পরিযায়ী
শীতের আমেজ পড়তে না পড়তেই আকাশের বুক দিয়ে অদ্ভুত সুন্দর নকশা আঁকা পাখির দল চলে আসে, প্রতি বছর শীত প্রধান অঞ্চল থেকে আমাদের দেশে । ছেলেবেলায় চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখতাম অনেক হাঁসের বাচ্চা। ভাবতাম যদি একটা ধরতে পারি বাড়িতে নিয়ে পুষব। জলেতে ওদের ঠোঁট ভিজিয়ে স্নান করা ভীষণ ভালো লাগে। বড় হয়ে বুঝতে পারলাম এরা পরিযায়ী পাখি। ওদের আলাদা নাম আছে। আকাশ পথে যারা আলপনার মতো আঁকাবাঁকা হয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যায় এরা সেই পাখিরা। অতি শীতল সাইবেরিয়া থেকে আকাশপথে এদের আগমন ঘটে। শীত ফুরিয়ে গেলে ওরা নিজের দেশে ফিরে যায়। আমাদের দেশে পাখিরা খুব মিশুকে। অতিথিদের আপ্যায়ন করতে জানে। এক বছর বাদে দেখা হওয়ার জন্য তারা অপেক্ষা করে। পরিযায়ী পাখিরা আমাদের এখানে এসে কষ্ট পায় না। বরং আমাদের ঘরোয়া পাখিরা ওদেরকে আদর করে সু- স্বাগতম জানায়। অনেক ভালোবাসা ওরা পায়। পাখি বিশারদ রা বলতে পারবেন ওদের মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলো। আমরা অপরিচিত জায়গায় সহজে পৌঁছাতে পারি না। খুঁজে পাবো না এত সহজে। অথচ পরিযায়ী পাখিরা কিভাবে পথ নির্দেশ করে চিড়িয়াখানা বা জলাশয় গুলিতে প্রতি বছর আসে। অবাক লাগে, আবারও শীত কমলে নিজেরাই চেনা পথে কিভাবে ফিরে যায়। আকাশ পথে যেতে তাদের কোন ভুল হয় না। সমস্ত জলাশয় বা ওদের উপযুক্ত স্থান স্থানগুলো ওরা চেনে। শীতের মরসুমে চিড়িয়াখানায় বা আমাদের এখানে সাঁতরাগাছি ঝিলে এরকম বহু পাখির খোঁজ মেলে। আনন্দে মুখরিত থাকে কয়েকটা মাস। নিজেদের মধ্যে কত গুঞ্জন। আমাদের ঘরের কাক, শালিক, বক এরা আমাদের মত অতিথিবৎসল। তাই নিজেদের বাসস্থানগুলো ওদের জন্য ছেড়ে দেয়। এতগুলো পাখির খাবার জোগাড়ের প্রয়োজন আছে। আমাদের ঘরের পাখিরা সারা বছর তাদের নির্দিষ্ট জায়গা গুলোতে বসবাস করে। তার আশেপাশের প্রতিটি মানুষের বাড়ি এবং সেই মানুষগুলোকে খুব ভালো চেনে। প্রতিদিন ভোর হলেই সে জায়গাগুলোতে চলে যায়। সব সময় কাছাকাছি তা নয় বেশ কিছুটা দূরের জায়গা সেখানে প্রতিদিন যায়। আবার বকেরপাখায় যখন সন্ধ্যা নামে ওরা বহুদূর থেকে নিজের বাসায় ফিরে আসে। অন্য পশুরা কিন্তু সহজে নতুনদের নিজের জায়গায় আসতে দেয় না। তাদের চেনা একটা গণ্ডি থাকে। এক পাড়ার কুকুর অন্যপাড়ায় আসতে পারে না। অথচ আমাদের পাখিরা কত সুন্দর ওদেরকে আপ্যায়ন করে। পরিযায়ী যখন আবার ফিরে যায় ওরা ওদের পুরনো বন্ধুদের চিনে নেয়। ওদের মধ্যে এক অগাধ ভালোবাসা তৈরি হয়।