Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বর্ষণমালা || Sunil Gangopadhyay

বর্ষণমালা || Sunil Gangopadhyay

১.
এক পশলা বৃষ্টি খেয়ে বেড়াতে বেরুলো ছটফটে
কিশোরী নদীটি
সরল কদমগাছের দিকে চোখ টিপে বললো, যাবি?
আকাশ একটু একটু করে নেমে আসছে, আবার উঠছে।
আবার নামছে
কলাগাছের ছেড়া পাতায় কে যেন বাজাচ্ছে বাঁশি
ও বাঁশিওয়ালা, তুমি একবার ফুরুস ফুলগুলোকে কাঁদাবে না?
পেঁপেগাছের পিঁপড়ে ঝাঁপ দিল মহাশূন্যে
মাটি থেকে সাত ইঞ্চি উঁচু দিয়ে ঘর্ঘরিয়ে ছুটে
গেল একটা রথ
রাস্তাটা একটু রাস্তা ছেড়ে সরে দাঁড়ালো
লিচু গাছের নতুন পাতারা পায়ের ধুলো নিচ্ছে
পুরনো পাতাদের
ডানায় পতাকা উড়িয়ে কোঁচ বক নদীটিকে বললো,
চল না কল্যাণেশ্বরীর মেলায়
নিমফুলের মৌমাছি ভুলে গেছে ঘর গেরস্থালির কথা
দিনের আলোয় একটা সাদা পাচা উড়ে গেল রাত্রির দেশে
তিনটে কাঠচাঁপা বন্দি করে রেখেছে রাজপুত্রের মতন
এক টুকরো রোদ
ও বাঁশিওয়ালা, তুমি একবার তোমার বন্ধুর ঘুম ভাঙাবে না?

২.
সেদিনও ছিল আকাশ ভাঙা বৃষ্টিময় সন্ধে
তোমার বুক মাদক ছিল, মৃদু ঘামের গন্ধ
নরম চাঁদ, দুখানি চাঁদ, গোলাপি রঙা বৃন্ত
চক্ষে ধাঁধা, জিহ্বা তবু ভুল করেনি চিনতে
এসেছিলে কি নিরাভরণ নদীর মতো তন্বী
বুকে ছিল কি সুধা? হায়রে ক্ষুধার্তের মন নেই
প্রথম নারী, তোমার চাঁদে আমার সেই স্পর্শ
অমৃত নয়, ঘামের নুন, তাই কেঁপেছি হর্ষে

৩.
দৌড়োতে দৌড়াতে লাল মাটির প্রান্তর ভরা
বৃষ্টি সঙ্গে নিয়ে
বারান্দায় উঠে এলে তুমি
কে সেখানে বসে আছে
বেতের চেয়ারে, ওষ্ঠে সিগারেট
ভেজা শাড়ি লেপ্টে গেছে তোমার বাতাবি-নিতম্বে
সরস্বতী মূর্তির মতন কোমর
নাভিতে মেঘের ঘ্রাণ
সেই লোকটির হাতে কলম, কোলে একটি বাঁধানো খাতা
সে হয়তো কবিতা লিখছিল, ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল
সাত লক্ষ কল্পনার সুতো
সরস্বতীর বন্দনা ছেড়ে সে দেখছে তোমাকে
তোমার ঊরুর ডৌল
সমস্ত বৃষ্টিময় দেশ ভরে গেল রভস গন্ধে
সেই পুরুষটির জাদুদণ্ডে জ্বলে উঠলো দাবানল
কলম আর খাতা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে সে উঠে এলো
তোমার কাছে দয়া চাইছে যেন, আলিঙ্গনে উদ্যত
এক শরীরের নিঃসঙ্গতা অন্য শরীরের নিঃসঙ্গতাকে।
গরলের মতো পান করতে চায়
ইতিহাস তখন স্তব্ধ হয়ে থাকে অন্তরীক্ষে
দেবতারা হাততালি দেয়, সন্ন্যাসীরা মুখ নিচু করে কাঁদে
বাঁশিওয়ালা তার বাঁশি বাজিয়ে আরও বৃষ্টিকে ডাকে
কয়েকটা শালিক শুধু দেখে গেল মেঝেতে গড়ানো
সেই না-লেখা কবিতা

৪.
বকুল গাছের তলায় দাঁড়িয়ে একা
বকুল ফুলের মতন বৃষ্টি, ঝরেছে বকুল, বৃষ্টি বকুল
ঝাপসা বাতাসে একটি ঝলক অচেনা নিজেকে দেখা

৫.
বেলা যায়, বেলা যায়, শোনোনি সন্ন্যাসী?
পাহাড় শিখর থেকে গড়ানো পাথর যেন, ক্ষয়ে আসে দিন
ধারাস্নানে সুষুপ্ত পৃথিবী
খেয়া ঘাটে কেউ নেই, একা একা নৌকোখানি দোলে
ফিরে এসো হে সন্ন্যাসী, তোমার দু পায়ে এত ক্ষত
আর কত দূর যাবে? জীবন ফুরিয়ে এলে তবু কোনো
পথ বাকি থাকে?
জীবনই জীবন-সত্য, তার ওপারে আর কিছু নেই
ফিরে এসো, হে সন্ন্যাসী, বাসনার মধ্যে ফিরে এসো
সাজ খোললা, ছোট ছোট দুঃখে কাঁদো, শিশুটিকে
কোলে তুলে নাও
ফিরে এসো, হে সন্ন্যাসী, কত ক্ষমা চাওয়া বাকি আছে
জীবন ফুরিয়ে এলো, খেয়াঘাটে নৌকোখানি একা একা দোলে

৬.
সুন্দর শুধু ব্যথা দেয়, শুধু বুক মোচড়ায়
সুন্দর নরম ডানায় আগুন ঝরায়
সুন্দর যেন হঠাৎ বৃষ্টি, অলীকের মতো তৃষ্ণা ছড়ায়
সুন্দর চায় গোপন অশ্রু, পূজারীকে পায়ে ঠেলে চলে যায়
সুন্দর আরও সুন্দরতর হয়ে আলেয়ার মতন ঘোরায়

সুন্দর তার নরম ডানায় আগুন ছড়ায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress