন ছেড়ে লাফিয়ে উঠলেন, কিন্তু মুখ দিয়ে তাঁর কথা বেরুল না। একবার সকলের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলেন, কিন্তু তাঁদের মনোভাব বুঝতেও বিলম্ব হল না; সকলেই নীরবে মালোজীর কথার সমর্থন করছেন। লখুজী নিজের মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে ঝড়ের মতো অন্তঃপুরে চলে গেলেন।

মালোজীও ছেলে নিয়ে ঘরে ফিরে এলেন। চারিদিকে রাষ্ট্র হয়ে গেল যে লখুজীর মেয়ে প্রকাশ্য দরবারে মালোজীর ছেলের বাগদত্তা হয়েছে। কথাটা অবশ্য বেশি দিন চাপা থাকত না, প্রকাশ হয়ে পড়তই; কিন্তু এমনি তোমার ঠাকুন্দর উদ্যম আর তৎপরতা যে সপ্তাহ মধ্যে মহারাষ্ট্রের সর্বত্র এই সুসংবাদ প্রচার হয়ে পড়ল, জনপ্রাণীরও জানতে বাকি রইল না।

লখুজী নিম্বফল ক্রোধে ফুলতে লাগলেন। মালোজীর সঙ্গে তাঁর ঝগড়া হয়ে গেল, এমন কি মুখ-দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেল। তিনি প্ৰতিজ্ঞা করলেন, মালোজীর মতো ধড়িবাজ অকৃতজ্ঞ লোককে আর তিনি কোনও সাহায্য করবেন না, বরং তার যাতে অনিষ্ট হয়। সেই চেষ্টাই

তাঁর প্রতিজ্ঞা কিন্তু রইল না। যতই বছরের পর বছর কেটে যেতে লাগল, ততই তিনি বুঝতে পারলেন চতুর মালোজী তাঁকে কি বিষম ফাঁদে ফেলেছে। তিনি বুঝলেন অন্যত্র মেয়ের বিয়ে দিলে মেয়ে সুখী হবে না, যত তার বয়স বাড়ছে শাহু ছাড়া আর কেউ যে তার স্বামী হতে পারে না, এ ধারণা তার মনে ততই দৃঢ় হচ্ছে। তাছাড়া অন্যের বাগদত্তা মেয়ে কেউ জেনেশুনে বিয়ে করতে চায় না, দু-চারটে ঘরানা ঘরে সম্বন্ধ করতে গিয়ে লজ্জা পেয়ে লিখুজীকে ফিরে আসতে হল। শেষ পর্যন্ত তিনি দেখলেন শাহু ছাড়া জিজার গতি নেই।

এইভাবে ন-দশ বছর কেটে গেছে। মালোজী কপালের জোরে এবং বুদ্ধিবলে খুব উন্নতি করেছেন, বিষয়-সম্পত্তিও হয়েছে। লখুজীর বিদ্বেষ ও অনিচ্ছা ক্রমেই কমে আসতে লাগিল। তারপর একদিন মালোজীকে নিজের বাড়িতে ডেকে পাঠিয়ে তাকে আলিঙ্গন করে বললেন, ভাই, আমারই ভুল; জিন্জাকে তুমি তোমার ছেলের জন্যে নিয়ে যাও।

ব্যাস, আর কি! এইখানেই গল্প শেষ। মালোজীর মতলব সিদ্ধ হল, মহা ধুমধাম করে তোমার বাপের সঙ্গে তোমার মায়ের বিয়ে হয়ে গেল। তখন তোমার মার বয়স তেরো বৎসর, আর শাহুর পনেরো। বিয়ের রাত্রে তোমার মার গবোজ্জ্বল হাসি ভরা মুখ আমার আজও মনে আছে।

তবে একথা ঠিক যে জন্মান্তরের সম্বন্ধ না হলে এত বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে, এতবড় সামাজিক পার্থক্য লঙঘন করে এ বিয়ে কখনই হতে পারত না। তোমার মা-বাবা পূৰ্ব্বজন্মেও স্বামী-স্ত্রী ছিলেন।

বৃদ্ধ দাদো মৌন হইলেন। কিছুক্ষণ কোনও কথা হইল না, দুইজনে নীরবে চলিলেন। অন্ধকার তখন বেশ গাঢ় হইয়াছে, পাশের লোকও স্পষ্ট দেখা যায় না। দাদো লক্ষ্য করিয়া দেখিলেন, বালক দুই কর যুক্ত করিয়া ললাটে ঠেকাইয়া বারংবার কাহার উদ্দেশে নমস্কার করিতেছে। দান্দাে কথা কহিলেন না, অপূর্ব আবেগভরে তাঁহার শরীর রোমাঞ্চিত হইয়া উঠিল।

কিয়ৎকাল পরে একটি দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া অর্ধস্ফুটস্বরে বালক বলিল, কি সুন্দর গল্প! আমার মার মতো এমন মা পৃথিবীর আর কারো নেই—না দাদো?

দাদো সংযতকণ্ঠে বলিলেন, না। তোমার মায়ের মতো এমন অসামান্য নারী আর কোথাও নেই। সেই তিন বছর বয়স থেকে আজ পর্যন্ত দেখে আসছি, এমনটি আর দেখিনি।

পূর্ণ হৃদয় লইয়া দুইজনে নীরব রহিলেন। ক্রমে পুণার আলোক নিকটবতী হইতে লাগিল, পুত্র সমতল ও অনুস্থত হইল। অস্বয় আশু গৃহে পৌঁছবার আশয় দ্রুতবেগে চলতে আরম্ভ করিল।

পুণা পৌঁছিতে যখন পাদক্ৰোশ মাত্র বাকি আছে, তখন কে একজন সম্মুখের অন্ধকার হইতে উচ্চকণ্ঠে হাকিল, হে শিব্বা হো! হে দাদোজী!

বালক শিব্বা চমকিয়া উঠিয়া সানন্দে চিৎকার করিয়া উঠিল, তানা! তানা! তারপর তীরবেগে সম্মুখে ঘোড়া ছুটাইয়া দিল।

অন্ধকারে তানাজী মালেশ্বর ঘোড়ার উপর বসিয়া ছিল, শিব্বা প্ৰায় তাহার ঘাড়ের উপর গিয়া পড়িল।

তানাজি তিরস্কারের সুরে বলিল, আজ কি আর বাড়ি ফিরতে হাওবে না? কোথায় ছিলে এতক্ষণ? মা কত ভাবছেন, শেষে আর থাকতে না পেরে আমাকে পাঠালেন?

শিব্বা ঘোড়ার উপর হইতেই তানাজীর গলা জড়াইয়া ধরিয়া বলিল, মা কোথায় রে, তানা?

তানাজি বলিল, কোথায় আবার—বাড়িতে! দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে পথের পানে চেয়ে আছেন। তোমার এত দেরি হল কেন? গলা খাটো করিয়া বলিল, দেওরামের সঙ্গে দেখা হল নাকি? ওদিকের কি খবর? কবে?

শিব্বা অন্যমনস্কভাবে বলিল, খবর ভালো। অমাবস্যর রাত্রে সব ঠিক হয়েছে — চল তানা, শীগগির বাড়ি যাই। মাকে সমস্ত দিন দেখিনি— ভারী মন-কেমন করছে।

দুই কিশোর বন্ধু তখন নীড়-প্রতিগামী পাখির মতো দ্রুতবেগে গৃহের দিকে অগ্রসর হইল।

বৃদ্ধ দাদোদী কোণ্ডু বহুদূর পশ্চাতে পড়িয়া রহিলেন।

১৩৩৮

Pages: 1 2

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress