Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বছর কুড়ি পর || Suchandra Basu

বছর কুড়ি পর || Suchandra Basu

বছর কুড়ি পর

বহুদিন পরে শ্রীরামপুরে এসে তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে রথেরমেলায় যায়। এই মেলায় যাওয়াই যেন তার কাল হল।তিন বছরের মেয়েটি নিমেষে যে কোথায় উবে গেল তার হদিস পাওয়া গেল না।থানা পুলিশ করেও বিশেষ কোন লাভ হল না।সন্তান হারানোর যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে অনাথ আশ্রম থেকে একটি শিশুপুত্র দত্তক নিয়ে ফিরে গেলেন পুনে। সেখানেই তাকে বড় করে তোলেন। ছেলে এখন ইঞ্জিনিয়ার।পুনেই নামী একটি কোম্পানিতে কাজ করে। সেখানেই আলাপ হয় সুন্দরী এক মেয়ের সাথে। মেয়েটির মা বাবা শ্রীরামপুর শহরে থাকে। মেয়েটির পুনে থাকা খাওয়ার অসুবিধা হওয়ায় ছেলেটির বাড়িতে পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকতে শুরু করে। এইভাবে এক সাথে অফিস যাওয়া আসা করতে করতে দুজনের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। দুজনের মেলামেশার মায়ের চোখ এড়াতে পারেনি।মায়েরও মেয়েটিকে বেশ পছন্দ হয়।মা মনে মনে ঠিক করে নেয় এই মেয়ের সাথেই তার ছেলর বিয়ে দেবে।তাই তিনি ছেলে মেয়ে দুজনের মতামত নিয়েই মেয়ের বাড়িতে যোগাযোগ করেন। ছেলে ও মেয়ের দুজনের পৈতৃক বাড়ি শ্রীরামপুরে হওয়ায় ঠিক হয় সেখানেই বিয়ে হবে।

ছেলের বিয়েতে আড়ম্বরের কোনো অভাব রাখেননি। চলে এসেছিলেন অতিথিরাও। এর মধ্যেই কনের সাজে সবার সামনে এলেন পাত্রী। বউমার মুখ দেখে ওই মায়ের মন খুশিতে ভরে যায়।

এরপর কনেকে আশীর্বাদী নেকলেশ পড়াতে গিয়ে দেখতে পেলেন ঘাড়ের ওপর একটি জন্মদাগ।চকিতে মনে পড়ে গেল হারিয়ে যাওয়া মেয়েটির ঘাড়েও এমনই একটা জন্মদাগ ছিল। সঙ্গে সঙ্গে কনের বাবা-মাকে ডেকে জানতে চাইলেন যে মেয়েটা কি তাদের নিজেদের সন্তান? এমন প্রশ্ন শুনে প্রথমে ওই মেয়ের বাবা-মা হতচকিত হয়ে যান। বলেন সে কথা তো কেউ জানে না। এমন কি মেয়ে নিজেও জানে না। ছেলের মা তখন বলেন তাহলে এ মেয়েকে আপনারা কোথায় পেলেন? মেয়ের মা মুখ খুলতে চাননি। পরে বেরিয়ে আসে সত্য ঘটনা।

ধীরে ধীরে কনের বাবা-মা স্বীকার করে নেন,কুড়ি বছর আগে মেলার ভিড়ে রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছিলেন মেয়েটিকে। তারপর নিজেদের সন্তান না থাকায় এই মেয়েকেই নিজের মেয়ের মতোই মানুষ করেন। তখন ছেলের মায়ের আর বুঝতে বাকি থাকে না যে এই তার মেলায় হারিয়ে যাওয়া সেই মেয়ে। বিয়েবাড়িতে তখন হুলু-স্থূলু কাণ্ড। গোটা বিষয়টি জানতে পারে কনে। সব শুনে নিজেকে আর সামলে রাখতে পারেনি কনে। জন্মদাত্রী মা মেয়েকে পেয়ে বুকে টেনে নিলে কান্নাকাটি শুরু। বিয়ের অনুষ্ঠান তখন লাটে উঠেছে।বর হতভম্ব। অতিথিদের মধ্যে ফিসফাস কথা হাসাহাসি কিছু বাদ নেই। আর হাউ হাউ করে কাঁদছে মেয়েটি।

মেয়েটির হুশ ফিরতেই এবার গোল বাধল অন্যখানে। ভাই-বোনের তো আর বিয়ে সম্ভব নয়। বর যে তার আপন দাদা।তখন বের হয়ে আসে আরও বড় চমক। মেয়ে হারানো ওই মা তখন তাকে আশ্বস্ত করেন নিজেই।তিনি জানালেন যে ছেলেটির সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে ঠিক হয়েছে সে ছেলেরও জন্মদাত্রী তিনি নন! প্রায় ২০ বছর আগে মেয়ে হারানোর পর এ ছেলেটিকেই দত্তক নিয়েছিলেন তিনি। ছেলেও জানে না সে দত্তক নেওয়া সন্তান।

ফলে ভাই-বোনের আর কোনো প্রশ্নই নেই। যেহেতু দুজনের মধ্যে রক্তের কোন সম্পর্ক নেই,তাই এই বিয়েতেও কোন বাধা নেই। ফের বেজে ওঠে বিয়ের সানাই। অতিথিরাও নতুন করে মেতে ওঠেন আনন্দে। দিনভর নানা বাধা-বিঘ্ন টপকে শেষ পর্যন্ত চারহাত এক হয়। চার হাত এক করে মা বললেন,কুড়ি বছর ধরে যে দুঃস্বপ্নের ভার বয়ে চলেছি আজ তা থেকে মুক্তি পেলাম। নব বধূর সলাজ হাসিতে সবাই খুশি।তার থেকেও মাকে পেয়ে বেশি খুশি নববধূ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress