বর্ষণমুখর রাত
কড় কড় বাজের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল মলির। মেয়েটা পাশে অঘোরে ঘুমোচ্ছে। যা গরম পড়েছে, দিনের বেলায়তো শোয়াটাই অসহ্য হয়ে পড়েছে। মেঘ করেছে দেখে বাইরের জামাকাপড় সব তুলে রেখেছিল দুপুরেই। ঘড়ির দিকে তাকালো। সাড়ে আটটা বেজে গেছে। অনীকতো এলো না এখনো!কি জানি এত দেরি করছে কেন? আবার বাজ পড়ার বিশাল আওয়াজ। মেয়েটা কেঁপে উঠলো। মলি তাড়াতাড়ি গিয়ে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরল।
রাতের রান্নার প্রস্তুতি চলছে। মোবাইলটাও সুইচ অফ হয়ে রয়েছে। আজকাল আঁকি, ওদের মেয়ে, বড় বেশি মোবাইল ঘাটছে।সুইচ অফ না হওয়া পর্যন্ত ছাড়ে না। কারেন্ট অফ হয়ে আছে। ইনভার্টার চলছে। এত বাজে ওয়েদারে মোবাইল চার্জে না বসানোই ভালো। অনীক এবার বিবাহবার্ষিকীতে মলিকে এই দামি মোবাইল অ্যান্ড্রয়েড সেটটি উপহার দিয়েছে। কাজ করতে করতে মলি মনে মনে ভাবছিল কথাগুলো। অনীক ভীষণ ভালবাসে মলিকে। আঁকি আসার পর ওদের জীবন আরো ঝলমলে হয়ে উঠেছে। অনীক ভীষণ ভালবাসে ওর মেয়েকে।সবসময় মেয়ের চিন্তা। কি করলে মেয়ে ভালো থাকবে সেটাই বুঝে ওঠেনা।মাঝে মাঝে মলিও খুব রাগ করে। এতটা ভালবাসো ঠিক নয়। মেয়ের নামে কত এলআইসি কত ইনভেস্টমেন্ট করে রেখেছে। অনেক বার তো স্ত্রীকে বোঝাবার চেষ্টা করেছে কোথায় কি রেখেছে? মলি কিন্তু এসবের কোনো গুরুত্বই দেয়নি।
নিচে দরজায় আওয়াজ। মলি চমকে উঠলো। অনীক এলো বুঝি। নিচে নেমে দরজা খুলে দিল। চপচপে ভেজা। কোন কথা না বলে অনীক উপরে উঠে গেল। সোজা বাথরুমে। চেঞ্জ করে আসলো। আজ অনীকের চেহারায় কোনো স্বাভাবিকত্ব নেই। বারবার মলি জিজ্ঞাসা করেও কোন উত্তর পেল না। মেয়ে তখনও অঘোরে ঘুমোচ্ছে।ঘুমের ঘোরেই সে তার মেয়েকে খাওয়ালো। ডাইনিং টেবিলে ওদের দুজনের খাবার নিয়ে এলো। রাতে ওরা রুটি খায়। রুটি সবজি ও আম।অনীকের আম খুব পছন্দ।ডিনার কমপ্লিট করে শুতে যাবে, মলি দেখছে তার স্বামী আলমারি থেকে ফাইল বের করছে। ভীষণ বিরক্ত হয়ে বললো,’ এত রাতে এগুলো কি করছ’? স্বামীর গম্ভীর উত্তর,’ কোথায় কী আছে তা তোমারও জেনে রাখা দরকার’। মলি দেখছে ধীরে ধীরে তার স্বামী কোথায় কি ইনভেস্টমেন্ট করেছে তা বলছে। মালিক সবটা বুঝে নিল, কিন্তু তার স্বামীকে আজ সে বুঝতে পারছে না।বাইরে মুষলধারায় বৃষ্টি,সঙ্গে বাজ পড়ার আওয়াজ। অনীক কোন কথা না বলে আঁকিকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
পরদিন ভোর বেলায় নিচে দরজায় আওয়াজ। ঘুম ভেঙে গেল মলির। পাশে অনীক নেই। হয়তো ফ্রেশ হতে গেছে। দোতলার ব্যালকনি থেকে নিচে তাকালো। দেখছে বাড়ির সামনে জটলা। সঙ্গে পুলিশ। মলি ঘাবড়ে গেল। তাড়াতাড়ি নিচে নেমে এলো। পুলিশ অফিসার জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি কি অনীক বাবুর স্ত্রী?’
মলি,’ হ্যাঁ’
অফিসার,’ একটা খারাপ খবর আছে ম্যাডাম’।
মলি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে অফিসারের দিকে।
তার বোন কাঁদতে কাঁদতে ছুটে এসে বলছে,’ এসব কি হয়ে গেল দিদি’।
তখনও সে কিছু বুঝে উঠতে পারেনি।
অফিসার- ‘কাল রাতে বাজ পড়ে অনীক বসু মারা গেছেন’
মলি চমকে উঠল, চিৎকার করে বলে উঠলো,’ কী বলছেন এসব।’
দৌড়ে ঘরে আঁকির কাছে এলো।সারা বাড়ি দেখছে,বাথরুমে অনীকের জামাকাপড় পড়ে,সোফায় মোবাইল,ডাইনিং টেবিলে তখনও দুটি প্লেট রাখা আছে। পাশে ইনভেস্টমেন্টের কাগজগুলো চাপা দেওয়া। তবে কাল রাতে কি হয়েছিল? ডুকরে কেঁদে উঠল মলি।
বর্ষণমুখর রাত (Barshan Mukhor Raat by Dona Sarkar Samaddar)