১৯. শুক্লপক্ষ কেটে গিয়ে কৃষ্ণপক্ষ এল
শুক্লপক্ষ কেটে গিয়ে কৃষ্ণপক্ষ এল। শীতের আমেজ-লাগা দিনের পরে রাত আসে আকাশ ভরা হেমন্তের হালকা কুয়াশা নিয়ে। সেই কুয়াশায় আকাশের তারা ঝাপসা। এখন আর চোরা হিম নয়, রীতিমতো শিশিরে ভিজে ওঠে সব। যারা এ হিমকে ভয় পায়, বুড়োরা তাদের বলে, ভাদরের রোদ আর আশ্বিনের ওষ, খামকা লোকে দেয় কার্তিকের দোষ।মাঠে মাঠে আর সবুজের নামগন্ধ নেই, সবই সোনার বরণ হয়ে উঠেছে। ধানখেগো পাখির দৌরাত্ম্য বাড়ে। পাকা ধানের গন্ধ ছড়ায় বাতাসে। ছোট বড় সকলের চোখেই স্বপ্ন, স্বপ্ন গরু মোষের ড্যাবা চোখে।
কামারের ঘরে হাপরটানের কামাই নেই। শুধু কাস্তে কুড়ল তো নয়। এ-সময়ে জল উননা। ভরা ভোবা শুকোয়, পথঘাট সব খটখটে হয়ে ওঠে। বাজারে হাটে গরুর গাড়ি চলছে, গাড়ির চাকাও তৈরি হয়।
খালের জলে জোয়ার-ভাঁটা খেলে, কিন্তু ভরা বর্ষার অথৈ জল নয়, নাচতে শুরু করেছে। আর জলও কাচের মতো টলটলে।
গতানুগতিক হেমন্ত নয়, নতুন হেমন্ত। আশার সঙ্গে নতুন প্রতীক্ষা। গ্রামে গ্রামে ঢােল পেটানো হয়েছে, বাড়তি খাজনা বন্ধের ও বেগার কাজের। তার সঙ্গে আর একটি কথাও ছিল যে, নজরানা বন্ধ। যে দেবে সে হিন্দু হলে গরু খায়। মুসলমান হলে শুয়োর খায়। ভাগের কথায় সাব্যস্ত হয়েছে, বীজ লাঙলে খাটুনি ফসল ফলানো—এ দায় রইল চাষীর। তারপরে যে যার ভাগ নেও আপন আপন খাটুনি ঝাড়াই মাড়াই করে। লোক চাইলে মজুরি দিতে হবে তার। মোদ্দা কথা হল, না খাটি তো দাঁতছড়কুটি আর পাই খাটি তো পাই চাই। গতর বলে কথা।
মহাজন জোতদারে শলাপরামর্শ করে, আকাশ ভাঙে জমিদারের মাথায়। বেগার ছাড়া তো জমিদারিই অচল। নজরানা ছাড়া ঐশ্বর্য কোথায়!
হ্যাঁ, গ্রামে গ্রামে মহকুমায় জেলায় আলোড়ন পড়েছে খুব।
দিন যায় নয়, দিন আসে।
কিন্তু মহিম যেন ঝিমোয়। প্রাণ নিঃসাড়, গতি স্তব্ধ। হাসে না, কথা বলে না, মূর্তি গড়ে না। কী যেন হয়েছে, কী যেন ভাবে। সেদিন আর নেই। সব সময়েই লোকজন আসে, নানান কথা বলে, জিজ্ঞাসাবাদ করে, কী হয়েছে?
কী হয়েছে, তা কী মহিমই জানে! কোথায় যেন সব বিকল হয়ে গেছে।
অহল্যা সব বুঝতে পারে। তা ছাড়া বুঝবার আর কেউ নেই বোধ হয়। তাই সে সামনে সবসময়ই সপ্রতিভ, সরস! বুঝি বা একটু বেশিই। একেবারে বিলুপ্ত না হোক, ছায়া দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে মহিমের মনের গত সব দুর্ঘটনার যন্ত্রণার বেদনার ছবিগুলো। কিন্তু আড়াল আবডাল থেকে দু-চোখ মেলে উদগ্রীব হয়ে মহিমকে দেখে সে। দেখতে দেখতে কখনও কান্নায় কখনও নিষ্ঠুর হাসিতে ঠোঁট বেঁকে ওঠে তার।
ভরত দেখে সবই, থাকে চুপচাপ। ভাবে ছোঁড়ার যেন আবার কী হয়েছে। মনে করে হয়তো বা বউদি-দেওরে কোনও বিবাদ মান-অভিমান চলেছে। তবু অহল্যার নিরলস কাজ ও ফাঁকে ফাঁকে থকানো কান্না দেখে বুকটা তার ভারী হয়ে ওঠে। আবাগীর বুকটা খালি কি-না, অফলা গাছ। কিন্তু ঝাড়ফুঁক মাদুলি জলপড়া কোনওটাই তো বাদ গেল না। এ গেল এদিকে, আসলে ভরতের প্রাণ পড়ে আছে আদালতে যেখানে তার জীবন-মরণের হদিস পড়ে আছে।
বনলতা ও গোবিন্দকে দেখে মহিম শুধু চমকায়নি, থধরা ভাব তার গভীর হয়েছে। প্রিয়বন্ধু গোবিনের চোখে স্বপ্ন, নতুন আমেজে সজীব। তাকে দেখলে আজকাল আর উদাসী ধার্মিক বাউল বলে ঠিক মনে হয় না। তার গেরুয়াতে যে কীসের রং লেগেছে। সে প্রায়ই মাঠে যায়, এতদিন যেন স্বপ্নের ঘোরে ফেলে রাখা খেত-জমির হদিস পড়েছে। রাজপুরের আচায্যির কথা বলেছে সে ঘরে ঘরে, উলটে আজ আচায্যির মুখখাস খুলে তার সর্বনাশের পথ তৈরি করছে। সে বলেছে সব কথা মহিমকে, পাগলা বামুনকে। আচায্যিও পড়েছে খুব বেকায়দায়। সে নাকি বলতে শুরু করেছে এ পাপের দেশ ছেড়ে চলে যাবে বৃন্দাবন। … গোবিন্দ আস্তে আস্তে জড়িয়ে পড়েছে জোতদার-জমিদারের সঙ্গে বিবাদে।
কিন্তু মহিম চমকায় বনলতা ও গোবিন্দকে দেখে। ভাবে ওদের যেন কিছু একটা বোঝাপড়া হয়েছে।
বনলতার ঠোঁটে বিচিত্র হাসি সব সময় লেগেই আছে। মনে হয়, বিজয়িনী বনলতা। কিশোরীর চাঞ্চল্য কেটে গিয়ে যৌবনের ভারে ধাধসে চলে সে। অস্থির নয়, সুস্থির। ভরাট প্রাণের গভীরতা তার চলনে বলনে। মহিম দেখে, হাসিতে তার গভীর অর্থ। শুধু চমৎকার নয়, মহিমের চাপা-পড়া প্রাণে যেন ঘা লাগে আরও।
এই সময় একদিন হঠাৎ ভোরবেলা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ল একটা কথা গ্রাম হতে গ্রামান্তরে; মহকুমায়, জেলায়, হরেরামের হত্যার কথা!
হরেরামদা খুন হয়েছে। মহিমের পায়ের তলায় মাটি টাল খেয়ে উঠল। বিশ্বাস করা যায় না যেন। হরেরামদা খুন! কেন? কার, কাদের এত বড় শত্রু হরেরামদা! নয়নপুরের চাষী যোদ্ধা, নতুন দিনের সবার চেয়ে এগুনো মানুষটা। মহিমের মনে পড়ল সেই সভার কথা, হরেরামদার একহারা শক্ত শরীরটা তেজে প্রতিজ্ঞায় খাড়া, মুখ ভরা হাসি আর, কী কথা! সবার মুখে এক নাম, ছোট-বড় সবার মান্যিতে যে সারা তল্লাটে গণ্য হয়ে উঠেছে, সেই হরেরাম। চিরটাকালই মানুষটা পরের খেতের তরকারি বিক্রি করেছে হাটে বাজারে, পরের গাড়ি চালিয়েছে, পরের মাঠ চাষ করেছে নিজের পরিবারটিকে জিইয়ে রাখবার জন্য! নিজের কিছুই ছিল না। সেই মানুষের এখন শত্রু কে?
গত ক-দিনের সব কথা চাপা পড়ে গেল মহিমের মনের তলে। সে ছুটল হরেরামের বাড়ির দিকে।
প্রথম হল্লাটা কাটিয়ে উঠে সারা নয়নপুর, রাজপুর তখন থমথম করছে। চোখে চোখে চাপা আতঙ্ক, সন্দেহ, কান থেকে কানে কথা চলছে ফিসফিসিয়ে। যেন হাওয়ায় গন্ধ শুঁকে বেড়াচ্ছে
বাই। দু-চারজনের চোখ স্থির জ্বলন্ত, কঠিন। যেন সেই গোপন হত্যাকারীকে চিনে ফেলেছে তারা।
গাঁয়ের মেয়েরা ঘিরে আছে হরেরামের বউকে। কিন্তু আশ্চর্য! হরেরামের বউ তো কাঁদছে না। একদৃষ্টে মাটির দিকে তাকিয়ে দাওয়ায় বসে আছে। সন্তান শোষিত অবনমিত বুক খোলা, কাপড় ঢাকা পেট মস্ত উঁচু হয়ে আছে। পোয়াতি বউ। কোলের ছেলেটা বিস্মিত চোখে মেয়েদের দেখছে থেকে থেকে আর মুখের মধ্যে মুঠি পুরে দিয়ে মুড়ি খাচ্ছে।
এর মধ্যেই দেখা গেল, কেউ কেউ প্রেতযোনির অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছে। অসময়ে, রাতের কোনও বিশেষ প্রহরের অন্ধকারে বেলতলা, শ্যাওড়তলা, বাঁশঝাড়ে যে অশরীরী আত্মারা বাগ পেলে ঘাড় মটকে দিয়ে খায়, কে না জানে একথা। আর হরেরামকে পাওয়া গেছে বাঁশঝাড়েই।
কোথাও কাটাকুটির দাগও নাকি নেই। এখন কথা হল, কার পাপে, কার দোষে? বউয়ের পাপ সোয়ামিতে বর্তায়, সবাই জানে। হয় তো ভরা পেট নিয়ে ওই মাগী কোনও বেচাল করেছে। সাঁঝে দাঁড়িয়েছিল বা হেঁচতলায়, নয়তো মাঠেঘাটের হাওয়া নিয়ে এসেছে বয়ে। তবে বেহ্মদত্যির পথে পড়লে দোষী-নির্দোষীর প্রশ্ন নেই?
একজন জিজ্ঞেস করল বউকে, পায়খানা ফিরতে বার হইছিল নাকি রাতে?
চোখ না তুলে ঘাড় নাড়ল বউ।
তবে?
স্থির ভাবলেশহীন চোখ তুলে সবাইকে দেখে বউ আবার মাটির দিকে তাকিয়ে বলল, চখে মোর আধ ঘুম, অনেক রাত তখন। কে যেন তাকে ডেকে নিয়ে গেল।
ডেকে নিয়ে গেল? সবাই কণ্টকিত হয়ে উঠল। মহিমও। যারা ‘বেহ্মদত্যি’র হদিস পেয়েছে তারা চোখ বড় বড় করে পরস্পরের সঙ্গে গভীর অর্থব্যঞ্জক দৃষ্টি বিনিময় করে ঘাড় দোলাল। অর্থাৎ আর কোনও সন্দেহ নেই। একজন জিজ্ঞেস করল, গলার স্বরটা চেনা মনে হইল?
এবার বউয়ের চোখ দারুণ অস্বস্তি ও যন্ত্রণায় থমথমিয়ে উঠল। বলল, চিনি। চিনি কিন্তুক মানুষটারে, চিনতে পারছি না।
মহিমের মনে হল এ দিশেহারা স্মৃতির জন্যই যন্ত্রণায় বউ কাঁদতে পর্যন্ত ভুলে গেছে।
বাড়ির পিছনে খানিক দূরে বাঁশঝাড়ের ভিড়ের দিকে এগিয়ে গেল মহিম। মৃত হরেরামকে চোখে পড়তেই মহিমের মনে হল তার হৃৎপিণ্ডটা যেন টিপে ধরেছে কেউ। …একি মরা মানুষের মুখ। এ তো মেরে ফেলা মানুষের মুখ। খোঁচা খোঁচা গোঁফদাড়ি হরেরামের মুখে। ভূকুটি গোলচোখ, স্থির, নির্নিমেষ চোখের মণি। যেন হঠাৎ রাগে কটমট করে তাকিয়ে আছে। মুখ খানিক হাঁ করা। চিত করে ফেলেচে বলেই বোধ হয় জিভটা বাইরে এলিয়ে পড়েনি। তামাকের ধোঁয়ায় হলদে ছোপ লাগা দাঁতগুলো বেরিয়ে আছে। চোখের কোণে পিটুলিতে লাল রং গোলার মতো খানিক রক্ত।
মহিম যেন দিব্যচোখে দেখতে পেল, ব্ৰহ্মদত্যির মতো যা মানুষ হরেরামদার গলাটা টিপে ধরেছে। টিপছে আরও জোরে টিপছে, প্রাণপণ টিপছে। তাই হরেরামদার গলাটাও যেন খানিক লম্বা হয় গেছে।
না, কিছুতেই যেন তাকানো যায় না মুখের দিকে। একবার তাকালে ব্রাসে প্রাণ ভরে যায়। আবার তাকালে বুকে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। তারপর সমস্ত বুকের মধ্যে আগুন জ্বলতে থাকে। নিরীহ, ঠিকে জমির উপর ভিটে যার, পরের কাজ করে-খাওয়া মানুষ হরেরামদার এ-মুখ যেন মরা মুখ নয়, মনে হয় শত্রুর আক্রোশ নিষ্ঠুরতাই সমস্ত মুখটায় ভরা। বীভৎস, কুৎসিত।
এ মুখ যে ভোলা যায় না।
সামনে মানিককে দেখে মহিম বলল, তোর মণ্ডলকাকি কোথা অর্থাৎ অহল্যা।
মানিক বলল, হরেরাম কাকার বউয়ের ঠাঁই গেল।
মহিম বলল আস্তে আস্তে, মোর ঘরে যা তো। পশ্চিম বেড়ার তক্তায় বড় হাঁড়িতে কাপড় জড়ানো ঠোঙা আছে একটা। শুঁকে দেখিস রবারের গন্ধ। নিয়ে আয় গে। দেখিস, ওজন আছে মালটার।
মানিক বলল চোখ বড় বড় করে, তোমার সেই মূর্তি গড়ার মশলা।
হ্যাঁ। যা ঝট করে। মহিম আবার ফিরল হরেরামের দিকে। না, এ হরেরামদার মুখ নয়, মরা মানুষের মুখ নয়। সে ভিড় করা মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখল। কই, মরা মানুষের মুখ দেখে তো কারও চোখ মুখের ভাব এমনটি হয় না। এ মুখ এক নারকীয় ঘটনার ছবি, সারা মুখটায় এক ষড়যন্ত্রের পরিণতি যেন থম থম করছে। …কে একজন বলে উঠল, মোর ঠাকুরদারেও মেরে ফেলেছিল ওরা। তবে বড় বাঁশঝাড়ে লয়, ডেকে নিয়ে কাছারি ঘরে বাঁশডলা দিয়ে।
এখানকার ভিড় করা মানুষগুলোর জোড়া-জোড়া চোখগুলোর মধ্যে স্বতন্ত্র হয়ে উঠল শিল্পীর চোখ। সে ভুলল এ ভিড়। এখানকার ফিসফিসোনো আর গেল না তার কানে। তার সারা মুখে নতুন জ্যোতি।
ভজন এসে ধরল মহিমের দুই হাত। কী ভাবছ মহী?
মহিম বলল, ভাবছি ওই মুখের কথা।
ভজন দু-হাতে আলিঙ্গনের মতো মহিমের কাঁধ ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলল, ওরা বুঝি ভাবছে, হরেরামেরে মেরে ফেলে মোদের চুপ মারিয়ে দেবে। কিন্তুক আগুন ওরা জ্বালল ভাল হাতে। হরেরামের মন্তর মোরা ভুলব না। একটু থেমে তারপর বলল, ক-দিন আগে যখন জমিদার কাছারিতে ডেকে নিয়ে হরেরামরে শাসায়ে দিল তখনই মুই বুঝছি বেগতিক কিছু হইবে। কিন্তুক্ সে যে এতবড় সব্বেনাশ–
বন্ধ হয়ে গেল ভজনের গলার স্বর।
মহিমের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল, নিশ্বাস-প্রশ্বাস ঘন হয়ে এল। চোখের দৃষ্টি নিবদ্ধ রইল হরেরামের মুখের দিকে।
ভজন বলল, মানিকরে কনঠাঁই পাঠালে?
ঘরে, প্লাস্টার আন্তে।
পেলোস্টারটা কী?
মূর্তি গড়ার মশলা।
হরেরামের ওই মূর্তি গড়বে তুমি? শুধু আনন্দে নয়, বিস্ময়ে জ্বলে উঠল ভজনের চোখ।
মহিম বলল, এ তো মুখ নয় ভজনদাদা, শত্তুরের সব্বোনাশা কীর্তি। চাষী মনিষরে চেরকাল মুই এ মূর্তি দেখিয়ে বেড়াব।
মহিমকে দু-হাতে জড়িয়ে ধরে ভজন হাসি কায়ায় ভরা এক বিচিত্র শব্দ করে উঠল। সকলেই ভিড় করে এল তাদের দুজনকে ঘিরে। এ খবর ছড়িয়ে পড়ল গাঁয়ে ঘরে।
মানিকও এল মাটি নিয়ে। মহিম দেখল পুরুষের ভিড়ের পেছনে দুটি চোখ একদৃষ্টে তারই দিকে তাকিয়ে আছে, কপালে তার কাচপোকার টিপ, মাথায় ঘোমটা সরানো। সে চোখে কি ছিল না জানলেও মহিমের সারা বুকে ছড়িয়ে পড়ল সেই অচেনাভাব। ও মুখ অহল্যার। গত দুর্ঘটনার এতদিন পর মহিম প্রথম হাসল, ছায়া সরল তার মুখ থেকে। একবার ভাবল সে যাবে অহল্যার কাছে। কিন্তু লজ্জা করল মনে মনে। সে কাজ আরম্ভ করল।
ঘাড়ের কাছে নিশ্বাস লাগতে মহিম তাকিয়ে দেখল, গোবিন্দ। অনুরাগে ভরা দুই চোখে বন্ধুর অন্তঃস্থলকে স্পর্শ করার বাসনা। মহিম হাসল।
ইতিমধ্যে খবর এল নয়নপুরে পুলিশ এসেছে সদর থেকে। পুলিশ পাগলা বামুনদের বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি করেছে। তার নামে নাকি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। কিন্তু পাগলাঠাকুর যেন হাওয়ায় গায়েব হয়ে গেছে নয়নপুর থেকে। তারপর পুলিশ এখন গেছে জমিদার বাড়িতে, অক্ষয় জোতদার গেছে সঙ্গে সঙ্গে। খানিক বিশ্রাম করে পুলিশ আসবে এখানে। খবরটা নিয়ে এল নয়নপুরের হাবু চৌকিদার।
হাবুকে ঘিরে ধরল সবাই খবরের জন্য। পাগলাঠাকুর কী অপরাধ করল?
হাবু চৌকিদার বলল, কে জানে। শুনি এলাম, ঠাকুর নাকি সরকার বাহাদুরের শত্তুর। লোক খ্যাপায় সে।
আর হরেরামের খুনের ব্যাপারটা?
হাবু বলল, সেই পরামশ্য তো করতে গেল বড় দারোগাবাবু জমিদারের কাছে। তারপর সে মহিমের কাছে গিয়ে আস্তে বলল, এইটুক তাড়াতাড়ি কাম সারো মণ্ডলের পো, লইলে দারোগা এসে পড়লে ফ্যাসাদ লাগবে।
মহিমের হাতের জাদুতে তখন মৃত হরেরামের বীভৎস মুখ প্লাস্টারের দলাটাতে জীবন্ত হয়ে উঠছে।